ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

নূরজাহান নীরা

সমাজের শত্রু

প্রকাশিত: ১১:৩৩, ১ আগস্ট ২০১৯

সমাজের শত্রু

গুজব এক ভয়ানক বিষ, আর গুজব রটনাকারী এক ভয়ানক বিষধারী, সমাজের শত্রু। গুজব দ্বন্দ্ব ও সংঘাতের পথ তৈরী করে দেয় অতি সহজেই। তার সাথে সংযুক্ত আমাদের আশপাশের কিছু হুজুগে মানুষ। যারা ভালোমন্দের বিচার না করে, সত্য-মিথ্যা যাচাই না করেই অনেক কঠিন সিন্ধান্ত নিয়ে ফেলেন। যেমন ঘটেছে ঢাকার বাড্ডায় তাছলিমা বেগম রেণুর ক্ষেত্রে। একজন বললেন ছেলেধরা, অমনি সবাই ঝাঁপিয়ে পড়লেন তার ওপর, তাকে কথা বলার সুযোগ না দিয়ে বেদম মারপিট শুরু হলো। তাকে কথা বলার সুযোগ দিয়ে তার পরিবারের খোঁজ-খবর নেওয়ার সুযোগ ছিল। সে যদি অপরাধীও হতো, এত লোকের ভীড় ঠেলে একজন মানুষ পালাতে পারে না। তাকে কথা বলার কোন সুযোগ না দিয়ে পৈশাচিক নির্যাতন চালানো হয়েছে তার ওপর। শুধু রেণু-ই নয় অনেক জায়গায় এমন খবর পাওয়া যাচ্ছে। কেউ গণপিটুনিতে মারা গেছে, কেউ কেউ আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আছে। তাদের মধ্যে অনেকে মানসিক প্রতিবন্ধী। ‘পদ্মাসেতুতে মানুষের মাথা লাগবে’ এমন গুজবে আতঙ্কিত বহু মানুষ। ছেলে ধরা, গলাকাটা, এমন আতঙ্কজনক কথা আগেও শুনেছি, তবে সে আতঙ্ক এত ব্যাপক ভাবে ছড়ায়নি। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতু বাংলাদেশের অনেক বড় অর্জন। আর যেখানে সেতুর পাইলিংয়ের কাজ প্রায় শেষ সেখানে এমন গুজবে কান দেওয়া অনেকটা বোকামী। কাজের শুরুতে মাথা লাগল না শেষে কেনো মাথা লাগবে? খুব সাধারণ ভাবে বোঝা যায় এটা একটা চক্রান্ত। একটা ভালো কাজে মানুষের মাথা লাগার কোন যৌক্তিক বিষয় বা প্রমাণ নেই কোথাও, যদিও ব্রিজ করতে মাথা লাগবে এমন গুজব আগেও শোনা গেছে। এতে চক্রান্তকারীদের দুটি কাজ হাসিল হতে পারে। একটি সরকারকে বিপাকে ফেলা, অন্যটি এই সুযোগে মানব ও শিশু পাচারকারীরা শিশু পাচার করতে পারবে অনায়াসে। তাই সবাইকে সচেতন হতে হবে, যাতে কেউ দেশের ভিতরে কোন ধরনের অস্থিরতা সৃষ্টি করতে না পারে। আর ঘটাতে না পারে গণপিটুনিতে নিহতের মত ঘটনা। এ পর্যন্ত গণপিটুনিতে যারা মারা গেছেন প্রতিটি ঘটনা খুবই হৃদয়বিদারক, মর্মান্তিক। ছেলেধরা সন্দেহ ছাড়াও চোর সন্দেহে এর আগে অনেকে মারা গেছেন গণপিটুনিতে। অপরাধ করলে অপরাধীর বিচার অবশ্যই হবে। জনগণই পারে অন্যায় রুখতে তবে সেটা গণপিটুনি দিয়ে নয়। অন্যায়কারীকে সনাক্ত করে, বা করতে পারলে অথবা কাউকে সন্দেহ হলে তাকে প্রশাসনের হাতে তুলে দিতে হবে। কোন ভাবেই আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া উচিত না।এভাবে গনপিটুনি দিয়ে মানুষ মারা জঘন্য অপরাধ। তাছাড়া একজন অপরাধীকে যদি গণপিটুনি দিয়ে মেরে ফেলা হয় তাহলে অপরাধী চক্রকে ধরা কখনই সম্ভব না। আসল অপরাধীরা আড়ালেই থেকে যাবে, আবারও তৈরী করবে এমন হাজার অপরাধী। তাই দেশবাসীকে সচেতন থেকে এর মোকাবেলা করতে হবে। সন্দেহজনক কাউকে দেখলে প্রশাসনের লোককে জানাতে হবে। আর আইন ও বিচার বিভাগকে জনগণের আস্থা অর্জন করতে হবে। জনগণের আইন হাতে তুলে নেওয়া- আইন ও বিচার বিভাগের প্রতি অনেকটা অনাস্থা প্রকাশ। সকল অপরাধীর সঠিক বিচার হোক, গুজব মুক্ত হোক দেশ, দেশবাসী। ফতুল্লা, নারায়ণগঞ্জ থেকে
×