ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

মুশফিক-শফিউলে ম্লান বাকিরা

প্রকাশিত: ১১:৪৫, ২ আগস্ট ২০১৯

মুশফিক-শফিউলে ম্লান বাকিরা

মোঃ মামুন রশীদ ॥ ভাগ্যিস তাকে তিন বছর পর ফেরানো হয়েছিল, নয়তো শ্রীলঙ্কা সফরে বাংলাদেশ দলের বোলিং পারফর্মেন্স হয়তো আরও দুর্দশাগ্রস্ত চেহারায় থাকতো। ডানহাতি পেসার শফিউল ইসলাম হুট করেই সুযোগ করে নেন এবার শ্রীলঙ্কা সফরের দলে। সবার পরে তিনি ম্যাচের দু’দিন আগে দলের সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন। সেই শফিউলই ৩ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি বোলার। ৬ উইকেট নিয়েছেন তিনি। এছাড়া বাংলাদেশের বাকি বোলারদের বোলিং নৈপুণ্যের দিকে তাকানোই কঠিন। এরচেয়ে খারাপ অবস্থা ছিল ব্যাটিংয়ে। বিশ্বকাপ এবং তার আগে আয়ারল্যান্ডে হওয়া ত্রিদেশীয় সিরিজে যে ব্যাটিংটাই ছিল ভরসা, তারা চরম ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছেন। শুধু একাই মান-মর্যাদা রেখেছেন লড়াকু মিডলঅর্ডার মুশফিকুর রহীম। তিনি ৩ ম্যাচে দুই ফিফটিতে করেছেন ১৭৫ রান। তবে সিরিজের ব্যাটিং নৈপুণ্যে শফিউলের মতো সেরা হতে পারেননি, রান করার দিক থেকে মুশফিকের ওপরে আছেন দুই শ্রীলঙ্কান- এ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস (১৮৭ রান) ও কুসাল পেরেরা (১৮৩ রান)। শ্রীলঙ্কা সফরে যাওয়ার আগেই ভাঙ্গাচোরা দলে পরিণত হয় বাংলাদেশ। বিশ্বকাপ এবং তার আগে আয়ারল্যান্ডে হওয়া ত্রিদেশীয় সিরিজে দারুণভাবে গুছিয়ে উঠেছিল দলটি। কিন্তু বিশ্বকাপে বেশ কয়েকজনের বাজে পারফর্মেন্স এবং দলগতভাবে প্রত্যাশা মাফিক সাফল্য না পাওয়াতেই যেন দুর্বল হয়ে পড়ে বাংলাদেশ দল। সমালোচনার মুখে অনেকে যে হতাশায় মুষড়ে পড়েছেন এবার শ্রীলঙ্কা সফরে অপরিহার্য ওপেনার তামিম ইকবালের ব্যাটিং দেখেই তা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। বিশ্বকাপে প্রত্যাশিত নৈপুণ্য দেখাতে না পারা তামিম যেন সম্মোহিতের মতোই ব্যাট চালিয়েছেন, বের হতে পারেননি ব্যর্থতার বৃত্ত ভেঙ্গে। তিনি ৩ ম্যাচের সিরিজে করতে পেরেছেন ০, ১৯ ও ২ রান। সৌম্য সরকারও প্রথম দুই ম্যাচে ওপেনার হিসেবে নিজেকে ফিরে পাননি। তবে শেষ ম্যাচে ওয়ানডাউনে নেমে ৬৯ রানের একটি লড়াকু ইনিংস খেলে নিজের মানমর্যাদা বাঁচিয়েছেন। কঠোর সমালোচনা থেকে তিনি বেঁচে গেছেন আরেকটি কারণে। দলের মূল বোলাররা যেখানে পিটুনি খেয়ে তুলোধুনো হয়েছেন, সেখানে নিয়মিত বল হাতে আলো ছড়িয়েছেন সৌম্য। ৩ ম্যাচে ১৬ ওভার বোলিং করে ৪ উইকেট ঝুলিতে পুরেছেন। এর মধ্যে ক্যারিয়ারসেরা বোলিং (৫৬ রানে ৩ উইকেট) নৈপুণ্যও দেখিয়েছেন তৃতীয় ওয়ানডেতে। বিশ্বকাপে ব্যাটিং নৈপুণ্যে দুর্দান্ত ছিল বাংলাদেশ দল। কিন্তু সেই দলের অন্যতম পারফর্মার সাকিব আল হাসান ও লিটন দাস এবার শ্রীলঙ্কা সফরে যাননি ছুটির কারণে। নিয়মিত অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা ও ফর্মে থাকা পেস অলরাউন্ডার মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন একেবারে শেষ মুহূর্তে ইনজুরির কারণে ছিটকে যান দল থেকে। তবে বোলাররা একেবারেই সুবিধা করতে পারেননি বিশ্বকাপে। অন্যতম বোলিং ভরসা মুস্তাফিজুর রহমান প্রতি ম্যাচেই প্রচুর রান দিয়েছেন এবং উইকেট অনেকগুলো তার ঝুলিতে জমা হলেও অধিকাংশই ইনিংসের শেষদিকে পাওয়া। মাশরাফি, রুবেল হোসেনরাও নিয়মিত পিটুনি খেয়েছেন। কিন্তু বিশ্বকাপে ব্যাটিংবান্ধব উইকেট থাকার কারণে অনেকেই সেটিতে স্বাভাবিকভাবে নিয়েছিলেন। কিন্তু মুস্তাফিজ-রুবেল এবার শ্রীলঙ্কা সফরে সেই দু’হাত উজাড় করে রান দেয়ার অবস্থান থেকে সরে আসতে পারেননি। মুস্তাফিজ ২ ম্যাচে ৬.৯৪ ইকোনমিতে ১৮ ওভারে ১২৫ রান দিয়ে ৪ উইকেট শিকার করতে পেরেছেন। সেখানে সৌম্যই অনেক ভাল করেছেন অনিয়মিত পেসার হিসেবে। তুলনামূলকভাবে ২৯ বছর বয়সী শফিউলের পারফর্মেন্সও মুস্তাফিজের চেয়ে ভাল ছিল। ২০১৬ সালের পর আবার ওয়ানডে দলে ফিরেছিলেন তিনি বাংলাদেশ ‘এ’ দলের হয়ে খেলতে খেলতেই। শ্রীলঙ্কায় জাতীয় দলের সঙ্গে যাননি তিনি। তবে প্রস্তুতি ম্যাচে জাতীয় দলের বোলারদের বেহাল পরিস্থিতি আর ‘এ’ দলের হয়ে শফিউলের উজ্জ্বল পারফর্মেন্স নির্বাচকদের টনক নড়িয়ে দেয়। আবারও সুযোগ পান শফিউল এবং তিনটি ম্যাচই খেলেন। তিনি ৬ উইকেট নিয়ে সিরিজের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি হয়েছেন। কিন্তু রান খরচার ক্ষেত্রে মুস্তাফিজ, রুবেলের (৬.০৫) চেয়ে কোন অংশে কম ছিলেন না। শফিউলের ইকোনমি ৬.৬২! সেখানে সবচেয়ে উজ্জ্বল সৌম্য মাত্র ৫.৫৬ ইকোনমিতে। আর ব্যাটিংয়ে একমাত্র বলার মতো পারফর্মেন্স দেখিয়েছেন মুশফিক। তিনি প্রথম ম্যাচে ৬৭, দ্বিতীয় ম্যাচে অপরাজিত ৯৮ ও তৃতীয় ম্যাচে ১০ রান করেন। সাব্বির রহমান দ্বিতীয় ম্যাচে ৬০ রানের একটি ইনিংস খেলতে পেরেছিলেন আর শেষ ম্যাচে সৌম্য ৬৯। এ চারটিই অর্ধশতক এসেছে বাংলাদেশ দলের কাছ থেকে ৩ ম্যাচের সিরিজে। মুশফিকের রান ৩ ম্যাচে যেখানে ১৭৫, বাংলাদেশের আর কোন ব্যাটসম্যান ১০০ ছুঁতে পারেননি। এখানেই ব্যাটিংয়ের বাজে পরিস্থিতি ফুটে উঠেছে স্পষ্ট হয়ে। মুশফিকের পর ব্যাটে বাংলাদেশের সেরা সৌম্য ৩ ম্যাচে ৩১.৬৬ গড়ে ৯৫, সাব্বির ৩ ম্যাচে ২৬.০০ গড়ে ৭৮, মেহেদী হাসান মিরাজ ৩ ম্যাচে ১৭.৬৬ গড়ে ৫৩ ও তাইজুল ইসলাম ৩ ম্যাচে ৪২.০০ গড়ে ৪২ রান করেছেন। অর্থাৎ তামিম (২১ রান), মোহাম্মদ মিঠুন (২৬ রান), মোসাদ্দেক হোসেন (২৫ রান) ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের (১৮ রান) মতো স্বীকৃত ব্যাটসম্যানরা চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছেন।
×