ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

শোকের মাসে নতুন করে নাশকতার ছক কষছে জঙ্গীরা!

প্রকাশিত: ১১:০৩, ১ আগস্ট ২০১৯

শোকের মাসে নতুন করে নাশকতার ছক কষছে জঙ্গীরা!

শংকর কুমার দে ॥ শোকের মাস আগস্টে বার বার সন্ত্রাসী হামলা চালাচ্ছে জঙ্গীগোষ্ঠী। এবারের আগস্টে আবার হচ্ছে পবিত্র ঈদ-উল-আজহা। এ জন্য এবার আগস্টে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় থাকার নির্দেশ দিয়েছে সরকার। এই শোকের মাসে ১৫ আগস্ট সপরিবারে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকাণ্ড, খুনী চক্র, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ে ১৭ আগস্টে দেশব্যাপী সিরিজ বোমা হামলা চালিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিরোধী দলের নেতা থাকাকালে তাকে হত্যার চেষ্টায় ২১ আগস্টে গ্রেনেড হামলা চালানো হয়, ’১৭ সালে ৩২ নম্বর ধানম-িতে ১৫ আগস্টের শোক দিবসে জঙ্গী হামলা চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে আগের দিন পান্থপথে আত্মঘাতী হয় জঙ্গী সাইফুল ইসলাম। আগস্ট এলেই জঙ্গীরা বার বার সক্রিয় হয়। জঙ্গী হামলার এক অজানা আশঙ্কায় সামনে চলে আসে আতঙ্ক, উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা। সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশে এবারের আগস্টে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রাখা হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, দেশে জঙ্গীদের মেরুদ- ভেঙ্গে দেয়া হলেও একেবারে নির্মূল করা সম্ভব হয়নি। এ কারণে জঙ্গী হামলার আশঙ্কা নেই এ কথা বলা যাবে না। তাই আগস্ট এলেই জঙ্গী হামলা হতে পারে এমন আশঙ্কা প্রকাশ করে প্রতিবেদন দিয়েছে গোয়েন্দা সংস্থা। এই শোকের মাসে ১৭ আগস্ট দেশব্যাপী সিরিজ বোমা হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে জঙ্গী সংগঠন জেএমবি। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিরোধী দলে থাকাকালে জঙ্গীরা তাকে হত্যার চেষ্টায় ২১ আগস্ট রক্তাক্ত গ্রেনেড হামলা চালায়। ’৭৫ সালের ১৫ আগস্টে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে সপরিবারে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। সেদিন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার ছোট বোন শেখ রেহানা বিদেশে থাকায় সৌভাগ্যক্রমে প্রাণে বেঁচে যান। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দেয়া গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, জঙ্গীরা বারবার আগস্টকেই টার্গেট করছে। শোকের মাস আগস্টে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে নাশকতা ও নৈরাজ্যের ছককষে তৎপরতা শুরু করেছে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি, জামায়াত-শিবির চক্র ও জঙ্গীরা। নেপথ্যে তাদের মদদ দিচ্ছে বিএনপির উগ্রপন্থীরা যাদের বিদেশী অশুভ শক্তির সঙ্গে গোপন যোগাযোগ আছে। সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে তাদের এ তৎপরতায় ইন্ধন যোগাচ্ছে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটসহ উগ্র মৌলবাদী ধর্মান্ধ দল ও বিভিন্ন জঙ্গীগোষ্ঠী। ’১৭ সালের ১৫ আগস্টে ৩২ নম্বর ধানম-িতে জাতির জনকের প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য ও শ্রদ্ধা নিবেদনের সময়ে জঙ্গী হামলার চেষ্টা করে পান্থপথের এক হোটেলে আত্মঘাতী হয় জঙ্গী সাইফুল। রাজধানীর পান্থপথে নব্য জেএমবির আত্মঘাতী জঙ্গী সাইফুলের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আত্মহত্যার আগে ৩২ নম্বর ও শোক র‌্যালিতে জঙ্গী হামলার ছক কষেছিল। কিন্তু পুলিশী অভিযানের মুখে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আত্মঘাতী হয় সাইফুল। গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, আগস্ট এলেই বার বার জঙ্গী হামলার নেপথ্যের কারণ হচ্ছে, যারা জঙ্গীদের মদদ দেয়, আর্থিক সহায়তা করে, পৃষ্ঠপোষকতা দেয় তারা রয়ে গেছে পর্দার অন্তরালে। আড়াল থেকে জঙ্গী তৎপরতায় উৎসাহ যোগাচ্ছে বিএনপি-জামায়াত, যুদ্ধাপরাধী ও জঙ্গীরাই। ’৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর জেনারেল জিয়া ক্ষমতার মসনদে বসে জামায়াতÑশিবিরকে পুনর্বাসিত করেন। যুদ্ধাপরাধীদের মধ্যে জামায়াতের আমীর গোলাম আযমসহ যারা পাকিস্তানে ছিলেন তাদের দেশে এনে এবং যারা দেশে ছিলেন তাদের প্রকাশ্যে রাজনীতি করার সুযোগ দেন জেনারেল জিয়া। এরপর রাজাকার, আলবদর, আলশামসদের নিয়ে তিনি গঠন করেন বিএনপি। সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যার পর থেকে লাভবান বিএনপি-জামায়াত ও যুদ্ধাপরাধীরা। ক্ষমতায় এলে দেশব্যাপী ব্যাপক জঙ্গী তৎপরতা বেড়ে যায়। আর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে দেশের মধ্যে জঙ্গী হামলা, নাশকতা, সন্ত্রাসী কর্মকা-, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটিয়ে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য ছককষে জঙ্গীগোষ্ঠী, নেপথ্যে থাকে অন্তরালের অপশক্তি। এ জন্য আশঙ্কা শোকের মাসে আবারও নতুন করে জঙ্গী হামলার ঘটনা ঘটবে না তো? গোয়েন্দা রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, নতুন করে কোন অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা যাতে না ঘটতে পারে সেজন্য আগাম গোয়েন্দা নজরদারি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রস্তুতিসহ নানা ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। আগস্ট শোক ও বেদনাবিধূর মাস হওয়ায় নানা কর্মসূচী পালন করে আওয়ামী লীগসহ স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি। এই সুযোগটা নিতে পারে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি, বিশেষ করে জামায়াত-শিবির যুদ্ধাপরাধী ও জঙ্গীরা। তাদের সহায়তা করতে পারে বিএনপিতে ঘাপটি মেরে থাকা পাকিস্তানপন্থী উগ্র মৌলবাদী ধর্মান্ধ চক্রটি। এ জন্য পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই স্বাধীনতাযুদ্ধে পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে ইতোপূর্বেই স্বাধীনতার পক্ষশক্তি ধ্বংসে বারবার ষড়যন্ত্রের নীলনক্সা করছে, যা বাস্তবায়নের চেষ্টা হতে পারে। এই আগস্টেই সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে নৃশংসভাবে হত্যা করে ঘাতকরা। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় এলে দেশে ভয়াবহ জঙ্গীবাদের উত্থান ঘটে। দেশব্যাপী একের পর হামলার ঘটনা ঘটতে থাকে। অন্ধকারের এই অপশক্তি এরমধ্যে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের জনসভায় আওয়ামী লীগ সভাপতি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করতে গ্রেনেড হামলা চালায়। এ ঘটনার পর বিএনপি হামলার জন্য আওয়ামী লীগকেই দোষারোপ করতে থাকে। এতে জঙ্গীরা আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে। এরপর বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলেই ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট দেশের ৬৩ জেলায় (মুন্সীগঞ্জ বাদে) যুগপৎ বোমা হামলা চালায় নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন জেএমবি। জঙ্গীদের অন্যতম শীর্ষ নেতা জেএমবির সেকেন্ড ইন কমান্ড ছিদ্দিুকুল ইসলাম ওরফে বাংলাভাই মিডিয়ার সৃষ্টি বলে তখন অভিযোগ করেছিলেন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের শিল্পমন্ত্রী জামায়াত আমীর নিজামী, যুদ্ধাপরাধের মামলায় উচ্চ আদালতের রায়ে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে যার মৃত্যুদ- কার্যকর করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক উর্ধতন কর্মকর্তা জানান, দেশে অস্থিতিশীল ও নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে ইতোমধ্যেই গুজব রটিয়ে পদ্মাসেতুতে মাথা লাগবে, গণপিটুনিতে হতাহতের হিড়িক ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের জন্য আবার দেশ-বিদেশে ষড়যন্ত্রের জন্য সক্রিয় হয়েছে অশুভ চক্র। দেশে অস্থিরতা বাড়াতে, নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিতে ফের নাশকতার ছক কষছে জামায়াত, শিবির ও বিএনপির মধ্যকার স্বাধীনতাবিরোধী ও জঙ্গীরা। তাদের নাশকতার লক্ষ্যে কেপিআইসহ স্পর্শকাতর ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ। তাদের টার্গেট অস্থিতিশীল পরিস্থিতি দেখিয়ে বিদেশী রাষ্ট্রগুলোর মাধ্যমে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করা। এ সম্পর্কিত সুনির্দিষ্ট তথ্য পেয়েছে দেশের গোয়েন্দা সংস্থা। রাজধানীর গুলিস্তান, মালিবাগে কর্তব্যরত পুলিশের ওপর হামলা, পল্টন ও খামারবাড়ি পুলিশ বক্সের সামনে বোমা রাখার ঘটনা ঘটিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এসব ঘটনায় দায় স্বীকার করেছে আন্তর্জাতিক (জঙ্গী সংগঠন) আইএস। আইএস মনোভাবাপন্নদের সঙ্গে দেশী জঙ্গীদের গোপন যোগাযোগের ইঙ্গিত বহন করছে। শোকের মাসে আবারও নাশকতার ছক কষে অন্ধকারের জঙ্গীরা সক্রিয় হচ্ছে। আর পর্দার আড়াল থেকে দেশী-বিদেশী অশুভ শক্তি কলকাঠি নাড়ছে এমন আভাস পাওয়া যাচ্ছে।
×