জলবায়ু পরিবর্তন ইতোমধ্যে মানুষের মৃত্যুর কারণ হয়ে উঠেছে। স্বাস্থ্যের ওপর জলবায়ু সঙ্কটের প্রভাব বিষয়ে নতুন এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। এতে আরও অনুমান করা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আগামী দিনগুলোতে শিশুদের মধ্যে কম বুদ্ধিমত্তা, অপুষ্টি ও বামনাকৃতি দেখা দিতে পারে। টাউনসভিলে থেকে টুভালু শীর্ষক এই প্রতিবেদনটি প্রস্তুত করে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নের মোনাশ বিশ্ববিদ্যালয়। অস্ট্রেলিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে স্বাস্থ্যের ওপর জলবায়ু জরুরী অবস্থার প্রভাব তুলে ধরতে ১২০ বিশেষজ্ঞের পর্যালোচনা করা জার্নাল নিবন্ধ থেকে বৈজ্ঞানিক গবেষণা বিশ্লেষণ করে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
এই প্রতিবেদনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০১৮ সালের একটি রিপোর্টের তথ্যের উল্লেখ করা হয়। এতে অনুমান করা হয়েছিল, ২০৩০ থেকে ২০৫০ সালের মধ্যে বৈশ্বিক উষ্ণতার প্রভাবে গরমজনিত অস্বস্তি, অপুষ্টি, ম্যালেরিয়া ও ডায়রিয়ায় প্রতিবছর অতিরিক্ত আড়াই লাখ মানুষের মৃত্যু হবে। তবে প্রতিবেদনের অন্যতম লেখক মিশা কোলম্যান জোর দিয়ে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে মৃত্যু ইতোমধ্যে ঘটছে। তিনি বলেন, নিশ্চিতভাবেই জলবায়ু সংক্রান্ত ঘটনায় মানুষ মারা যাচ্ছে। বিশেষ করে, গরমজনিত কারণে এখন মরছে মানুষ। কোলম্যান বলেন, উদাহরণস্বরূপ, ব্ল্যাক স্যাটারডে অগ্নিকা-ে (২০০৯ সালে ভিক্টোরিয়ায়) মানুষ সরাসরি পুড়ে মারা গিয়েছিল বলে আমরা জানি। কিন্তু ওই প্রচ- গরমে আরও প্রায় ৪০০ মানুষ গরমজনিত রোগ ও সর্দিগর্মিতে মারা যায়।
নেচার জার্নালে ২০১৭ সালের একটি প্রতিবেদনে অনুমান করা হয়েছিল ২১০০ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী ৭৫ শতাংশ মানুষ এমন দাবদাহের কবলে পড়বে যা মানুষের মৃত্যুর জন্য যথেষ্ট। ওই প্রতিবেদনে উঠে আসে, ঘূর্ণিঝড়, বন্যা ও দাবানলের মতো বিরূপ আবহাওয়া সরাসরি মানুষের মৃত্যু ঘটাচ্ছে। আর জলবায়ু পরিবর্তনের গৌণ প্রভাবে আরও ব্যাপক ও বিপজ্জনক অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
মোনাশ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউটের চেয়ারম্যান জন থাইটেস বলেন, বিরূপ আবহাওয়ার কারণে প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের কিছু বসতি এলাকায় বন্যা হচ্ছে। এর ফলে সেখানে ডায়রিয়াসহ নানা ধরনের রোগ ছড়িয়ে পড়ছে, যা মানুষের জন্য খুবই মারাত্মক হতে পারে, বিশেষ করে শিশুদের জন্য।
প্রতিবেদনে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়েছে যে, বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে মশার আবাসস্থল বাড়বে। এর ফলে আরও অধিক সংখ্যক মানুষ ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া ও জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত হবে। এছাড়া নিপাহ ভাইরাস ও কিউ জ্বরসহ অন্যান্য রোগ অস্ট্রেলিয়ায় ছড়িয়ে পড়বে। এই কিউজ্বর ইতোমধ্যে টাউনসভিলে দেখা দিয়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সবচেয়ে বেশি শিশুদের ওপর পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। প্রতিবেদনে একটি গবেষণার উল্লেখ করা হয়, যেখানে বলা হয়েছে ২০১১ সালে ব্রিসবেনে বন্যার সময় যেসব নারী গর্ভবতী ছিলেন তাদের সন্তানরা কম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন ও কম চিন্তাশীল হয়েছে। এছাড়া উচ্চমাত্রার কার্বন-ডাই অক্সাইডের প্রভাবে প্রধান প্রধান খাদ্যশস্যের পুষ্টিমান কমে যাওয়ায় আগামী ১০ থেকে ২০ বছরের মধ্যে শিশুরা বেঁটে, রক্তাল্পতা ও অপুষ্টির শিকার হবে বলে ধারণা করা হয়েছে।
কোলম্যান বলেন, আমাদের শিশুদের ভবিষ্যত কী? এসব ঘটনা খুবই নিয়মিত, প্রায়ই ঘটছে এবং দ্রুত এটা কমার কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। -গার্ডিয়ান
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: