ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ভেটো ঠেকাতে ব্যর্থ সিনেট ॥ রিয়াদের কাছে ট্রাম্পের অস্ত্র বিক্রি

প্রকাশিত: ০৮:৩৬, ৩১ জুলাই ২০১৯

ভেটো ঠেকাতে ব্যর্থ সিনেট ॥ রিয়াদের কাছে ট্রাম্পের অস্ত্র বিক্রি

সৌদি আরবের কাছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিশাল অঙ্কের অস্ত্র বিক্রির চুক্তিতে আর বাধা থাকল না। ওয়াশিংটন এখন রিয়াদের কাছে ৮১০ কোটি ডলারের অস্ত্র বিক্রি করতে পারবে। এর আগে মার্কিন কংগ্রেস অস্ত্র বিক্রির এই প্রস্তাব আটকে দিয়েছিল। কিন্তু মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রিয়াদের কাছে অস্ত্র বিক্রিতে অনড় থেকে ভেটো দেন। শেষ পর্যন্ত সোমবার মার্কিন সিনেটও ট্রাম্পের এই ভেটো বাতিল করতে ব্যর্থ হলো। খবর দ্য ডিফেন্স পোস্ট, এএফপি ও বিবিসি অনলাইনের। চলতি মাসেই সৌদি আরবের কাছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র বিক্রির বিরুদ্ধে প্রস্তাব পাস হয় কংগ্রেসে। সেখানে প্রস্তাব পাস ছিল ট্রাম্পের জন্য একটি বড় আঘাত। কংগ্রেসে আইনপ্রণেতারা গত বছর সৌদি নাগরিক সাংবাদিক জামাল খাশোগিকে হত্যায় রিয়াদের ভূমিকা প্রশ্নে সৌদি আরবের কঠোর সমালোচনা করে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে এ নিয়ে তৃতীয়বারের মতো ডোনাল্ড ট্রাম্প তার ভেটো ক্ষমতা প্রয়োগ করলেন। মধ্যপ্রাচ্যে ক্রমাগতভাবে উত্তেজনা বৃদ্ধি পেতে থাকায় ট্রাম্প সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ বিভিন্ন দেশের কাছে ২২ ধরনের অস্ত্র বিক্রির অনুমোদন দিতে চান। সমালোচকরা বলছেন, এসব অস্ত্র বিক্রি ইয়েমেনে ভয়াবহ যুদ্ধ পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটাবে। সেখানে সৌদি আরবের নেতৃত্বে মার্কিন সমর্থিত একটি সামরিক জোট ইরান মদদপুষ্ট হুতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। দেশটিতে ব্যাপক যুদ্ধের কারণে সেখানে বিশ্বের সবচেয়ে ভয়াবহ মানবিক সঙ্কট দেখা দিয়েছে বলে জাতিসংঘ জানায়। ট্রাম্প প্রশাসন আইনপ্রণেতাদের এড়িয়ে অস্ত্র বিক্রির অনুমোদন দিতে গত মে মাসে একটি বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করে। তার প্রশাসন ঘোষণা করে ইরান মধ্যপ্রাচ্যে স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রে প্রধান হুমকি। মার্কিন সিনেটের ডেমোক্রেটিক সদস্য বেন কার্ডিন বলেন, তারা এই অস্ত্র বিক্রি বাতিল করছে না। তবে রিপাবলিকান শিবির তাদের সাংবিধানিক দায়িত্ব অবহেলা করে অবশেষে রিয়াদের কাছে অস্ত্র বিক্রির পথে এগোল। তিনি বলেন, আমাদের সকলের আইনী ও নৈতিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে যে মার্কিন অস্ত্র কোন বেসামরিক লোক ও নিরপরাধকে হত্যার জন্য ব্যবহৃত হতে পারবে না। বেন কার্ডিন মার্কিন সিনেটের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক কমিটির একজন সদস্য। এ সময় সোমবার ইয়েমেনের উত্তরাঞ্চলে সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন বাহিনীর হামলায় দুই শিশুসহ ১৩ বেসামরিক লোক নিহতের বিষয়টি উল্লেখ করেন বেন কার্ডিন। এর আগে মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদ প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নিন্দা জানিয়ে সৌদি আরব ও অন্যান্য মিত্র দেশের কাছে ৮০০ কোটি ডলারেরও বেশি মূল্যের অস্ত্র বিক্রিতে বাধা দিতে ভোট দেয়। এ বছরের গোড়ার দিকে নেয়া জরুরী পদক্ষেপের আওতায় ট্রাম্পের ঘোষিত বিতর্কিত অস্ত্র বিক্রি ঠেকাবে, এমন তিনটি প্রস্তাব আইনপ্রণেতারা অনুমোদন দিয়েছেন। আইনপ্রণেতাদের অনেকে গত বছর সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশোগিকে হত্যায় সৌদি আরবের ভূমিকা প্রশ্নে রিয়াদের সমালোচনা করেন। মার্কিন কংগ্রেস খুব সহজেই সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে এ অস্ত্র বিক্রিকে বাধা দিতে পারলেও ট্রাম্পের ভেটো ক্ষমতাকে অগ্রাহ্য করতে দুই-তৃতীয়াংশ ভোটের প্রয়োজন হয়। এ ক্ষেত্রে প্রায় ৫০টি ভোট পাওয়ার ব্যাপারে সন্দেহ ছিল। মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের আঞ্চলিক প্রতিদ্ব্ন্দ্বী সৌদি আরব। সিরিয়া ও ইয়েমেন যুদ্ধ ছাড়াও ইরাক ও লেবাননে বিভিন্ন রাজনৈতিক পক্ষগুলোর মধ্যে তাদের অবস্থানও বিপরীতমুখী। অন্যদিকে মধ্যপ্রাচ্যে যুৃক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ মিত্র সৌদি আরব। ইয়েমেন যুদ্ধে সৌদি আরবের বিরুদ্ধে বেসামরিক মানুষের ওপর মার্কিন অস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগ থাকলেও রিয়াদের পক্ষে অবস্থান নেয়ার কথা বেশ কয়েকবারই স্পষ্ট করেছেন ট্রাম্প। ইয়েমেনের মানবিক পরিস্থিতি ও সাংবাদিক জামাল খাশোগির হত্যাকা-ের কারণে সৌদি সরকারের সঙ্গে এমন চুক্তির ব্যাপারে আগ্রহী ছিলেন না কংগ্রেস সদস্যরা। ২০১৪ সালে ইয়েমেনে শুরু হয়েছিল গৃহযুদ্ধ। হুতি ও সালেহ জোট রাজধানী সানা দখল করলে দেশটির প্রেসিডেন্ট হাদি সৌদি আরবে নির্বাসনে যান। যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় ২০১৫ সাল থেকে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত ইয়েমেনে হামলা চালানো শুরু করে। সৌদি আরবের দাবি, হুদাইদা বন্দর দিয়ে প্রতিমাসে ৩ থেকে ৪ কোটি মার্কিন ডলার রাজস্ব আয় করে, যা দিয়ে তারা ইরান থেকে অস্ত্র কেনে। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে শুরু হওয়া সংঘর্ষে ভেঙ্গে পড়ে হুদাইদা বন্দরের পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থা। ইয়েমেনে দেখা দেয় চরম মানবিক দুর্যোগ। হুদাইদা বন্দরই ইয়েমেনে ত্রাণ সরবরাহের মূল মাধ্যম। ফলে যুদ্ধবিধ্বস্ত এই দেশটিতে অন্তত ৮০ লাখ মানুষ অনাহারের ঝুঁকিতে পড়ে।
×