ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সাহসী গল্পে সোনাক্ষি

প্রকাশিত: ১২:১৮, ১ আগস্ট ২০১৯

সাহসী গল্পে সোনাক্ষি

অনন্য রেজা করিম বলিউডি সিনেমার গল্প আগের অবস্থায় নেই। দর্শক রুচি ও চাহিদার পরিবর্তনের কারণে দিনে দিনে বদলে যাচ্ছে হিন্দী সিনেমার বিষয়বস্তু, নির্মাণ কৌশল, পাত্রপাত্রীদের আচরণ। এক সময় যে গল্প নিয়ে দর্শকদের সামনে হজির হতে চিত্র নির্মাতারা সাহসী হতে পারতেন না, সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক বিধিনিষেধের বেড়াজালে আটকে থাকতেন এখন তার চেয়ে অনেক দুঃসাহসী গল্প নিয়ে সিনেমা নির্মিত হচ্ছে বলিউডে। ভিন্ন ধারার, অফট্যাকের সিনেমাতে তো বটেই মূলধারার শতভাগ বাণিজ্যিক ছবিতেও অনেক সাহসী বিষয় তুলে ধরা হচ্ছে। যা দর্শকদের বিনোদন দেয়ার পাশাপাশি বৈচিত্র্যের স্বাদ দিচ্ছে, নতুন চিন্তা-ভাবনার খোরাকও দিচ্ছে একই সঙ্গে। এ প্রসঙ্গে গত বছরে মুক্তিপ্রাপ্ত বলিউডি সুপারহিট সিনেমা ‘বাঁধাই হো’র উদাহরণ দেয়া যায়। নামী-দামী জনপ্রিয় সুপারস্টার না থাকলেও শুধু ভিন্ন ধারার সাহসী গল্প উপস্থাপনার কারণে এ ছবিটি বিপুলভাবে দর্শকনন্দিত হয়েছে। যুবক বয়সী সন্তানের বাবা মা এক মধ্যবয়সী দম্পতির আবার নতুন করে সন্তান সম্ভবা হওয়ার পরবর্তী বিব্রতকর মুহূর্তগুলো চমৎকারভাবে তুলে ধরা হয়েছে ‘বাঁধাই হো’ ছবিতে। এ রকম ঘটনা আমাদের আশপাশে মাঝে মধ্যে ঘটতে দেখা গেলেও সিনেমার পর্দায় ব্যাপারটি তুলে ধরার কাজটি সাহসী ছিল বটে। দর্শক তেমন একটি সিনেমার পর্দায় দেখতে পেয়ে খুশিই হয়েছেন, কমেডি ধাঁচের সিনেমা ‘বাঁধাই হো’ মন ভরে উপভোগ করেছেন। এ সপ্তাহে মুক্তি পাচ্ছে তেমনি ব্যতিক্রমধর্মী বিষয়বস্তুর সাহসী বলিউডি সিনেমা ‘খানদনি সাফাখানা’। যৌনতা আর গুপ্তরোগ এই ছবির বিষয়। এ ছবিতে সোনাক্ষি সিনহা অভিনয় করেছেন মফস্বল শহরে বেড়ে ওঠা চটপটে স্বভাবের পাঞ্জাবি তরুণী বেবি বেদির চরিত্রে। মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ হিসেবে কাজ করলেও পারিবারিক আর্থিক সচ্ছলতা নিশ্চিত করতে হিমশিম খেতে থাকে মেয়েটি। ধারকর্জ করেও সামাল দিতে ব্যর্থ হয় সে। এক সময়ে তার সামনে চমৎকার সুযোগ এসে যায় সমস্যা সমাধানের। আগের টানাটানির অবস্থা দূর করতে একটি অখ্যাত ক্লিনিকের জন্য রোগী জোগাড় করে আনার চাকরি নেয় বেবি বেদি। বন্ধ্যত্ব দূরীকরণ এবং সন্তান ধারণের সক্ষমতা সৃষ্টির গ্যারান্টি দেয়া ক্লিনিকের জন্য রোগী সংগ্রহ করতে গিয়ে নানা সামাজিক কুসংস্কার, লোকনিন্দা বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হয় বেবি বেদি। তার বিচিত্র অভিজ্ঞতার বিবরণ মজাদার করে তুলে ধরা হয়েছে ‘খানদানি সাফাখানা’ ছবিতে। এখানে বেবি বেদি চরিত্রে রূপদানের মধ্যে নতুন অনেক বিচিত্র অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন বলিউড অভিনেত্রী সোনাক্ষি সিনহা। ছবিটিতে অভিনয় করতে গিয়ে শুরুতে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগছিলেন তিনি। যেহেতু ‘খানদানি সাফাখানা’ ছবির বিষয় যৌনতা আর গুপ্ত রোগ। এই নিয়ে সমাজে এখনও অনেক বিধিনিষেধ আর কুসংস্কার আছে। ছবির বিষয় নিয়ে এক ধরনের অস্বস্তি ছিল সোনাক্ষির মনে। এ প্রসঙ্গে সাম্প্রতিক এক সাক্ষাতকারে তিনি বলেন, ‘সত্যি বলতে কি, আমি নিজে প্রথমে ছবিটি করতে রাজি ছিলাম না। ঠিক বুঝে উঠতে পারছিলাম না যে পর্দায় বিষয়টি কীভাবে তুলে ধরা হবে। তবে ছবির মূল ভাবনাটা আমার দারুণ পছন্দ হয়। যৌনতা আর নারী-পুরুষের গোপন রোগ নিয়ে আমাদের সমাজে অনেক লজ্জা-সঙ্কোচ আর অস্বস্তি রয়েছে। আমার খুব ভাল লেগেছে যে সমাজের এই অন্ধকার দিকটি আমরা মজা করে সবার সামনে তুলে ধরেছি। মূলত আমরা প্রকাশ্যে যৌনতা নিয়ে কথা বলতে কুণ্ঠিত হই। আমাদের অভিভাবক, মা বাবারও এ বিষয়ে খোলাখুলি কিছু বলতে চান না রাখঢাকের মধ্যে রাখতে চান, লজ্জা পান। কিন্তু যৌনতা আমাদের জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। এর পরও কেন যৌনতা নিয়ে রাখঢাক, লুকোচুরি, বুঝতে পারি না। এমনিতে আমাদের অন্য কোন রোগ অসুখ বিসুখ হলে ডাক্তারের কাছে ছুটে গিয়ে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিই। অথচ যৌন রোগ হলে ডাক্তারের কাছে যেতে লজ্জা পাই, কুণ্ঠাবোধ করে বার বার পিছিয়ে যাই। লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করি। ‘খানদানি সাফাখানা’ ছবিতে কমেডির মাধ্যমে সমাজের এই বাস্তব অবস্থা এবং গম্ভীর সমস্যাটিকে তুলে ধরা হয়েছে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস এ ছবিটি সবাইকে সচেতন করবে সমস্যাটি নিয়ে গভীরভাবে ভাবতে উদ্বুদ্ধ করবে। ‘খানদানি সাফাখানা’ ছবিটি দাবাং কন্যা সোনাক্ষি সিনহার ক্যারিয়ারে নতুন মাত্রা যুক্ত করবে সন্দেহ নেই। এর আগে দর্শক বিভিন্ন ছবিতে প্রেমিকা, প্রতিশোধস্পৃহ তরুণী বক্সার গার্ল প্রভৃতি রোলে গ্ল্যামারাস এমনকি নন গ্ল্যামারাস ইমেজে দর্শকদের সামনে উপস্থিত হলেও ‘খানদানি সাফাখানা’ ছবির বেবি বেদি চরিত্রটির সহজ সাবলীল রূপায়ণ তাকে নতুনভাবে পরিচিত করবে দর্শকদের কাছে। ‘খানদানি সাফাখানা’ ছবিটির পরিচালক একজন নারী। নাম শিল্পী দাশগুপ্ত। যৌনতা এবং নারী-পুরুষের একান্ত গোপন কিছু বিষয় নিয়ে কাজ করাটা তার জন্যও এক ধরনের বিব্রতকর অভিজ্ঞতা ছিল। কিন্তু সবকিছু অতিক্রম করে ছবিটি শেষ পর্যন্ত দর্শকদের সামনে নিয়ে আসতে পেরেছেন। এটা তার জন্য একটি বিশেষ কৃতিত্বই ধরা যায়। সোনাক্ষি সিনহা অভিনীত ‘কলঙ্ক’ ছবিটি এ বছর মুক্তি পেলেও বক্স অফিসে ভাল ফলাফল দেখাতে পারেনি। তবে টোটাল ধামাল ছবিতে একটি আইটেম সঙে পারফর্ম করেছেন। গত কয়েক বছরে ‘তিভার’, ‘আকিরা’, ‘ফোর্স টু, ‘নুর, ‘ইত্তেফাক,’ ‘ওয়েলকাম টু নিউইয়র্ক’, ‘হ্যাপি ফির ভাগ যায়োগি’র মতো ছবিগুলোতে নায়িকা চরিত্রে রূপদান করেছেন। এ ছবিগুলো সোনাক্ষির ক্যারিয়ারে ভাল কিছু যোগ করতে পারেনি। ক্যারিয়ারের শুরুতে যেভাবে তার ক্যারিয়ারে রমরমাভাব পরিলক্ষিত হয়েছিল সময়ের পরিক্রমায় তা ক্রমেই অনেকটা থিতিয়ে এসেছে। নিজের ক্যারিয়ারে এমন ধস নামবে সোনাক্ষি নিজেও ভাবেননি কোন সময়ে। যে কেন মূল্যে ক্যারিয়ারে আগে সেই রমরমা অবস্থা ফিরিয়ে আনতে চাইছেন তিনি। বলিউডে ব্যাচেলর নায়িকাদের দলে রয়েছেন এখনও। সমসাময়িক অনেকেই বিয়েশাদি করে ঘর-সংসার শুরু করলেও তার বিয়েশাদির কোন খবর শোনা যাচ্ছে না। এক সময়ের ডাকসাইটে বলিউড তারকা শত্রুঘœ সিনহার কন্যা সোনাক্ষি আরও কিছুদিন অভিনয়ের জগতে নিজেকে ব্যস্ত রাখতে চান। আগামী ১৫ আগস্ট ভারতের স্বাধীনতা দিবসে মুক্তি পাবে ‘মিশর মঙ্গল’ ছবিটি। যেখানে অক্ষয় কুমার, বিদ্যা বালান, তাপসি পান্নু, কৃতি কুলহাারি, নিথিয়া মেনেন, শারমান যোশি প্রমুখদের সঙ্গে সোনাক্ষিকেও দেখা যাবে এ ছবিতে। চলতি বছরের শেষ দিকে সালমান খানের নায়িকা হিসেবে আবারও দর্শকদের সামনে হাজির হবে তিনি ‘দাবাং থ্রি’ ছবিতে।
×