ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বেসিক ব্যাংকের লোকসানি শাখা বন্ধ করে দেয়ার ঘোষণা

প্রকাশিত: ০৯:৩৬, ২ আগস্ট ২০১৯

বেসিক ব্যাংকের লোকসানি শাখা বন্ধ করে দেয়ার ঘোষণা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বেসিক ব্যাংকের যেসব শাখা টানা তিন বছর লোকসান করেছে বা কোন লাভ দিতে পারেনি সেসব শাখাগুলোকে বন্ধ করে দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বৃহস্পতিবার বেসিক ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে এক আলোচনা সভা শেষে এসব কথা জানান তিনি। সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া, অর্থমন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব আসাদুল ইসলাম প্রমুখ। অর্থমন্ত্রী বলেন, ২০০৯ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত অনেক দুর্নীতি হয়েছে। সে সময়ে নিয়োগ বাণিজ্যের মাধ্যমে যেসব ব্যাংক কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হয়েছে এবং বেনামে ঋণ দেয়া হয়েছে সেসব শাখাগুলো এখন আর লাভ করতে পারছে না। ওইসব শাখাগুলোর মধ্যে যেগুলো গত দুইবছর এবং বর্তমান বছরে লাভ দেখাতে ব্যর্থ হবে সেগুলো বন্ধ করে দেয়া হবে। যারা দুই বছর ধরে লোকসানে আছেন তারা এই বছর সতর্ক হয়ে যান বলেও মন্তব্য করেন তিনি। বেসিক ব্যাংকের মোট লোকসান ৩ হাজর ৬ কোটি টাকা উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, আমরা ঋণ পুনর্তফসিলের যে নীতিমালা করেছি তাতে অনেক টাকা আদায় হবে। তাদের ৯ শতাংশ সুদে ঋণ পরিশোধের জন্য ১১ বছর সময় দেয়া হবে। আমি কারও ঋণ মওকুফ করতে পারব না। তবে লজিস্টিক সার্পোট দেব। আপনারা পুরোনো ঋণ গ্রহিতাদের সঙ্গে আবার যোগাযোগ করুন। চিন্তা করতে হবে মাসে ১ কোটি টাকা বাঁচাতে পারলে অনেক সাশ্রয় হবে। পুরোনো ঋণ গ্রহিতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। তাদের আমার কাছে নিয়ে আসুন। আমাদের সফল হতে হবে। এজন্য আপনাদের কাজ আপনাদের করতে হবে। আমার কাজ আমি করব। বেসিক ব্যাংকে স্পেশাল অডিট করানো হবে জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, ঋণ জালিয়াতির সঙ্গে কর্মকর্তাদের যোগসাজশ থাকলে শাস্তি কমবেশি পেতে হবে। ঋণ বিতরণে কোন কর্মকর্তাদের অবহেলা আছে কি না তা খতিয়ে দেখা হবে। তবে যেসব খেলাপী ভুল স্বীকার করে আবার ব্যবসা করতে চায়, আমরা তাদের ক্ষমা করব। যেসব কর্মকর্তা কাজ করতে চান না তাদের বিরুদ্ধে একবারেই চূড়ান্ত ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি বলেন, আমি বদ দোয়া দিলে পেটে ব্যথা হবে। আমি বদ দোয়া দিতে চাই না। এ সময় কর্মকর্তাদের কাছে সব ঋণ খেলাপীর ঠিকানাও চান অর্থমন্ত্রী। বেসিক ব্যাংক ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য কি পরিকল্পনা নেবেন সেটা আমাদের কাছে শীঘ্রই উপস্থাপন করবেন। সে অনুযায়ী তহবিল কতটুকু ব্যবস্থা করা যায় সেটা করা হবে; আপনাদের পরিকল্পনার পরে আমরা আমাদের কাজ করব। এ সময় বেসিক ব্যাংকের কর্মকর্তাদের উদ্দেশে অর্থমন্ত্রী বলেন, আপনাদের জন্য দুটো অপশন আছে। হয় প্রফিট করে দেখান, না হয় ব্যাংক বন্ধ করে দিন। এছাড়া বেসিক ব্যাংকের যেসব শাখা গত দুইবছর ধরে লোকসানে আছে, সেগুলো চলতি বছরের মধ্যে লাভে না আসলে বন্ধ করে দেয়া হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন মন্ত্রী। বেশি বেতন নেয়া, কাজ না করা ও ঋণ বিতরণে অনিয়মের বিষয়ে কর্মকর্তাদের হুঁশিয়ারি দিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, ২১০০ কর্মকর্তার কি কাজ আমি জানি না। একদিকে বেশি বেতন নিচ্ছেন। বেতন কার কত হবে এটা নিজেরা বসে নতুনভাবে ঠিক করে নিলে লোকসান অনেকটা কমে যাবে। তিনি বলেন, একটি প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠান বেসিক ব্যাংক এভাবে ধ্বংস হতে পারে না। এই ব্যাংকটি টিকে থাকবে না বন্ধ হয়ে যাবে এটা কর্মকর্তাদের ওপর নির্ভর করে। আপনাদের নিজেদের বেতন নিজেদের আয় করে নিতে হবে। এ বছরই লোকসানি শাখাগুলো লাভে আনার চেষ্টা করবেন। তবে আমরা সব সময় সরকারী বা জনগণের ব্যাংক হিসেবে নার্সিং করে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করব। তিনি বলেন, বেসিক ব্যাংক আবার ঘুরে দাঁড়াবে আমার সেই বিশ্বাস আছে। এজন্য রাফ এ্যান্ড টাফ হয়ে কাজটি করে যেতে হবে। অর্থের অভাবে কোন প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয় না। বন্ধ হয় ম্যানেজমেন্টের কারণে। অর্থমন্ত্রী বলেন, যারা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে ফেরত না দিয়ে খেলাপী হয়েছে তাদের খুঁজে বের করা হবে। তাদের বিরুদ্ধে লোক লাগানো হবে। তাদের দেশের বাইরেও যেতে দেয়া হবে না। তাদের ঠিকানা চিহ্নিত করা হবে। এখনও সময় আছে ব্যাংকের টাকা ফেরত দিন। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মো: মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়া বলেন, এমডিকে ব্যাংক পরিচালনার জন্য পুরোপুরি ক্ষমতা দেয়া হোক, যাতে সকল কর্মকর্তাকে কঠোরভাবে চালাতে পারেন। সরকারী ব্যাংকে টাকা জমা রাখলে মার যাবে না এমন প্রচারণা চালিয়ে তহবিল বাড়াতে হবে। রিলায়েভল লোকদের ঋণ দিবেন; যাতে টাকা আদায় হয়। দুই শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে যেসব খেলাপী ঋণ পুনর্তফসিল করতে আসবে না, তাদের শক্তভাবে ধরতে হবে। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব আসাদুল ইসলাম বলেন, বেসিক ব্যাংক থেকে প্রচুর সম্পদ চলে গেছে। এটা জনগণের সম্পদ, এটা আমরা এ্যালাও করব না। এ অবস্থার পরিবর্তন করতে হবে। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ফজলুল হক বলেন, ২০০৯ সালে ৭০০শ’ জন জনবল দিয়ে ৭২টি শাখার কার্যক্রম চললেও এখন দুই হাজারের বেশি কর্মকর্তা। অন্যান্য ব্যাংকের কর্মকর্তাদের মতো বেসিক ব্যাংকের কর্মকর্তাদের দক্ষ ও উপযুক্ত করে গড়ে তুলতে হবে। আইসিটিতে দক্ষতা বাড়াতে হবে। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন, বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন এ মজিদ। ব্যাংকের সার্বিক চিত্র তুলে ধরেন ব্যাংকের এমডি রফিকুল আলম। অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রীকে ব্যাংকটির পক্ষ থেকে সম্মান সূচক ক্রেস্ট দিতে চাইলে; তা গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, আমি এখন ক্রেস্ট নেব না। এক বছরে যদি তারা ভাল করতে পারে তাহলে ক্রেস্ট নেব। আপনারা ভাল করেন আগামীতে আপনাদের সঙ্গে আমরা পিকনিক করব। এ সময় অর্থমন্ত্রীর পাশাপাশি অনুষ্ঠানে থাকা অন্যান্য অতিথিরাও ক্রেস্ট গ্রহণের অস্বীকৃতি জানান।
×