ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

রুমান হাফিজ

** লাথি

প্রকাশিত: ১২:২৭, ২ আগস্ট ২০১৯

** লাথি

বিয়ের প্রায় কুঁড়ি বছর পর সায়লার স্বামী মারা যায়। বিদেশে হেল্পারের কাজে ছিল। সেখানে যাওয়ার বছর তিনেকের মাথায় হঠাৎ একদিন দুঃসংবাদ আসে, বিল্ডিং থেকে পড়ে মারা গেছে তার স্বামী। সেদিন সংবাদটা শোনার পর সায়লার অবস্থা কিরকম ছিল সেটা ঠিক তার মনে নেই। করতেও পারে না। ২. স্বামী মারা যাওয়ার প্রায় বছর দেড়েক পর একমাত্র মেয়েকে বিয়ে দেয়। বাপের বাড়ির সহযোগিতায় ভাল জায়গায় বিয়ে দিতে পেরে কিছুটা স্বস্তিবোধ করছিল সায়লা। কিন্তু সেটা আর হলো না। মেয়ে সঙ্গে থাকায় কারো কাছ থেকে কোন কথা শুনতে পায় নি। কেউ কোন কটুবাক্য উচ্চারণও করেনি। এখন তো নানাজন নানা কথা বলাবলি করতে শুরু করেছে। তাছাড়া এই প্রস্তাব সেই প্রস্তাবের হিড়িক তো লেগেই আছে। নিজের প্রতি খুব বেশি ঘৃণা জন্ম নিতে শুরু করল সায়লার। বড় অসহায় ভাবতে লাগলো। স্বজনেরা ভালো ঘরের প্রস্তাব নিয়ে এলেও কাজ হয়নি। মেয়েকে রেখে অন্য কিছু করতে নারাজ সায়লা। এই মুহূর্তে ঠিক তার কি করা উচিত সেটা ভেবে যেন কূল-কিনারা পাচ্ছিল না। ৩. বাড়ি থেকে মাইল দুয়েক দূরে একটা দোকানে কাপড় সেলাইয়ের কাজ করে সায়লা। সে অনেকদিন আগে থেকেই। স্বামী নেই বলে সংসার চালাতে কখনও তাকে বেগ পোহাতে হতো না। মা মেয়ের ছোট্ট সংসার বেশ ভালোই চলে যেত। সেদিন কাজে যাওয়ার পথে মোড়ের দোকানি তাজুল পথ আগলে দাঁড়ায়। আগেও কয়েকবার নানাভাবে কথা বললেও এভাবে পথ আটকায়নি। বারবার এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয় সায়লা। তাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। সায়লা কোন কথা বলে না। ওড়না দিয়ে নিজেকে আরেকটু ঢাকার চেষ্টা চালায়। সায়লার উত্তরের অপেক্ষা করে তাজুল। খুব সুখে রাখবে, জায়গা-জমি লিখে দেবে এরকম অনেক অফার করে। সায়লার আর সহ্য হচ্ছে না। তাজুলকে একটু ধাক্কা দিয়ে পথ বের করে সেদিন চলে আসে। ঘরে এসে খুব কান্নাকাটি করে সায়লা। এঘর ওঘর থেকে এসে অনেকেই জিজ্ঞেস করে। কোন কথা বলে না। মেয়ে-মেয়ের জামাই এসে তাদের বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্য অনেক চেষ্টা করে। বাপের বাড়ি থেকেও কম চেষ্টা করা হয়নি। কিন্তু সায়লার কথা একটাই সে তার স্বামীর রেখে যাওয়া ঘর ছেড়ে কোত্থাও যাবে না। বাঁচলে এখানেই বাঁচবে। মরলে এখানেই মরবে। তবু ছেড়ে যেতে রাজি নয়। বেশ কিছুদিন হলো কাজেও যাচ্ছে না সায়লা। ঘরে মধ্যেই শুয়ে বসে সময় কাটছে তার। এদিকে তাজুল দোকানি খবর পাঠিয়েছে সায়লার উত্তর জানার জন্য। সায়লা সাফ জানিয়ে দেয় সে বিয়ে একবারই করেছে আর না। প্রয়োজনে যা যা করা লাগে তাই করতে রাজি আছে। সায়লার অবস্থা শোনে তাজুল দোকানিও বুঝে গেছে। এভাবে রাজি করানো সম্ভব না। সে ভিন্নভাবে ফন্দি ফিকিরে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। ৪. প্রতিদিনের মতো সকাল সকাল শুয়ে পড়ে সায়লা। দ্রুত সময়ে ঘুমও চলে আসে। কিন্তু আজ তার কেন জানি ঘুম তো আসতেছেই না সঙ্গে অস্বস্তি বোধ করেছে। এপাশ ওপাশ করছিল। বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ায়। পানির জগ নিয়ে আসে। কিছু সময় পর পর গ্লাসে ঢেলে পানির ঢুক গিলতে থাকে। এভাবে অনেকক্ষণ পার হয়। হঠাৎ সায়লা কানে কি যেন একটা শব্দ টের পায়। বিছানার নিচ থেকে বের করে কিরোসিনের বাতিটা জ্বালায়। ডান-বাম সব দিকে চোখ দেয়। না, কিছুই দেখতে পেলো না। অন্যকিছু হবে ভেবে বাতিটা বন্ধ না করেই বিছানায় গা এলিয়ে দেয়। ঘুম চলে আসে। ঝুলিয়ে রাখা পায়ে আচমকা কারো স্পর্শ অনুভব করে সায়লা। পা টা গুটিয়ে বিছানায় তুলে। পরক্ষণে আবারও স্পর্শ টের পায়। এবার ভয়ে ভয়ে চোখ খুলে সায়লা। বাতির হালকা আলোয় একজন মানুষের ছায়া দেখতে পায়। কে কে? কে এখানে? প্রশ্ন করতে না করতেই পা দুটো ঝাপটে ধরে ছায়া মানবটা। ‘আমি তোর তাজুল, তোরে নিতে আয়েছি, চল আমার সঙ্গে।’ সায়লার বুঝতে আর বাকি নেই ঘটনাটা কী ঘটতে যাচ্ছে। পা দুটো ছাড়িয়ে নিতে প্রাণপণ চেষ্টা করে। ‘ছেড়ে দে হারামজাদা, নইলে কিন্তু লাত্তি মেরে বের করে দেবো। ছেড়ে দে।’ তাজুল আরও শক্ত করে চেপে ধরে। এবার নিজের গায়ের সমস্ত শক্তি একত্রিত করে পা দুটো বের করতে সমর্থ হয় সায়লা। তাজুল আবারো ধরতে যায়। সায়লা তার পা ছুড়ে দেয় তাজুলের দিকে। পায়ের লাত্তি খেয়ে তাজুল নিচে পড়ে যায়। তাজুলের সাথে জ্বালিয়ে রাখা কূপিটাও আলোবিহীন পড়ে রয় ঘরের মেঝেতে..
×