ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

হত্যা মামলার সাক্ষী আওয়ামী লীগ কর্মী খুন

প্রকাশিত: ১১:৫৪, ১ আগস্ট ২০১৯

হত্যা মামলার সাক্ষী আওয়ামী লীগ কর্মী খুন

বাবুল সরদার, বাগেরহাট ॥ মোরেলগঞ্জে আওয়ামী লীগ কর্মী এনায়েত সিকদার হত্যা মামলার সাক্ষী আওয়ামী লীগ কর্মী ছালাম সরদারকে (৪০) কুপিয়ে হত্যা করেছে সন্ত্রাসীরা। এ সময় ছয় বাড়িতে একযোগে হামলা করা হয়। সন্ত্রাসীদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে ৫ নারীসহ অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। মঙ্গলবার রাত ৩টার দিকে রামচন্দ্রপুর ইউনিয়নের ছোট কুমারখালী গ্রামে নৃশংস এ ঘটনা ঘটে। নিহত ছালাম সরদার এ গ্রামের এরফান উদ্দিনের ছেলে। তার স্ত্রী ও ৩টি শিশু সন্তান রয়েছে। ২০০১ সালে জাতীয় নির্বাচন চলাকালে জামায়াত-বিএনপির ক্যাডারদের হামলায় আওয়ামী লীগ কর্মী এনায়েত সিকদার নিহত হন। ছালাম সরদার ওই হত্যা মামলার সাক্ষী ছিলেন। মামলাটি এখন বাগেরহাট জেলা ও দায়েরা জজ আদালতে বিচারাধীন। ওই মামলার আসামিরা পরিকল্পিতভাবে এ হামলা চালিয়েছে বলে ক্ষতিগ্রস্তরা অভিযোগ করেন। এ ঘটনায় ওই এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে পিরোজপুর থেকে বুধবার দুপুরে মন্টু মোল্লা ও জাফর শেখ নামে দু’জনকে পুলিশ আটক করেছে। সালাম সরদার আওয়ামী লীগের নিবেদিত কর্মী ছিলেন বলে জানিয়েছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মহিত হোসেন স্বপন। আহতরা হলেন- নিহত আবদুস ছালাম সরদারের বড় ভাই লোকমান সরদার, স্ত্রী মালা বেগম, তোরফান সরদারের ছেলে মোজাম সরদার, সলেমান সরদারের স্ত্রী মঞ্জু বেগম, ছেলে রাকীব সরদার, ইসমাইল সরদারের ছেলে শামীম সরদার, ইসমাইল সরদারের স্ত্রী রেক্সোনা বেগম, ছেলে শাহিন সরদার, শামীম সরদারের স্ত্রী জান্নাতী বেগম। তাদের উদ্ধার করে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। নিহত আবদুস ছালাম সরদারের চাচাত ভাই সলেমান সরদার বলেন, রাতে আমরা ঘুমিয়েছিলাম হঠাৎ ৩টার দিকে এনায়েত শিকদার হত্যা মামলার আসামি কবির মোল্লা ও মন্টু মোল্লার নেতৃত্বে আসামিরা আমাদের বাড়িতে হামলা চালায়। বাড়িতে থাকা সবাইকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে জখম করে। স্থানীয়রা আমাদের উদ্ধার করে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। যাওয়ার পথেই আবদুস ছালাম মারা যায়। হামলাকারীরা আমাদের বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে ৭ রাউন্ড গুলি ছোড়ে। আমাদের পরিবারের ৬ সদস্য এনায়েত শিকদার হত্যা মামলার সাক্ষী। এ জন্যই আমাদের ওপর এ হামলা হয়েছে। রাজনৈতিক শত্রুতার কারণে পরিকল্পিতভাবে এ হামলা ও হত্যাকা-ের ঘটনা ঘটানো হয়েছে বলে দাবি করেছেন নিহত ছালাম সরদারের স্ত্রী। তিনি বলেন, ২০০১ সালে জাতীয় নির্বাচন চলাকালে জামায়াত বিএনপির ক্যাডারদের হামলায় আওয়ামী লীগ কর্মী এনায়েত সিকদার নিহত হন। এ মামলায় সাক্ষী হওয়ার কারণে মামলার আসামিরা এ হামলা চালিয়েছে। গুরুতর আহত লোকমান সরদারের স্ত্রী রীনা বেগম বলেন, রাত ৩টার দিকে জামায়াত-বিএনপি ক্যাডার কবির মোল্লার নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী লোহার রড, হাতুড়ি ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে তাদের বাড়িতে চড়াও হয়। প্রথমে লোকমান সরদারের ঘরে ঢুকে তাকে মারপিট শুরু করে। লোকমানের চিৎকার শুনে পাশের ঘর থেকে তার ছোট ভাই ছালাম সরদার ছুটে গেলে দুর্বৃত্তরা তাকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে খালে ফেলে দেয়। তখন পরিবারের সদস্যরা ঘর থেকে বাইরে বের হলে সন্ত্রাসীরা তাদেরও ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে ও কুপিয়ে আহত করাসহ ৪টি বসতবাড়িতে ভাংচুর করে। সন্ত্রাসীরা চলে যাওয়ার সময় ৪টি মিনি গ্যাস সিলিন্ডার, বেশকিছু লাঠি ও ধারালো অস্ত্র এসব বাড়িতে ফেলে রেখে যায়। পরে পরিবারের অন্য সদস্যরা গুরুতর আহতদের উদ্ধার করে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ছালাম সরদারকে মৃত ঘোষণা করেন। আহত ১০ জনের মধ্যে ৭ জনকে গুরুতর অবস্থায় খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
×