ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

শোচনীয় হারে হোয়াইট ওয়াশ বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১০:৫৬, ১ আগস্ট ২০১৯

শোচনীয় হারে হোয়াইট ওয়াশ বাংলাদেশ

শাকিল আহমেদ মিরাজ ॥ বিশ্বকাপের হতাশা ঘোচাতে শ্রীলঙ্কা সফর ছিল দারুণ সুযোগ। কিন্তু মাশরাফি বিন মুর্তজা-সাকিব আল হাসানের অনুপস্থিতিতে হতাশার মাত্রাটা আরও তীব্র হলো। টানা দুই হারে আগেই সিরিজ খোয়ানো তামিম ইকবালের দল ‘হোয়াইটওয়াশ’ হলো ৩-০ ব্যবধানে! কলম্বোয় বুধবার তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে টাইগাররা হারল ১২২ রানে। জয়ের নায়ক এ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস (৮৭) এবং কুসল মেন্ডিসের (৫৪) জোড়া হাফ সেঞ্চুরির ওপর ভর করে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৮ উইকেটে ২৯৪ রানের চ্যালেঞ্জিং স্কোর গড়ে টস জিতে ব্যাটিং নেয়া দিমুথ করুনারতেœর দল। জবাবে ৩৬ ওভারে ১৭২ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ। ব্যর্থতার বৃত্তে বন্দী তামিম আউট হন মাত্র ২ রান করে! সৌম্য সরকার (৬৯) ও শেষ দিকে তাইজুল ইসলাম (৩৯*) ছাড়া আর কেউ দাঁড়াতেই পারেননি। দারুণ ইনিংসটির জন্য ম্যাচসেরা হয়েছেন ম্যাথুস। উল্লেখ্য বাংলাদেশ প্রথম ওয়ানডেতে ৯১ রানে আর দ্বিতীয় ম্যাচে হেরেছিল ৭ উইকেটে। চ্যালেঞ্জিং স্কোর টপকে জয় পেতে বড় জুটি পায়নি বাংলাদেশ। দলীয় ৪ রানের মধ্যে ভাঙ্গে ওপেনিং জুটি। ব্যর্থতার ষোলকলা পূর্ণ করে তামিম আউট হন ব্যক্তিগত ২ রানে। পেসার কাসুন রাজিথার বলে উইকেটের পেছনে কুসল মেন্ডিসের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন এই ওপেনার। অনেকদিন পর সুযোগ পাওয়া এনামুল হক বিজয় ফেরেন ১৪ রান করে। ১২তম ওভারে ভরসার প্রতীক মুশফিকুর রহীম যখন ১০ রান করে আউট হন বাংলাদেশ তখন ৪৬/৩। এরপর মোহাম্মদ মিথুন (৪), মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ (৯), সাব্বির রহমান (৭), মেহেদী হাসান মিরাজ (৮) আসা-যাওয়ার মিছিলে যোগ দিলে দলীয় ১১৭ রানেই ৭ উইকেট হারিয়ে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় বাংলাদেশ। ৮৬ বলে ৫ চার ও ১ ছক্কায় ৬৯ রান করা সৌম্য আউট হওয়ার পর হারের প্রহর গুনতে থাকা সফরকারীদের হয়ে শেষ দিকে তাইজুল কেবল ব্যবধানই কামিয়েছেন। ২৮ বলে ৫ চার ও ১ ছক্কায় ৩৯ রানে অপরাজিত থাকেন অনেকদিন পর ওয়ানডেতে ডাক পাওয়া এই বাঁহাতি স্পিনার। শ্রীলঙ্কার হয়ে দাসুন শানাকা ৩, কাসুন রাজিথা ও লাহিরু কুমরা নেন দুটি করে উইকেট। এর আগে টসে হেরে ফিল্ডিংয়ে নামা বাংলাদেশী বোলাররা এদিন ৪০ ওভার পর্যন্ত নিয়ন্ত্রিত বোলিং করেছিল। তবে ডেথ ওভারে আর সেটি ভালো হয়নি। উইকেট হাতে থাকায় আর থিতু হয়ে যাওয়া ম্যাথুস ও দাসুন শানাকা ঝড় তোলায় শেষ ১০ ওভারে ১০৬ রান আদায় করে নেয় শ্রীলঙ্কা। দলীয় ১৩ রানের মাথায় আভিস্কা ফার্নান্দোকে এলবিডাব্লির ফাঁদে ফেলেন শফিউল ইসলাম। তার সংগ্রহ ৬ রান। এরপর অধিনায়ক কররুনারতেœ ও কুসল পেরেরার ৮৩ রানের জুটি। তাতে তিনশো ছোঁয়া স্কোর গড়ার ভিত পেয়ে যায় লঙ্কানরা। জুটি ভাঙ্গার পর এই দুজনকে অবশ্য অল্প রানের ব্যবধানে ফেরাতে পারেন টাইগার বোলাররা। করুনারতেœ ৪৬ রান করে হন তাইজুল ইসলামের শিকার। পেরেরার ব্যাট থেকে আসে ৪২ রান। তার উইকেটটি নেন রুবেল হোসেন। দুই ব্যাটসম্যানই উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন মুশফিকুর রহিমের হাতে। শ্রীলঙ্কার দলীয় একশো রানের মধ্যে ৩ উইকেট তুলে নিতে পারলেও চাপটা ধরে রাখতে ব্যর্থ হয় বাংলাদেশী বোলাররা। চতুর্থ উইকেটে ১০১ রানের জুটি গড়েন মেন্ডিস ও ম্যাথুস। ফিফটি তুলে নেয়ার পরপরই অবশ্য মেন্ডিসকে ফেরান সৌম্য সরকার। সীমানার কাছে দুর্দান্ত ক্যাচ ধরেন সাব্বির রহমান। ৪০ ওভার পর্যন্ত ওভারপ্রতি পাঁচের নিচে থাকা লঙ্কানদের রান রেট বাড়ানোর কাজটা করেন এ ম্যাচের একাদশে সুযোগ পাওয়া শানাকা। উইকেটে গিয়ে তেড়েফুড়ে মেরে ১৪ বলে ৩০ রান করেন তিনি। লঙ্কান একাদশে সুযোগ পাওয়া আরেক ক্রিকেটার শিহান জয়সুরিয়া খেলেন ৭ বলে ১৩ রানের ক্যামিও ইনিংস। এ দুজনকে আউট করেন শফিউল। ইনিংসের শেষ ওভারে ম্যাথুসকে বিদায় করেন সৌম্য। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৮৭ রানের ইনিংস খেলেন এই অভিজ্ঞ তারকা। তাকে আউট করার পরের বলে আকিলা ধনঞ্জয়ার উইকেট তুলে নিয়ে হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনাও জাগিয়েছিলেন সৌম্য। তবে সেটা হয়নি। বরং খরুচে হয়ে যান তিনি। ওয়ানিদু হাসারাঙ্গা অপরাজিত থাকেন ৫ বলে ১২ রানে। ব্যর্থতার মাঝে সৌম্য-শফিউল দু’জনেই নেন তিনটি করে উইকেট। সংক্ষিপ্ত স্কোর: শ্রীলঙ্কা: ২৯৪/৮ (৫০ ওভার; আভিস্কা ৬, করুনারতেœ ৪৬, পেরেরা ৪২, মেন্ডিস ৫৪, ম্যাথিউস ৮৭, শানাকা ৩০, জয়সুরিয়া ১৩, হাসারাঙ্গা ১২*, ধনঞ্জয়া ০, রাজিথা ০*; শফিউল ৩/৬৮, রুবেল ১/৫৫, তাইজুল ১/৩৪, মিরাজ ০/৫৯, সৌম্য ৩/৫৬, মাহমুদউল্লাহ ০/২২) বাংলাদেশ: ১৭২/১০ (৩৬ ওভার; বিজয় ১৪, তামিম ২, সৌম্য ৬৯, মুশফিক ১০, মিঠুন ৪, মাহমুদউল্লাহ ৯, সাব্বির ৭, মিরাজ ৮, তাইজুল ৩৯*, শফিউল ১, রুবেল ২; জয়সুরিয়া ০/৪০, রাজিথা ২/১৭, ধনঞ্জয়া ১/৪৪, শানাকা ৩/২৭, হাসারাঙ্গা ১/১৬, কুমারা ২/২৬)। ফল: শ্রীলঙ্কা ১২২ রানে জয়ী। ম্যাচ ও সিরিজসেরা: ম্যাথুস (শ্রীলঙ্কা) ।
×