ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বৈদেশিক মুদ্রার স্বপ্ন

চরফ্যাশনে কুইচ্চা চাষে স্বাবলম্বী ১০ পরিবার

প্রকাশিত: ১১:৪২, ১ আগস্ট ২০১৯

চরফ্যাশনে কুইচ্চা চাষে স্বাবলম্বী ১০ পরিবার

এ আর এম মামুন, চরফ্যাশন থেকে ॥ ভোলার চরফ্যাশনের দক্ষিণ আইচার চর হরিশ গ্রামে ১০ পরিবার শুরু করেছে কুইচ্চা চাষ। তারা বেসরকারী একটি সংস্থার পরামর্শে ময়মনসিংহ থেকে পোনা এনে ১০টি খামারে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে যাত্রা শুরু করেন। কুইচ্চা চাষের জন্য চর হরিশকে কুইচ্চা পল্লী নামে নতুন রূপ নিয়েছে। জানা যায়, বাংলা লুগাতে কুইচ্চার বিশুদ্ধ নাম কুইচ্চাই উল্লেখ করা হয়েছে। তবে অঞ্চলভেদে এই জলজ প্রাণীকে একাধিক নামে চেনে। বাংলাদেশ ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইনের রক্ষিত বন্য প্রাণীর তালিকায় তফসিল ২ অনুযায়ী এ প্রজাতিটি সংরক্ষিত। কুইচ্চা আমাদের ভারতীয় উপমহাদেশেই পাওয়া যায়। অন্যান্য দেশে সাধারণত কুইচ্চার দেখা মিলে না। আমাদের দেশের নিম্ন আয়ের মানুষ জীবিকা নির্বাহের মাধ্যম রূপে কুইচ্চা চাষ বেছে নিয়েছে। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য মতে, শুধু গত অর্থবছরে ৭০.০১৭৫ টন কুইচ্চা বিদেশে রপতানি করে প্রায় ১.৫ কোটি ডলার বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে বাংলাদেশ। তাইওয়ান, হংকং, চায়না, সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়াসহ প্রায় ১৭ দেশে কুইচ্চা রফতানি করা হয়। দেশে প্রায় ১০ লাখ মানুষ এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। সরেজমিন পরিদর্শন করে দেখা যায়, চরফ্যাশনে হিন্দু সম্প্রদায়ের ১০ পরিবার আলাদা আলাদা ১০টি খামার তৈরি করে। ২০ ফুট দৈর্ঘ্য, ১০ ফুট প্রস্থ এবং সাড়ে ৩ ফুট উচ্চতায় খামারগুলোতে প্রয়োজন অনুযায়ী কুইচ্চার পোনা ছাড়া হয়েছে। বর্তমানে স্বল্প আকারে বিক্রি করলেও কিছু দিনের মধ্যে বড় ধরনের কুইচ্চার চালান ঢাকা পাঠানো হবে বলে জানান চাষীরা। কুইচ্চা চাষী কমল কুলু জানান, আমাদের এই কুইচ্চা চাষাবাদ দেখে চরফ্যাশন উপজেলার অনেক বেকার যুবক, কলেজ ছাত্র খামার তৈরির আগ্রহ প্রকাশ করেছে। আমি আশাকরি খামারের কুইচ্চা রফতানি করে পরিবারের অর্থের চাহিদা মিটিয়ে মূলধন সংগ্রহ করতে পারব। প্রাকৃতিক ভারসাম্য ঠিক রেখে অধিক বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের লক্ষ্যে এখনই বাণিজ্যিক ভিত্তিতে কুইচ্চা চাষের প্রচলন করা খুবই জরুরী। চরফ্যাশন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মরত ডাঃ মাহবুব কবির বলেন, কুইচ্চা অনেক সু-সাদু খাবার, শরীরের রক্ত শূন্যতা, ডায়াবেটিস, বাত, এ্যাজমা ও ক্যান্সারের বিরুদ্ধে কাজ করে। কুইচ্চা খেলে হৃৎপি- সুরক্ষা হয় এবং স্টোক হওয়ার প্রবণতা ১৩ শতাংশ কমে যায়। ভক্ষণযোগ্য প্রতি ১শ’ গ্রাম কুইচ্চা প্রায় ১৭.৭ গ্রাম প্রোটিন, ০.৮ গ্রাম চর্বি, ২.৪ গ্রাম কার্বহাইড্রেট, ১ হাজার ৪শ’ মাইক্রো গ্রাম ভিটামিন ১শ’ ৮৫ গ্রাম ক্যালসিয়াম রয়েছে। চরফ্যাশন খাসমহল জামে মসজিদের ঈমাম মাওলানা রফিকুল ইসলামের নিকট কুইচ্চা খাওয়ার ইসলামিক বিধান সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, জলজ প্রাণীদের মধ্যে আমাদের জন্য মাছকে বৈধ করা হয়েছে। আমাদের প্রচলনে কোনটি মাছ নয় তা সকলেরই জানা আছে। কুইচ্চা, কাঁকড়া ও ফুটকা মাছ নয়। বাংলাদেশে প্রায় ৭৬ প্রজাতির মাছ রয়েছে। কুইচ্চা তাদের অন্তর্ভুক্ত নয়। মুসলমানদের জন্য কুইচ্চা অখাদ্য। চরফ্যাশন উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মারুক হোসেন মিনার বলেন, আমি চর হারিশ ১০ পরিবারের কুইচ্চা খামারগুলো পরিদর্শন করেছি। চাষীদের দক্ষ করে গড়ে তোলার জন্য একাধিকবার প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। এ উপজেলার যে কেউ কুইচ্চা চাষাবাদে আগ্রহী হলে আমরা সকল প্রকার সহযোগিতা করব।
×