ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

হারানোর মাস, চির ক্রন্দনের আগস্ট

প্রকাশিত: ১১:০২, ১ আগস্ট ২০১৯

হারানোর মাস, চির ক্রন্দনের আগস্ট

মোরসালিন মিজান ॥ বাদল-ধারা হল সারা, বাজে বিদায় সুর ...। হ্যাঁ, বর্ষার বিদায় সুর বাজছে। অচিরেই কান্না থামবে আকাশের। কিন্তু বাঙালীর দু’ চোখে যে শ্রাবণধারা সেটি যেন থামবার নয়। কারণ চিরক্রন্দনের আগস্ট এসেছে। এই একটি মাস বড় বেদনার। বুকের গভীরে যে প্রাচীন ক্ষত, যে দগদগে ঘা, জেগে উঠেছে নতুন করে। যারপরনাই ভারাক্রান্ত মন। পিতৃহত্যার গ্লানি যেন গিলে খেতে চাইছে। তাই চোখের জলে প্রায়শ্চিত্ত করার চেষ্টা। ফুলে গানে কথা কবিতায় বঙ্গবন্ধুকে ফিরে পাওয়ার আকুতি। সারা মাস ধরেই চলবে অর্ঘ্য নিবেদন। নানা আয়োজনে মহান নেতার প্রতি শ্রদ্ধা জানাবে জাতি। নিগূঢ় ভালবাসা প্রকাশ করবে। আজ থেকে শুরু হলো মাসব্যাপী আয়োজন। বেদনার ইতিহাসটি এখন সকলেই জানেন। বহুকাল আগে সেই ১৯৭৫ সালের আগস্ট মাসে জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। বুকটাই যার বাংলাদেশ, সেই বুকে গুলি চালিয়েছিল একদল বিশ্বাসঘাতক। বর্বর পাকিস্তানীরা মুজিবকে বশে আনতে পারেনি। আদর্শ থেকে একচুলও টলাতে পারেনি। অথচ নিজ হাতে গড়া বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কয়েকজন বিপথগামী অফিসার নির্দ্বিধায় গুলি ছুড়ে। ১৫ আগস্ট কাল রাতে মুজিবের মৃত্যু নিশ্চিত করতে চেয়েছিল তারা। সেটি হয়নি। বরং যতদিন যাচ্ছে ততই উজ্জ্বল হচ্ছে নামটি। সূর্যের মতো আলো ছড়াচ্ছে। সারা বছর নানাভাবে শেখ মুজিবুর রহমানকে স্মরণ করে বাঙালী। আগস্টে এসে আরও যেন গাঢ় হয় আবেগ। চলে মাসব্যাপী আয়োজন। এবারও মাসের প্রথম দিন থেকে শুরু হচ্ছে মুজিব বন্দনা। বঙ্গবন্ধুর ৪৪তম শাহাদাত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে মাসব্যাপী অনুষ্ঠানমালা হাতে নিয়েছে জাতীয় জাদুঘর। আজ বৃহস্পতিবার এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হবে। কর্মসূচীর অংশ হিসেবে নলিনীকান্ত ভট্টশালী গ্যালারিতে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি-নিদর্শন নিয়ে বিশেষ প্রদর্শনীর আয়োজন করা হবে। মাসের বিভিন্ন দিনে থাকবে বঙ্গবন্ধু বিষয়ক সেমিনার। বঙ্গবন্ধু স্মরণে বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহণ করছে শিল্পকলা একাডেমিও। এর অংশ হিসেবে আজ বৃহস্পতিবার একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী যাচ্ছেন টুঙ্গিপাড়ায়। সেখানে হেলিপ্যাড সংলগ্ন এলাকায় একটি পুষ্পকানন নির্মাণ করা হবে। ১০০ শিশু ১০০টি ফুল গাছের চারা রোপণ করবে। একাডেমি কর্তৃপক্ষ জানায়, বাগানের সব ফুল বঙ্গবন্ধুর নামে উৎসর্গ করা হবে। এছাড়া জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনে কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তাবায়নের লক্ষ্যে একাধিক মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হবে। বই নিয়েও থাকছে নানা আয়োজন। বৃহস্পতিবার থেকে ‘বঙ্গবন্ধুকে জানোÑদেশকে ভালোবাসো’ স্লোগানে শুরু হয়েছে ভ্রাম্যমাণ বইমেলা। বিকেলে শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে ২০ মাসব্যাপী মেলার উদ্বোধন করা হয়। বঙ্গবন্ধুর লেখা ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ ও ‘কারাগারের রোজনামচা’সহ মোট ১০০ নির্বাচিত বই নিয়ে মেলা সারাদেশ ঘুরে বেড়াবে। বিভিন্ন জেলা-উপজেলার স্বনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে পর্যায়ক্রমে অবস্থান করবে বইয়ে ঠাসা গাড়ি। শ্রাবণ বইগাড়িতে থাকবে একটি ডিজিটাল বোর্ড। এর মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ, দুর্লভ সাক্ষাতকার, মহাজীবনের গান, কবিতা, তথ্যচিত্র প্রদর্শিত হবে। শোকের মাসে শাহবাগের পাঠক সমাবেশ কেন্দ্রেও বিশেষ প্রদর্শনীর আয়োজন করা হবে। জাতির জনককে বিষয় করে লেখা বইগুলো দিয়ে সাজানো হচ্ছে একটি আলাদা কোণ। এর বাইরে এখানে থাকবে বঙ্গবন্ধু বিষয়ক আলোচনা, কবি কণ্ঠে কবিতাপাঠসহ নানা আয়োজন। এভাবে সারা মাসজুড়েই চলবে অর্ঘ্য নিবেদন। ঢাকায় নয় শুধু, সমগ্র বাংলাদেশে উচ্চারিত হবে মুজিব নাম। কবির ভাষায়Ñ তার ছায়া দীর্ঘ হ’তে-হ’তে/ মানচিত্র ঢেকে দ্যায় সস্নেহে, আদরে...। আর গীতিকবি গৌরী প্রসন্ন মজুমদারের কথাটি তো আরও সত্য, যেখানে তিনি বলেনÑ একটি মুজিবরের থেকে/লক্ষ মুজিবরের কণ্ঠস্বরের ধ্বনি-প্রতিধ্বনি/আকাশে বাতাসে ওঠে রণি...। আগস্ট মানে মুজিবের মৃত্যু নয়। আগস্ট মানে আকাশে বাতাসে মুজিবের ধ্বনি প্রতিধ্বনি।
×