ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে চান কৃষিমন্ত্রী

সরাসরি ধান কিনে কমমূল্যে দরিদ্রদের দেয়া হবে

প্রকাশিত: ১১:০০, ৩১ জুলাই ২০১৯

সরাসরি ধান কিনে কমমূল্যে দরিদ্রদের দেয়া হবে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সরকারের সঠিক নীতি আর কৃষকদের পরিশ্রমের কারণেই ধানের বাম্পার ফলন হচ্ছে। তবে ভাল দাম না পেয়ে হতাশ কৃষক। প্রান্তিক কৃষকদের রক্ষার কোন বিকল্প নেই। তাদের হাতে ন্যায্যমূল্য তুলে দিতে উৎপাদন খরচ কমানো, কৃষির যান্ত্রিকীকরণ, ধান-চাল সংরক্ষণের পর্যাপ্ত গুদাম ও প্রয়োজনীয় পরিমাণে রফতানিতে যেতে হবে বলে মনে করছেন নীতিনির্ধারক থেকে শুরু করে মিল মালিক ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। ধান নিয়ে কৃষকদের হতাশা কষ্ট দেখতে চায়না কৃষি মন্ত্রণালয়। আগামীতে এই সমস্যা যেন না হয় সেজন্য এখনই প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা করে স্থায়ী সমাধানের পথে হাটতে চান। নিশ্চিত করতে চান কৃষকদের প্রাপ্য। আগামী মৌসুমে কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি সরকার ধান সংগ্রহ করবে। কৃষকদের লাভবান করতে প্রয়োজনে সারের দাম আরও কমানো হবে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে খাদ্য মন্ত্রণালয় ও মিল মালিকরাও চান কৃষকের ন্যায্য মূল্য বৃদ্ধিতে সঠিক পদক্ষেপ। কৃষক পর্যায়ে ধান-চালের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিতকরণের জন্য সরকার গৃহীত পদক্ষেপের অংশ হিসেবে কৃষকদের নিকট থেকে সরাসরি ধান সংগ্রহ/প্রক্রিয়াকরণ, মিলারদের মাধ্যমে ক্রাশিং ও সংরক্ষণ এবং চাল রফতানি বিষয়ে ফার্মগেটস্থ বিএআরসি সম্মেলন কক্ষে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় এসব তথ্য উঠে আসে। আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় কৃষকদের ধানের ন্যায্য মূল্য পেতে সরকারের কি করণীয় সে বিষয়ে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা ও রাইসমিল মালিকসহ সংশ্লিষ্টরা তাদের অভিমত তুলে ধরেন। কৃষিমন্ত্রী ড. মোঃ আব্দুর রাজ্জাকের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেব উপস্থিত ছিলেন, খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোঃ মফিজুল ইসলাম, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব সরকার আবুল কালাম আজাদ এবং কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ নাসিরুজ্জামান। সভায় কৃষি মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং এর আওতাধীন সংস্থাগুলোর উর্ধতন কর্মকর্তাসহ এফবিসিসিআই, রাইস এক্সপোটার্স এ্যাসোসিয়েশন, অটো মেজর এ্যান্ড হাস্কিং মিল মালিক সমিতি, রাইস মিল মালিক প্রতিনিধি প্রমুখ সভায় অংশগ্রহণ করেন। কৃষিমন্ত্রী ড. মোঃ আব্দুর রাজ্জাক বলেন, সরকারের অব্যাহত প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ এখন শুধু খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ দেশই নয় বরং উদ্বৃত্ত খাদ্যের দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির এই ধারবাহিকতাকে টেকসই করার পাশাপাশি কৃষকদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তির ক্ষেত্রেও সরকার সচেষ্ট রয়েছে। ধান [জঞঋ নড়ড়শসধৎশ ংঃধৎঃ: }থএড়ইধপশ[জঞঋ নড়ড়শসধৎশ বহফ: }থএড়ইধপশআমাদের প্রধান ফসল। বাম্পার উৎপাদনে ধানের মূল্য কম হওয়ায় সরকার অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে কৃষকদের যথাযথ মূল্য নিশ্চিতে সম্ভাব্য সকল প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি ধান ক্রয় চলছে। সরকারী খাদ্য গুদামের ধারণক্ষমতা সীমিত। তদুপরি এর সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা হচ্ছে। রাইস মিলার, চাতাল কল মালিকদের আরও অধিক পরিমাণ ধান চাল ক্রয়ে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদান করা হচ্ছে। তবে কৃষকদের উৎপাদিত ধানের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তিতে আমাদের আগামীতে আরও কাজ করে যেতে হবে। সেক্ষেত্রে উৎপাদন খরচ হ্রাসের জন্য বিভিন্ন কৃষি উপকরণে সরকারের প্রদত্ত ভর্তুকি ও উন্নয়ন সহায়তাকে আরও প্রসারিত করা হবে। সরকার কৃষি যান্ত্রিকীকরণে অধিক গুরুত্ব প্রদানের মাধ্যমে ধান রোপণ ও সংগ্রহকালীন সময়ে কৃষি শ্রমিকের সঙ্কটকে দূর করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। একটি যন্ত্রের দাম ১০ লাখ হলে সরকার ৭০ শতাংশ ভর্তুকি অর্থাৎ ৭ লাখ টাকা দিচ্ছে। তবুও আমরা যান্ত্রিকীকরণ সেই পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারিনি। এটা নিয়ে কাজ করতে হবে। মন্ত্রী বলেন, যদিও এই মুহূর্তে বিশ্ব বাজারে চালের মূল্য কম তারপরও আমাদের রফতানিতে যেতে হবে। চাল রফতানির ক্ষেত্রে ২০ শতাংশ প্রণোদনা দেয়া হবে। প্রয়োজনে কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি কিনে কমমূল্যে দরিদ্র মানুষদের দেয়া হবে। কিভাবে কৃষকদের কাছ হতে ধান সংগ্রহ করা যায় এ বিষয়ে সবার পরামর্শ চান কৃষিমন্ত্রী। ড. রাজ্জাক বলেন, আগামী মৌসুমে যাতে করে ধানের মূল্যের ক্ষেত্রে বিরূপ ঘটনার উদ্ভব না হয় সে বিষয়ে সরকার প্রস্তুত রয়েছে। উৎপাদন খরচ কমানোর জন্য শুধু ধান কাটার যন্ত্রই নয়, ধান বপন করা এবং মাড়াই করা যন্ত্রও কৃষদের দেয়া হবে। ধান সংগ্রহের ক্ষেত্রে তিনটি শ্রেণীতে বিভক্ত করা হবে প্রান্তিক চাষী, মাঝারি চাষী ও বড় চাষী। এছাড়া প্রত্যেক উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তার কাছে আর্দ্রতা মাপার যন্ত্র থাকবে, সে কৃষকদের বাড়িতে গিয়ে ধানের আর্দ্রতা পরিমাপ করবে। সরকার ধান সংগ্রহ করে মিল মালিকদের মাধ্যমে ক্রাশ করে চাল করবে। মিল মালিকদের সরকার লাভও দিবে। কৃষিমন্ত্রী বলেন, একটি ইউনিয়নে হাজার হাজার কৃষক যদিও সবার থেকে ধান নেয়া সম্ভব হয় না। অনেক এলাকায় লটারির মাধ্যমে ধান কেনা হয়। তবুও ভাল টাকাটা গ্রামের কোন না কোন কৃষক তো পেল। আবার আমরা চিন্তা করছি নতুন কৃষি কার্ড করেছি। এখানে সব ধরনের তথ্য থাকবে। আমরা কৃষকদের মধ্য থেকে যারা বড় ধরনের চাষী তাদের ধান কিনব ২০ ভাগ মাঝারি চাষীর ধান কিনব ৩০ ভাগ আর বাকি ৫০ ভাগ কিনব ছোট ছোট চাষীদের ধান। সবার ধানই যাতে কেনা যায় সেজন্য এমনভাগ করে কেনা হবে। মন্ত্রী বলেন, এই সমস্যা আগামীতে হোক আমরা চাই না। কৃষকরা এখন অনেক ক্ষুব্ধ। আর বাজারে চাহিদা না থাকলে দাম কমে যায় সত্যি তবে আমরা সঠিকভাবে এটিকে নিয়ন্ত্রণ করব। তাছাড়া সরকারী গুদামের ধারণক্ষমতা সীমিত হওয়ায় মিলারদের গুদামে সাময়িক সময়ের জন্য ধান চাল সংরক্ষণ করা যেতে পারে বলেও মন্ত্রী মতপ্রকাশ করেন। বাংলাদেশের চালের মান অত্যন্ত উন্নত বলে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, বিদেশে এ চালের যথেষ্ট রফতানি সম্ভাবনা রয়েছে। দেশের চাহিদা, প্রাকৃতিক দুর্যোগে আপদকালীন মজুদ এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে সীমিত পরিমাণ চাল রফতানির করার বিষয়ে মন্ত্রী অভিমত ব্যক্ত করেন। খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, সরকারের উন্নয়ন অভিযাত্রায় দেশ আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। তবে ধান উৎপাদনকারী কৃষকদের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে আরও প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। মন্ত্রী উল্লেখ করেন, ২০১৭ সালে হাওড়ের বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আমদানিকৃত চালের উদ্বৃত্ত অংশ এখনও ব্যবসায়ীদের কাছে রয়ে গেছে। এর পাশাপাশি ধানের বাম্পার ফলন হওয়ায় সার্বিকভাবে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ অনেক বেশি হয়ে পরেছে। এসব কারণেই কৃষক উৎপাদিত ধান চালের বিক্রয় মূল্য কমে গেছে। আগামীতে কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি ধান চাল ক্রয়ের ক্ষেত্রে মাঠ থেকে ধান কাটার আগেই প্রকৃত উৎপাদনকারী কৃষকের তালিকা তৈরি করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন মন্ত্রী। সরকারের খাদ্য গুদামের ধারণ ক্ষমতাকে আরও বাড়ানো দরকার বলে তিনি জানান। বিদেশে রফতানির জন্য সরু চালের উৎপাদন বাড়ানোর বিষয়ে মন্ত্রী গুরুত্বারোপ করেন। তিনি আরও বলেন, তালিকা অবশ্যই প্রকৃত কৃষকদের হতে হবে। কেননা প্রান্তিক তালিকা করলেও দেখা যায় ধান চলে যায় আড়তদার মিলারদের কাছে। আর এখন মোটা চাল কেউ খেতে চায় না। সবাই চিকন চাল পছন্দ করেন বলেও জানান তিনি। মন্ত্রী বলেন, শুধু তাই নয় মানুষের খাদ্যাভাসও পরিবর্তন হয়েছে। এখন ভাতের চেয়ে অনেকেই রুটি খেতে পছন্দ করছেন। আমাদের উৎপাদন ভাল থাকলেও কনজামশন কমে আসছে। এটিও ভাবতে হবে। আমাদের মর্ডান টেকনোলজিতে স্টক করার পদ্ধতিতে যেতে হবে। প্যাডিসাইলো সরকারের বাইরে প্রাইভেট সেক্টরও করার জন্য এগিয়ে আসতে পারেন বলেও জানান তিনি। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোঃ মফিজুল ইসলাম জানান ইতোমধ্যেই চার রফতানির সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। তবে দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদাকে সবসময় গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনায় নিতে হবে। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব সরকার আবুল কালাম আজাদ জানান, ধানের জন্য সাইলো (পেডি সাইলো) তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে এতে করে অধিক আর্দ্রতাসম্পন্ন ধানও সংরক্ষণ করা যাবে।
×