ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

মানুষের আচরণের ওপর রঙের প্রভাব

প্রকাশিত: ১২:১৮, ২ আগস্ট ২০১৯

মানুষের আচরণের ওপর রঙের প্রভাব

প্রায় সবারই পছন্দের রং রয়েছে। কিন্তু রং আসলে আমাদের আচরণের ওপর কতটা প্রভাব রাখে। একাধিক বৈজ্ঞানিক পরীক্ষার মাধ্যমে এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজা হচ্ছে। দেখা যাচ্ছে, মানুষের মস্তিষ্ক দ্রুত পরিবেশের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারে। রঙের কী প্রভাব থাকতে পারে? আমাদের ওপর রঙের প্রভাব সম্পর্কে প্রচলিত ধারণার কোন অভাব নেই। যেমন বলা হয়ে থাকে, লাল রং নাকি সক্রিয় করে তোলে। নীল রং আস্থা জাগায়। আর সবুজ রং নাকি আমাদের আরাম দেয়। বিজ্ঞানের মানদণ্ড ব্যবহার করে কি রঙের প্রভাবের প্রমাণ পাওয়া সম্ভব? রং আসলে কী? মানুষের চোখ লাখ লাখ রং আলাদা করতে পারে। আসলে রং কিন্তু আমাদের ধরাছোঁয়ার বাইরে। কারণ বিজ্ঞান বলছে, একমাত্র তরঙ্গদৈর্ঘ্য হিসাবে রঙের অস্তিত্ব রয়েছে। রং আসলে আলোর ইলেকট্রোম্যাগনেটিক বিকিরণের সামান্য অংশমাত্র। অনেকটা এক্সরে, অতি বেগুনি রশ্মি বা বেতার তরঙ্গের মতো। খালি চোখে দেখা যায়, এমন আলোর মাত্রা সাধারণত ৪০০ থেকে ৭৮০ ন্যানোমিটার পর্যন্ত হয়। সেই বিকিরণ রঙের রূপে দেখা যায়। এই সব তরঙ্গদৈর্ঘ্য একসঙ্গে সাদা রং সৃষ্টি করে। নির্দিষ্ট কোন রং বার করতে? ব্যাপারটা এভাবে ঘটে। সাদা আলো কোন বস্তুর ওপর পড়ে। বস্তু তার কিছু অংশ গিলে ফেলে। বাকি অংশের প্রতিফলন ঘটে। তাই সব তরঙ্গদৈর্ঘ্য আমাদের চোখ পর্যন্ত পৌঁছায় না। মস্তিষ্ক সেই আলোর সঙ্কেতের ব্যাখ্যা দেয়। ফলে আমরা চিনতে পারি যে টমেটোর রং লাল! অর্থাৎ রং সবার আগে আমাদের মনে জন্ম নেয়। কিন্তু সে কারণেই কি রং আমাদের ওপর প্রভাব রাখতে পারে? সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল অনুযায়ী সেই প্রভাবে হেরফের হয়। কারণ রঙের প্রভাব শিক্ষাদীক্ষার উপরেও কিছুটা নির্ভর করে। শুধু লাল ও সবুজ রঙের ক্ষেত্রে মানুষ সম্ভবত বিবর্তনের সময় থেকে একই মনোভাব দেখিয়ে আসছে। মনস্তাত্ত্বিক হিসেবে হাইকো হেশ্ট এক পরীক্ষার মাধ্যমে এই সত্য জানার চেষ্টা করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা সব সময়ে একই ওয়াইন পান করেছি। একবার একদল মানুষ লাল আলোর নিচে তা পান করেছে। দ্বিতীয় দল সবুজ আলোর নিচে সেটা করেছে। দেখা গেছে, তাঁদের ওপর রং বিশাল প্রভাব ফেলেছে।’ যারা সবুজ আলোর নিচে সেই ওয়াইন পান করেছেন, তাঁদের স্বাদ টক লেগেছে। একেবারেই পছন্দ হয়নি। যে দল লাল আলোর নিচে সেই ওয়াইন পান করেছে, তাদের স্বাদ খুব ভাল লেগেছে। এমনকি ওয়াইনের বোতলের জন্য এক ইউরো বেশি দিতেও তারা প্রস্তুত ছিল। লাল রঙের প্রভাব খাবারের মধ্যে লাল রং পরিপূর্ণতার প্রতীক এবং আমাদের স্বাদেরও উন্নতি ঘটায়। তবে লাল আলোও যে একই প্রভাব রাখতে পারে, এমনটা আগে জানা ছিল না। লাল রং কি আমাদের কর্মক্ষমতার উপরেও প্রভাব রাখে? অন্য একটি পরীক্ষার মাধ্যমে হাইকো হেশ্ট তা জানতে চেয়েছিলেন। এই পরীক্ষার আওতায় স্বেচ্ছাসেবীদের বিভিন্ন রঙের পরিবেশে বসানো হয়েছিল এবং তাঁদের কাছে হুবহু এক অঙ্ক, ভাষা ও ধাঁধার প্রশ্ন রাখা হয়েছিল। সবাই একই রকম ভাল ফল করেছে। এ ক্ষেত্রে লাল রঙের সম্ভবত কোন প্রভাব ছিল না। কিন্তু ওয়াইন নিয়ে পরীক্ষার সময় কেন পার্থক্য দেখা গিয়েছিল? মনস্তত্ত্ববিদ হিসেবে হাইকো হেশ্ট বলেন, ‘আংশিকভাবে আবেগের মাধ্যমে সেই প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছিল বলে মনে হয়। অপেক্ষাকৃত কম সময়ের জন্য আবেগ কাজ করে। অর্থাৎ এ ক্ষেত্রে স্বল্পমেয়াদী প্রভাব দেখা গিয়েছিল। আচমকা সব লাল হয়ে যাওয়ায় আবেগেও পরিবর্তন ঘটেছিল, যা সরাসরি ওয়াইনের স্বাদে পার্থক্য এনেছিল। কোন ছাত্রীকে এক ঘণ্টার জন্য পরীক্ষায় বসালে এবং পরে লাল আলোর নিচে একই কাজ করতে দিলে আমাদের উপলব্ধিবোধ যথেষ্ট দ্রুত পরিবর্তিত পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নেয়। লাল রঙের অস্তিত্ব খেয়ালও করে না।’ রং আমাদের ওপর প্রভাব ফেলে কি-না, পরিস্থিতির ওপর তা নির্ভর করে। স্বল্পমেয়াদী ভিত্তিতে রং আমাদের অনুভূতির ওপর প্রভাব দেখায়। কিন্তু কিছু সময়ের মধ্যে মস্তিষ্ক পরিবেশের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নেয়, এমনকি কিছু রং পুরোপুরি মুছে ফেলে। সবটাই অবচেতন মনে ঘটে।
×