ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

অবৈধভাবে বালু উত্তোলন

মাদারীপুরে কুমার নদের ভাঙ্গনে বিলীন ঘরবাড়ি

প্রকাশিত: ০৯:৪২, ২৯ জুলাই ২০১৯

 মাদারীপুরে কুমার নদের  ভাঙ্গনে বিলীন  ঘরবাড়ি

নিজস্ব সংবাদদাতা, মাদারীপুর, ২৮ জুলাই ॥ অসাধু ব্যবসায়ীদের অবৈধভাবে বালু উত্তোলন, তীব্র স্রোত এবং শত শত ট্রলার চলাচলে সৃষ্ট ঢেউয়ের আঘাতে কুমার নদে ব্যাপক ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। ফলে রাস্তা-ঘাট ও ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গৃহহারা হয়ে পড়ছে বহু পরিবার। ইতোমধ্যেই দুই গ্রামের ১২ বাড়ি ভেঙ্গে পড়েছে নদীর গর্ভে। আরও শতাধিক বাড়িঘর রয়েছে ঝুঁকির মুখে। এমন চিত্র রাজৈর উপজেলার কুমার নদের পাড়ে বসবাসকারী ৪ ইউনিয়নের ১২ গ্রামের। এ ছাড়াও প্রায় দু’শ পরিবার বাড়িঘর হারানোর শঙ্কা নিয়ে বসবাস করছে। নদীর পাড়ের ক্ষতিগ্রস্তরা জানান, কুমার নদের দু’পাড়ে ১২ গ্রামে সহস্রাধিক পরিবার বসবাস করেন। নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়ে এসব পরিবারের বেশ কিছু পরিবার অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হয়েছে। ভাঙ্গনের কারণে পাল্টে যাচ্ছে বাপ দাদার ঠিকানা। এক শ্রেণীর স্বার্থান্বেষী মহল স্থানীয় প্রভাবশালীদের ম্যানেজ করে ড্রেজার মেশিন দিয়ে সারা বছর দিনরাত কোটি কোটি ঘনফুট বালু উত্তোলন করে চুটিয়ে ব্যবসা করে রাতারাতি কোটিপতি হয়ে যাচ্ছে। অপরিকল্পিত বালু উত্তোলনের কুফল হিসেবে ভাঙ্গনের কবলে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সাধারণ কৃষক। বাড়িঘর ফসলি জমি হারিয়ে ভূমিহীন হচ্ছে অনেকেই। প্রভাবশালীরা নানাভাবে প্রশাসনকে বাধাগ্রস্ত করায় বালু উত্তোলন বন্ধ হচ্ছে না। রাজৈর উপজেলার টেকেরহাটের শংকরদী গ্রামের নদীভাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্ত এমারত ফকির বলেন, ‘আমি ভ্যান চালিয়ে সংসার চালাই। অবৈধ বালু ব্যবসায়ীরা আমার বাড়ির পাশ থেকে জোর করে বালু কেটে নেয়ায় এ বছর আমার বাড়িসহ পাশাপাশি ৪ পরিবারের বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এখন আমি কিভাবে বাঁচব। আর কিভাবে মাথা গোজার ঠাঁই বানাবো?’ চরমস্তফাপুর গ্রামের হায়দার হাওলাদার বলেন, ‘নদী ভাঙ্গনের কারণে চরমস্তফাপুর বাজারসহ মসজিদ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।’ মল্লিককান্দি শাখারপাড় গ্রামের হাসান মাতুব্বর বলেন, ‘গত বছরও বাড়িঘর ভেঙ্গেছে, এ বছরও নদীভাঙ্গন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এবছর যে ভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে তাতে আগামী বছর আরও বহু বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে।’ মেবানকাান্দির লাবলু মুন্সী জানান, তার ৩৩ শতাংশ জমির গাছ বাগান, আলমগীরের বাড়ি তিনটি ঘর নদীগর্ভে চলে গেছে। কালিবাড়ী এলাকার কালাম মাতুব্বর জানান, বিশ^াম্বরদী, নিলাম্বরদী, মহেন্দ্রদী, হরিদাসদী, মল্লিককান্দি, গাংকান্দি, শংকরদী, কালিবাড়ী, চরমস্তফাপুর বাজার এলাকায় ব্যাপক ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। বালু উত্তোলন বন্ধে উপজেলা ও জেলা প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরে লিখিত ও মৌখিকভাবে জানালেও কোন ব্যবস্থা নেয়নি কেউ। গোয়ালবাথান এলাকার বায়েজিদ মেম্বার জানান, ইতিপূর্বে টেকেরহাট-হরিদাসদী রাস্তার গোয়ালবাথান নামক স্থানটি এক রাতের মধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় । এক বছর পাড় হলেও পুনর্নির্মাণ করা হয়নি। এবছরও আবার ভাঙ্গছে। নদীতে পানি কমতে শুরু“ করলে আরও ব্যাপক ভাঙ্গন দেখা দেবে। এছাড়াও পার্শ^বর্তী মুকসুদপুর উপজেলাধীন ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের পাশে ছাগলছিড়া এলাকায় পায়রা প্রজেক্ট ৪০০ কেভি বিদ্যুত গ্রিড স্টেশন নির্মাণে ৬০ একর জমি প্রায় ১০ ফুট উচ্চতায় ভরাট করার জন্য প্রায় সাড়ে ৪ কোটি ঘনফুট বালু উত্তোলন করে নিচ্ছে এ নদী থেকেই। এ বিষয়ে ইশিবপুর ইউপি চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট ফায়েজুর রহমান হিরু বলেন, ‘নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ ও ভাঙ্গন রোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি।’ এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোঃ ওয়াহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমার ইউএনও চেষ্টা করছেন, আমিও চেষ্টা করছি। বালু উত্তোলন তাড়াতাড়ি বন্ধ হয়ে যাবে।’
×