ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

রাজধানীতে এক মাসে পাঁচ শতাধিক ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনা

প্রকাশিত: ১০:০৫, ২৮ জুলাই ২০১৯

রাজধানীতে এক মাসে পাঁচ শতাধিক  ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীতে ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনা বাড়ছে। এদের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না পুলিশও। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, গত এক মাসেই প্রায় ৫ শতাধিক ছিনতাই-ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। অনেকে ঝামেলার ভয়ে মামলা করে না। তবে পুলিশ জানায়, এক মাসে রাজধানীতে দুই শতাধিক ছিনতাই ও ডাকাতির মামলা হয়েছে। এ নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর রয়েছে। এরই সূত্র ধরে শুক্রবার রাতে এক পুলিশ কর্মকর্তাকে মারধর করে মালামাল ছিনতাইয়ের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে চার ছিনতাইকারীকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। গ্রেফতারকৃতরা হচ্ছে বজলু আলমগীর, মাসুম বিল্লাহ, মুক্তার হোসেন ও মোহাম্মদ আলী। এ সময় তাদের কাছ থেকে ছিনতাইয়ে ব্যবহৃত একটি প্রাইভেটকার (ঢাকা মেট্রো গ-১৪-৪৫৮৫), রড, লাঠি ও চাকু উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে ছিনতাই করা ১টি টেলিভিশন, ১টি মোবাইল ও পুলিশের পোশাক উদ্ধার করা হয়। শনিবার দুপুর ১২টার দিকে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মোঃ মাহবুব আলম। যুগ্ম কমিশনার মোঃ মাহবুব আলম জানান, গ্রেফতারকৃতরা প্রাইভেটকারে ভাড়ায় যাত্রী বহনের নামে একটি সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারী চক্রের সক্রিয় সদস্য। এরা আগে থেকে যাত্রীবেশে প্রাইভেটকার নিয়ে ওঁৎ পেতে থাকে। অল্প ভাড়ায় প্রাইভেটকারে যাত্রী তুলে নেয়। এরপর প্রাইভেটকারে ওঠামাত্র যাত্রীদের অস্ত্রের মুখে জিম্মির পর টাকা ও মালামাল ছিনিয়ে নিয়ে মারধরের পর ছেড়ে দেয়। তিনি জানান, রাজধানীর খিলক্ষেত, মহাখালী, হাতিরঝিল এলাকায় এ চক্রের সদস্যরা সক্রিয়। তাদের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও। যুগ্ম কমিশনার জানান, গত ১৮ জুলাই রাতে পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) কেএম নূর-ই আলম গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনার উদ্দেশে রওনা দেন। রাজধানীর মহাখালীর আমতলী ফ্লাইওভারের নিচে এলে একটি সিলভার রঙের প্রাইভেটকার (ঢাকা-মেট্রো-গ-১৪-৪৫৮৫) তার সামনে এসে দাঁড়ায়। এ সময় তার কাছে ছিল এলজি২৪ এইচ৪৫৪এ মডেলের এলইডি টিভি, সিম্ফনি এল৬২ মডেলের মোবাইল ফোন, দুই সেট ইউনিফর্ম ও নগদ তিন হাজার টাকা। তিনি জানান, গাড়িটি নেত্রকোনায় যাবে বলে জানায়। ৩০০ টাকা জনপ্রতি ভাড়ায় ওই প্রাইভেটকারে ওঠেন এসআই নূর-ই আলম। ওঠামাত্রই অস্ত্রের মুখে জিম্মি করা হয় তাকে। প্রাইভেটকারের পেছনে ও দুই দরজার দুই পাশে মোট চারজন তাকে মাঝখানে বসিয়ে হাত-পা ও চোখ বেঁধে ফেলেন। তার শরীর তল্লাশি করে মানিব্যাগ নিয়ে নেয়া হয়। এটিএম কার্ড দিয়ে বুথ থেকে টাকা তুলতে গিয়ে এ্যাকাউন্টে টাকা না থাকায় বেধড়ক মারপিট করা হয়। কাছে থাকা সব মালামাল লুট করে কিল-ঘুষি দিয়ে এসআই নূর-ই-আলমের বাম চোখ করা হয় রক্তাক্ত। মারধরের পর হাত-পা বাঁধা অবস্থায় তাকে রাস্তায় ফেলে পালিয়ে যায় ছিনতাইকারী দল। ওই ঘটনার পর প্রত্যক্ষদর্শীদের সহযোগিতায় এসআই নূর-ই আলমকে উদ্ধার করে পুলিশ। পরে তিনি মামলা করেন। ওই মামলায় ছায়া তদন্ত করতে গিয়ে এই চার ছিনতাইকারীকে গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশ। ডিএমপির সূত্র জানায়, শুধু ছিনতাই নয়। গত এক মাসে অর্ধশতাধিক ডাকাত দলের সদস্যকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গত এক মাসেই ডিএমপির বিভিন্ন থানায় দুই শতাধিক ছিনতাই ও ডাকাতির মামলা হয়েছে। এদের গ্রেফতারের জন্য থানা পুলিশ ও ডিবি পুলিশের একাধিক টিম মাঠে নেমেছে। ইতোমধ্যে গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে পলাতক ডাকাত ও ছিনতাইকারী চক্রের সদস্যদের গ্রেফতারে তৎপর রয়েছে ডিবি পুলিশের একাধিক টিম। এর সূত্র ধরে শুক্রবার গভীররাতে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ডাকাতির লুণ্ঠিত মালামালসহ ৮জনকে গ্রেফতার করে ডিএমপির গোয়েন্দা (পশ্চিম) বিভাগের একটি টিম। গ্রেফতারকৃতরা হচ্ছে স্বপন, জলিল খান, জালাল হাওলাদার, মোজাম্মেল হক শিশির, মনির হোসেন, শহিদুল ইসলাম, এনামুল হক ও সোহেল রানা। প্রথমে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে সাতজনকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে সিলেট মহানগরীর মোগলা বাজার থানার গোটাটিকর থেকে সোহেল রানাকে গ্রেফতার করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে ডিবির যুগ্ম কমিশনার মাহবুব আলম জানান, গ্রেফতার সোহেল রানা গোটাটিকর এলাকায় ‘মায়ের দোয়া এন্টারপ্রাইজ’ নামের ভাঙ্গাড়ির গোডাউনের মালিক। তার কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ পিতলের স্কার্ফসহ ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত ১টি তালা ভাঙ্গার কাটার, ২টি চাপাতি ও ৩টি চাকু উদ্ধার করা হয়। গোয়েন্দা পুলিশের এই কর্মকর্তা জানান, গত ২৮ জুন রাতে হাজারীবাগের গজমহলের কেবি মেটাল ওয়ার্কস নামের একটি কারখানায় হামলা করে ডাকাতরা। তারা দারোয়ান ও কর্মচারীদের অস্ত্রের ভয় দেখায়। পরে তাদেরকে মারধর করে হাত-পা বেঁধে ফেলে। পরে ১৫ টন পিতলের স্কার্ফ (যা কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়) নিয়ে যায়। এর আনুমানিক দাম ৬০ লাখ টাকা। যুগ্ম কমিশনার মাহবুব আলম জানান, খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, জালাল হাওলাদারের বিরুদ্ধে ডাকাতিসহ ৮টি মামলা, স্বপনের বিরুদ্ধে ডাকাতিসহ ৩টি মামলা, সোহেল রানার বিরুদ্ধে ডাকাতিসহ ৪টি, এনামুল হকের বিরুদ্ধে ডাকাতিসহ ৩টি, শহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে ডাকাতিসহ ৩টি, মনির হোসেনের বিরুদ্ধে ডাকাতিসহ ২টি, মোজাম্মেল হক শিশিরের বিরুদ্ধে ডাকাতিসহ ২টি এবং জলিল খানের বিরুদ্ধে ৩টি ডাকাতির মামলা রয়েছে। এ ব্যাপারে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দেয়ার প্রস্তুতি চলছে। আন্তঃবিভাগীয় ডাকাতচক্রের বাকি সদস্যদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে বলেও জানান যুগ্ম কমিশনার মাহবুব আলম।
×