ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

রাজারবাগে সহস্রাধিক পুলিশ ডেঙ্গুর চিকিৎসা নিয়েছেন

প্রকাশিত: ০৬:০৪, ২৯ জুলাই ২০১৯

রাজারবাগে সহস্রাধিক পুলিশ ডেঙ্গুর চিকিৎসা নিয়েছেন

অনলাইন রিপোর্টার ॥ রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশার হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছেন না জনগণের নিরাপত্তায় নিয়োজিত পুলিশ সদস্যরাও। গত মে মাসের মধ্যভাগ থেকে গতকাল রোববার পর্যন্ত রাজধানীর রাজারবাগের কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে এক হাজার ৯০ জন পুলিশ সদস্য ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। আজ সোমবার এই তথ্য জানিয়েছেন পুলিশ হাসপাতালের চিকিৎসক ড. মনোয়ার হাসনত। রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা ২৫০টি। এর মধ্যে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে গতকাল ভর্তি ছিলেন ১১০ জন। গতকাল রবিবার সন্ধ্যায় রাজারবাগের কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের ৪ নম্বর ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, মোট ৮৫ জন রোগী চিকিৎসাধীন সেখানে। এর ভেতরে ৪৭ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত। আরো সাতজনের রক্ত পরীক্ষা করতে দেওয়া হয়েছে। আর শয্যা খালি না থাকায় ৩১ জন রোগী মেঝেতে চিকিৎসা নিচ্ছেন। সেখান থেকে ৫ নম্বর ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, মোট ২৮ জন জ্বরের রোগী ভর্তি আছেন। এর ভেতরে ১৬ জন রোগীর ডেঙ্গু শনাক্ত করা হয়েছে। বাকি ১২ জনের ডেঙ্গু হয়েছে কি না, তা নিশ্চিত হতে রক্ত পরীক্ষা করতে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সিট না পেয়ে অন্তত ২০ জন পুলিশ সদস্য মেঝেতে চিকিৎসা নিচ্ছেন। ১ নম্বর নারী ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে ৪০ জন নারী পুলিশ সদস্য ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। দুই নম্বরে ওয়ার্ডে দুজন ও তিন নম্বর ওয়ার্ডে চারজন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। এ ছাড়া ভিআইপি কেবিনে দুজন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। সব মিলিয়ে হাসপাতালটিতে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন ১১০ জন। মিরপুর পুলিশ লাইনের বুলবুল আহমেদ নামের এক কনস্টেবল গত ২৩ জুলাই হাসপাতালটিতে ভর্তি হয়েছেন। তিনি এখনো চিকিৎসাধীন। জানতে চাইলে বুলবুল বলেন, ‘বেড না পেয়ে ফ্লোরে থাকতে হচ্ছে। একটু ঝামেলা তো হয়ই।’ সংসদ ভবনে দায়িত্ব পালন করেন কনস্টেবল বিল্লাল হোসেন। তিনিও ফ্লোরে চিকিৎসা নিচ্ছেন। বিল্লাল বলেন, ‘একটা সিট পেয়েছিলাম। কিন্তু শুনলাম বেডে নাকি ছারপোকা! তাই ইচ্ছে করেই বেডে উঠিনি।’ হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হয় হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগে। কিন্তু মেডিসিন বিভাগে সিট খালি না থাকায় অন্যান্য বিভাগে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এতে ভোগান্তিও পোহাতে হচ্ছে রোগীদের। কিন্তু কিছু করার নেই। কারণ তাদের চিকিৎসা এখানেই দিতে হবে। রবিবার কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে দায়িত্বরত পুলিশ সুপার (এসপি) ইমদাদুল হক জানান, এখন হাসপাতালে মোট ৯৩ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. মনোয়ার হাসনত বলেন, ‘গত মে মাসের মধ্যভাগ থেকে এখন পর্যন্ত ৮৩০ জন আউটডোরে ও ২৬০ জন ইনডোরে চিকিৎসা নিয়েছেন। সব মিলিয়ে মোট এক হাজার ৯০ জন চিকিৎসা নিয়েছেন। যদিও গতকাল রবিবার ড. মনোয়ার হাসনত এই প্রতিবেদককে বলেছিলেন, ‘চলতি মাসে শুধু ইনডোরেই চিকিৎসা নিয়েছেন অন্তত ৩৫০ জন ডেঙ্গু রোগী।’ তবে রবিবার বিকেলে দায়িত্বরত চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. আরিফ রেদোয়ান বলেন, ‘আজকে (রবিবার) ইমার্জেন্সিতে ১৫০ জনের মতো রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। এর ভেতরে ১২০ জনের মতো ডেঙ্গু রোগী। আর গত ১৫ দিনে আউটডোরে অন্তত ১০০ জন করে ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। সেই হিসেবে ১৫ দিনে দেড় হাজার ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন।’ ডা. আরিফ রেদোয়ান আরো বলেন, ‘দুই সপ্তাহ আগে ডেঙ্গুর প্রকোপ কম ছিল। তবু গড়ে আউটডোরে অন্তত ৩০ জন রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। সে হিসাবে চলতি মাসের প্রথম ১০ দিন অন্তত ৩০০ রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। তার মানে চলতি মাসের ২৮ তারিখ পর্যন্ত অন্তত ১৮০০ জন ডেঙ্গু রোগী পুলিশ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।’
×