ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

‘সিনেমা রিলিজে সরব প্রচারণায় নীরব’

প্রকাশিত: ১২:১৭, ১ আগস্ট ২০১৯

‘সিনেমা রিলিজে সরব প্রচারণায় নীরব’

গ্রামীণ কল্প কাহিনী বা ফোক-ফ্যান্টাসি নিয়ে সিনেমা নির্মাণে বাংলাদেশে দেলোয়ার জাহান ঝন্টু অদ্বিতীয়। তিনি বাংলাদেশ চলচ্চিত্রের সর্বাধিক ছবির পরিচালক। ইমপ্রেস টেলিফিল্মের ব্যানারে সম্প্রতি নির্মাণ করেছেন ক্যারিয়ারের ৭৫তম ছবি ‘আকাশ মহল’। গেল বছর এফডিসিতে ছবিটির শূটিং শুরু হয়। ছবিটি আগামীকাল (২ আগস্ট) প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেতে যাচ্ছে। ছবিতে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন চিত্রনায়িকা আইরিন ও ইমন। ‘আকাশ মহল’ ছবির গল্পে আইরিনের চরিত্রটি কিছুটা সুপার হিরোইন ধাঁচের। খারাপ লোকদের তিনি চাইলেই শায়েস্তা করতে পারেন অলৌকিক ক্ষমতা বলে। আইরিনের চরিত্রটির নাম বীনা। আগামীকাল ছবিটি মুক্তি পাচ্ছে। কিন্তু খবর জানানো হয়নি আইরিন কে। করানো হয়নি তাকে দিয়ে ডাবিং এর কাজ। কেন জানানো হয়নি? জানতে চাইলে আইরিন বলেন, কেন জানানো হয়নি আমি নিজেও জানি না। পরিচালকসহ ছবির সঙ্গে যারা যুক্ত তারাই ভাল জানেন। আইরিন আরো বলেনÑ অতিরিক্ত পারিশ্রমিক দিতে হবে বলে ডাবিং করানো হয়নি। তারা ছবি মুক্তিতে সরব কিন্তু প্রচারণায় নিরব! পরিচালক-প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ছবির প্রচারণায় নীরব কেন? আইরিন, প্রচারণা নির্ভর করে পরিচালক ও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের ওপর। পরিচালক বলতে পারবেন কেন তারা প্রচারণায় নীরব। ইমপ্রেস টেলিফিল্ম বাংলাদেশে অনেক বড় একটি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান তারা ভাল জানেন প্রচারণায় নেই কেন তারা। তাদের কাছ থেকে রেসপন্স পাইনি। আমি আমার অবস্থান থেকে প্রচারণা করছি। ছবিটি সর্ম্পকে আইরিন বলেন, ‘আকাশ মহল’ ইমপ্রেস টেলিফিল্মের ব্যানারে দেলোয়ার জাহান জন্টুর ৭৫তম ছবিতে অভিনয় করেছি। কাজটি করতে পেরে ভীষণ ভাল লাগছে। এ রকম গল্পের সিনেমা আগে কখনও করিনি।’ সিনেমা হলে দর্শক মন্দায় কতখানি প্রভাব বিস্তার ঘাটাতে পারবে ‘আকাশমহল’? বিনোদনের জন্য সিনেমা। প্রত্যেকের চিন্তা-ভাবনা আলাদা। তবে আমি আশাবাদী সিনেমার এই মন্দা আবহাওয়ায় দর্শক হলে গিয়ে ‘আকাশমহল’ দেখবেন! আপনি কি মনে করেন আপনার এই সিনেমা দর্শক গ্রহণ করবে? নাকি ব্যর্থতার আঁধারে হারিয়ে যাবে। আমি বিশ্বাস করি আমাদের দেশে অনেক সিনেমাপ্রেমী মানুষ আছে তারা আমাদের ছবি ভালবাসেন এবং সিনেমার এই দুঃ সময়ও হলে যাচ্ছেন। তাই তাদের প্রতি আস্থা রেখে বলতে পারি সিনেমার মন্দা সময়ও তারা ছবিটি সাদরে গ্রহণ করবেন। একাধিক কমার্শিয়াল সিনেমার সফল পরিচালক দেলোয়ার জাহান ঝন্টুর সিনেমার সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা এক কথায় অসাধারণ। -বললেন আইরিন। আপনার সবশেষ মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমা দর্শক কতটা গ্রহণ করেছিল আপনার বিবেচনায়? একজন কবির মৃত্যু ছবিটি সিনেমা হলে রিলিজ পায়নি তবে ইন্টারন্যাশনাল ফেস্টিভ্যালে দেখানো হয়েছে। সেখানে ছবিটি বেশ প্রশংসিত হয়েছে। আপনি নিজেকে কোন ঘরানার অভিনেত্রী হিসেবে অনুভব করেন? একজন শিল্পীর কখনও ক্যাটাগরি হয় না। সব সময় নিজের বেস্টটা দিয়ে কাজ করার চেষ্টা করি। আমি কখনও নিজেকে ঘরানার মধ্যে সীমাবদ্ধ করতে চাই না। সবধরনের সিনেমায় কাজ করতে চাই। চরিত্র এবং পোশাকের ব্যাপারে নিজেকে কিভাবে মূল্যায়ন করেন? যে কোন কাজ করার আগে কাজটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেই। প্রতিটি জায়গা আমাকে খুব ভাবায়। চরিত্র এবং পোশাকের ব্যাপারে ছাড় দিতে চাই না। আপনার দৃষ্টিতে চিত্র নায়িকা হিসেবে অভিনয় শিল্পীদের সঙ্কট কি কি উপলব্ধি করেন? সঙ্কট অনেক যা বলে শেষ করা যাবে না। তবে সঙ্কটের কথা বলতে হলে প্রথমে বলতে হবে যে একজন শিল্পীকে সিলেক্ট করে চরিত্রটির জন্য প্রস্তুতির সময় দেয়া হয় না। কমার্শিয়াল সিনেমার ক্ষেত্রে গান অনেক গুরুত্বপূর্ণ তবে গানের জন্য রিহার্সালের ব্যবস্থা থাকে না। অনেক কষ্ট করে নিজের প্রচেষ্টায় কাজটি করতে হয়। যখন কাজটি দর্শক গ্রহণ করে তখন কষ্টটি দূর হয়। এছাড়াও প্রতিটি চরিত্রে লুক সেট করার জন্য প্রস্তুতির কমতি আছে। যা আমি গুরুত্বপূর্ণ মনে করছি। প্রতিটি চরিত্রের জন্য লুক সেটের ব্যাপারটি নিয়ে ভাবতে হবে। এছাড়া সিডিউল নিয়ে শূটিংয়ের আগের দিন জানানো হয় শূটিং ডেট। একটি কাজের জন্য প্রস্তুতির দরকার আছে সেটা পাওয়া যায় না। শিল্পীকে পা-ুলিপি দেয়া যাবে না। এই শব্দটি সিনেদুনিয়া অতি পরিচিত। কেন যাবে না জানতে চাইলে জানান গল্প ফ্ল্যাশ হয়ে যাবে তখন অনেক কাহিনী শোনানো হয়। তবে দুই একটি ছবিতে পা-ুলিপি পাওয়া যায়। তবে অধিকাংশ ছবিতে পা-ুলিপি পাওয়া যায় না। এ রকম অনেক সঙ্কট রয়েছে। -বললেন আইরিন। বাংলাদেশে চিত্র জগতের বর্তমান যে অবস্থা তাতে করে এখানে নতুন নতুন অভিনয় শিল্পীর কোন সম্ভাবনার জায়গা কি আপনি দেখছেন? না! কেননা আমার নিজেরই সম্ভাবনা নেই। নতুনদের কিভাবে দেখব? না থাকার করাণ বাজারে কয়টি ছবি হচ্ছে। আগে সিনেমা তৈরি হতে হবে। ছবি সঙ্কটে ভুগছে আমাদের সিনেমা বাজার। আগে যে পরিমাণ সিনেমা তৈরি হয়েছে এখন তার এক পারসেন্ট ছবিও হচ্ছে না। সেখানে আমরাই কাজ করতে পারছি না। নতুনরা কিভাবে কাজ করবে! নতুন প্রযোজক নেতাদের কাছে প্রত্যাশা? তাদের কাছে প্রত্যাশা অনেক। কারণ দুই হাজার বারো সালের পর থেকে প্রযোজক সমিতির ইলেকশন হয়নি। সাত বছর পর ইলেকশন হয়েছে। লম্বা বিরতির পর নতুন নেতা এসেছে। সেই জায়গা থেকে তাদের কাছে আমার চাওয়া সিনেমার উন্নয়নে কাজ করা। অনেকই মুখে সিনেমার উন্নয়নে কাজ করার কথা বলেন। সিনেমার জন্য কাজ করবেন তবে সেগুলো বাস্তবায়ন হয় না। তাই কথায় নয়, কাজে বিশ্বাসী হতে হবে। প্রযোজক বাঁচলে সিনেমা বাঁচবে। সবাইকে সিনেমার উন্নয়ন নিয়ে ভাবতে হবে। সবাই এক হয়ে কাজ করতে হবে। সিনেমার উন্নয়নের স্বার্থে কাজ করতে হবে। তাহলেই আমাদের চলচ্চিত্র এগিয়ে যাবে। সবশেষে দর্শকদের উদ্দেশ্য আইরিন বলেন, দীর্ঘদিন পর ছবি মুক্তি পাচ্ছে। যারা সিনেমা ভালবাসে হলে গিয়ে সিনেমা দেখতে পছন্দ করে তাদের জন্য সুখবর। অনেক দিন পর প্রেক্ষাগৃহে দেশীয় ছবি মুক্তি পাচ্ছে। ‘আকাশ মহল’ মৌলিক গল্পের ছবি। রোমান্স আছে। পরিবার নিয়ে দেখার মতো একটি ছবি। তাছাড়া অনেক দিন পর এ ধরনের একটি ছবি রিলিজ হচ্ছে যা সাধারণত দেখা যায় না। সেই জায়গা থেকে মনে হচ্ছেÑ যারা বাংলা সিনেমা দেখতে ভালবাসে তাদের জন্য একটা সুখবর। সবাই হলে এসে ছবিটি দেখুন। আশা করছি নিরাশ হবেন না। -বললেন আইরিন।
×