দেশের ৬২টি জেলায় এখন ডেঙ্গু প্রায় মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। মৃতের সংখ্যা প্রায় অর্ধশত। আক্রান্তের সংখ্যা ১৫ হাজার ছাড়িয়ে যাচ্ছে। নিরাময়যোগ্য কিন্তু ভয়াবহ এই রোগটির আতঙ্কে সারাদেশ শঙ্কিত ও ভীত। হাসপাতাল এবং স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রসমূহ ২৪ ঘণ্টা দায়িত্ব পালনের পরও হরেকরকম অভিযোগও আসছে বিভিন্ন স্থান থেকে। অনেক রোগী প্রতারণারও শিকার হচ্ছেন। কয়েকটি মানসম্পন্ন হাসপাতাল নিয়েও অনিয়ম ও প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে পরীক্ষা করতে যাওয়া রোগীদের পক্ষ থেকে। কয়েক রোগীর স্বজনদের ক্ষুব্ধ হওয়ার প্রমাণ এসেছে সংবাদমাধ্যমে। ইতোমধ্যে কয়েকটি হাসপাতালকে র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত অনিয়মের অভিযোগে কয়েক লক্ষ টাকা জরিমানা করেছে। স্বাস্থ্যসেবামূলক প্রতিষ্ঠানসমূহ যদি এমন অপকর্মে জড়িয়ে পড়ে সাধারণ মানুষের অসুস্থতার সুযোগ নিয়ে তা হলে বৃহত্তর মানবসেবার নৈতিক দায়বদ্ধতা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে বলা মুশকিল। যেখানে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে অসুস্থ রোগীদের যথার্থ সেবাদান নিশ্চিত হবে, সেখানে দুর্নীতির কালো ছায়া তার অশুভ কর্মতৎপরতা বাঞ্ছনীয় নয়। ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে সারাদেশ দুঃসহ ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। দেশের খ্যাতিমান চিকিৎসক আর চিকিৎসালয় সর্বক্ষণিক নজরদারিই শুধু নয়, রোগ চিহ্নিতকরণ, সেবা প্রকল্পের মানোন্নয়ন, সঙ্গে নিরাময়ের প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ করে সবাইকে সচেতন করতে বদ্ধপরিকার। সেখানে কিছু বেসরকারী হাসপাতালে এমন অপকর্মে সারাদেশ হতবাক। বিপদকালেও যদি মানুষের সঙ্গে প্রতারণায় জড়িত হয় তাহলে সেবা নামক শব্দটিই তার মর্যাদা হারাতে বসে।
এছাড়াও আছে মশা নিয়ে আর এক তেলেসমাতি। এডিস মশা নিধনে কার্যকরী ওষুধ ব্যবহার না করার অভিযোগও এসেছে। ইতোমধ্যে হাইকোর্ট জানতে চেয়েছে নতুন ওষুধ আনতে আর কত বিলম্ব হবে? ওষুধ ক্রয়-বিক্রয়ের ব্যাপারেও রয়েছে শক্তিশালী সিন্ডিকেট। এমন সংবাদও উঠে এসেছে, উত্তর সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক বাতিলকৃত মশা মারার ওষুধ দক্ষিণে নির্বিঘেœ, নির্দ্বিধায় কিনে ছড়ানো হচ্ছে। অকার্যকরণ ওষুধের কারণে এডিস মশার প্রকোপ প্রতিদিনই বাড়ছে। আক্রান্তের সংখ্যাও বৃদ্ধি পেতে সময় লাগছে না। সিন্ডিকেটের এমন দৌরাত্ম্য জাতির চরম দুঃসময়েও যদি তার কার্যক্রম চালিয়ে যায় তাহলে অসুস্থ, রোগাক্রান্ত সাধারণ মানুষ বিপন্ন অবস্থার শিকার হবে। তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে সুস্থ জনগোষ্ঠী এডিস মশার কবল থেকে কিভাবে মুক্তি পাবে? হাসপাতালের অনিয়ম-বিশৃঙ্খলা থেকে শুরু করে সিন্ডিকেটের কবল থেকে বের হয়ে নতুন ব্যবস্থাপনায় অতিসত্বর চলে আসবে, এমন পদক্ষেপ অত্যন্ত জরুরী। সময়ক্ষেপণ না করে সাধারণ মানুষের অসুস্থতাকে নিয়ে দায়িত্বহীনতার যে সব অভিযোগ এসেছে তার সবকিছুকে নজরদারিতে এনে সুষ্ঠু কর্মদ্যোতনা প্রয়োগ করা সময়ের দাবি। ভয়ঙ্কর ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপকে সামলাতে যা যা করণীয় এই মুহূর্তে সবটাই বাস্তবায়ন করা অসহায় সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা। শুধু সরকারী পদক্ষেপই নয়, সঙ্গে গণসচেতনায় ব্যক্তিক উদ্যোগগুলোও বিশেষ কার্যকরী ভূমিকা রাখবে বলেও দেশবাসী আশা করছে।