ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মিনিটে একজন আক্রান্ত ॥ সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে ডেঙ্গু

প্রকাশিত: ১০:৫৪, ১ আগস্ট ২০১৯

মিনিটে একজন আক্রান্ত ॥ সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে ডেঙ্গু

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ঝড়ের গতিতে বাড়ছে। সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। সরকারী হিসাব বলছে গত ২৪ ঘণ্টায় ১ হাজার ৪৭৭ জন নতুন করে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন। গড়ে দেখা গেছে, প্রতি মিনিটে একজনের বেশি আক্রান্ত হয়ে পড়ছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন্স সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম জানিয়েছে দেশের ৬৪ জেলাতেই এখন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ার কারণে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বাড়ছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। যদিও সরকারী হিসাবে বলা হয়েছে সারাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা এখন ১৭ হাজার ১৮১ জন হলেও মৃত্যুর সংখ্যা মাত্র ১৪ জন। যদিও বেসরকারী হিসাবে মৃত্যুর সংখ্যা আরও অনেকে বেশি বলে জানা গেছে। তবে প্রতিষ্ঠানটি বলছে আক্রান্তের সংখ্যা ১৭ হাজার ছাড়ালেও ১২ হাজারের বেশি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ব্যক্তি সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র নিয়েছেন। এদিকে ঢাকার বাইরে যেসব জেলায় ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত করা হয়েছে তাদের বেশিরভাগই ঢাকা থেকে আক্রান্ত হয়ে এলাকায় ফিরে গেছে। এলাকার স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি হয়েছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকায় যে হারে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে, হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসার সঙ্কুলান হচ্ছে না। তাই বাধ্য হয়েই অনেক রোগী নিজ এলাকায় চলে গেছেন। এবং জেলা হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে। তবে স্থানীয়ভাবে আক্রান্ত হয়েছে এমন রোগীর সংখ্যা নেহায়েতই কম। প্রায় প্রত্যেকে ঢাকা থেকে জ্বর নিয়ে এলাকায় ফিরে গেছেন। তারা ঢাকাতেই কর্মরত অথবা অধ্যয়নরত ছিলেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এডিস মশার ভয়াবহতা এমন সময় বাড়ছে, যেখানে আর ক’দিন পর দেশে পালিত হবে মুসলমানদের পবিত্র ধর্মীয় অনুষ্ঠান ঈদ-উল-আজহা। এ উপলক্ষে আগামী সপ্তাহ থেকেই লোকজন বাড়ি ফিরতে শুরু করবেন। এছাড়া এই সময়ের মধ্যে কোরবানির পশু নিয়ে অনেক ব্যবসায়ী রাজধানী আসবেন। এর আগেই ডেঙ্গু পরিস্থিতির উন্নতি বা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়া হলে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল, গ্রামগঞ্জেও ছড়িয়ে পড়তে পারে ডেঙ্গু। তাই সময় থাকতে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। এছাড়া গ্রামগঞ্জে খালে বিলে এডিস মশার লার্ভা ছড়িয়ে পড়লে পরবর্তীতে আরও ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। তারা বলছেন, প্রাণঘাতী ডেঙ্গুর কবলে সারাদেশ। মশা নিধনে এখন কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। ওয়ার্ড, উপজেলা ও অঞ্চলভিত্তিক অস্থায়ী চিকিৎসাকেন্দ্র স্থাপনের দাবিও তাদের। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে ডেঙ্গু আক্রান্ত বাহক অন্য জায়গায় ভ্রমণ করার মাধ্যমে পড়ে। অর্থাৎ একজন আক্রান্ত ব্যক্তি যখন অনত্র ভ্রমণ করে তখন সেখানে তাকে কোন মশা কামড়ালে সেই মশার ভেতরও ডেঙ্গু জ্বরের জীবাণু ছড়িয়ে পড়ে। সেই মশা পরে যাদের কামড়ায় তাদের শরীরের ডেঙ্গু রোগ ছড়িয়ে পড়তে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন এবার ঈদে যারা ঘরে ফিরবেন তাদের অনেকেই ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত। এ কারণেই এটির সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। পরিবেশ সংগঠন বাপার সভাপতি ডাঃ মোঃ আব্দুল মতিন বলেন, বর্তমানে দেশে ডেঙ্গু মহামারী আকার ধারণ করেছে। যা জাতীর জন্য মোটেও স্বস্তির বিষয় না। ঢাকার দুই মেয়র আগে থেকে সতর্ক হলে আজ এ অবস্থার সৃষ্টি হতো না। তাদের অবহেলার কারণে আজ দেশে ডেঙ্গু মহামারী আকার ধারণ করেছে। ওষুধ নিয়েও অনেক অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে। এ অবস্থা চলতে পারে না। স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহম্মেদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা তাদের দায়িত্ব পালন না করে বরং উল্টো বিভ্রান্তিকর বক্তব্য ছড়াচ্ছে। দেশের এই ক্লান্তিলগ্নে বিতর্কিত বক্তব্য না দিয়ে বরং সরকারকে দেশের স্কুল-কলেজ ও বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ব্যবহারের মাধ্যমে নিজ নিজ এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ এলাকার ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার করার আহ্বান জানান। ঈদ উপলক্ষে আগামী সপ্তাহ থেকে লোকজন বাড়ি ফিরতে শুরু করবেন। এবার ঈদে দীর্ঘ ছুটি থাকায় ঘরে ফেরার লোকের সংখ্যা আগে চেয়ে বেশি হতে পারে। প্রতি ঈদে প্রায় ৬০ লাখ লোক ঢাকা ছেড়ে চলে যান। এ কারণেই এবার ডেঙ্গু পরিস্থিতির ভয়াবহতা নিয়ে উদ্বেগ আরও বেড়ে যাচ্ছে। রাজধানী ঢাকায় যেসব এলাকায় কোরবানির পশুর হাট বসবে সেসব এলাকা এখন থেকেই পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করা না হলে আক্রান্তের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা গেলে আতঙ্ক মাথায় নিয়েই ঈদ উদ্যাপন করতে হবে। এদিকে প্রতিদিন সরকারীভাবে ডেঙ্গু আক্রান্তের যে হিসাব দেয়া হচ্ছে তাতেই পরিস্থিতি জটিল হয়ে পড়ছে। সরকারী-বেসরকারী প্রতিটি হাসপাতালে এখন ডেঙ্গু রোগীদের সংখ্যা বাড়ছে। ডেঙ্গুর চিকিৎসার কথা বিবেচনা করে প্রতিটি হাসপাতালে ডেঙ্গু কর্নার খোলা হয়েছে। যারা নতুন করে আক্রান্ত হচ্ছেন তারা হাসপাতালে ডেঙ্গু কর্নারে গিয়ে চিকিৎসা বিষয়ে খোঁজখবর নিচ্ছেন। এদিকে রাজধানীতে ডেঙ্গু মহামারী আকার ধারণ করায় এবং তা দ্রুত বিস্তারে স্কুল পড়ুয়া কোমলমতি শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা সবচেয়ে আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। প্রায় প্রতিদিন অভিভাবকরা বাচ্চাদের নিয়ে স্কুলে যেতে হচ্ছে। ক্লাস শেষ না হওয়া পর্যন্ত অভিভাবকদের সেখানে অবস্থান করতে হচ্ছে। এতে করে নিজের সন্তানের ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। অপরদিকে নিজেরাও আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন কখন কি হয় এই ভেবে। তারা এই অবস্থায় স্কুলের আগাম ছুটির আহ্বান জানিয়েছেন। এদিকে স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন্স সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ার যে তথ্য দিয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল রূপ ধারণ করছে। প্রতিদিন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা আগের দিনের চেয়ে ছাড়িয়ে যাচ্ছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসার কোন লক্ষণই নেই। বরং তা সারাদেশের ৬৪ জেলাতেই বিস্তার লাভ করেছে। তাদের দেয়া হিসাব অনুযায়ী ঢাকার প্রায় সব হাসপাতালে আশঙ্কাজনকভাবে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকার হাসপাতালগুলোতেই ভর্তি হয়েছেন ৯২৬ রোগী। বেসরকারী হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী ভর্তির সংখ্যা ৩৬০ এবং ঢাকার বাইরে বিভাগীয় শহরের হাসপাতালে নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন ৫৪৯ জন। তারা বলছেন, দেশে গত জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে মোট ১৭ হাজার ১৮৩ জন। এর মধ্যে ১৪৫ জন মারা গেছেন। ৪ হাজার ৯০৩ জন বর্তমানে ভর্তি আছেন। এর বাইরে ১২ হাজার ২৬৬ জন সুস্থ হয়ে ছাড়িপত্র নিয়েছেন। সারাদেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ॥ এদিকে সারাদেশে প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে বরিশালে আরও একজন রোগীর মৃত্যু হয়েছে। নারায়ণগঞ্জে আক্রান্তের মধ্যে তিনজন এবং পিরোজপুরে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া প্রতিটি জেলায় ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। বরিশাল ॥ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে জেলার গৌরনদী উপজেলার পশ্চিম আশোকাঠী গ্রামে মঙ্গলবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে আলেয়া বেগম (৫৫) নামের এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। আলেয়া বেগম ওই গ্রামের আব্দুল মান্নান ফকিরের স্ত্রী। আলেয়া বেগম ঢাকায় বেড়াতে গিয়ে জ্বর নিয়ে গ্রামের বাড়িতে আসেন। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তিনি চিকিৎসকের স্মরণাপন্ন হওয়ার পর প্রাইভেটভাবে চিকিৎসক দেখিয়ে বাইরের একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ডেঙ্গু জ্বরের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করান। পরীক্ষার রিপোর্টে ডেঙ্গুর বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে আলেয়াকে নিয়ে তার স্বজনরা চিকিৎসার জন্য গৌরনদী উপজেলা হাসপাতালের উদ্দেশে রওনা হন। কিন্তু হাসপাতালে আসার আগেই আলেয়া বেগমের মৃত্যু হয়। এর আগে মঙ্গলবার সকালে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুই যুবক মারা গেছেন। এদিকে বুধবার দুপুর পর্যন্ত বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত ৫০ রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। যার মধ্যে তিনজন শিশু, ৩৪ জন পুরুষ ও ১৩ জন নারী রয়েছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় শেবাচিম হাসপাতালে ১৬ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে। এ হাসপাতালে মোট ১০১ রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়ে ৫১ জন বাড়ি ফিরে গেছেন। পিরোজপুর ॥ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে বুধবার দুপুর পর্যন্ত হাসপাতালে পাঁচ রোগী ভর্তি হয়েছেন। এরা ঢাকা থেকে জ্বর নিয়ে বাড়ি এসেছেন। এ ছাড়াও মঠবাড়িয়া উপজেলায় একজন, নাজিরপুরে একজন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে। এ দিকে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে কাউখালীতে সোহেল হাওলাদার (১৮) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার ভোরে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। গত সোমবার দুপুরে সোহেল গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে পরিবারের লোকজন কাউখালীর গোসনতারা বাড়ি থেকে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডাঃ মোঃ বাকির হোসেন জানান, মারা যাওয়া সোহেল শেষ মুহূর্তে বরিশাল মেডিক্যালে ভর্তি হয়। তাকে চিকিৎসা দেয়ার জন্য যথেষ্ট সময় পাওয়া যায়নি, সে কিছুদিন পূর্বে ঢাকা থেকে জ্বর নিয়ে বাড়িতে আসে বলে জানা য়ায়। এছাড়া গত রবিবার দুপুরে বরিশালে নেয়ার পথে নিগার সুলতানা নৌভ (৩৫) নামের এক গৃহবধূ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা যান। সে কাউখালী উপজেলার শিয়ালকাঠি গ্রামের শামসু উদ্দিন খানের স্ত্রী। নারায়ণগঞ্জ ॥ সরকারী হিসাব অনুযায়ী সরকারী ও বেসরকারী হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়েছে ৬০-৭০ জন। বর্তমানে সরকারী হাসপাতালে ১৯ ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে নারায়ণগঞ্জের তিনজন বাসিন্দা ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে। তারা হলেন- ফতুল্লার বক্তাবলী এলাকার শান্ত মিয়া, ইসদাইরের শাওন কবির সাহেলীন ও ফতুল্লার দেওপাড় এলাকা বেলাল মিন্টু। এ ঘটনায় নারায়ণগঞ্জবাসী ডেঙ্গু রোগের আতঙ্কে রয়েছে। মঙ্গলবার নারায়ণগঞ্জের দুটি সরকারী হাসপাতাল খানপুর তিনশ শয্যা হাসপাতালে দুইজন, ভিক্টোরিয়া জেনারেল হাসপাতালে একজন ও আড়াইহাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একজনসহ মোট ৪ জন নতুন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। সরকারী হাসপাতালে এ পর্যন্ত ৪৫ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। মারা যাওয়া তিনজনের মধ্যে ২ জন ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। মানিকগঞ্জ ॥ নতুন করে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের সংখ্যা বুধবার বিকেল পর্যন্ত বেড়েছে ৪ জন। এ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা দাঁড়ালো ৩৬ জনে। মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত মানিকগঞ্জ ভর্তি রোগী ছিল ৩২ জন। মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডাঃ লুৎফর রহমান জানান, নতুন করে ভর্তি হয়েছে ৪ জন। ভর্তি হওয়া সকল রোগীকেই বিনামূল্যে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। জেলার অন্য কোথাও ডেঙ্গু আক্রান্তের খবর পাওয়া যায়নি। শরীয়তপুর ॥ সদর হাসপাতালে বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ৪ ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ আব্দুল্লাহ। হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ আব্দুল্লাহ জানান, যারা ডেঙ্গু জ¦রে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন তারা সবাই ঢাকা থেকে নিজ বাড়িতে এসে ডেঙ্গু জ¦রে আক্রান্ত হয়েছেন। খাগড়াছড়ি ॥ জেলায় ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়েছে। মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত খাগড়াছড়ি সদর আধুনিক হাসপাতালে ডেঙ্গু জ¦রে আক্রান্ত হয়ে নটরডেম কলেজের শিক্ষার্থীসহ ৬ জন ভর্তি হয়েছেন। তবে চিকিৎসা নিয়ে ৩ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলেও ৩ জন হাসপাতালে রয়েছে বিষয়টি নিশ্চিত করে খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডাক্তার নয়ন ময় ত্রিপুরা জানান, খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছেন, এরা ঢাকা থেকে আক্রান্ত হয়ে খাগড়াছড়ি এসেছে। নেত্রকোনা ॥ গত ২৪ ঘণ্টায় জেলা সদর হাসপাতালসহ বিভিন্ন প্রাইভেট ক্লিনিকে পাঁচজন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। তবে এরা প্রত্যেকে ঢাকা থেকে আক্রান্ত হয়ে নিজ এলাকায় এসেছেন বলে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ দাবি করেছে। এদের মধ্যে দুজনকে ময়মনসিংহ হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে। বাকিদের জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়। সিভিল সার্জন ডাঃ তাজুল ইসলাম জানান, নেত্রকোনায় এখনও ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব ছড়ায়নি। যারা আক্রান্ত হয়েছেনÑ তারা কর্মসূত্রে ঢাকায় অবস্থান করতেন। তবে জেলা সদর হাসপাতালে একটি ডেঙ্গু কর্নার চালু করা হয়েছে। এছাড়া শহরের কয়েকটি প্রাইভেট ডায়াগনস্টিক সেন্টারেও ডেঙ্গু পরীক্ষার ব্যবস্থা চালু রয়েছে। নওগাঁ ॥ বুধবার নওগাঁ সদর হাসপাতালে একজনসহ গত ৫ দিনে মোট ১১ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। এদের মধ্যে গুরুতর ৩ জনকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। বাকি ৮ জন নওগাঁ সদর হাসপাতালে বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এদের মধ্যে সদর উপজেলা চাকলা বালুপাড়া গ্রামের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী সিফাইত জাহান রয়েছেন। তিনি ঢাকায় ডেঙ্গু মশা দ্বারা আক্রান্ত হন। কিন্তু ঢাকার হাসপাতালগুলোতে জায়গা সংকুলান না হওয়ার কারণে তিনি বর্তমানে নওগাঁ সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা গ্রহণ করছেন। এছাড়াও বাকিদের মধ্যে অনেকেই ঢাকায় বেড়াতে গিয়ে আবার কেউ ঢাকায় অবস্থান করার সময় ডেঙ্গু মশা দ্বারা আক্রান্ত হয়েছেন। চুয়াডাঙ্গা ॥ সদর হাসপাতালে প্রতিদিনই বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। গত দু’দিনে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে এখানে আরও ৩ নারীসহ ৪ জন ভর্তি হয়েছেন। এ নিয়ে বুধবার বিকেল পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ালো ৪ নারীসহ ১৪ জন। কুড়িগ্রাম ॥ জেনারেল হাসপাতালে আরও দুইজন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে। এনিয়ে রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল ৮ জনে। এরা সবাই ঢাকায় ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে কুড়িগ্রামে এসে ভর্তি হন। এছাড়া আরও তিনজন ডেঙ্গু রোগীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রেফার্ড করে ঢাকা পাঠানো হয়েছে। জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ আবু মোঃ জাকিরুল ইসলাম জানান, এখন পর্যন্ত ১১ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তবে তারা সবাই ঢাকায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে কুড়িগ্রামে এসেছেন। এর মধ্যে ৩ জন রোগী উন্নত চিকিৎসার জন্য চলে গেছেন। মির্জাপুর ॥ কুমুদিনী হাসপাতালে গত এক সপ্তাহে প্রায় একশ’ ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। এদের মধ্যে নারী ও শিশুসহ ১২ জনকে ভর্তি করা হয়েছে। অন্যরা বিভিন্ন স্থানে চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে ডাক্তারা জানিয়েছেন। এদিকে কুমুদিনী হাসপাতাল ক্যাম্পাসে ফগিং মেশিন দিয়ে ডেঙ্গু মশার ওষুধ প্রয়োগ করছে মির্জাপুর পৌর কর্তৃপক্ষ। বুধবার ল্যাবের ম্যানেজার মাইক্রোবায়োলজিস্ট সৌমিত্র চক্রবর্তী জানান, গত এক সপ্তাহে ৬০ জন রোগীর মধ্যে ২৫ ভাগ ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে। রূপগঞ্জ ॥ নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে এবার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে জেলা (গ) সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার আফসার উদ্দিন। বর্তমানে আফসার উদ্দিন ধানম-ি গ্রীনরোড সেন্ট্রাল হাসপাতালে ৭ চিকিৎসাধীন থাকার পর বর্তমানে রূপগঞ্জ থানায় অবস্থান করছেন। এতে করে রূপগঞ্জ থানার অন্য অফিসার ও কর্মকর্তাদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। চরফ্যাশন ॥ ভোলার চরফ্যাশন পৌরশহরসহ উপজেলাজুড়ে মশার উপদ্রব বেড়েছে। এতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে জনজীবন। মশা নিধনে পৌরসভা কিংবা উজেলা প্রশাসনের কার্যকর কোন পদক্ষেপ নেই। বুধবার পর্যন্ত চরফ্যাশনের ছয় জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। চরফ্যাশন হাসপাতালে ডেঙ্গু পরীক্ষায় নেই কোন ডিভাইস। ফলে বাধ্য হয়ে ডেঙ্গু জ¦র পরীক্ষায় যেতে হচ্ছে ঢাকা কিংবা বরিশালে।
×