ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

নুরুল আমিন

আতঙ্ক দূর হোক

প্রকাশিত: ১১:৩৪, ১ আগস্ট ২০১৯

আতঙ্ক দূর হোক

সারাদেশে ছেলেধরা আতঙ্ক ব্যাপকহারে ছড়িয়ে পড়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনির ঘটনা ঘটছে। এলোপাতাড়ি পিটিয়ে মানুষ মারা হচ্ছে। চোরেরা শিশুদের কল্লা কেটে নিয়ে যায় এমন একটি গুজবের প্রভাবে মানুষ ক্ষিপ্ত হয়ে নিজেরাই অপরাধ করে বসে। এমনকি তারা হত্যাকাণ্ডের মতো জঘন্য ঘটনা ঘটায়। কল্লাকাটা গুজবটি জনরোষে পরিণত হয়েছে। এলাকায় কোন অচেনা মানুষ পেলেই তাকে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করা হয়। লোকটি কী পাগল না মানসিক ভারসাম্যহীন নাকি ভাল মানুষ, কী জন্য এখানে এলো ইত্যাদি কোন বিষয়ে খোঁজ-খবর না নিয়ে তার প্রতি নির্মম আচরণ করে। যা আদৌ ঠিক নয়। গণপিটুনি দিয়ে মানুষ হত্যাকারী কোন ব্যক্তিকে যদি জিজ্ঞেস করা হয় আপনি এ কাজ কেন করলেন? কোন সদুত্তর তার থেকে পাওয়া যায় না। বড়জোর এইটুকু বলে সবাই মারে তাই আমিও মেরেছি। ছেলেধরা প্রসঙ্গে জিজ্ঞেস করলে নিশ্চিত হয়ে কিছু বলতে পারে না। যার কাছেই জিজ্ঞেস করা হয় সে-ই বলে অন্য কারও থেকে শুনেছে। গুজবে রটে যাওয়া কোন বিষয় বা ঘটনার সত্যতা যাচাই করতে গেলে কিছু পাওয়া যায় না। সবাই বলে শুনেছি। আসলে গুজবের কোন বাস্তবতা কখনও মিলে না। একজন অপরজনের ওপর শত্রুতা উদ্ধার করতে বা প্রতিশোধ নিতে গুজবের বিষয়টি কাজে লাগাচ্ছে। অনেকে দ্বন্দ্ব সংঘাতে দূর থেকে ঢিল মেরে গুজবকে কাজে লাগিয়ে শত্রু দমন করে। কথায় আছে, গুজবে কান দিতে নেই। আইন নিজের হাতে তুলে নেয়া উচিত নয়। কিন্তু মানুষ থেমে নেই। আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে অপরাধী হচ্ছে। মানুষ কেন ভ্রান্ত ধারণার দিকে ঝুঁকে পড়ছে? এর নেপথ্যে কে বা কারা কড়া নাড়ে? মানুষের এত অস্থির ও হিংস্র হয়ে ওঠার কারণ কী? এসব এখন আমাদের ভাবনার বিষয়। গুজবের সুযোগ কাজে লাগিয়ে এক ধরনের অসাধু ও স্বার্থান্বেষী মহল নিজেদের অবৈধ স্বার্থ হাসিল করার জন্য কাজ করছে। অসৎ ও চতুর ব্যক্তিরা সব সময় ঘোলা পানিতে মাছ ধরতে সিদ্ধহস্ত। নিজেরা আড়ালে থেকে দেশের বা দেশের বাইরের কিছু সংঘবদ্ধ দুষ্ট চক্র কৌশলে গুজব ছড়াচ্ছে বলে ধারণা করা হয়। সাধারণত মানুষের অজ্ঞতা, কুসংস্কার, কান কথায় বিশ্বাস প্রবণতা, প্রশাসন তথা কর্তৃপক্ষের উদারতা কিংবা গাফিলতি, বিচারহীন সংস্কৃতি বা বিচারের দীর্ঘসূত্রতা, জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতার অভাব, উদোর পিণ্ডি বুদোর ঘাড়ে চাপানোর প্রবণতা ও আস্থাহীনতা ইত্যাদি কারণে গুজব মিথ্যা হওয়া সত্ত্বেও মাথাচাড়া দিয়ে উঠে সমাজ ও রাষ্ট্রে তোলপাড় সৃষ্টির সুযোগ পায়। অহেতুক গুজবের কারণে গণপিটুনির শিকার হয়ে আর যেন কোন মানুষ মারা না যায় সেজন্য দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে হবে, জনমনে আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে, জনসচেতনতা বাড়াতে হবে, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ হত্যাকারীদের উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে, জনগণের অধিকার নিশ্চিত ও নিরাপত্তা জোরদার করতে হবে। গণপিটুনি বন্ধ করতে সরকার ও জনগণের ইতিবাচক সক্রিয় ভূমিকা নেয়া একান্ত প্রয়োজন। লালমোহন, ভোলা থেকে
×