ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

হোয়াইটওয়াশ না সান্ত¡নার জয় আজ?

প্রকাশিত: ১১:০২, ৩১ জুলাই ২০১৯

হোয়াইটওয়াশ না সান্ত¡নার জয় আজ?

মিথুন আশরাফ ॥ শ্রীলঙ্কা সফরে বাংলাদেশ দল করুণ দশায় আছে। সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হওয়ার সম্ভাবনায় আছে। অথচ এমন অবস্থায় দলের কোচ খালেদ মাহমুদ সুজন জুয়ার আসরে, ক্যাসিনোতে যান। কিভাবে সম্ভব? সবখানে একই প্রশ্ন। যেখানে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এক ম্যাচ আগে সিরিজ হেরে গেছে বাংলাদেশ। তিন ম্যাচ সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডে আজ। কলম্বোর প্রেমাদাস স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় বেলা ৩টায় শুরু হবে ম্যাচটি। হারলেই হোয়াইটওয়াশ হবে তামিমবাহিনী। জিতলে স্বস্তির জয়, সান্ত¡নার জয় মিলবে। এমন পরিস্থিতিতে কোচকে কিনা দেখা যায় জুয়ার আসরে! সুজন বলেছেন, তিনি কলম্বোর ‘বেলিস ক্যাসিনোতে’ খেতে গিয়েছিলেন। তার জুয়ার আসরের এক ভিডিও বের হয়েছে। যেখানে দেখা যাাচ্ছে সুজন একজন নারী ওয়েটারের হাত থেকে ব্যাংকের এটিএম অথবা ক্রেডিট কার্ড গ্রহণ করছেন। এরপর তিনি এগিয়ে যান একটি জুয়ার টেবিলের দিকে। যাতে আরও বেশ কয়েকজন মানুষকে দেখা যায়। যদি তিনি খেতেই যেতেন তাহলে ক্যাসিনোতে কেন, অন্য কোন ভাল হোটেল কী ছিল না? এই প্রশ্নও উঠছে। দলের কোচকে নিয়ে যখন কোন সফরে বিতর্ক তৈরি হয় তখন তো ক্রিকেটারদের মনোবলেও এর প্রভাব পড়তে বাধ্য, তাই না? সিরিজ এরই মধ্যে হাতছাড়া হয়েছে। এখন বাংলাদেশ দল আছে হোয়াইটওয়াশ হওয়ার শঙ্কায়। প্রথম ওয়ানডেতে ৯১ রানে হেরে ১-০ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়ে। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ৭ উইকেটে হেরে সিরিজ হার হয়ে গেছে। আজ যদি হার হয় তাহলে পঞ্চমবারের মতো শ্রীলঙ্কার কাছে হোয়াইটওয়াশ হবে বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে কখনই সিরিজে জিততে পারেনি বাংলাদেশ। এবারও সেই স্বাদ পূরণ হয়নি। একই গোলকধাঁধায় আটকে আছে। ২০০২ সাল থেকে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে দ্বিপক্ষীয় সিরিজ খেলা শুরু করে এর আগে চারবার হোয়াইটওয়াশ হয় বাংলাদেশ। এর আগে সাতটি দ্বিপক্ষীয় সিরিজ খেলে হারে পাঁচটিতে। এবার ষষ্ঠবারের মতো সিরিজ হার হয়ে গেছে। ২০১৩ ও ২০১৭ সালের ওয়ানডে সিরিজে ড্র করে। এছাড়া সবকটিতে সিরিজে হার হয়। ২০০২ সালে ৩-০, ২০০৫ সালে ৩-০, ২০০৭ সালে ৩-০, ২০১৪ সালেও ৩-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ হয় বাংলাদেশ। ২০০৬ সালে ২-১ ব্যবধানে সিরিজে হারে আর ২০১৩ সালে ১-১ ও ২০১৭ সালে ১-১ ব্যবধানে সিরিজ ড্র হয়। যে দুইবার সিরিজে ড্র করে বাংলাদেশ, দুইবারই বৃষ্টিতে সিরিজ ড্র হয়। এবার শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে সিরিজের সময় বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকলেও তা আর হয়নি। তাতে করে দুটি ম্যাচ খুব ভালভাবেই বাংলাদেশ হেরেছে। আজ তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে হারলে আবারও হোয়াইটওয়াশ হবে বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কার সঙ্গে সবমিলিয়ে ৪৮ ম্যাচ খেলে ৩৯টিতে হার হবে। এরই মধ্যে বিশ্বের সব টেস্ট খেলুড়ে ক্রিকেট দলের বিরুদ্ধেই অনেক ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। সবমিলিয়ে ৩৭২ ম্যাচ খেলা হয়েছে। জয় মিলেছে ১২৫ ম্যাচে। হার হয়েছে ২৪০ ম্যাচে। রেজাল্ট হয়নি ৭ ম্যাচের। শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধেই সবচেয়ে বেশি হার হয়েছে (৩৮ ম্যাচে হার) বাংলাদেশের। লঙ্কানদের বিরুদ্ধে এবারও বেহাল দশাই হয়েছে। টানা দুই ম্যাচ হারের পর আবার কোচ যখন জুয়ার আসরে যান তখন সমালোচনা আরও তুঙ্গে ওঠে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কোচের ক্যাসিনোতে যাওয়া নিয়েই শুধু আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। বাংলাদেশ সিরিজে হেরে যাওয়ায় তৃতীয় ওয়ানডে নিয়ে খুব আলোড়ন নেই। এমন অবস্থা দাঁড় হয়েছে, দলের যে কাহিল অবস্থা হচ্ছে তাতে তৃতীয় ওয়ানডেও হারবে দল; এমনই ভাবা হচ্ছে। এই ভাবনা এখন ক্রিকেটাররা দূর করে দিতে পারলেই হয়। দল তৃতীয় ওয়ানডেতে কি করবে সেদিকটি নিয়ে না যত ভাবনা চলছে, সমর্থকদের ভেতর কোচের জুয়ার আসরে যাওয়ার কা- নিয়েই বেশি আলোচনা হচ্ছে। এমনকি অধিনায়ক তামিম ইকবালকেও এ নিয়ে প্রশ্ন শুনতে হয়েছে। মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে তামিমও কোচের পক্ষে জবাব দিয়েছেন। বলেছেন, ‘এমন কিছু নয়। আমাদের বর্তমান যে কোচ আছেন তিনি আসলেই তার সেরা চেষ্টা করেছেন। তিনি গতানুগতিকের বাইরেও অনেক কিছু করার চেষ্টা করেছেন। সাফল্য পেতে যা যা সম্ভব সবই করেছেন।’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘যখন আমরা ভাল খেলছি না তখন তার দায় কোচের ওপর দেয়া ঠিক না। আমরা যখন ভাল করছি না তখন কোচকে দায় দেয়ার মানে হয় না। আমার ধারণা কোচ তার সেরাটাই দিয়েছেন, আমাদের জন্য সেরা ফ্যাসিলিটিজের ব্যবস্থা করেছেন। সব খেলোয়াড়কে প্রস্তুত হওয়ার সবটুকু সুযোগই তিনি দিয়েছেন। সর্বোচ্চই দিয়েছেন, সম্ভাব্য সেরাটুকুই।’ কোচের এমন কা- আড়াল করতে চেয়েছেন তামিম। নিজেদের কাঁধেই সব দোষ নিয়েছেন। বলেছেন, ‘তাকে (কোচকে) দায় দেয়া ঠিক হবে না। বরং যে এগারোজন আমরা মাঠে ছিলাম তারা নিজেদের কাজটা করতে পারিনি বলেই হেরেছি।’ শেষ ম্যাচটিতে তামিম দলে থাকা ক্রিকেটারদের ওপরই আস্থা রাখছেন। তিনি বলেছেন, ‘প্রথম ম্যাচ থেকে এ পর্যন্ত আমি বলব দলে যে ১৫ জন আছে তাদের প্রতি আমার আস্থা আছে। দলের সবাই থাকলে ফলটা হয়তো অন্যরকম হতে পারত। এই মুহূর্তে আমাদের হাতে আরও একটি ম্যাচ আছে। দলে যে ১৫ জন আছে তাদের প্রতি আমি এখনও আস্থাশীল, তাদের পাশেই আছি। আমাদের ভাল ক্রিকেট খেলতে হবে। সেরা খেলোয়াড়দের নিয়েও ভাল খেলতে না পারলেও কিন্তু হারতে হয়। তাই যে ১৫ জন আছে তাদের নিয়েই ভাল ক্রিকেট খেলতে হবে, তাদের প্রতি আস্থা রাখতে হবে।’ মাশরাফি বিন মর্তুজা, সাকিব আল হাসান, লিটন কুমার দাস, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন সিরিজে নেই। তাদের অভাব ভালভাবেই যে ভোগাচ্ছে বাংলাদেশ দলকে তামিমের কথাতেই পরিষ্কার। সঙ্গে একাধিক পরিবর্তন এনে যে একাদশ নিয়ে আজ নামবে বাংলাদেশ, সেই একাদশ দলকে জেতাবে সেই বিশ্বাসও করছেন তামিম। এখন হোয়াইটওয়াশ হয় বাংলাদেশ না সান্ত¡নার জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে সেদিকেই সবার নজর থাকছে।
×