ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

অব্যাহত বোলিং-ফিল্ডিং ব্যর্থতা

প্রকাশিত: ১২:০৮, ১ আগস্ট ২০১৯

অব্যাহত বোলিং-ফিল্ডিং ব্যর্থতা

মিথুন আশরাফ ॥ বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রতিপক্ষ আগে ব্যাটিং করার সুযোগ পেলেই বোলিং-ফিল্ডিং যে কি ব্যর্থতার মধ্যে ডুবে আছে তা বারবার বোঝা যাচ্ছে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তৃতীয় ওয়ানডেতেই যেমন সেই ব্যর্থতা আবারও নজরে পড়েছে। লঙ্কান ব্যাটসম্যানদের চাপে ফেলার সুযোগ পেয়েও বাংলাদেশ বোলাররা তা কাজে লাগাতে পারেননি। শেষ মুহূর্তে যখন বাধ্যতামূলক রান তোলার জন্য শট খেলার প্রবণতা লঙ্কান ব্যাটসম্যানদের বেড়েছে, তখন টপাটপ উইকেট নিতে পেরেছেন শফিউল, সৌম্যরা। বোলিং ব্যর্থতার চেয়েও বুধবার কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে এ্যাঞ্জেলো ম্যাথুসের সহজ ক্যাচটি ধরতে পারেননি যে সাব্বির রহমান রুম্মন, সেটি জ্বালা বাড়াচ্ছে। সুযোগ পেয়ে ম্যাথুস ৮৭ রানের ইনিংস খেলেছেন। সেই ইনিংসে শ্রীলঙ্কাও ৮ উইকেট হারিয়ে ৫০ ওভারে ২৯৪ রান করেছে। দুই পরিবর্তন নিয়ে খেলতে নামে বাংলাদেশ। হঠাৎ করেই শেষ মুহূর্তে চোট পান মুস্তাফিজুর রহমান। ম্যাচ শুরুর আগে ওয়ার্ম আপে চোট পেয়ে একাদশ থেকেই ছিটকে পড়েন মুস্তাফিজ। তার স্থানে রুবেল হোসেনকে একাদশে নেয়া হয়। মোসাদ্দেক হোসেনকে বসিয়ে নেয়া হয় এনামুল হক বিজয়কে। বাংলাদেশের দুই পরিবর্তনের জায়গায় চার পরিবর্তন করে নামে শ্রীলঙ্কা। এক ম্যাচ আগেই সিরিজ জয় নিশ্চিত হয়ে যাওয়ায় পরীক্ষা নিরীক্ষা করতেই একাদশে এত পরিবর্তন করে শ্রীলঙ্কা। নুয়ান প্রদীপ, ইসুরু উদানা, ধনঞ্জয়া ডি সিলভা ও লাহিরু থিরিমান্নেকে একাদশ থেকে বাইরে রেখে দাসুন শানাকা, শেহান জয়সুরিয়া, ভানিদু হাসারাঙ্গা ও কাসুন রাজিথাকে একাদশে নেয়া হয়। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে প্রদীপ, উদানা, ধনঞ্জয়াই বল হাতে বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের ভোগান। তাতে হারেও বাংলাদেশ। তৃতীয় ওয়ানডেতে তাই বাংলাদেশের সুবিধাই হওয়ার কথা। কিন্তু এ জন্য আগে ফিল্ডিং পাওয়ায় শ্রীলঙ্কাকে তো অল্পতে বেঁধে রাখতে হবে। মুস্তাফিজ না থাকায় শুরুতেই তো দলের বোলিং দুর্বল হয়ে পড়ে। রান বেশি দিলেও উইকেট তো ঠিকই শিকার করছিলেন মুস্তাফিজ। তার অনুপস্থিতিতে শুরুটা বাংলাদেশের খুব খারাপ হয়নি। শুরুতেই আভিশকা ফার্নান্দোকে আউট করে দেন শফিউল ইসলাম। কিন্তু এরপর দ্বিতীয় উইকেট তুলে নিতে অপেক্ষা করতে হয় দীর্ঘক্ষণ। শ্রীলঙ্কা ৯৬ রানে গিয়ে দ্বিতীয় উইকেট হারায়। অধিনায়ক দিমুথ করুনারতেœ ৪৬ রান করে যখন তাইজুল ইসলামের ঘূর্ণিতে আউট হয়ে সাজঘরে ফেরেন, কুশল পেরেরাও আর বেশিদূর এগিয়ে যেতে পারেননি। করুনারতেœকে আউট করে দিয়ে ৮৩ রানের জুটি ভাঙ্গেন তাইজুল। ২ রান যোগ হতেই ৪২ রান করা পেরেরাকে আউট করে দেন রুবেল। করুনারতেœ ও পেরেরার ক্যাচ দুটি ধরেন মুশফিকুর রহীম। যিনি শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তৃতীয় ওয়ানডে খেলতে নেমে বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি ২১৬টি ওয়ানডে খেলার কৃতিত্ব গড়েন। মাশরাফি বিন মর্তুজাকে (২১৫ ওয়ানডে) টপকে যান মুশফিক। যখন ৯৮ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে বসে শ্রীলঙ্কা, তখন স্বস্তি মিলে। মনে হয় এবার লঙ্কানরা বিপাকে পড়বে। কিন্তু বাংলাদেশ বোলারদের যে কি হয়েছে! চাপই প্রয়োগ করতে পারেননি। লঙ্কান দুই ব্যাটসম্যান কুশল মেন্ডিস ও এ্যাঞ্জেলো ম্যাথুসের ওপর স্বাভাবিকভাবেই চাপ থাকার কথা। বাংলাদেশ বোলাররা আরও চাপ দিয়ে উইকেট তুলে নেবেন কি, উল্টো মেন্ডিস ও ম্যাথুস মিলে দলকে সহজেই ২০০ রানের একেবারে কাছে নিয়ে যান। ১০১ রানের জুটিও গড়েন। ১৯৯ রানের সময় গিয়ে ৫৫ বলেই হাফ সেঞ্চুরি করা মেন্ডিস শেষ পর্যন্ত ৫৪ রান করে সৌম্য সরকারের স্লোয়ার বলে আউট হন। ততক্ষণে শ্রীলঙ্কা ১৯৯ রানে চলে যায়। যখন ১৬৬ রানে থাকে শ্রীলঙ্কা তখন ৩২ রানে থাকা ম্যাথুসকে আউট করার সুযোগ ছিল। কিন্তু ক্যাচটি ধরতে পারেননি মুশফিক। এ জুটি শেষ পর্যন্ত ১৯৯ রান পর্যন্ত টিকে। হাতে তখন প্রায় ৯ ওভার থাকে। শ্রীলঙ্কা ২৮০ রানে চলে যেতে পারে, সেই সম্ভাবনা থাকে। শ্রীলঙ্কা ২৯৪ রানে যায়। আর তাহলেই তো বাংলাদেশের বিপদ আসতে পারে। ৪২তম ওভারে গিয়ে ২০০ রান করে শ্রীলঙ্কা। সেখান থেকে শেষ ৮ ওভারে ৯৪ রান তুলে লঙ্কানরা। শেষ ১০ ওভারেই ১০৬ রান করে। তা সম্ভব হয় একাধিকবার ‘নতুন জীবন’ পাওয়া ম্যাথুসের অসাধারণ ব্যাটিংয়ে। করুনারতেœর আউটের পরপরই ম্যাথুস ৬৯ বলে হাফ সেঞ্চুরি করে ফেলেন। তার সঙ্গে এবার দাসুন শানাকা যোগ হন। দুইজন মিলে দ্রুত রানও তুলতে থাকেন। হাতে ওভার কম। তাই রান তো তুলতেই হবে। দুইজন মিলে একের পর এক বাউন্ডারি তাই হাঁকাতে থাকেন। দলের যখন ২৪৩ রান, ম্যাথুস ৬৩ রানে, এমন সময় মেহেদী হাসান মিরাজের ঘূর্ণি বলটিতে ছক্কা হাঁকাতে চান ম্যাথুস। কিন্তু ঠিকমতো শট লাগেনি। তাই লং অনে ক্যাচ উঠে যায়। সেখানে থাকেন সাব্বির রহমান রুম্মন। ম্যাথুস শটটি খেলেই এমনভাবে হতাশ হয়ে মাথানত করেন, তিনি বুঝে যান ক্যাচ। কিন্তু ক্যাচ ধরতে পারেননি সাব্বির। এত সহজ ক্যাচ হাত ফসকে যায়। ‘নতুন জীবন’ পেয়ে ম্যাথুস তো আরও ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠেন। দলের ২৫১ রানের সময় শানাকাকে (৩০) আউট করে দেন শফিউল। কিন্তু ম্যাথুসকে থামানো যাচ্ছিল না। আর তাই ৩০০ রানের সম্ভাবনা তৈরি হয়ে যায়। ২৮০ রানে গিয়ে শিহান জয়সুরিয়াকেও (১৩) সাজঘরে ফেরান শফিউল, কিন্তু ম্যাথুস দলের ভরসা হয়ে ওঠেন। আউট হওয়া একাধিক সুযোগ থেকে বেঁচে নিজের স্কোরকে ৯০ বলে ৮ চার ও ১ ছক্কায় ৮৭ রানে নিয়ে যান। যখন ম্যাথুস আউট হন, তখন দলের রান ২৮৪ রানে চলে যায়। ম্যাথুসকে আউট করার পর আকিলা ধনঞ্জয়াকেও আউট করে দিয়ে হ্যাটট্রিকের আশা জাগান সৌম্য। কিন্তু তা আর হয়নি। তবে ম্যাথুস ও শানাকা যেভাবে ব্যাটিং করছিলেন তাতে ৩০০ রান যে অনায়াসে হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা জেগেছিল তা থেকে ম্যাথুসকে আউট করে দিয়ে দলকে মুক্ত করেন সৌম্য। শেষ পর্যন্ত ২৯৪ রান করতে পারে শ্রীলঙ্কা। শফিউল ও সৌম্য ৩টি করে উইকেট নিতে পারেন। এর মধ্যে শফিউলের দুটি ও সৌম্যের ৩টি উইকেট শিকারই হয় ৪০ ওভারের পরে গিয়ে। যখন ব্যাটসম্যানরা রান তোলার তাগিদে শট খেলা শুরু করেন তখন উইকেট শিকার করতে থাকেন শফিউল ও সৌম্য। আর এদিকে ক্যাচ ছাড়া, ফিল্ডিংয়ে ব্যর্থতার মিছিল তো আছেই। শেষ ওভারে গিয়ে অপরাজিত ১২ রান করা হাসারাঙ্গা ডি সিলভার ক্যাচও হাতছাড়া করেন সাব্বির। সেটিতে আবার বাউন্ডারিও হয়। বোলিং-ফিল্ডিং ব্যর্থতা চলছেই।
×