ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আনসার আল ইসলাম ও আইএস অনুসারী ৫ জন গ্রেফতার

পল্লবীতে জঙ্গী আস্তানায় পুলিশের সঙ্গে গোলাগুলি

প্রকাশিত: ১০:০১, ২৮ জুলাই ২০১৯

 পল্লবীতে জঙ্গী আস্তানায় পুলিশের সঙ্গে গোলাগুলি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীর পল্লবীর একটি বাড়িতে জঙ্গী পরিবারের গড়ে তোলা আস্তানার সন্ধান মিলেছে। আস্তানায় অভিযানকালে পুলিশের সঙ্গে জঙ্গীদের গোলাগুলি হয়েছে। জঙ্গীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে বোমা হামলা ছাড়াও বড় বড় রাম দা ও চাপাতি দিয়ে আক্রমণ চালিয়েছে। আক্রমণে পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে। পুলিশের গুলিতে এক জঙ্গী আহত হয়েছেন। জঙ্গী পরিবারটির পাঁচ সদস্য গ্রেফতার হয়েছে। পরিবারের প্রধান জঙ্গী আহাম্মদ আলীকে তার স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়েসহ গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা সবাই আত্মঘাতী জঙ্গীবাদে বিশ্বাসী। তাদের কয়েকজন পুলিশ হত্যার পরিকল্পনা ছিল। আহাম্মদ আলী সোনালী ব্যাংকের মতিঝিল স্থানীয় শাখার সিনিয়র প্রিন্সিপ্যাল অফিসার হিসেবে কর্মরত। বাড়ি থেকে জঙ্গীবাদের বহু আলামত উদ্ধার হয়েছে। গ্রেফতারকৃতরা নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন আনসার আল ইসলামের সদস্য এবং আইএসের অনুসারী। শুক্রবার রাত দেড়টার দিকে রাজধানীর রূপনগর আবাসিক এলাকার ২৮ নম্বর সড়কের ২৩ নম্বর বাড়ির তৃতীয় তলায় গড়ে তোলা ওই জঙ্গী আস্তানায় অভিযান চালায় পুলিশের এন্টি টেররিজম ইউনিট। অভিযানে গ্রেফতার হয় আনসার আল ইসলামের সদস্য আহাম্মদ আলী (৫৬), তার স্ত্রী সালমা বেগম (৪৮), মেয়ে রিফা (২৭) দুই ছেলে হাফেজ আবু সালেহ মোহাম্মদ জাকারিয়া (২৪) ও হাফেজ কিবরিয়া (২১)। বাসা থেকে উদ্ধার হয় জঙ্গীবাদের হাজার হাজার পৃষ্ঠার ডকুমেন্ট, সিডি, পুলিশের ওপর আক্রমণ করার কলাকৌশলসহ নানা আলামত। অভিযানের বর্ণনা দিয়ে এন্টি টেররিজম ইউনিটের পুলিশের অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক (এ্যাডিশনাল ডিআইজি) মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান জনকণ্ঠকে বলেন, কয়েক বছর ধরেই সোনালী ব্যাংকের মতিঝিল কর্পোরেট শাখার সিনিয়র প্রিন্সিপ্যাল অফিসার আহাম্মদ আলীর (৫৬) সার্বিক কর্মকা-ের ওপর নজরদারি করা হচ্ছিল। তিনি প্রায় ১২ বছর ধরে ওই বাড়িতে পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন। আশপাশের লোকজনদের সঙ্গে তিনি মিশেন না। এমনকি তার পরিবারও না। আহাম্মদ আলী ছাড়াও তার পুরো পরিবারের ওপর গোয়েন্দা নজর ছিল। ইন্টারনেটসহ বিভিন্ন মাধ্যমে আহাম্মদ আলী নিজে জঙ্গীবাদে উদ্ধুদ্ধ হন। এরপর তিনি তার স্ত্রীকে জঙ্গীবাদে উদ্বুদ্ধ করেন। তার স্ত্রী পুরো জঙ্গী হওয়ার পর তিনি তার বাসায় রীতিমতো জঙ্গীবাদের বয়ান দেয়া শুরু করেন। মাঝে মধ্যেই তার বাসায় অনুসারীরা আসতেন। তাদের বয়ান করতেন সালমা বেগম। পিতা-মাতা জঙ্গীবাদে পুরোপুরি উদ্বুদ্ধ হওয়ার পর তাদেরই প্ররোচনায় একমাত্র মেয়ে রিপা ও দুই ছেলে জঙ্গী হয়ে ওঠে। মেয়েটি উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগ থেকে মানিকগঞ্জের একটি কলেজ থেকে এমএসসি পাস করেছেন। ছেলেদের মধ্যে আবু সালেহ মোহাম্মদ জাকারিয়া জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগ থেকে অনার্স পাস করেছেন। আর কিবরিয়া একটি কলেজে অনার্সে পড়ে। পুলিশ কর্মকর্তা মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান জনকণ্ঠকে বলেন, রাত দেড়টায় অভিযান শুরু করা হয়। রাত আড়াইটা পর্যন্ত নানাভাবে তাদের দরজা খুলে দিতে অনুরোধ করা হয়েছে। কোনভাবেই তারা দরজা খুলেননি। এরপর পুলিশ সদস্যরা লাথি দিয়ে দরজা ভেঙ্গে ফেলে ভেতরে ঢুকে। ভেতরে ঢোকা মাত্রই দুই ছেলে ও মেয়ে রাম দা ও চাপাতি দিয়ে পুলিশ সদস্যদের এলোপাতাড়ি কোপাতে শুরু করে। পুলিশ সদস্যদের বুলেট প্রুফ জ্যাকেট পরিয়ে অভিযান চালানোর কারণে তেমন কোন সমস্যা হয়নি। তারপরও কয়েকটি কোপ পুলিশ সদস্যদের ঘাড়ের কাছাকাছি লাগে। এতে তিন পুলিশ সদস্য আহত হন। তবে তা অতটা মারাত্মক নয়। এ সময় তারা বাসার ভেতরে বিস্ফোরণ ঘটায়। বিস্ফোরণে আগুন ধরে গেলে তারাই বাড়ির সব ট্যাপ ছেড়ে দেয়। পানিতে পুরো বাসার ফ্লোর ভিজে যায়। জঙ্গীদের বেপরোয় আক্রমণের একপর্যায়ে পুলিশ সদস্যরা গুলি চালাতে বাধ্য হয়। বেশ কয়েক রাউন্ড গুলি চালানোর পরও জঙ্গীরা নিভৃত হচ্ছিল না। এ সময় জাকারিয়ার পা লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়। জাকারিয়া বর্তমানে হাসপাতালে। অন্যদের গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। তিনি আরও জানান, বাসা থেকে জঙ্গীবাদের বহু আলামত জব্দ হয়েছে। বিশেষ করে পুলিশের ওপর আক্রমণ করার কলাকৌশল সংক্রান্ত নানা ধরনের কাগজপত্র পাওয়া গেছে। এছাড়া বাসায় বেশ কিছু রাসায়নিক পদার্থ পাওয়া গেছে। যেগুলো বোমা তৈরিতে ব্যবহৃত হয় বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। রাসায়নিক পদার্থগুলোর পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হবে। আর বাসা থেকে শত শত জিহাদী বই উদ্ধার হয়েছে। বড় ছেলে গুলিবিদ্ধ হলেও এ বিষয়ে তার মা নির্বিকার। গুলিবিদ্ধ ছেলেকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। গ্রেফতারকৃতরা আত্মঘাতী জঙ্গীবাদে বিশ্বাসী বলে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলছেন। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে জঙ্গীবাদের আরও তৎপরতা সম্পর্কে জানার চেষ্টা চলছে।
×