ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

একটা চরিত্রের লাইফস্টাইল আইকন হয়ে ওঠা

প্রকাশিত: ১২:১৮, ১ আগস্ট ২০১৯

একটা চরিত্রের লাইফস্টাইল আইকন হয়ে ওঠা

জেমস বন্ড রিভিউ পর্ব : ৩ অরিক গোল্ডফিঙ্গার নামের ধনুকুবের ওপর হঠাৎ ব্যাংক অব ইংল্যান্ড নজর দিতে বাধ্য হয়। দুনিয়া ছড়ানো কাজকারবার এই লোকের; আমস্টারড্যাম, জুরিখ, কারাকাস এবং হংকং-এ তার প্রচুর স্বর্ণ জমা আছে। কিন্তু স্বর্ণ বৈধভাবে বহন করার কোন রেকর্ড নেই, তাহলে কি সে গ্রীক মিথোলজির কিং মিডাসের মতো কোন অলৌকিক ক্ষমতা দিয়ে হাতের স্পর্শে সব স্বর্ণ বানিয়ে ফেলে? দুনিয়ার প্রথম সারির সব সামরিক বাহিনীর মূলভিত্তি কিন্তু অর্থনীতি। অর্থের দাপটেই গবেষণা থেকে শুরু করে যুদ্ধ সব চলে। আর বর্তমান বিশ্বের অর্থব্যবস্থা স্বর্ণনির্ভর। স্বর্ণকে যদি সত্যি ঈঐঊঅঞঈঙউঊ হিসাবে ব্যবহার করা যায় তবে অর্থনীতির নিয়ন্ত্রণ নেয়াও সম্ভব। গোল্ডফিঙ্গারের স্বর্ণের কারবার ভাল ঠেকল না ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের। এমআইসিক্সকে অনুরোধ করা হয় লোকটাকে যেন তারা আতশি কাঁচের নিচে আনে। গোল্ডফিঙ্গারকে অনুসরণ করতে গিয়ে শুরুতেই তারই বান্ধবীর সঙ্গে রসায়ন জমিয়ে ফেলে এমআইসিক্সের এজেন্ট জেমস বন্ড। সবসময় জিততে পছন্দ করা গোল্ডফিঙ্গারের অবশ্য এটা ভাল লাগেনি। বান্ধবীকে হত্যা করে তার শরীরে স্বর্ণের প্রলেপ দিয়ে রাখে গোল্ডফিঙ্গার। বন্ডকে কড়া নির্দেশ দেয়া হয় এ্যাসাইনমেন্টটা যেন ব্যক্তিগত প্রতিশোধে পরিণত না হয়। এই সিনেমাতে জেমস বন্ডকে প্রথম এ্যাস্টন মার্টিন নিয়ে গতির ঝড় তুলতে দেখা যায়। পরবর্তী প্রায় সব সিনেমাতেই ভদকা মার্টিনির মতো এ্যাস্টন মার্টিনও বন্ডের অবিচ্ছেদ্য হয়ে যায়। আবেগহীন বন্ড ছায়ার মতো গোল্ডফিঙ্গারের পিছু নেয়। কিন্তু এক পর্যায়ে ধরা পরে সে। কথা দিয়ে ভিলেনের আত্মসম্মানে আঘাত করে বন্ড। গোল্ডফিঙ্গার তাকে নিজের ভেলকি দেখানোর পর হত্যার সিদ্ধান্ত নেয়। কয়েদি বন্ড একপর্যায়ে আঁড়িপেতে জানতে পারে যুক্তরাষ্ট্রের ফোর্ট নক্সে ডাকাতি করার পরিকল্পনা করছে গোল্ডফিঙ্গার। ফোর্ট নক্সে সাড়ে দশ হাজার টন রিজার্ভ স্বর্ণ আছে। ডাকাতির জন্য পাহারায় থাকা ৬০ হাজার সৈন্যকে নাজি কায়দায় গ্যাস দিয়ে হত্যা করতেও দ্বিধা করবে না গোল্ডফিঙ্গার। কিন্তু মাত্র ৬০ জন লোক দিয়ে সাড়ে দশ হাজার টন লুট করতে ১২ দিন সময় লাগবে। আর এতদিনে শুধু আমেরিকা নয় বিশ্বের সব বাহিনীই ফোর্ট নক্স উদ্ধার করতে এগিয়ে আসবে। বন্ড উপলব্ধি করতে পারলো এক দানা স্বর্ণও লুট করার ইচ্ছা গোল্ডফিঙ্গারের নেই। গোল্ডফিঙ্গার ঠিক কীরকম ডাকাত যে বিশ্বের সব থেকে সুরক্ষিত ভল্ট ভাঙতে চায় কিন্তু সঙ্গে কিছুই নিতে চায় না। ডক্টর নো এবং ফ্রম রাশিয়া উইথ লাভের ব্যাপক সাড়া পাবার পর আগের দুই মুভির সম্মিলিত বাজেটের চেয়েও বেশি অর্থ ৩য় মুভিতে বরাদ্দ দেয় ইয়ন প্রডাকশন। ২৪টি বন্ড ফিল্মের মধ্যে ৩য় ব্যবসা সফল ফিল্ম এটি। গোল্ডফিঙ্গারে শন কনেরির স্যুটের স্টাইলটিও ভীষণ জনপ্রিয় হয়। বলা হয় জেমস বন্ড হচ্ছেন প্রতিটি পুরুষের মধ্যে আজন্ম লালিত স্বপ্নের সমন্বয়। লন্ডনের সব থেকে দক্ষ হাতে বানানো স্যুট পরে এ্যাস্টন মার্টিনে গতির ঝড় তুলে কোন রমণীর সঙ্গে অভিসার বা দিনশেষে ভদকা মার্টিনি, শেকেন নট স্টিয়ার্ডে চুমুক; উপন্যাস বা সিনেমার একটা চরিত্র ছাপিয়ে বন্ডের একটা লাইফস্টাইল হয়ে ওঠা পরিপূর্ণ হয় গোল্ডফিঙ্গার দিয়েই। স্পাইভিত্তিক ফিল্ম না হয়েও অনেক সিনেমাতে বন্ডের ছাপ পাওয়া যায়। পধঃপয সব রভ ুড়ঁ পধহ মুভিতে প্রতারক ফ্রাঙ্কের একবার জেমস বন্ড হওয়ার সাধ জাগে। গ্রে স্যুট আর এ্যাস্টন মার্টিন ডিবি ফাইভ নিয়ে সেও নিউইয়র্কের রাস্তায় নেমে পরে। গোল্ডফিঙ্গারের আরেকটি দিক তখনকার দর্শকদের কাছে উপভোগ্য ছিল, এই সিনেমাতেই প্রথম লেজার বিম দিয়ে কাউকে হত্যার চেষ্টা দেখানো হয়।
×