ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

কৃষকলীগের কর্মসূচী উদ্বোধনে লন্ডন থেকে ফোনে প্রধানমন্ত্রী

মানুষের ভাগ্যোন্নয়নের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর রক্তঋণ শুধতে হবে

প্রকাশিত: ১০:৫৭, ২ আগস্ট ২০১৯

মানুষের ভাগ্যোন্নয়নের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর রক্তঋণ শুধতে হবে

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্যোন্নয়নের মাধ্যমে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রক্তের ঋণ শোধ করতে হবে মন্তব্য করে বলেন, জাতির পিতা রক্ত দিয়ে গিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, দেশের প্রয়োজনে তিনি রক্ত দেবেন। তিনি ঠিকই রক্ত দিয়ে গেছেন। তার সেই রক্তের ঋণ আমাদের শোধ করতে হবে বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্যোন্নয়নের মধ্য দিয়ে। বৃহস্পতিবার বিকেলে ধানম-ি ৩২ নম্বরে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে শোকের মাসের প্রথম দিন বাংলাদেশ কৃষকলীগ আয়োজিত ‘রক্তদান ও বৃক্ষরোপণ’ কর্মসূচীর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে লন্ডন থেকে মোবাইল ফোনে যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ধানম-ি এলাকায় লেক কাটার পরে সমস্ত গাছ তিনি (বঙ্গবন্ধু) নিজে পছন্দ করে লাগিয়েছিলেন। তার যে প্রকৃতির প্রতি প্রেম-ভালবাসা, দেশের মানুষের প্রতি ভালবাসা এবং পরিবেশ রক্ষা করার যে প্রচেষ্টা সেটা আমরা সব সময় স্মরণ করি। আজকের এই দিনে শুধু রক্তদান কর্মসূচী নয়, তার সঙ্গে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচীও ঘোষণা করছি এই কারণে যে, জলবায়ু পরিবর্তনের হাত থেকে আমাদের বাংলাদেশটা রক্ষা করতে হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ যেহেতু একটি বদ্বীপ, তাই আমরা প্রতিনিয়তই প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখোমুখি হই। এই যুদ্ধ থেকে বাঁচার জন্য বাংলাদেশে আরও ব্যাপক হারে বৃক্ষরোপণ করা প্রয়োজন। সেই সঙ্গে এটা অর্থকরীও বটে। মানুষ বা পরিবার যে বৃক্ষরোপণ করে সেখান থেকে নানা ফলমূল হয়। তা নিজেরা যেমন ব্যবহার করতে পারে, বিক্রি করেও পয়সা পায়। যে কাঠ হয় সেটাও তারা বিক্রি করতে পারে। ভেষজ গাছ লাগালে সেটা আমাদের আয়ুর্বেদিক ওষুধের জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে প্রতিবছর বৃক্ষরোপণ কর্মসূচী পালন করা হয়। ১৯৮৪-৮৫ সাল থেকে আমরা এটা প্রতিবছর পালন করে আসছি। আজকে জাতির পিতার উদ্দেশে বাংলাদেশের পরিবেশ রক্ষা, মানুষের জীবনমান উন্নত করার লক্ষ্যে আমরা এই উদ্যোগটা গ্রহণ করেছি। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ১৫ আগস্ট উপলক্ষে আমরা নিয়মিত রক্তদান কর্মসূচী পালন করে থাকি। আপনার রক্ত একজন মানুষের জীবন বাঁচাতে সহযোগিতা করে। আর রক্ত দিলে, রক্ত কমে না। বরং রক্ত বাড়ে। একজন মুমূর্ষু রোগীর জীবন রক্ষা হয়। এই জীবন রক্ষার জন্য একটু ত্যাগ স্বীকার যে কোন মানুষের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটা মানবতার জন্য দরকার। তাই আমি এই উদ্যোগের জন্য আয়োজকদের ধন্যবাদ জানাই। আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ইদানীং আমাদের দেশে কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছে। সেটা হলো ডেঙ্গু প্রভাব। ডেঙ্গু প্রভাবমুক্ত করার জন্য আমি কতক নির্দেশনা দিয়েছি। আমি মনে করি- আমাদের পার্টির প্রত্যেকটা মানুষ সেটা মেনে, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা থেকে শুরু করে মশার বংশবিস্তার যাতে না হতে পারে তার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। নিজেকে সুরক্ষিত রাখা, পরিবারকে সুরক্ষিত রাখা। নিজের ঘরবাড়ি সব কিছুকে সুরক্ষিত করা হয়। সেভাবে সকলকে আহ্বান জানাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের দেশ আজকে এগিয়ে যাচ্ছে। জাতির পিতার স্বপ্ন ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত জাতি হিসেবে গড়ে তোলা। আজকে বাংলাদেশ সারা বিশে^ উন্নয়নের রোল মডেল। প্রবৃদ্ধি অর্জনে বাংলাদেশ বিশে^ অন্যতম স্থান দখল করেছে। মাথা পিছু আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। আমরা সবচেয়ে বড় বাজেট দিয়েছি। তিনি আরও বলেন, আমরা সবদিকে দৃষ্টি দিয়েছি। তৃণমূল পর্যন্ত মানুষের স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে যাচ্ছি। তাদের ছেলেমেয়ের লেখাপড়ার সুযোগ করে দিচ্ছি, উচ্চশিক্ষার সুযোগ করে দিয়েছি। গবেষণার সুযোগ করে দিয়েছি। আমরা খাদ্য নিরাপত্তা দিয়েছি এবং পুষ্টির জন্য আমরা পদক্ষেপ নিয়েছি। বাংলাদেশ সার্বিকভাবে আজকে এগিয়ে যাচ্ছে। আবেগঘন কণ্ঠে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, আমার কাছে একটা কথাই মনে হয়- যখন একটি মাত্র ভাল কাজ হয় তখন দেশের মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নতি হয়। যখন মানুষ একটু ভাল থাকে, আমি চিন্তা করি- আমার আব্বার আত্মা শান্তি পায়। নিশ্চয়ই তিনি বেহেস্ত থেকে দেখেন আজকে তার দেশের মানুষ ক্ষুধায় কাতর হবে না, কষ্ট পাবে না। সে কথা চিন্তা করে, তার আদর্শকে বুকে ধারণ করেই জীবনের সব কিছু ত্যাগ করে দেশের মানুষের সেবা করে যাচ্ছি। আমি দেশবাসীর দোয়া চাই। শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের সহযোগী সংগঠনের সকল নেতাকর্মীদের যারা মুজিব আদর্শে বিশ্বাসী, আমি তাদের এই আহ্বান জানাব- তারা যেন আর্তমানবতার সেবা করে। মানুষের জন্য আত্মত্যাগ করে। এর থেকে যে তৃপ্তি পাওয়া যায়, আনন্দ পাওয়া যায় তা ত্যাগেই পাওয়া যায়। মহৎ আদর্শের জন্য মহান ত্যাগের প্রয়োজন- বলেছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি রক্ত দিয়ে গেছেন। তার রক্তের ঋণ আমাদের শোধ করতে হবে বাংলার মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের মাধ্যমে। এই জাতির জন্য বঙ্গবন্ধু সারা জীবন কষ্ট করেছেন। জেল-জুলুম-অত্যাচার সহ্য করেছেন। আমাদের আওয়ামী লীগের শত শত নেতাকর্মী জীবন দিয়েছেন। কত দুঃখ-কষ্ট ভোগ করেছেন। আজকে দেশে স্বাধীন। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ কখনও বৃথা যেতে পারে না। কাজেই এই দেশকে আমরা গড়ে তুলব ইনশা আল্লাহ! ২০২০ সালের মধ্যে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী এবং ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী আমরা উদযাপন করব। আমরা দারিদ্র্যের হার কমিয়েছি। আরও কমাব। জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলব এ সময় রক্তদান কর্মসূচী যেন আরও ব্যাপকভাবে হয়, যাতে মুমূর্ষু রোগী জীবন ফিরে পায়- সে আহ্বানও জানান প্রধানমন্ত্রী। আওয়ামী লীগের দলীয় নেতাকর্মীসহ সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে সরকার প্রধান বলেন, অন্ততপক্ষে একজন তিনটা করে বৃক্ষরোপণ করবেন। একটি বনজ, একটি ভেষজ ও একটি ফলদ বৃক্ষ। এর থেকে যত বেশি পারেন, আপনারা সকলে গাছ লাগান। উপকূলীয় অঞ্চলের জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য সবুজ বেষ্টনী আমাদের একান্তভাবে দরকার। সেই অঞ্চলে যারা বসবাস করেন, আপনাদেরও ব্যাপকভাবে বৃক্ষরোপণ করা দরকার। সেই সঙ্গে আমরা আমাদের পরিবেশ যেন রক্ষা করতে পারি। তিনি বলেন, আমি শীঘ্রই দেশে ফিরে আসব। এখানে আমরা ৩ তারিখে জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠান পালন করতে যাচ্ছি প্রবাসী বাঙালীদের নিয়ে। শোকের মাসের কর্মসূচীর অংশ হিসেবে কৃষকলীগ রক্তদান কর্মসূচীর আয়োজন করে। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি অনুষ্ঠানস্থল থেকে লন্ডনে চিকিৎসার জন্য অবস্থানরত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মোবাইলযোগে সংযুক্ত করেন। তার ফোনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বক্তব্য দেন, যা মাইক দিয়ে শোনানো হয়। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের শেষদিকে ওবায়দুল কাদের তাকে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করার অনুরোধ জানান। পরে প্রধানমন্ত্রী রক্তদান ও বৃক্ষরোপণ কর্মসূচীর উদ্বোধন ঘোষণা করেন। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে ‘কৃষকের কণ্ঠ’ শীর্ষক একটি গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। এরপর রক্তদান কর্মসূচী শুরু হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ও সাবেক কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক, সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক এবং তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, কৃষি বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, কৃষক লীগ সভাপতি মোতহার হোসেন মোল্লা ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সমীর চন্দ্র। এদিকে টেলি কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বক্তব্য দেয়ার পর ওবায়দুল কাদের ঘোষণা দেনÑ প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর আর কারও বক্তব্য দেয়া সম্ভব নয়। এরপর কৃষকলীগের উদ্যোগে রক্তদান কর্মসূচী অনুযায়ী রক্তদানে ইচ্ছুক ব্যক্তিকে রক্তদানের আহ্বান জানান ওবায়দুল কাদের। যারা রক্তদান করেন তাদের কৃষকলীগের পক্ষ থেকে শোকের মাসের প্রতীক হিসেবে একটি করে কালো পাঞ্জাবি দেয়া হয়। এরপর বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের জন্য দোয়া অনুষ্ঠিত হয়।
×