ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

তিনি খামেনির এজেন্ডা বাস্তবায়ন করেন ॥ মার্কিন অর্থমন্ত্রী

জারিফের ওপর নিষেধাজ্ঞা

প্রকাশিত: ০৯:৪৩, ২ আগস্ট ২০১৯

জারিফের ওপর নিষেধাজ্ঞা

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাভেদ জারিফের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ বিভাগ তার ওপর এ নিষেধাজ্ঞা জারি করে। অর্থবিভাগ জানায়, এই নিষেধাজ্ঞার ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জারিফের যেকোন প্রকার সম্পদ জব্দ করা যাবে। এছাড়া মার্কিন নিয়ন্ত্রিত কোন কোম্পানিতে তার সম্পদ থাকলে সেটাও জব্দ করা যাবে। মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্টিভেন মনুচিন বলেন, ‘ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির অপরিণামদর্শী এজেন্ডা বাস্তবায়ন করেন জাভেদ জারিফ।’ এক টুইটে জারিফ বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে কারণ তারা তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়নে তাকে হুমকি মনে করে। ইরানের পরমাণু কর্মসূচীর লাগাম টেনে ধরতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গত বছর ২০১৫ সালের আন্তর্জাতিক চুক্তি থেকে বেরিয়ে যায়। এরপর থেকে দুু’দেশের মধ্যে উত্তেজনা চরম আকার ধারণ করে। উপসাগরীয় অঞ্চলে সাম্প্রতিক কিছু ঘটনা সামরিক সংঘাতের দিকে নিয়ে যেতে পারে বলে উদ্বেগ ক্রমেই বাড়তে থাকে। এদিকে রাশিয়া, চীন ও ইউরোপীয় দেশগুলো যাতে ইরানের সঙ্গে বেসামরিক পরমাণু সহযোগিতা অব্যাহত রাখতে পারে সে বিষয়ে অধিকার পরিত্যাগের মেয়াদ বুধবার বৃদ্ধি করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। হোয়াইট হাউসের নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টন বুধবার বলেন, ‘এটা ৯০ দিনের স্বল্প সময়ের সময়সীমা বৃদ্ধি। আমি মনে করি এর অর্থ হচ্ছে আমরা তাদের পারমাণবিক কার্যক্রম খুব, খুব নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি।’ পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফকে বিশ্বে ইরান সরকারের প্রধান মুখপাত্র হিসেবে অভিহিত করেন। অর্থমন্ত্রী স্টিভেন মনুচিন বলেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইরানকে স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে যে, তাদের সাম্প্রতিক আচরণ পুরোপুরি অগ্রহণযোগ্য।’ মনুচিন আরও বলেন, ‘একদিকে ইরান সরকার জনগণকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রবেশের অধিকার প্রত্যাখ্যান করছে, অন্যদিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরকারের প্রচার ও ভুলতথ্য ছড়াচ্ছে। অন্যদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার জবাবে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ। তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপের বিষয়ে উপহাস করে বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞায় আমার বা আমার পরিবারের ওপর কোন প্রভাব পড়বে না। কারণ ইরানের বাইরে আমার কোন সম্পত্তি নাই।’ তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আমার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়ার কারণ হচ্ছে আমি বিশ্বে ইরানের প্রধান মুখপাত্র। এই সত্য কী সত্যিই বেদনাদায়ক?’ তিনি আরও বলেন, ‘আপনাদের এজেন্ডা বাস্তবায়নে আমাকে ব্যাপক হুমকি মনে করায় ধন্যবাদ।’ গত বছর পরমাণু বিষয়ে বিশ্বশক্তিধর কয়েকটি দেশের সঙ্গে ইরানের করা চুক্তি থেকে একতরফাভাবে বেরিয়ে যায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এরপর থেকে ইরানের ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ওয়াশিংটন। এতে ইরানের অর্থনীতি মারাত্মক বিপর্যয়ে পড়ে। তবে ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তির অন্যান্য পক্ষ চীন, ফ্রান্স, জার্মানি, রাশিয়া ও ব্রিটেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেন। তারা জানায়, তারা চুক্তির প্রতি পুরোপুরি অবিচল থাকবে। এক পর্যায়ে চুক্তির কিছু শর্ত লঙ্ঘন করে ইরান। দেশটি নির্ধারিত সীমার চেয়ে বেশি স্বল্প সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম মজুদ করে। এছাড়া তেহরান সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম উৎপাদনের পরিমাণও বাড়িয়ে দেয়। পরমাণু চুক্তি টিকিয়ে রাখার বিষয়ে গত সপ্তাহে ভিয়েনায় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকের পর ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি, রাশিয়া ও চীনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকের পর ইরানের এক সিনিয়র কর্মকর্তা বলেন, আলোচনার পরিবেশ ছিল ‘গঠনমূলক’। জুলাইয়ে জিব্রাল্টার উপকূল থেকে ইরানের তেলবাহী জাহাজ ‘গ্রেস ১’ ব্রিটেন জব্দ করলে যুক্তরাজ্য ও ইরানের মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। ইউরোপীয় নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে সিরিয়ায় তেল নিয়ে যাওয়ার সময় জাহাজটি আটক করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে সে দাবিকে অস্বীকার করে ইরান। এর কয়েকদিন পর ব্রিটিশ পতাকাবাহী জাহাজ স্টেনা ইমপেরো আটক করে ইরান। এই জাহাজ আটকের পেছনে ইরান যুক্তি দেখায় যে, এটি আন্তর্জাতিক জাহাজ চলাচল আইন লঙ্ঘন করেছে। হরমুজ প্রণালী দিয়ে ব্রিটেনের জাহাজ নিরাপদে চলাচল নিশ্চিত করতে রবিবার দেশটি দ্বিতীয় যুদ্ধজাহাজ পাঠায়। -এএফপি, বিবিসি ও গার্ডিয়ান
×