ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

অজয় দাশগুপ্ত

ঘটনার মূল মোটিভ খুঁজে বের করতে হবে

প্রকাশিত: ০৯:২১, ২৮ জুলাই ২০১৯

 ঘটনার মূল মোটিভ খুঁজে বের করতে হবে

দেশের বাইরে দেশের অপমান মানে মাকে অপমান করা। আমরা বাঙালীরা দেশকে মা মনে করি। আর সে কারণে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ ছিল মাকে শৃঙ্খলমুক্ত করার যুদ্ধ। আমরা কারও দয়া বা দানে স্বাধীনতা পাইনি। আমাদের দেশ স্বাধীন হয়েছিল এক সাগর রক্তের বিনিময়ে। সে সময় মূলমন্ত্র ছিল গণতন্ত্র সমাজতন্ত্র জাতীয়তাবাদ আর ধর্মনিরপেক্ষতা। সে জায়গা থেকে অনেকটা সরে এসেছিল দেশ। বিএনপি-জামায়াতের সময় অসাম্প্রদায়িকতার টুঁটি চিপে ধরা দেশকে মনে হতো মিনি পাকিস্তান। তখন দলে দলে মানুষ সীমান্ত পাড়ি দিতে বাধ্য হয়েছিলেন। এমন সময় ছিল যখন ভারতকে রাষ্ট্রীয়ভাবে দুশমন আর পাকিস্তানকে মিত্র মনে করা হতো। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা গদিতে আসার পর আওয়ামী লীগের শাসনামলে সে পরিবেশ বদলে যায়। প্রথমবার তারা না পারলেও পরপর দুবার আর এবারে দৃশ্যপট বদলে গিয়েছে। এখন ধর্মভিত্তিক সাম্প্রদায়িকতা রাষ্ট্র করে না। বরং রাষ্ট্রকে দোষারোপ করা হয় এ জন্য যে সে সব ধর্মের মানুষকে চাকরি আশ্রয় আর ভালবাসা সমানভাবে দিতে চায় বলে। এখন সব মানুষকে তো আর আওয়ামী লীগ বা শেখ হাসিনা চাইলেও পরিবর্তন করতে পারবেন না। কাজেই সমস্যা আছে। কিন্তু তার কোন পৃষ্ঠপোষকতা নেই। এমন একটা পরিবেশে আপনি যদি রাষ্ট্রের বড় বড় পুরস্কারগুলোর দিকে তাকান দেখবেন হিন্দু নামধারীরা আগের জট কাটিয়ে সংখ্যায় বেশি করে পদক পান। দেখবেন তাদের পদ-পদবিও ভাল। দেশ ছেড়ে যাবার হিড়িকও গেছে কমে। তারপরও কেন আমরা আরেক দেশের প্রেসিডেন্টের কাছে গিয়ে নালিশ দেব? আমেরিকার প্রেসিডেন্টের কথায় কি দেশ চলে? যিনি অভিযোগ করে ভেবেছেন ট্রাম্প চাইলেই সবকিছু করতে পারবেন তিনি বোকার স্বর্গে বাস করেন। ভুলে গেছেন সেদেশের বড় কর্তাজন কেরি শেখ হাসিনাকে যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি ঠেকানোর জন্য অনুরোধ করেও তা বন্ধ করতে পারেননি। এখন কারও চোখ রাঙানিতে বাংলাদেশের কিছু আসে যায় না। তাছাড়াও বড় কথা দেশ ও সরকারপ্রধানের ভূমিকা। শেখ হাসিনা যে ব্যক্তিগত ও আদর্শিকভাবে হিন্দু বা সংখ্যালঘুদের পাশে তা সবাই মানেন। তাঁর সরকারের সময় যে বাজে বা উদ্ভট মনগড়া তথ্য দিয়ে সংখ্যালঘুদের জন্য মায়াকান্নার কোন অর্থ নেই। অথচ তাই করলেন এক নারী। হোয়াইট হাউসে পৌঁছে দেশের মুখে কালিমালেপনের চেষ্টা করা এই নারী যার নাম জানি না শুনিনি সে কোন এক প্রিয়া সাহা এখন টক অফ দ্য কান্ট্রি। বলা উচিত টক অফ দ্য বাঙালী। কে এই মহিলা? খবরে দেখলাম ইনি এক সময় ছাত্র ইউনিয়ন করতেন। হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদকও ছিলেন। প্রশ্ন হলো আমেরিকার প্রেসিডেন্ট পর্যন্ত পৌঁছে যাওয়া কি সহজ? এত সিকিউরিটি এত নিয়মকানুন ও কড়া পদ্ধতির ভেতর দিয়ে কি করে তিনি এতদূর পৌঁছালেন? এটা তো ম্যাজিক কিছু না। এও কি মানতে হবে যে কেউ চাইলেই যা কিছু নিয়ে ট্রাম্পের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব? মনে করার যথেষ্ট কারণ আছে যে বিষয় নির্ধারিত থাকে। এর ভেতরে হয়ত কেউ বেশি বলে কেউ কম। এই মহিলা হঠাৎ করে তার রাগ বেদনা বা ক্ষোভ দেখিয়েছেন এমন ভাবাও অযৌক্তিক। তিনি যে একটি সংখ্যা বললেন সেটা মনগড়া হলেও এর নিশ্চয়ই পূর্ব প্রস্তুতি আছে। আমরা স্বীকার করি উপমহাদেশের তিনটি দেশে নিরবচ্ছিন্ন শান্তি নেই। গণতান্ত্রিক ভারত গান্ধীর ভারতে গরু এখন বিরাট ফ্যাক্টর। মুসলমানদের শুধু না খ্রীস্টানদেরও প্রিয় খাবারের অন্যতম হলো গরুর মাংস। অথচ বেছে বেছে মুসলমানরা হয় শিকার। বাড়িতে এমন কি পেটে গরুর গোশত থাকলেও জান যায় তাদের। পাকিস্তানের অবস্থা ভয়াবহ। সেখানে মুসলিম গোষ্ঠীর দাঙ্গা নিয়মিত বিষয়। সে তুলনায় বাংলাদেশ অনেক ভাল আছে। এর মানে এই না যে- সাম্প্রদায়িকতা নেই। ইদানীং মৌলবাদের দাপট কমলেও সংস্কার বড় বেশি। হিন্দু ছাড়া বৌদ্ধ খ্রীস্টানরাও মাঝে মাঝে ঝামেলায় পড়েন। রামুর ঘটনা তার প্রমাণ। কিন্তু প্রিয়া সাহা সব ফেলে শুধু হিন্দুদের কথা বলেছেন। তার স্বামী নিজে একজন সরকারী কর্মকর্তা। দুদকের উপ-পরিচালক। এমন পদের কারও পত্নী বলছে তারা থাকতে পারছে না। এটা কেমন যেন লাগছে। মানতে হবে নানা প্রতিকূলতার পরও দেশে হিন্দুরা ভালই আছেন। বরং বিএনপি ও বিরোধীরা রাতদিন বলছে সরকার হিন্দু তোষণ করছে। সে জায়গায় এমন একটা অভিযোগ সত্যি কেমন যেন। তবে কি এর পেছনে অন্য কোন উদ্দেশ্য আছে? যাই থাকুক না কেন তা খুঁজে বের করতে হবে। কারণ, এটা স্পষ্ট দেশদ্রোহিতার সামিল। অন্যদিকে এর সুযোগে এক ধরনের মৌলবাদ ঝাঁপিয়ে পড়বে তাদের কাজে। ব্যাহত হবে শান্তি। বিপদে পড়বে কোটি সংখ্যালঘু। এই কি তার চাওয়া? দেশ যখন এগুচ্ছে তখন এই ধরনের বিতর্ক আসলেই অনভিপ্রেত। বাংলাদেশের বর্তমান অগ্রগতি অনেকের ভাললাগে না। বিশেষত যারা দেশ জনগণের মঙ্গল চায় না। তারা নানাভাবে ষড়যন্ত্রে ব্যস্ত। প্রিয়া সাহা কি নেপথ্যে তাদের মনোবল আর কাজকেই ভরসা দিলেন। তারা এমনি তো হালে পানি পাচ্ছিল না। এখন তারা বলবে বলছি না দেশে আসলে কেউ শান্তিতে নেই। আর এই ঘটনার জের টানবে দীর্ঘকাল তাই এই নারীকে জবাবদিহিতায় আনা উচিত। কিভাবে তা হবে তা সরকারই ভাল জানে। কিন্তু মানুষের মনে যে ঘৃণা আর সন্দেহ তার নিরসনে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব একটা জবাবদিহিতা প্রয়োজন। নয়ত ষড়যন্ত্রকারীরা অঘটন ঘটিয়ে দেশকে অশান্ত করে তুলতে পারে। তাদের হাত লম্বা। সেই কালো হাত শক্তিশালী করা ভদ্রমহিলার উপযুক্ত শাস্তি বা স্বচ্ছ জবাবদিহিতা না হলে মানুষ ভাল থাকবে কি করে? এখনই এর উপযুক্ত জবাব দিতে হবে। বন্ধ করতে হবে দেশের বাইরে গিয়ে দেশ ও জাতির বদনাম করা। এর ভেতর নিজেদের ছোট করার পাশাপাশি যে সর্বনাশ তার কথা খেয়াল রেখে কাজ করা উচিত। আমেরিকা নিজেই আছে ঝামেলায়। তাদের বস মানলে না মানলে এখন কোন কিছু যায় আসে না কারও। ট্রাম্প রোহিঙ্গরা কোথায় আছে এর উত্তরে বলেন- হয়ত ইন্ডিয়ায়, আর ইনি নাকি করবেন আমাদের বিচার? [email protected]
×