ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

শুভেন্দু মাইতির গল্পগানে শ্রোতার আসর

প্রকাশিত: ১০:০৬, ২৮ জুলাই ২০১৯

 শুভেন্দু মাইতির গল্পগানে  শ্রোতার আসর

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাংলা সংস্কৃতির শেকড় খুঁজে ফেরা এক শিল্পী শুভেন্দু মাইতি। সুরের আশ্রয়ে সন্ধান করেন গণমানুষের জীবন আখ্যানকে। গণসঙ্গীত আর লোকসঙ্গীতকে হাতিয়ার তার সেই পথচলা। পশ্চিমবঙ্গের কিংবদন্তি এই গণসঙ্গীত শিল্পী গান আর গল্পে মুগ্ধতা ছড়ালেন ঢাকার শ্রোতার হৃদকমলে। সেই কথন ও সুরের সম্মিলিত প্রয়াসে উচ্চারিত হলো বাঙালীর জয়গান। গানের মতোই চমৎকারভাবে বক্তব্য উপস্থাপন করা মানুষটি বললেন বাংলা ভাষা, বিশ্ববাঙালী, বাংলাচর্চা ও বাংলাদেশ নিয়ে। বিশ্বের সকল প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা বাঙালীকে আপন কৃষ্টি ও ঐতিহ্য লালনের আহ্বান জানালেন। সবচেয়ে বড় যে কথাটি বললেন তা হলো মানুষের ভেতরে স্বপ্নকে আশ্রয় দিতে হয়। তার ভাষায়, মা বলতেন স্বপ্ন হলো বটফলের বীজের মতো। এতটাই ক্ষুদ্র সেই বীজ যে খালি চোখে দেখা যায় না। কিন্তু তার ভেতরে অদ্ভুত এক শক্তি আছে। একটু আশ্রয়-অবলম্বন পেলেই তা বেড়ে ওঠে ওই পাহাড়ে হোক কিংবা অরণ্যে। স্বপ্নও ঠিক তাই। সে শুধু একটু আশ্রয় চায়। শনিবার বিকেলে ধানমন্ডি ছায়ানট সংস্কৃতি ভবন মিলনায়তনে বসেছিল শুভেন্দু মাইতির এই গান ও গল্পের আসর। কৃষ্টি ফাউন্ডেশনের প্রথম আয়োজন ‘বাংলা গানের পরম্পরা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে ওপার বাংলার শিল্পী জয় করে নিলেন এপার বাংলার শ্রোতার অন্তর। কথা বলার মাঝে শুনিয়েছেন তার প্রিয় সব গান। অনুষ্ঠানের শুরুতেই স্বাগত বক্তব্য দেন কৃষ্টি ফাউন্ডশনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বুলবুল মহলানবীশ ও সাধারণ সম্পাদক এনায়েত কবির। তখনো শুরু হয়নি শুভেন্দু মাইতির গল্পচ্ছলে কথা বলার পর্ব। তার আগে হাতের আঙ্গুলগুলো ছড়িয়ে দিলেন হারমোনিয়ামে। দরাজ কণ্ঠে গাইলেন ‘স্বপ্ন দেখার সাহস করো/স্বপ্ন ছাড়া মানুষ বাঁচে নাকি’ শিরোনামের উজ্জীবনী গঙ্গীত। সুরটি থামতেই শুভেন্দু মাইতি ফিরে যান তার কথা। আপন শেকড়ে পা রেখে চলার তাগিদ জানিয়ে বলেন, আকাশ কেনা হয়ে গেছে। আকাশের মালিকানা আছে কিন্তু মহাকাশের মালিকানা নেই। বাঙালীকে সেই মহাকাশে জায়গা নিতে হবে। জায়গা নিয়ে বিশ্বের সকল বাঙালীকে ওয়েব দুনিয়ার মধ্যে একত্রিত করতে হবে। শেকড়ে পা রেখে বাংলাকে সারা পৃথিবীতে মেলে ধরতে হবে। রাষ্ট্র আজ ছিন্ন ভিন্ন, ছিন্ন ভিন্ন আকাশ। কিন্তু চিন্তনের ক্ষেত্রে বিশ্বের ৩২ কোটি বাঙালীকে এক জায়গায় আসতে হবে। আর বাংলাদেশ হবে তার কেন্দ্র। বাংলাদেশই বাঙালীর নিজস্ব বাসভূমি যা তারা লড়াই করে অর্জন করেছে। লোকসঙ্গীত প্রসঙ্গে বলেন, লোক সংস্কৃতি হচ্ছে, আটপৌঢ়ে মায়ের মতো। এটা স্টুডিওতে বসে সাজানো গান গাইবার জিনিস নয়। কথা শেষে আবার ফিরে আসেন সুরের ভুবনে। এ পর্যায়ে কণ্ঠে তুলে নেন ওপার বাংলার ভাদু গানের সুরের গান ‘যখন একা থাকি দিশেহারা বড় একা লাগে/সবার সাথে থাকি যখন গো বুকের ভিতর ঢেউ জাগে/একা পথ হাঁটি যখন গো পথ ফুরতো চায় না যে/আবার সবার সাথে হাঁটি যখন পায়ে চলার সুর বাজে। দুই দিনব্যাপী মালহার উৎসবের সমাপ্তি ॥ শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের সুরের আশ্রয়ে বর্ষা বন্দনার আয়োজনটি দ্বিতীয় দিনেও সুররসিকের মননে ছড়িয়েছে ভাললাগার অনুভব। বাংলাদেশ ও ভারতের শিল্পীরাও নিজেদের উজার করে উপস্থাপন করেছেন পরিবেশনা। ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশন আয়োজিত মালহার উৎসবের সমাপনী দিন ছিল শনিবার। এদিনও সন্ধ্যায় সঙ্গীতানুরাগীরা ভিড় জমিয়েছিলেন উৎসব আঙ্গিনা শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে। উৎসবের সমাপনী সন্ধ্যায় সঙ্গীত পরিবেশন কলেন বাংলাদেশের শিল্পী প্রিয়াঙ্কা গোপ। সরোদের সুর ছড়িয়েছেন ভারতের শিল্পী প-িত দেবজ্যোতি বোস। তার সঙ্গে তবলায় সঙ্গত করেন শুভঙ্কর ব্যানার্জী। এ আয়োজনের ধারাবাহিকতায় আজ রবিবার খুলনায় অনুষ্ঠিত হবে এই মালহার উৎসব। মহানগরীর নতুন বাজার সিএসএস আভা সেন্টারে সন্ধ্যায় বসবে এ আয়োজন। গণগ্রন্থাগারে আবৃত্তি সন্ধ্যা ॥ শিল্পিত উচ্চারণে সজ্জিত আয়োজনটির শিরোনাম ‘আপন পথের যাত্রী’। আবৃত্তি সংগঠন সংবৃতার নিয়মিত আয়োজনের অংশ ছিল এই আবৃত্তি সন্ধ্যা। চতুর্থ পর্বটি অনুষ্ঠিত হলো শনিবার সন্ধ্যায়। রাজধানীর সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগারের শওকত ওসমান স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত আবৃত্তি পরিবেশনায় অংশ নেন পাঁচ তরুণ বাচিকশিল্পী। তারা হলেন সামসুজ্জামান বাবু, সুলতানা ইয়াসমিন রিমু, তরিকুল ফাহিম, নূর-ই-জান্নাত জুইন ও ত্রপা চক্রবর্তী। শুরুতেই ত্রপা চক্রবর্তী পাঠ করে শোনান মহাদেব সাহার ‘ফিরে দাও রাজবংশ’ কবিতাটি। এর পর প্রায় দুই ঘণ্টার আয়োজনে তিনি আরও পাঠ করেন বুদ্ধদেব বসুর ‘কবি মশাই’, শুভদাস গুপ্তের ‘আমি সেই মেয়ে’, অরুন সরকারের ‘আসল রাজা’ ও রবীন্দ্রনাথের ‘স্ত্রীর পত্র’। সামসুজ্জামান বাবু পাঠ করেন দাউদ হায়দারের ‘সেই কথা বলা হলো না’, কাজী নজরুলের ‘অভিবাসন : যদি আর বাঁশি না বাজে’, ভাস্কর চৌধুরীর ‘আমার বন্ধু নিরঞ্জন’, আশরাফুল আলমের ‘রণাঙ্গণের চিঠি’ ও সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘যদি নির্বাসন দাও’। সুলতানা ইয়াসমিন রিমু পাঠ করেন রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহের ‘জীবন যাপন ২’, মিনার মনসুরের ‘কি জবাব দেবো’, রফিক আজাদের ‘প্রতীক্ষা’, শামসুর রাহমানের ‘যদি আর ফিরে না আসো’ ও রিয়াজ মাহমুদের ‘রেণুর জন্য শোকগাঁথা’। তরিকুল ফাহিম পাঠ করেন আবুল হাসানের ‘আমি অনেক কষ্টে আছি’, হুমায়ূন আজাদের ‘বিজ্ঞাপন : বাংলাদেশ ১৯৮৬’, সৈয়দ শামসুল হকের ‘নূরলদীনের সারাজীবন’, রবিউল হুসাইনের ‘দুইটি নদীর গল্প’ ও মাহবুবুল আলমে ‘স্বাধীনতা তুমি কার স্বাধীনতা’। নূর-ই-জান্নাত জুইন পাঠ করেন কাজী নজরুল ইসলামের ‘মন্দির ও মসজিদ’, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘না পাঠানো চিঠি’, অনিন্দ্য অমাতের ‘চেতনা যখন খাবার টেবিলে’, শুভদাস গুপ্তের ‘নাগরদোলা’ ও মহাদেব সাহার ‘নিজস্ব এ্যালবাম’। এছাড়াও তরিকুল ফাহিম ও ত্রপা চক্রবর্তী দ্বৈত কণ্ঠে পাঠ করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘শেষের কবিতা’র অংশ বিশেষ।
×