ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

চামড়া সংগ্রহ বন্ধ করে দিয়েছেন অধিকাংশ ব্যবসায়ী;###;ফেলা হচ্ছে ডাস্টবিনে

বরিশালে চামড়া নিয়ে ব্যবসায়ীরা বিপাকে

প্রকাশিত: ১২:০৩, ৩০ জুলাই ২০১৯

বরিশালে চামড়া নিয়ে ব্যবসায়ীরা বিপাকে

খোকন আহম্মেদ হীরা, বরিশাল ॥ বাজারদর মন্দা থাকায় চামড়া ব্যবসায় আগ্রহ নেই বরিশালের ব্যবসায়ীদের। স্বল্পপরিসরে কেউ কেউ চামড়া সংগ্রহ করছেন। তবে বাজারদর মন্দার কারণে সৃষ্ট অনাগ্রহ থেকেই চামড়া সংগ্রহ বন্ধ করে দিয়েছেন অধিকাংশ ব্যবসায়ীরা। এ কারণেই স্থানীয় বাজারে জবাই করা পশুর চামড়া ফেলে দেয়া হচ্ছে ময়লার ভাগাড় কিংবা ডাস্টবিনে। বরিশাল চামড়া ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শহিদুর রহমান শাহিন বলেন, গত ৩/৪ বছর ধরে ধারাবাহিক বাজারদর নিম্নমুখী। পাশাপাশি ট্যানারি মালিকদের কাছে পাওনা টাকা বকেয়া পরে যাওয়ায় স্থানীয়ভাবে ব্যবসায়ীদের অনীহা সৃষ্টি হয়েছে। ফলে অনেকে এ ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছেন। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, চারবছর আগে ঢাকার ট্যানারি ব্যবসায়ীরা বাজারদর মন্দার কথা বলে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের টাকা আটকাতে শুরু করে। গত কয়েক বছরে বরিশালের ব্যবসায়ীদের টাকা আটকে যাওয়ার পরিমাণ প্রায় তিন কোটি টাকায় পৌঁছেছে। এ পর্যন্ত শুধু আমি (শাহিন) প্রায় ৫৭ লাখ টাকা ট্যানারি ব্যবসায়ীদের কাছে পাওনা রয়েছি। বর্তমানে ব্যবসা চালিয়ে রাখতে গিয়ে আমি নিজেই ২৬ লাখ টাকার মতো দেনাগ্রস্ত হয়ে পড়েছি। তিনি জানান, শুরুতে বরিশাল নগরীতে ২২ জন চামড়া ব্যবসায়ী থাকলে বছরে বছরে কমে তা আটজনে গিয়ে ঠেকেছে। অনেকের টাকা যেমন আটকে গেছে, তেমনি অনেকে দেনাগ্রস্ত হয়ে ব্যবসা চালাতে গিয়ে পথে বসেছেন। চলতি বছরে মাত্র তিনজন ব্যবসায়ী নগরীতে চামড়া সংগ্রহ করছেন। আর যারাও বা করছেন তারা চামড়ার দর না পেয়ে এখন স্থানীয় বাজার থেকে চামড়া কেনা বন্ধ করে দিয়েছেন। নগরীর চৌমাথা বাজারের মাংস ব্যবসায়ী সাত্তার সিকদার বলেন, ঈদের পর থেকে পাইকাররা চামড়া নিচ্ছেন না। যাতায়াত খরচা দিয়ে পাইকারদের কাছে পাঠিয়েও কোন লাভ হচ্ছে না। ফলে যাতায়াত খরচটাই বৃথা যাচ্ছে। বর্তমানে আমাদের বাজারসহ আশপাশের বাজারের মাংস ব্যবসায়ীরা সবাই পশুর (গরু) চামড়া কেটে কেটে ব্যাগে ভরেৃ ডাস্টবিনে ফেলে দিচ্ছেন। তিনি বলেন, গত বছরের শেষ থেকে চলতি বছরের ঈদের আগ পর্যন্ত ছয়মাস পশুর চামড়া নিয়েছিল পাইকরারা, তবে কোন টাকা দেয়নি। আর আগে যেমন চামড়ার আকার আকৃতি দেখে টাকা দেয়া হতো, এখন তাও করেন না। শুধু বকেয়ার খাতায় সংখ্যা লিখে রাখেন। যদিও ঈদের পর থেকে সবধরনের চামড়াই সংগ্রহ বন্ধ করে দিয়েছেন পাইকাররা। তাই আমরাও চামড়া ফেলে দেয়া ছাড়া কোনো উপায় দেখছি না। চামড়া ব্যবসায়ীরা জানান, বর্তমানে বাজারে শ্রমিকের মজুরি অনেক বেশি। তারপর যখন দুই হাজার টাকা পর্যন্ত গরুর চামড়ার দর ছিল তখন লবণের বস্তা ছিল দুইশ’ টাকা। আর এখন কমে চামড়ার দাম ২/৩শ’ টাকায় ঠেকেছে কিন্তু লবণের বস্তার দাম বেড়ে আটশ’ টাকা হয়েছে। তাই চামড়ার পেছনে খরচ বেড়েছে। এক্ষেত্রে ধারদেনা করে কোনো ব্যবসায়ী চামড়া কিনতে আগ্রহী নয়, তাই আসন্ন কোরবানিতে কী হবে এটা বরিশালের কোন ব্যবসায়ীরাই বলতে পারছেন না। বরিশাল চামড়া ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সভাপতি বাচ্চু মিয়া বলেন, প্রতিবছরের মতো কোরবানির আগ মুহূর্তে ট্যানারি ব্যবসায়ীদের কাছে আমরা যাব। তারা যদি পাওনা বকেয়া টাকা দেয় তাহলে হয়তো স্থানীয় পাইকাররা চামড়া কিনতে পারে। নতুবা চামড়া কেনা যাবে না বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
×