ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

চিকিৎসা সামর্থ্যরে চেয়ে ঢাকা মেডিক্যালে ডেঙ্গু রোগী বেশি

প্রকাশিত: ১০:৫৮, ২ আগস্ট ২০১৯

চিকিৎসা সামর্থ্যরে চেয়ে ঢাকা মেডিক্যালে ডেঙ্গু রোগী বেশি

নিখিল মানখিন ॥ ছাড়পত্র পাওয়া রোগীর চেয়ে নতুন রোগীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় শয্যা ও চিকিৎসাসেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে নগরীর সরকারী হাসপাতালগুলো। চিকিৎসাধীন থাকলেও আতঙ্ক কাটছে না রোগী ও অভিভাবকদের। নির্ধারিত শয্যা, জনবল ও চিকিৎসাসামগ্রীর তুলনায় কয়েকগুণ বেশি রোগী ভর্তি হওয়ায় হাসপাতালের স্বাভাবিক চিকিৎসাসেবা চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। জটিল রোগীদের ছাড়পত্রও দিতে পারছে না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। অতিরিক্ত সময় দিয়েও ডেঙ্গু রোগী সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স ও কর্মচারীরা। এতে স্বাভাবিক চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে ডেঙ্গু রোগীরা। অতিরিক্ত রোগীতে মেঝে বারান্দাসহ হাসপাতালের যত্রতত্র যখন চিকিৎসাধীন ডেঙ্গু রোগী কষ্টের সীমা নেই। সব ডেঙ্গু রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হলে অন্য রোগীদের হাসপাতালে ঠাঁই হবে না বলে জানান চিকিৎসকরা। বহির্বিভাগ থেকেই কম ঝুঁকিপূর্ণ ডেঙ্গু রোগীদের প্রেসক্রিপশন দিয়ে বাসায় পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে। রাজধানীর সরকারী হাসপাতাল সরেজমিন ঘুরে ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসার এই হলে চিত্র মিলেছে। ডেঙ্গু রোগী সবচেয়ে বেশি ঢাকা মেডিক্যালে। ডেঙ্গু রোগী ছাড়াই এ হাসপাতালে নির্ধারিত শয্যা সংখ্যার কয়েকগুণ বেশি বিভিন্ন ধরনের রোগী ভর্তি থাকে। ভর্তি রোগীকে এখান থেকে ফিরিয়ে দেয়া হয় না। সারাদেশ থেকে রোগী রেফার্ড হয়ে এই হাসপাতালে আসে। এ অবস্থায় ডেঙ্গু রোগীর আশঙ্কজনক সংখ্যা বৃদ্ধিতে হাসপাতালে অসহনীয় চাপ পড়েছে। কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি চিকিৎসাধীন রোগীদেরও পোহাতে হচ্ছে দুর্ভোগ। শয্যা সংকুলান না হওয়ায় মেঝে ও বারান্দায় ডেঙ্গু রোগীর ছড়াছড়ি। এদের একজন মেরুল বাড্ডার ফার্নিচার ব্যবসায়ী শাহ আলমের শিশু সন্তান জুবায়ের (১২)। বৃহস্পতিবার শাহ আলম জনকণ্ঠকে জানান, এলাকার হাসপাতালের পরীক্ষায় ডেঙ্গু রোগ ধরা পড়ে। এজন্য বুধবার ছেলেকে ভর্তি করা হয়েছে ঢাকা মেডিক্যালে। শিশুটির জ¦র কমছে না, দুর্বল হয়ে পড়েছে। খাবার রুচি নেই। তবে দেহের তাপমাত্রা কমেছে। রোগীর অবস্থা সম্পর্কে চিকিৎসকরা কিছু বলেননি। টেনশনে আছি। চিকিৎসক ও নার্স দেখে যাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে শাহ আলম বলেন, শয্যা না থাকায় অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। চলাফেরার জায়গায়ই রোগীর বিছানা কোনদিকে যাওয়ার জায়গা নেই। অবশ্য ছেলের চিকিৎসা করানোর সুযোগ পাওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি। জানা গেছে, ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকলে প্রয়োজনে ঢাকা মেডিক্যালের শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে একটি ইউনিট খোলা হবে। জানান, হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডাঃ এ কে এম নাছির উদ্দীন। তিনি বলেন, ডেঙ্গু রোগীদের সেবার জন্য ইতোমধ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ মোতাবেক চিকিৎসক, নার্স ও অন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত ছুটি বাতিল ও কর্মস্থল ত্যাগ না করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আমাদের এখানে যারা ভর্তিযোগ্য তাদের ভর্তি রেখে বিনামূল্যে ডেঙ্গুর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানো হচ্ছে। কম ঝুঁকিপূর্ণ তাদের ভর্তি করা হচ্ছে না। ডাঃ নাছির উদ্দীন বলেন, আমাদের এখানে ডেঙ্গু রোগীদের মধ্যে শিশুর সংখ্যাই বেশি। প্রয়োজনে ঢামেক হাসপাতালের পুরাতন ভবনে অস্থায়ী আনসারদের থাকার স্থানে বোবা শিশুদের চিকিৎসা দেয়া হবে। ডেঙ্গু মোকাবেলায় পর্যাপ্ত ওষুধ রয়েছে। বাইরের হাসপাতাল থেকে অনেক ‘ক্রিটিক্যাল কেস’ ঢাকা মেডিক্যালে ডেঙ্গু আক্রান্তদের মৃত্যুর সংখ্যা বেশি। তবে আমরা খুবই সফলভাবে এসব সামলাচ্ছি। রোগীদের আধুনিক ও যুগোপযোগী চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। আমরা হাসপাতালের ‘ক্যাপাসিটি’ বাড়াচ্ছি। ডাক্তার, নার্স সবাইকেই আগাম প্রশিক্ষণ হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নতুন করে অনেক যন্ত্রপাতি দিয়েছে। সেগুলো কাজে লাগাচ্ছি। আরও বেশি রোগী এলেও হাসপাতাল তাদের চিকিৎসা দিতে প্রস্তুত। জানান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডাঃ নাছির উদ্দীন । ঢাকা মেডিক্যালের নিয়ন্ত্রণকক্ষ সূত্রে জানা গেছে , এই হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী জানুয়ারিতে ৩, মার্চে ৪, এপ্রিলে ৩, মে মাসে ৮, জুনে ১৩৫, জুলাইতে ২২৪২ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে। এভাবে মোট ২৩৯৫ ডেঙ্গু রোগীর মধ্যে ১৭৩৩ জন চিকিৎসা নিয়ে চলে গেছেন। এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে দশ জনের। আর বৃহস্পতিবার বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত ৬শ’ বেশি ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে রয়েছে বলে জানায় ঢামেক কন্ট্রোল রুম। এদিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ^বিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন ডেঙ্গু রোগীদের দুর্ভোগ কিছুটা কম। এখানে শয্যার বাইরে রোগী ভর্তি করা হয় না। তবে ডেঙ্গু জ¦রে আক্রান্ত রোগীদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে বিশ^বিদ্যালয়ের চিকিৎসাসেবা সেলের শয্যা সংখ্যা ৪০ থেকে বাড়িয়ে দেড়শ উন্নীত করা হয়েছে। বর্তমানে বিএসএমএমইউর মেডিসিন ওয়ার্ড, শিশু মেডিসিন ওয়ার্ড, ডেঙ্গু চিকিৎসা সেল, কেবিন ও আইসিইউতে ডেঙ্গু রোগী রয়েছেন। বিশ^বিদ্যালয়ের বহির্বিভাগে ডেঙ্গু টেস্টসহ চিকিৎসাসেবা নিতে আসা জ¦রে আক্রান্তদের উপচেপড়া ভিড়। মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসকের কক্ষ থেকে বেরিয়ে এলেন হোসেনী দালান রোডের হাকিম (২৯)। পেশায় তিনি ফলমূল বিক্রেতা। জানান, তিন দিন ধরে তিনি জ¦রে ভুগছেন। টেস্টে ডেঙ্গু শনাক্ত হয় তাঁর। তবে তাঁর শরীরের তাপমাত্রা ১০০ এর নিচে নেমে এসেছে। আতঙ্ক দূর করতেই তিনি এখানে এসেছেন। অবস্থার উন্নতি হওয়ায় আমাকে এই হাসপাতালে ভর্তি রাখা হচ্ছে না বলে জানান হাকিম। ডি ব্লকের ১৬ তলায় মেডিসিন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন ডেঙ্গু রোগীরা অন্য সব সরকারী হাসপাতালের তুলনায় ভাল চিকিৎসা পাচ্ছেন। তাদের একজন পলাশ আহমেদ (৪৩)। রামপুরা বনশ্রী এলাকায় তাঁর বাসা। তাঁর ছোট ভাই লুৎফর রহমান জনকণ্ঠকে জানান, তাঁর বড় ভাইয়ের অবস্থা খুব বেশি ভাল না। প্লাটিলেট ও ব্লাড প্রেসার কমেছে। ভাল চিকিৎসাসেবা দেয়া হচ্ছে। কিন্তু রোগী নিয়ে খুব দুশ্চিন্তায় আছেন বলে জানান লুৎফর রহমান। ডেঙ্গু শনাক্ত হওয়ার পর বহির্বিভাগের চিকিৎসকরা অনেক রোগীকে ভর্তি হওয়ার অনুমতি দেন না অভিযোগ পাওয়া গেছে।
×