ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মেনে নেয়া দুষ্কর

প্রকাশিত: ১১:২৭, ১ আগস্ট ২০১৯

মেনে নেয়া দুষ্কর

ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্র তিতাস গত বৃহস্পতিবার পথ দুর্ঘটনায় আহত হলে উন্নত মানের চিকিৎসার জন্য ঢাকায় আনা জরুরী ছিল। পরিবারের পক্ষ থেকে এ্যাম্বুলেন্স করে ফেরিঘাটে নিয়ে আসার পর জানা যায় একজন যুগ্ম সচিবের কারণে ফেরি ছাড়তে বিলম্ব হবে। ইতোমধ্যে ছাত্রটির অবস্থা আশঙ্কাজনকভাবে অবনতি হতে থাকলে সময়মতো ফেরি ছাড়ার জন্য অনুরোধ করার পরও কর্তৃপক্ষ তাতে রাজি হয়নি। রাত ৮টায় কাঁঠালবাড়ির ১নং ফেরিঘাটে অপেক্ষমাণ আহত ছাত্রটির পরিবার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন-নিবেদন করেও ফেরি ছাড়াতে ব্যর্থ হয়। শুধু তাই নয়, সরকারী জরুরী সেবা প্রকল্প-৯৯৯তে যোগাযোগ করা হলেও কর্র্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারেনি। ঘাটে একটি ফেরিই ছিল। সরকারের এটুআই প্রকল্পের দায়িত্বরত যুগ্ম সচিব আবদুস সবুর ম-লের জন্য ফেরির নির্দেশনা থাকলে কর্তৃপক্ষ এই আদেশের বাইরে যেতে পারেনি। শেষ অবধি রাত ১১টায় যুগ্ম সচিবের গাড়ি ফেরিতে উঠলে তার পরই তা ছাড়া হয়। যুগ্ম সচিবের নাকি বিয়ে বাড়িতে যাওয়ার উদ্দেশ্যেই এই ফেরিকে আটকে রাখা হয়েছিল। প্রশ্ন থাকে, সরকারী কর্মকর্তা প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন ছাড়া বিধি মোতাবেক প্রটোকল পান কিনা? ফেরি ছাড়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই অসুস্থ ও অসহায় তিতাস পৃথিবীর মায়া ছেড়ে চলে যায়। পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, সময়মতো ফেরি ছাড়া হলে তিতাস বাঁচত কিনা বলা না গেলেও যথার্থ চিকিৎসা সেবা নিশ্চয়ই পেত। মরা-বাঁচার সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়েও যখন একজন অসহায় সাধারণ মানুষ তার নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়, কর্তৃপক্ষ তাকে কিভাবে ব্যাখ্যা করবে, সেটাই দেখার বিষয়। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান প্রণয় কান্তি বিশ্বাস পুরো ঘটনাটি অস্বীকার করে সংবাদ মাধ্যমকে জানান, এ্যাম্বুলেন্স ঘাটে আসার ১৫ মিনিটের মধ্যে ফেরি ছেড়ে দেয়া হয়। এই নৌপরিবহন কর্মকর্তা সান্ত¡নার সুরে বলেন, মারা তো আমরা সবাই যাব। সৃষ্টিকর্তা কখন কার মৃত্যু কোথায় লিখে রাখেন জানার তো কোন উপায় থাকে না! তিতাসের পরিবারের পক্ষ থেকে জোরালোভাবে অভিযোগ করা হয়, পুলিশসহ অন্যরা মিলে ফেরি ছাড়ার অনুরোধ করলেও কর্তৃপক্ষ তা কানে তোলেনি। কোন কোন ভিআইপির জন্য ফেরি অপেক্ষা করে এমন প্রশ্নের উত্তরে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা কোন কিছুই বলতে পারেননি। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে যুগ্ম সচিব শাহনেওয়াজ দিলরুবা খানের নেতৃত্বে তিনটি কমিটিকে এমন মর্মান্তিক ঘটনার তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তদন্ত কমিটি সোমবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ঘটনার প্রাথমিক তথ্য সংগ্রহ করেছে। কমিটি আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যেই পূর্ণাঙ্গ তদন্ত পেশ করবে বলে জানানো হয়। অন্যদিকে বিআইডব্লিউটিসিও পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করে ঘটনার তথ্য সংগ্রহ করার পর প্রতিবেদন জমা দেবে। সে অনুযায়ী দোষী ব্যক্তিদের শাস্তির আওতায় আনা হবে। নিরপেক্ষ তদন্তে নিশ্চয়ই বেরিয়ে আসবে ঘটনার সত্যতা। স্পর্শকাতর এই তদন্তটি যেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বিশেষ নজরদারিতে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা হয়। মানুষের প্রতি সহজাত মানবিক বোধ যদি ভেতর থেকে জেগে না ওঠে, তা হলে এমন মর্মান্তিক দুর্ঘটনা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সত্যিই মুশকিল। এই মর্মান্তিক মৃত্যুর জন্য তদন্ত হবে, দোষীরা চিহ্নিত হবে, হয়তবা তাদের শাস্তিও হবে, তবে নিহত তিতাসের মার শূন্য কোল আর কখনও ভরে উঠবে না। ইতোমধ্যে স্কুলছাত্র তিতাসের অকালমৃত্যুতে ৩ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে রিট করা হয়েছে হাইকোর্টে। তবে পার্থিব কোন ক্ষতিপূরণই মৃত্যু শোক পূরণের জন্য যথেষ্ট নয় অন্তত একজন মায়ের কাছে।
×