ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

লন্ডনে শেখ হাসিনার সঙ্গে মহাসচিব প্যাট্রিসিয়ার সৌজন্য সাক্ষাত

কমনওয়েলথ ব্লু চার্টার বাস্তবায়নে নেতৃত্ব দেয়ার আহ্বান

প্রকাশিত: ১০:৫৯, ৩১ জুলাই ২০১৯

কমনওয়েলথ ব্লু চার্টার বাস্তবায়নে নেতৃত্ব দেয়ার আহ্বান

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ ‘কমনওয়েলথ ব্লু চার্টার’ বাস্তবায়ন এবং জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবেলায় বাংলাদেশকে কমনওয়েলথে নেতৃত্ব প্রদানের আহ্বান জানিয়েছেন এর মহাসচিব প্যাট্রিসিয়া স্কটল্যান্ড কিউসি। প্যাট্রিসিয়া স্কটল্যান্ড কিউসি সোমবার সন্ধ্যায় (লন্ডনের স্থানীয় সময়) লন্ডনে অবস্থানরত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে এই আহ্বান জানান। খবর বাসসর। কমনওয়েলথ মহাসচিবের বক্তব্যের উদ্বৃতি দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম জানান, কমনওয়েলথ মহাসচিব বলেছেন, ‘কমনওয়েলথ ব্লু চার্টার এবং জলবায়ু ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের নেতৃত্ব দেয়া উচিত।’ প্রেস সচিব লন্ডন থেকে টেলিফোনে জানান, প্রধানমন্ত্রী কমনওয়েলথ মহাসচিবের প্রস্তাবে সম্মত হয়েছেন এবং বলেছেন, ‘তার সরকার এ বিষয়ে কাজ করে যাচ্ছে।’ বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী এবং কমনওয়েলথ মহাসচিব তথ্য প্রযুক্তি খাত এবং এসডিজি বাস্তবায়নে অগ্রগতি সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনা করা হয়। ‘কমনওয়েলথ ব্লু চার্টার’ মহাসাগর সংক্রান্ত নানা সমস্যার সমাধান এবং টেকসই মহাসাগর উন্নয়নের লক্ষ্যে কমনওয়েলথ সদস্যভুক্ত ৫৩ সদস্য রাষ্ট্রের পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে কাজ করার একটি অঙ্গীকারনামা। এ প্রসঙ্গে প্যাট্রিসিয়া তথ্য প্রযুক্তি খাতে এবং এসডিজি (টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা) বাস্তবায়নের অগ্রগতিতে বাংলাদেশের চমকপ্রদ সাফল্যের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, এ বছর কেনিয়ার নাইরোবিতে অনুষ্ঠেয় কমনওয়েলথ নারী সম্মেলনেও বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। প্যাট্রিসিয়া আরও বলেন, বাংলাদেশের এসডিজি বাস্তবায়নের উন্নত সংস্করণ থেকে বিভিন্ন কমনওয়েলথ সদস্য রাষ্ট্রগুলোও শিক্ষা লাভ করতে পারে। তিনি বলেন, কমনওয়েলথের ৫৩ সদস্যভুক্ত রাষ্ট্রের মধ্যে ৪৯ নিয়ে একটি ‘কন্টিনেন্টাল ফ্রি ট্রেড এরিয়া’ (উপমহাদেশীয় অবাধ বাণিজ্য এলাকা) গড়ে তোলা হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানই সর্বপ্রথম বাংলাদেশ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মসূচী চালু করেন এবং বর্তমান সরকার তার পদাংক অনুসরণ করেই জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবেলার পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। এ বিষয়ে তার সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ সম্পর্কেও প্যাট্রিসিয়াকে অবহিত করেন প্রধানমন্ত্রী। শেখ হাসিনা এ সময় কমনওয়েলথকে ৫৩ সদস্য রাষ্ট্রের একটি ‘আমব্রেলা অর্গানাইজেশন’ হিসেবে গড়ে তোলায় এর মহাসচিব প্যাট্রিসিয়ার ভূমিকার প্রশংসা করেন। প্রধানমন্ত্রীর কন্যা সায়মা ওয়াজেদ হোসেন, মুখ্য সচিব মোঃ নজিবুর রহমান এবং লন্ডনে বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনীম এ সময় উপস্থিত ছিলেন। আলোচনার মাধ্যমেই রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান চায় বাংলাদেশÑ প্রধানমন্ত্রী ॥ এদিকে অপর এক খবরে বাসস জানায়, মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় প্রদান বাংলাদেশের জন্য এক বিরাট বোঝা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ঢাকা দীর্ঘায়িত এই রোহিঙ্গা সমস্যাকে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমেই নিষ্পত্তি করতে চায়। লন্ডনের স্থানীয় সময় সোমবার সন্ধ্যায় লর্ড আহমেদ অব উইম্বলডন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে এলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এত বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গাকে আশ্রয় প্রদান আমাদের জন্য এক বিরাট বোঝা। আমরা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমেই এটির সমাধান করতে চাই।’ প্রেস সচিব ইহসানুল করিম বৈঠকের পরে প্রধানমন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে এ কথা জানান। লর্ড আহমেদ বর্তমানে যুক্তরাজ্যের কমনওয়েলথ এবং জাতিসংঘ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। লন্ডন থেকে টেলিফোনে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম বলেন, লর্ড আহমেদ রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশকে তার দেশের সব ধরনের সহায়তা প্রদানের আশ্বাস দিয়েছেন এবং এ বিষয়টি নতুন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন অবগত রয়েছেন বলেও জানান। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী এবং লর্ড আহমেদ উভয়ই একমত পোষণ করে বলেন, ‘ইসলাম শান্তির ধর্ম এবং সন্ত্রাসবাদকে ইসলাম কখনও সমর্থন করে না।’ এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষকে একত্রিত করে এর বিরুদ্ধে গণসচেতনতা সৃষ্টি করেছে। বাংলাদেশে বিদ্যমান সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সকল ধর্মমতের মানুষ এদেশে স্বাধীনভাবে নিজ নিজ ধর্ম পালন করছে।’ ইসলামের প্রকৃত মূল্যবোধ জনগণের কাছে তুলে ধরতে তার সরকার সারাদেশে ইসলামিক রিসার্স সেন্টার গড়ে তুলছে বলেও শেখ হাসিনা লর্ড আহমেদকে অবহিত করেন। প্রধানমন্ত্রী এবং লর্ড আহমেদ ব্রিটেনের ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে যাওয়া সংক্রান্ত ব্রেক্সিট ইস্যু নিয়েও আলোচনা করেন। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়নের ভূয়সী প্রশংসা করেন লর্ড আহমেদ। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একমাত্র শিক্ষাই নারীর ক্ষমতায়নের নিশ্চয়তা বিধান করতে পারে।’ নারীর ক্ষমতায়নে তার সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সরকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৬০ শতাংশ শিক্ষক নারীদের থেকে নিয়োগ করছে।’ বাংলাদেশ এবং যুক্তরাজ্যের মধ্যে বিদ্যমান চমৎকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে উভয়ে সন্তোষ প্রকাশ করে বৈঠকে আশাবাদ ব্যক্ত করেন, ‘আগামীর দিনগুলোতে এই বন্ধন আরও সুদৃঢ় হবে।’ লর্ড আহমেদের সঙ্গে তার সহধর্মিণী সিদ্দিকা আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মোঃ নজিবুর রহমান এবং যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনীম বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
×