ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

ডাক্তার নার্সসহ সবাই এখন ডেঙ্গু আতঙ্কে

প্রকাশিত: ১০:৫৮, ২ আগস্ট ২০১৯

ডাক্তার নার্সসহ সবাই এখন ডেঙ্গু আতঙ্কে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাইরেও ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ভয়াবহ রূপ নেয়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যে এখন মশা আতঙ্ক বিরাজ করছে। তারা চরম উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় রয়েছেন, কখন যেন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে পড়েন। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে ডেঙ্গুর আতঙ্কের কারণে অনেক সুস্থ মানুষও হাসপাতালে দৌড়াচ্ছেন। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার ভয় এখন সাধারণ মানুষের মধ্যে আর সীমাবদ্ধ নেই। চিকিৎসক ও নার্সদের মধ্যে ভয়াবহ আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। তাদের মধ্যেও ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার ভয় কাজ করছে। এদিকে এখন পর্যন্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ না থাকায় বিশেষজ্ঞরা ব্যক্তি সচেতনতাকে ভরসা হিসেবে উল্লেখ করছেন। এদিকে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা আরও বেড়ে গত ২৪ ঘণ্টায় এবার ১ হাজার ৭শ’ ছাড়িয়েছে। যা আগের দিনের চেয়ে ২৩৫ জন বেশি। ঘণ্টায় ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হচ্ছে ৭১ জনের বেশি। নতুন আক্রান্তদের মধ্যে এক হাজার ১৫০ জনই রাজধানীতে। সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৯ হাজার ৫১৩ জন বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশনস সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম। সারাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা দ্রুত বিস্তার লাভ করলেও এখন পর্যন্ত এটি নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ নেই। নেই কার্যকর কোন ওষুধও। সরকারের পক্ষ থেকে শুধু সচেতনতামূলক কার্যক্রম প্রচার করা হচ্ছে। এতে মানুষের উদ্বেগ দূর হচ্ছে না। ঈদের আগে এই মুহূর্তে স্কুল-কলেজ খোলা থাকায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন অভিভাবকরা। নিজেদের এবং সন্তানদের নিয়ে বেশি আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন তারা। কারণ প্রতিদিন বেড়েই চলেছে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা। সমন্বিত কোন পদক্ষেপ না থাকায় এবার চিকিৎসরা ডেঙ্গু থেকে রক্ষা পেতে ব্যক্তিগত সচেতনতার ওপর বেশি জোর দিতে বলেছেন। তারা বলছেন ব্যক্তিগত সচেতনতার মাধ্যমেই ডেঙ্গু থেকে মুক্তি লাভ করা সম্ভব হবে। আদ্-দ্বীন উইমেন্স মেডিক্যাল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক ডাঃ খাদিজা বেগম বলেন, ব্যক্তি সচেতনতার মাধ্যমে ডেঙ্গুর উৎপত্তিস্থল ধ্বংস করে অল্পদিনেই ডেঙ্গু প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে। এই মুহূর্তে ডেঙ্গুর প্রকোপ বন্ধ করতে প্রত্যেকের বাড়ির আশপাশে জমে থাকা পানি বিশেষ করে, টব, পলিথিন, ডাবের খোসা ইত্যাদিতে যাতে পানি জমে না থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্যক্তিকে যাতে কোন মশা আর কামড়াতে না পারে সেদিকেই সতর্ক থাকতে হবে। শিশুদের প্রতি সতর্ক থাকতে হবে। ব্যক্তি সচেতনতার এই উদ্যোগ নেয়া হলে মহামারী রোধ করা সম্ভব হবে উল্লেখ করেন। এদিকে পরিস্থিতি উদ্বেগজনক হলেও ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র সাঈদ খোকন তার এলাকায় ১১টি ওয়ার্ডকে ডেঙ্গুমুক্ত ঘোষণা দিয়েছেন। তবে তিনি পরিস্থিতি জটিল রূপ ধারণ করেছে উল্লেখ করলে এই মুহূর্তে আশার বাণী শোনাতে পারেননি। সেপ্টেম্বরের মধ্যে এটি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসার কথা জানালেন। যদিও স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক সেব্রিনা ফ্লোরা বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ না করতে পারলে ডেঙ্গু সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাড়বে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে কীটপতঙ্গের প্রজনন বেড়ে যাচ্ছে। জলবায়ুর পরিবর্তনে এই পরিবর্তিত পরিস্থিতিই হলো ডেঙ্গু বা চিকুনগুনিয়া সংক্রমণ। তারা বলেন, এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এডিস মশার প্রজনন বৃদ্ধিতে কোন কোন উপাদান কাজ করছে, তা খুঁজে বের করতে হবে এখনই। কোন এলাকায় কোন জাতের মশা জন্ম নেয়, তার পরিষ্কার চিত্র থাকা প্রয়োজন। প্রতিবছর একবার হলেও মশা নিধনে ব্যবহৃত বালাইনাশকে মশার প্রতিরোধ সক্ষমতা তৈরি হয়েছে কি না, তা মনিটরিং করা প্রয়োজন। ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া নিয়ন্ত্রণে মশা ও মানুষের পাশাপাশি অন্য উৎসগুলোও খতিয়ে দেখার আহ্বান জানান তারা। এদিকে স্বাস্থ্য অধিদফতরের সর্বশেষ তথ্যে দেখা গেছে, রাজধানীর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাইরেও ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে। বর্তমানে বিভিন্ন জেলার হাসপাতালগুলোতে তিন হাজার ৪৬৪ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসা নিচ্ছে। সারাদেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ২২২ জন চিকিৎসা নিচ্ছে ঢাকা মেডিক্যালে। নতুন-পুরনো মিলিয়ে বর্তমানে এ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে ৭০৬ ডেঙ্গু রোগী। মিটফোর্ড হাসপাতালে ৩৩৭, ঢাকা শিশু হাসপাতালে ১৩২, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ৩২২, হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতালে ১৯৭, বারডেম হাসপাতালে ৫৭, বিএসএমএমইউতে ১২৭, পুলিশ হাসপাতালে ১৬৫, মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ২৮৭, বিজিবি হাসপাতালে ৩০, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ৩০৫ ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসা নিচ্ছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। তারা জানিয়েছে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে সর্বমোট চার হাজার ৩৩২ জন ভর্তি আছে, এর মধ্যে সরকারী হাসপাতালগুলোয় রোগীর সংখ্যা এক হাজার ৬২৪ জন। রাজধানীর বাইরে ঢাকা বিভাগের জেলাগুলোতেই সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় এসব জেলার হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু নিয়ে ভর্তি হয়েছে ১৪৫ জন। মোট চিকিৎসাধীন আছে ২৭৬ জন। চট্টগ্রাম বিভাগে নতুন ডেঙ্গু রোগী ৯৮ এবং চিকিৎসাধীন ১৫৩ জন, খুলনা বিভাগে নতুন ৭৬ এবং চিকিৎসাধীন ১৮৩ জন, বরিশাল বিভাগে নতুন ৬৩ জন এবং চিকিৎসাধীন ১৫১ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে নতুন ৬২ এবং চিকিৎসাধীন ১৯৮ জন, রাজশাহী বিভাগে নতুন রোগী ৫৮ এবং মোট চিকিৎসাধীন ২১৪ জন, রংপুর বিভাগে নতুন রোগী ৩৩ এবং মোট চিকিৎসাধীন ১৪৬ জন, সিলেট বিভাগে নতুন শনাক্ত ৩১ জন এবং মোট হাসপাতালে ভর্তি ৮৯ জন বলে তারা জানায়। এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ডেঙ্গু আতঙ্ক বিরাজ করেছে। ক্রমবর্ধমান ডেঙ্গু আতঙ্কের মধ্যে গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে ডেঙ্গু শনাক্তকরণ ডিভাইস আনা হয়েছে। প্রথম দিনে ১৬৮ জন শিক্ষার্থীর রক্ত পরীক্ষা করে ১৩ জনের ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। এদিকে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় ক্যাম্পাস ও হল বন্ধ ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। এই দাবিতে উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র ইউনিয়ন। ক্যাম্পাস বন্ধ ঘোষণার দাবির সঙ্গে একাত্ম ডাকসু ভিপি নুরুল হকও। এদিকে রাজধানীতে সব স্কুল-কলেজগুলোতে ডেঙ্গু বিষয়ে সচেতনতামূলক কার্যক্রম নেয়া হয়েছে। ডেঙ্গু নিয়ে সচেতনতার কার্যক্রমের অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার ঢাকার ভিকারুন নিসা নূন স্কুল ও কলেজে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেখানে দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকন প্রধান অতিথি হিসেবে শিক্ষার্থীদের মধ্যে এ বিষয়ে সচেতন থাকার পরামর্শ দেন। এদিকে আদ্-দ্বীন উইমেন্স মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল রাজধানীর ইস্পাহানী স্কুল এ্যান্ড কলেজে ডেঙ্গু জ্বর প্রতিরোধ ও সচেতনতা বিষয়ে এক আলোচনা সভার আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে ডেঙ্গু প্রতিরোধে নিজ পরিবার, আত্মীয় স্বজন, প্রতিবেশী সবাইকে সচেতনতা বাড়াতে নির্দেশনা দেন বিশেষজ্ঞরা। এদিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ^বিদ্যালয়ে ডেঙ্গু রোগীর বিষয়ে এক সংক্ষিপ্ত প্রেস ব্রিফিং অনুষ্ঠিত হয়। এতে উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ডাঃ মুহাম্মদ রফিকুল আলম, ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে শয্যা সংখ্যা ১৫০ থেকে ২০০ শয্যায় উন্নীত করা হয়েছে। ডেঙ্গু সেলের মাধ্যমে ভর্তিকৃত রোগীদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা, ওষুধ, চিকিৎসাসেবা, বেড ভাড়া এমনকি আইসিইউ এবং এইচডিইউ সেবাও বিনামূল্যে দেয়া হচ্ছে। এছাড়াও ডেঙ্গু সেলে আসা রোগীদের প্রাথমিকভাবে সিবিসি, এনএস১, আইজিএম ও আইজিজি বিনামূল্যে করা হচ্ছে। ডেঙ্গু মোকাবেলায় সরকারের পাশাপাশি আশিয়ান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল নানা উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। বুধবার ‘কার্ডিয়াক ইউনিট’ এবং আধুনিক মানের সুপারশপ ‘পয়সা বাজার’-এর শুভ উদ্বোধনকালে ঢাকা-১৮ আসনের সংসদ সদস্য সাহারা খাতুন বলেন, আমরা সচেতন থাকলেই ডেঙ্গু থেকে রক্ষা পাব। মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়া ডেঙ্গু প্রতিরোধ করতে হবে। সে জন্য সচেতনতার কোন বিকল্প নেই। ‘ডেঙ্গু আতঙ্ক নয়, সচেতনতা ও প্রতিরোধ প্রয়োজন’-এ সেøাগানে ঢাকার সন্নিকটে সাইনবোর্ড মোড়, সিদ্ধিরগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জের প্রো-এ্যাকটিভ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় এক র‌্যালির আয়োজন করে। র‌্যালিতে উপস্থিত ছিলেন প্রো-এ্যাকটিভ মেডিক্যাল কলেজ এ্যান্ড হসপিটাল লিমিটেডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মোঃ খালেকুজ্জামান। সারাদেশের ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর : নওগাঁ ॥ ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত সদর হাসপাতালে আরও ৫ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। এই নিয়ে জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৯ জনে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ নিয়ে এদিন দুপুরে জেলা প্রশাসক মিলনায়তনে জরুরী মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শেরপুর ॥ ৭ দিনের ব্যবধানে শেরপুরে ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে ২৫ জন। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত কেবল জেলা সদর হাসপাতালেই ভর্তি রয়েছেন ১৪ ডেঙ্গু রোগী। ইতোমধ্যে আরও ৯ জন রোগী চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরে গেলেও একজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। বরগুনা ॥ প্রতিদিনই বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। বৃহস্পতিবার বেলা ১২টা পর্যন্ত বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে নতুন করে আরও ৭ ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। বরগুনার সিভিল সার্জন ডাঃ হুমায়ুন শাহিন খান জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত বরগুনায় ২৭ জন ডেঙ্গু রোগী পাওয়া গেছে। যাদের মধ্যে ১৯ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। বাকিরা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। মাদারীপুর ॥ গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৭জন আক্রান্ত হয়ে মাদারীপুরে বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা পর্যন্ত ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল ৩০জনে। এদের মধ্যে ২৫ জনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা ও ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তাদের মধ্যে বুধবার রাতে ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় শিবচরের ফারুক খান নামের এক যুবক মারা গেছে। সে শিবচর উপজেলার পুরাতন ফেরিঘাট এলাকার সলু বেপারীর কান্দির বাবু খানের ছেলে। সে কাঁঠালবাড়ি ফেরিঘাট এলাকার একটি হোটেলে বাবুর্চির কাজ করত। বরিশাল ॥ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে বরিশালে। গত ২৪ ঘণ্টায় শেবাচিম হাসপাতালে নতুন করে ৩৩ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছেন। যার মধ্যে তিনজন শিশু, ২৪ জন পুরুষ ও ছয়জন নারী রয়েছেন। এ নিয়ে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত বরিশাল শেরে-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে ৭৯ ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন। চিকিৎসাধীন রোগীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, হাসপাতাল থেকে তারা সব ওষুধ পাচ্ছেন না। ডেঙ্গু রোগীদের জন্য এখনও কোন আলাদা ওয়ার্ড চালু করা হয়নি। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডগুলোতে তীব্র জায়গা সঙ্কট রয়েছে। এ বিষয়ে শেবাচিম হাসপাতালের পরিচালক ডাঃ বাকির হোসেন বলেন, রোগীদের সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিত করা হচ্ছে। তবে কিছুটা জায়গা সঙ্কট রয়েছে। ভোলা ॥ ভোলার বিভিন্ন উপজেলায় ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগী ছড়িয়ে পড়েছে। ভোলা সদর ও লালমোহন উপজেলার পর এবার চরফ্যাশন উপজেলাতেও ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত আরও ২ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। গত প্রায় ২ সপ্তাহে ওই ২ জনসহ মোট ১৬ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। চুয়াডাঙ্গা ॥ প্রতিদিনই চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। গত দু’দিনে ডেঙ্গু ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এখানে পাঁচজন ভর্তি হয়েছেন। এ নিয়ে বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ৪ নারীসহ ১৯জন। মানিকগঞ্জ ॥ ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে । গত এক সপ্তাহে এই জেলায় মোট ৫৪ জন ডেঙ্গু রোগী জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এদের মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৭ জন। আর উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে ৭ জনকে। বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত ৪০ রোগী ভর্তি রয়েছে জেলা সদর হাসপাতালে। মাগুরা ॥ ডেঙ্গু রোগ আক্রান্ত আটজন মাগুরায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। তাদের আলাদা রুমে রেখে চিকিৎসা চলছে। জরুরী বিভাগের চিকিৎসক ডাঃ আরিফুর রহমান জানান, আক্রান্তদের কারও অবস্থাই মারাত্মক নয়। তাদের চিকিৎসা চলছে। এরা মাগুরাসহ বিভিন্ন জেলা থেকে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। কুড়িগ্রাম ॥ নয় দিনে ২৪ ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। এরমধ্যে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে ১৫জন। বাড়িতে চলে গেছে একজন এবং চারজন ঢাকায় চিকিৎসাধীন রয়েছে। এছাড়াও বৃহস্পতিবার কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে টেস্টের পর চার ডেঙ্গু রোগ বহনকারীকে শনাক্ত করা হয়েছে। এদের সকলেই আগে ঢাকায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে বাড়িতে ফিরে এসেছিল। দ্বিতীয় দফা পরীক্ষায় আবারও ডেঙ্গুবাহী জীবাণু পাওয়া গেছে। কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ আবু মোঃ জাকিরুল ইসলাম জানান, বৃহস্পতিবার থেকে হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগের পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজ শুরু হয়েছে। দুপুর পর্যন্ত ১২ জনের পরীক্ষা করা হয়েছে। আতঙ্কিত হওয়ার মতো কিছু নেই। স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা প্রদান করা হচ্ছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া ॥ এ পর্যন্ত ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়েছে ৪০ জন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন পাঁচজন। আক্রান্তদের বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবাসহ সব ধরনের সহায়তা দেয়া হচ্ছে। এদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মশক নিধন ও পরিচ্ছন্নতা সপ্তাহ উপলক্ষে জেলা প্রশাসনের আয়োজনে জনসচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ ও প্রচার চালানো হয়েছে। খাগড়াছড়ি ॥ ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। আজ বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত আরও নয় ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে গত ৪ দিনে নার্স ও শিশুসহ খাগড়াছড়ি সদর আধুনিক হাসপাতালে ডেঙ্গু জ¦রে আক্রান্ত হয়ে ১৫ জন ভর্তি হয়েছে। তার মধ্যে ৪ জন চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরে গেলেও খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে আরও ১১ জন ভর্তি রয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে একজন শিশু ছাড়া সবাই ঢাকা থেকে আক্রান্ত হয়ে এসেছে। ফলে খাগড়াছড়িতেও ডেঙ্গু আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। নেত্রকোনা ॥ আরও তিনজন ডেঙ্গুজ¦রে আক্রান্ত হয়েছে। তবে তারা সবাই ঢাকা থেকে আক্রান্ত হয়ে এলাকায় এসেছেন। এ তিনজনকে নিয়ে এ পর্যন্ত জেলার ৮ রোগী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। এদিকে ডেঙ্গু শনাক্তকরণের জন্য জেলা সদর হাসপাতালে এখনও পর্যাপ্ত সংখ্যক রি-এজেন্ট সরবরাহ করা হয়নি। মৌলভীবাজার ॥ জেলায় এ পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৯ জনে। আক্রান্তরা মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালসহ প্রাইভেট ক্লিনিকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এর মধ্যে ৩ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। বৃহস্পতিবার দুপুর ২টায় সার্কিট হাউস এলাকায় পৌরসভার উদ্যোগে এডিস মশার উৎপত্তি স্থল নিধনে ফগার মেশিনের উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক নাজিয়া শিরিন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন পৌর মেয়র মোঃ ফজলুর রহমান, সিভিল সার্জন ডাঃ সাহাজান কবির চৌধুরী। টাঙ্গাইল ॥ বেড়েই চলেছে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। গত ২৪ ঘণ্টায় বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ৪৯ ডেঙ্গু রোগী ভর্তি রয়েছেন। এছাড়া অর্ধশতাধিক রোগী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে জেলার বিভিন্ন ক্লিনিক ও হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা নিচ্ছে। টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে ২৪ জন, মির্জাপুর কুমুদিনী হাসপাতালে ২৩ জন এবং সখীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি রয়েছে। এসব রোগীকে বিশেষ চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। দৌলতপুর, কুষ্টিয়া ॥ দৌলতপুরেও ডেঙ্গু রোগ ছড়িয়ে পড়েছে। ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে দৌলতপুর হাসপাতালে ২জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। এদের মধ্যে একজন নারী রয়েছেন। দৌলতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ অরবিন্দ কুমার জানান, একজন চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন। ঢাকা থেকে আসা স্বপ্না নামে একজন রোগী গত মঙ্গলবার দৌলতপুর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তার চিকিৎসা চলছে। আমতলী,বরগুনা ॥ উপজেলায় ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়েছে। গত চারদিনে দুই জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়েছে। এতে মানুষের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। এডিস মশা প্রতিরোধে এখনই কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন তারা। ২৮ জুলাই থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত চারদিনে হাসপাতালে জ্বর নিয়ে ৮ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। নরসিংদী ॥ স্টাফ রিপোর্টার নরসিংদী থেকে জানান, নরসিংদীতে গত দুইদিনে শুধু সরকারী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২১ রোগী। ফলে ডেঙ্গু আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে জেলাজুড়ে। ডেঙ্গু নিয়ে আতঙ্ক বাড়লেও সরকারী সদর হাসপাতালে ডেঙ্গু শনাক্তে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই। নেই রক্তের সেল কাউন্টার মেশিন। তাই রোগীদের বাধ্য হয়েই বেসরকারী ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো ছুটতে হয়।
×