ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পরীক্ষায় দুধে কোন ক্ষতিকারক পদার্থ পাওয়া যায়নি

প্রকাশিত: ০৯:৩৭, ২ আগস্ট ২০১৯

পরীক্ষায় দুধে কোন ক্ষতিকারক পদার্থ পাওয়া যায়নি

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ দেশীয় প্রতিষ্ঠানের উৎপাদিত বাজারজাতকৃত দুধ পানে কোন স্বাস্থ্য ঝুঁকি নেই। আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন পরীক্ষাগারে পরীক্ষায় দেশে উৎপাদিত পাস্তুরিত ও অপাস্তুরিত দুধে কোন প্রকার ভারি ধাতু বা এ্যান্টিবায়োটিক পাওয়া যায়নি। কৃষি মন্ত্রণালয় বুধবার এই পরীক্ষার ফল প্রকাশ করে। ফল প্রকাশ করেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের পরিচালক (পুষ্টি) ড. মনিরুল ইসলাম। এ সময় কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক উপস্থিত ছিলেন। পরীক্ষার ফল বিশ্লেষণ করতে গিয়ে ড. মনিরুল ইসলাম বলেন, কৃষি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল ভারতের চেন্নাইতে অবস্থিত এসজিএস পরীক্ষাগারে সাতটি কোম্পানির দুধ পরীক্ষা করা হয়। এসব পরীক্ষায় সাত কোম্পানির দুধে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর কোন ভারি ধাতু বা এ্যান্টিবায়োটিকের উপস্থিতি পাওয়া যায়নি। পাশাপাশি অপাস্তুরিত একটি দুধের নমুনা পরীক্ষাতেও কোন প্রকার ক্ষতিকারক পদার্থের উপস্থিতি পাওয়া যায়নি। কোম্পানিগুলো হলো- মিল্কভিটা, আড়ং, ফার্মফ্রেশ, ইগলু, আরডি, সাভার ডেইরি ও প্রাণ। এ সময় কৃষিমন্ত্রী বলেন, দেশীয় কোম্পানিগুলোর উৎপাদিত পাস্তুরিত দুধের মান নিয়ে হাইকোর্টের আদেশের পর আমরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ি। আমাদের নির্বাচনী ইশতেহারে নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাবার নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। আর দুধ হচ্ছে সেই তালিকায় সবার ওপরে। তিনি বলেন, আমাদের দেশে যে সকল পরীক্ষাগার আছে সেগুলোর কোনটিরই ভারি ধাতু ও এ্যান্টিবায়োটিক পরীক্ষার সক্ষমতা নেই। দেশের কোন পরীক্ষাগরের রিপোর্টই পূর্ণাঙ্গ নয়। যে কারণে আমরা বিদেশ থেকে আন্তর্জাতিকমান সম্পন্ন পরীক্ষাগারে পরীক্ষার উদ্যোগ নেই। যদিও বিদেশে আন্তর্জাতিকমানের পরীক্ষাগারে এসব দুধ পরীক্ষা ব্যয় বহুল। তিনি বলেন, আমরা দেশের পাস্তুরিত দুধের নমুনা সংগ্রহ করে ভারতের চেন্নাইয়ে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন কোম্পানি এসজিএস এর পরীক্ষাগারে পরীক্ষার জন্য পাঠাই। বিশ্বের বহু দেশে এই কোম্পানির পরীক্ষাগার রয়েছে। এই পরীক্ষায় সাতটি কোম্পানির উৎপাদিত পাস্তুরিত দুধে কোন ক্ষতিকারক বস্তু পাওয়া যায়নি। ফলে এসব কোম্পানির দুধ পানেও আর কোন ঝুঁকি নেই। সম্প্রতি পাস্তুরিত ও অপাস্তুরিত দুধ উৎপাদন করা কোম্পানিগুলোর পণ্যে এ্যান্টিবায়োটিক, ভারি ধাতু, সালফার ড্রাগ রয়েছে এমন তথ্যের ভিত্তিতেই ওইসব কোম্পানির দুধ আন্তর্জাতিকমান সম্পন্ন পরীক্ষাগারে পরীক্ষা উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের পুষ্টি ইউনিট। গত ১৬ জুলাই এসব নমুনা ভারতের চেন্নাইয়ে অবস্থিতি আন্তর্জাতিক মান সম্পন্ন এসজিএস পরীক্ষাগারে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। এই ফল প্রকাশ উপলক্ষে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এ সময় কৃষি সচিব মো: নাসিরুজ্জামানও এবং মৎস্য ও পশু সম্পাদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের পুষ্টি বিভাগের পরিচালক ডা: মোহাম্মদ মঈনুল ইসলাম সংবাদ সম্মেলনে জানান, মিল্কভিটা, আড়ং, ফার্ম ফ্রেশ, ইগলু, আরডি, সাভার ডেইরি ও প্রাণ কোম্পানির পণ্যের ১৬টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। ভারতের চেন্নাই থেকে করা পরীক্ষায় মিল্কভিটার পণ্যে প্রতি কেজি দুধে স্টেপটোমাইসিন এ্যানিটবায়োটিকের উপস্থিতি ১০ মাইক্রোগ্রামের নিচে পাওয়া গেছে। যা মানবদেহের জন্য নির্ধারিত সর্বোচ্চ সহনীয় মাত্রার (প্রতি কেজিতে ২০০ মাইক্রোগ্রাম) অনেক নিচে বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। অন্যদিকে, প্রাণ কোম্পানির দুধে ক্লোরাফেনিকলের উপস্থিতি প্রতি কেজিতে ০.০৬ মাইক্রোগ্রাম পাওয়া গেছে। সেখানেও মানবদেহে ক্ষতিকারক কিছু নেই। কারণ এটারও সহনীয় মাত্রা ০.১ মাইক্রোগ্রাম। এছাড়া পরীক্ষাকৃত অন্য কোন কোম্পানির পাস্তুরিত ও অপাস্তুরিত দুধে কোন ক্ষতিকারক ধাতু, এ্যান্টিবায়োটিক বা সালফার জাতীয় কোন কেমিক্যাল নেই বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। সাংবাদিকদের প্রশ্ন ছিল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যে পরীক্ষা করেছে তা ভুল কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানিয়েছেন, তাদের গবেষণার তথ্যে গড়মিল রয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়নি। কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক জানিয়েছেন, যে সকল পরীক্ষায় ক্ষতিকারক কোন পদার্থ পাওয়া যায়নি, এই দুধ নিরাপদ। তবে দেশে বড় ধরনের কোন ল্যাবরেটরি না থাকাকে সীমাবদ্ধতা হিসেবে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, এটা আমাদের ব্যর্থতা। এখন পর্যন্ত দেশে খাদ্যপণ্যে ভারি ধাতু বা এ্যান্টিবায়োটিকের উপস্থিতি পরীক্ষার কোন গবেষণাগার নেই। সে কারণে অনেকেই দায়সারাভাবে প্রতিবেদন তৈরি করে, এতে মানুষ বিভ্রান্ত হয়। জনগণের বিভ্রান্তি দূর করতেই সরকার দুধ পরীক্ষার উদ্যোগ নিয়েছে। তবে আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে জায়গা চেয়েছি, প্রধানমন্ত্রী পূর্বাচলে দুই একর জায়গা দিয়েছেন। সেখানে আমরা একটি আন্তর্জাতিকমানের পরীক্ষাগার করব। এ সময় পশু সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব জানান, আমরা সাভারে একটি আন্তর্জাতিক মান সম্পান্ন পরীক্ষাগার তৈরি করছি। আগামী অক্টোবরে তা উদ্বোধন করা হবে। এক প্রশ্নের জবাবে কৃষিমন্ত্রী ড. রাজ্জাক বলেন, এসজিএস বিশ্বের একটি খ্যাতিমান কোম্পানি। এই কোম্পানির পরীক্ষায় কোন ক্ষতিকারক পদার্থ পাওয়া যায়নি। ফলে এসব দুধ নিরাপদ। দেশে ছোট ছোট অনেক দুধ উৎপাদনকারী কোম্পানি রয়েছে। আমরা ভবিষ্যতে সেগুলোর উৎপাদিত দুধও পরীক্ষা করব। তিনি বলেন, আমাদের সরকারের উদ্যোগে দেশে অনেক ছোট ছোট খামার গড়ে উঠেছে। এছাড়া গাভী পালন করেও অনেক দরিদ্র পরিবার সচ্ছল হয়েছে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে তারা দুধ বিক্রি করতে না পেরে খুব সমস্যায় রয়েছে। দুধের দাম অনেক কমে গেছে। প্রধানমন্ত্রীও এ বিষয়ে খুব উদ্বিগ্ন রয়েছেন। এ কারণেই আমরা দেশে উৎপাদিত পাস্তুরিত দুধ আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন পরীক্ষাগারে পরীক্ষার উদ্যোগ নেই।
×