ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

শাহরিয়ার কবির

বাংলাদেশে জঙ্গী, মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস দমনে সরকার ও নাগরিক সমাজের করণীয়

প্রকাশিত: ০৯:১৮, ২৮ জুলাই ২০১৯

বাংলাদেশে জঙ্গী, মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস দমনে সরকার ও নাগরিক সমাজের করণীয়

১৯৭১-এ মুক্তিযুদ্ধের নয় মাসে বাংলাদেশ ধর্মের নামে গণহত্যা ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের যে ভয়াবহতা প্রত্যক্ষ করেছে সভ্যতার ঊষালগ্ন থেকে এ ভূ-খ-ের মানুষ তেমনটি করেনি। ৫৬ হাজার বর্গমাইলের ভেতর মাত্র নয় মাসে ৩০ লাখ নিরস্ত্র মানুষের নৃশংস হত্যাযজ্ঞ, ৫ লক্ষাধিক নারীর ওপর পাশবিক নির্যাতন এবং ১ কোটি আতঙ্কিত মানুষের দেশত্যাগ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ বা প্রথম বিশ্বযুদ্ধকালেও ঘটেনি। পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী এবং তাদের এদেশীয় মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক সহযোগীরা ইসলাম ও পাকিস্তান রক্ষার দোহাই দিয়ে নৃশংসতম এই গণহত্যাকে বৈধতা দিতে চেয়েছে, কিন্তু তারা জয়ী হতে পারেনি। ’৭১-এর ১৬ ডিসেম্বর ৯০ হাজারেরও বেশি পাকিস্তানী সৈন্য বাংলাদেশের মাটিতে আত্মসমর্পণ করেছিল। বাঙালীর ৫ হাজার বছরের লিখিত-অলিখিত ইতিহাসে এত বড় বিজয়েরও দ্বিতীয় নজির নেই। মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের পর দশ মাসেরও কম সময়ের ভেতর দেশ ও জাতিকে একটি অনন্যসাধারণ সংবিধান উপহার দিয়েছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বপ্রদানকারী তাঁর প্রধান সহযোগীরা। বাংলাদেশের সমাজ, সংস্কৃতি ও রাজনীতিকে মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার তামসিক গহ্বর থেকে মুক্ত করার উদ্দেশ্যে ’৭২-এর সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতাকে রাষ্ট্রের অন্যতম মূলনীতি হিসেবে গ্রহণের পাশাপাশি ধর্মের নামে রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। ১৯৭২-এর ৪ নবেম্বর স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধান গৃহীত হওয়ার প্রাক্কালে গণপরিষদের ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘ধর্মনিরপেক্ষতা মানে ধর্মহীনতা নয়। বাংলার সাড়ে সাত কোটি মানুষের ধর্মকর্ম করার অধিকার থাকবে। আমরা আইন করে ধর্মকে বন্ধ করতে চাই না এবং করব না। ধর্মনিরপেক্ষতা মানে ধর্মহীনতা নয়। মুসলমানরা তাদের ধর্ম পালন করবে, তাদের বাধা দেওয়ার ক্ষমতা এই রাষ্ট্রের কারও নেই। হিন্দুরা তাদের ধর্ম পালন করবে, কারও বাধা দেয়ার ক্ষমতা নেই। বৌদ্ধরা তাদের ধর্ম পালন করবে, খ্রিস্টানরা তাদের ধর্ম করবে তাদের কেউ বাধা দিতে পারবে না। আমাদের শুধু আপত্তি হলো এই যে, ধর্মকে কেউ রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে পারবে না। ২৫ বছর আমরা দেখেছি, ধর্মের নামে জুয়াচুরি, ধর্মের নামে শোষণ, ধর্মের নামে বেইমানী, ধর্মের নামে অত্যাচার, খুন, ব্যাভিচার- এই বাংলাদেশের মাটিতে এসব চলেছে। ধর্ম অতি পবিত্র জিনিস। পবিত্র ধর্মকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা চলবে না। যদি কেউ বলে যে, ধর্মীয় অধিকার খর্ব করা হয়েছে, আমি বলব ধর্মীয় অধিকার খর্ব করা হয়নি। সাড়ে সাত কোটি মানুষের ধর্মীয় অধিকার রক্ষা করার ব্যবস্থা করেছি। কেউ যদি বলে গণতান্ত্রিক মৌলিক অধিকার নেই, আমি বলব সাড়ে সাত কোটি মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে যদি গুটিকয়েক লোকের অধিকার হরণ করতে হয়, তা করতেই হবে।’ এই ভাষণে বঙ্গবন্ধু ইংরেজী সেকুলারিজমের বাংলা করেছিলেন ধর্মনিরপেক্ষতা এবং এর নতুন ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন, যার বিরোধিতা মৌলবাদীরা যেমন করেছে, বামপন্থীরাও করেছে। মৌলবাদীরা বঙ্গবন্ধুর ধর্মনিরপেক্ষতাকে ধর্মহীনতা বলেছে। আরবি ও উর্দু অভিধানে ইংরেজী ‘সেকুলারিজম’-এর অনুবাদ করা হয়েছে ‘লা দ্বিনীয়া’ এবং ‘দুনিয়াঈ’। এ দুটি শব্দের বাংলা অনুবাদ হচ্ছে ‘ধর্মহীনতা’ ও ‘ইহজাগতিকতা’। বঙ্গবন্ধু ‘সেকুলারিজম’-এর বাংলা করেছেন ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’, যার অর্থ রাষ্ট্র এবং রাজনীতি ধর্ম থেকে পৃথক থাকবে। বামরা বলেছেন ‘সেকুলারিজম’-এর বাংলা অনুবাদ হবে ইহজাগতিকতা’, ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ নয়। বঙ্গবন্ধুর ‘সেকুলারিজম’কে বলা হয়েছে ‘কৃত্রিম’ (Pseudo), কেউ বলেছেন ‘Soft Secularism’। বঙ্গবন্ধু ব্যক্তিগত জীবনে ধর্মবিশ্বাসী ছিলেন, ইসলাম ধর্মের বিধান মেনে চলতেন। তিনি জেনে বুঝেই Secularism-এর বাংলা ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ করেছেন। সংবিধানে ‘ইহজাগতিকতা’ অর্থে তিনি ‘Secularism’বোঝাননি। সংবিধানে ধর্মের নামে রাজনীতি নিষিদ্ধকরণের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি ধর্মের নামে বৈষম্য-শোষণ-পীড়ন-হত্যার অবসানের পাশাপাশি ‘ধর্মের পবিত্রতা রক্ষার’ যুক্তিও দিয়েছিলেন। যে কোন ধর্মেই মৌলবাদের আক্রমণের প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে- ভিন্নধর্ম, ভিন্নমত এবং ভিন্ন জীবনধারার অনুসারী, যা মৌলবাদীদের ধর্মবিশ্বাস অনুমোদন করে না। নিজের ধর্ম বা মতকে শ্রেষ্ঠ এবং অন্য ধর্ম ও মতকে নিকৃষ্ট বলার ধারাবাহিকতায় স্বীয় শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের জন্য শক্তি প্রয়োগেও তারা দ্বিধাবোধ করে না। মৌলবাদীরা শুধু বিধর্মী নয়, স্বধর্মীদেরও হত্যা করে। জামায়াতে ইসলামীর প্রতিষ্ঠাতা আবুল আলা মওদুদী বলেছেন, তিনি ইসলামকে যেভাবে ব্যাখ্যা করেছেন, সেটিই সঠিক, অন্য সব ব্যাখ্যা ভ্রান্ত। তিনি ইসলাম এবং তার দলের রাজনীতিকে সমার্থক বিবেচনা করতেন। তার ব্যাখ্যাকৃত ইসলাম অর্থাৎ তার রাজনীতির বিরোধিতাকারীদের মৃত্যুদণ্ডের বিধান দিয়েছেন তার লেখা ‘মুরতাদ কি সাজা’ পুস্তিকায়। নিজের রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য মওদুদী কোরান ও হাদিসকে যেভাবে ব্যাখ্যা করেছেন সেখানে আধ্যাত্মিকতার কোনও স্থান নেই। তিনি ধর্মকে ক্ষমতায় যাওয়ার বাহন বানিয়েছিলেন। তার মতে ধর্ম প্রচার করতে হলে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল করতে হবে, ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য জিহাদ করতে হবে এবং রাষ্ট্র পরিচালিত হবে আল্লাহর আইনের দ্বারা। মওদুদীর মতে জিহাদ বিধর্মীর বিরুদ্ধে যেমন পরিচালিত হতে পারে, স্বধর্মী যারা তাকে বা তার দলকে বাধা দেবে তাদের বিরুদ্ধেও হতে পারে এবং দুনিয়ায় আল্লাহর হুকুমত কায়েম করার জন্য প্রত্যেক মুসলমানকে তার দলে যোগ দিতে হবে, যে দল আল্লাহর সেনাবাহিনী হিসেবে কাজ করবে। মওদুদীর মতে ধর্মনিরপেক্ষতা, গণতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র এবং মানবরচিত যাবতীয় মতবাদ কুফরি অর্থাৎ নিষিদ্ধ এবং যারা এর চর্চা করবে তারা হত্যার যোগ্য। ভারতবর্ষে যে সুফীসাধকরা শান্তি ও সহমর্মিতার ইসলাম প্রচার করেছিলেন, যারা ধর্মের নামে মানুষের ভেতর বিভাজন ও বৈষম্যের বিরোধী ছিলেন, মওদুদীর বিবেচনায় তারা ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে গিয়েছেন। যে কারণে সুফীদের মাজার জেয়ারত বা মাজারকেন্দ্রিক বিভিন্ন কার্যক্রমকে মওদুদী হারাম বা নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন। গত দেড় দশকে মওদুদীর অনুসারীরা এই উপমহাদেশে সুফীদের বহু মাজারে বোমা হামলা করেছে, হত্যা করেছে মাজারে আগত শত শত ভক্তদের। মওদুদী গান বাজনাকেও হারাম বলেছেন, এমনকি সে গান যদি সুফীদের লেখা আল্লাহ বা রসুলের বন্দনাও হয়। ইসলাম সম্পর্কে বিকৃত, কট্টর ও রুক্ষ এই ধারণা মওদুদী আবিষ্কার করেননি। তার দু’শ বছর আগে আরবে জন্মগ্রহণ করেছিলেন মুহাম্মদ বিন আবদাল ওয়াহাব (১৭০৩-১৭৮২), যার অনুসারীরা ওয়াহাবি নামে পরিচিত। আধুনিক শিল্প-বিপ্লবের যুগে, যখন ধর্মরাষ্ট্র, রাজতন্ত্র, উপনিবেশবাদ ও সামন্তবাদের শৃঙ্খল ভেঙে মানুষ নতুন রাজনৈতিক চেতনার দিগন্ত উন্মোচন করছে, তখন মুহাম্মদ বিন ওয়াহাব ইসলামকে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল এবং রাষ্ট্র পরিচালনার চাবিকাঠি ঘোষণা করে সৌদি রাজতন্ত্রের আদর্শিক ভিত নির্মাণ করেছিলেন। বর্তমান যুগে ইসলামের নামে রাজনীতি ও সন্ত্রাসের জন্মদাতা হচ্ছেন মুহাম্মদ বিন ওয়াহাব, যার মতবাদ ওয়াহাবিবাদ হিসেবে সুপরিচিত। ১৯২৮ সালে মোহাম্মদ বিন ওয়াহাবের অনুসারী মিসরের হাসান আল বান্না (১৯০৬-১৯৪৯) ‘মুসলিম ব্রাদারহুড’ (ইখওয়ানুল মুসলেমিন) প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে গত শতাব্দীতে উত্তর আফ্রিকায় যে ওয়াহাবি রাজনীতির সূচনা করেছেন, একই কাজ আবুল আলা মওদুদী করেছেন ১৯৪১ সালে দক্ষিণ এশিয়ায় ‘জামায়াতে ইসলামী’ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে। ‘ওয়াহাবিবাদ’ ও ‘মওদুদীবাদ’ সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা না থাকলে বাংলাদেশ বা বিশ্বের অন্যত্র ইসলামী মৌলবাদ বা ধর্মের নামে সন্ত্রাস মোকাবেলার ব্যবস্থাপত্র প্রণয়ন করা সম্ভব হবে না। ॥ দুই ॥ ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী এবং তাদের প্রধান সহযোগী জামায়াতে ইসলামী শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়ে আত্মসমর্পণ করেছিল বাংলাদেশ-ভারত যৌথ বাহিনীর কাছে। এই পরাজয় ছিল পাকিস্তান ও জামায়াতের রাজনৈতিক ও আদর্শিক পরাজয়, পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ্র সাম্প্রদায়িক দ্বিজাতিতত্ত্বের পরাজয়, যা তারা কখনও মেনে নিতে পারেনি। মুক্তিযুদ্ধোত্তর বাংলাদেশের অসাম্প্রদায়িক বাঙালিত্বের চেতনা মুছে ফেলার জন্য সৌদি আরব থেকে কট্টর ওয়াহাবি সংস্কৃতি আমদানি করা হয়েছে। বাংলাদেশের ধর্মনিরপেক্ষতার দর্শনের বিপরীতে মওদুদী-বান্না-ওয়াহাবের উগ্র মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র বানাবার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে ’৭৫-এর পর থেকে। বাংলাদেশকে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টানশূন্য করে পাকিস্তানের মতো মনোলিথিক মুসলিম বানাবার চক্রান্ত গত সাড়ে চার দশক ধরে অব্যাহত রয়েছে। জঙ্গী মৌলবাদী সন্ত্রাসের প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শূন্য সহিষ্ণুতার ঘোষণা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রশংসিত হলেও মৌলবাদী-সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের আদর্শিক বাহন মওদুদীর জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশে নির্বিঘ্নে রাজনীতি করছে। বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা ও নির্যাতনের সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর সম্পৃক্ততা নতুন কোনও বিষয় নয়। জামায়াত যখনই কোণঠাসা হয়েছে তখনই তারা হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান অথবা আহমদীয়া মুসলিম সম্প্রদায়ের ওপর পরিকল্পিত হামলা, নির্যাতন ও হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে। ২০১০ সালে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ’৭১-এর গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াত নেতাদের মৃত্যুদণ্ড প্রদান শুরু হলে ২০১২ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত জামায়াত সুপরিকল্পিতভাবে সংখ্যালঘু ধর্মীয় সম্প্রদায়ের ওপর হামলা করেছে। রামু থেকে গোবিন্দগঞ্জ পর্যন্ত অধিকাংশ এলাকায় হিন্দু, বৌদ্ধ ও আদিবাসীদের ওপর হামলায় জামায়াতের সম্পৃক্ততা সম্পর্কে গণমাধ্যমে বহু অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। আহমদীয়া মুসলিম সম্প্রদায়ের ওপর হামলার ঘটনা ২০১৯ সালেও ঘটেছে। যদিও জামায়াত এবং তাদের সহযোগীরা সংখ্যালঘু নির্যাতনের জন্য সব সময় সরকারকে দায়ী করে দেশে বিদেশে বহুমাত্রিক অপপ্রচার চালাচ্ছে। মহাজোট সরকারের আমলে সংঘটিত সংখ্যালঘু ধর্মীয় সম্প্রদায়ের ঘর-বাড়ি-জমি দখলের ঘটনার সঙ্গে কোনও কোনও ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীরা যে জড়িত এ কথা অস্বীকার করা যাবে না। তবে বাংলাদেশকে পাকিস্তানের মতো মনোলিথিক মুসলিম রাষ্ট্র বানাবার এজেন্ডা জামায়াত-বিএনপির, আওয়ামী লীগের নয়। বাংলাদেশ হিন্দুশূন্য হলে নির্বাচনী সমীকরণে জামায়াত বিএনপি লাভবান হবে, ক্ষতি হবে আওয়ামী লীগের। সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি অতীতের যে কোনও সময়ের চেয়ে ভাল এটি পরিসংখ্যান দিয়েই বলা যায়। বাংলাদেশে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস সম্পর্কে আমরা শ্বেতপত্র প্রকাশ করেছি, বর্তমান সরকারের আমলেও করেছি। তবে এটি সত্য যে, বর্তমান সরকারের আমলে সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি যে উন্নত হয়েছে- তা পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য থেকেও আমরা জেনেছি। ২০১৮-এর ২০ জুলাই দেশের বিভিন্ন দৈনিকে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের একটি মন্তব্য উল্লেখ করা হয়েছে। ১৯ জুলাই ভারতের রাজ্যসভায় প্রদত্ত ভাষণে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, বাংলাদেশ ব্যুরোর তথ্যের ভিত্তি অনুসারে বাংলাদেশে ২০১১ সালে ৮.৪ শতাংশ হিন্দুর বাস ছিল। ২০১৭ সালে তা বেড়ে হয়েছে ১০.৭ শতাংশ। এই তথ্য থেকে আমরা ধারণা করতে পারি বিএনপি-জামায়াত আমলে হামলা ও নির্যাতন থেকে বাঁচবার জন্য সনাতন ধর্মের অনুসারীদের ভারতে অভিপ্রয়াণ যেভাবে ঘটেছে এখন সেরকম হচ্ছে না। কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া ভারতে নাগরিকত্ব প্রাপ্তির আশ্বাস সত্ত্বেও বাংলাদেশের হিন্দুরা এখন দেশত্যাগ করছেন না। ১৯৪৭ সালে জিন্নাহ্র সাম্প্রদায়িক দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে দেশভাগের সময় বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুর সংখ্যা শতকরা ২৯ ভাগ হলেও ২০১১ সাল পর্যন্ত তা ৯ ভাগের নিচে পৌঁছেছিল, যা এখন শুধু বন্ধ হয়নি, বরং বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশে নির্বাচনকেন্দ্রিক সংখ্যালঘু নির্যাতন একটি নিয়মিত বিষয়। এবার ২০১৮ সালে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অনেক অনিয়মের অভিযোগের কথা বলা হলেও কোথাও সংখ্যালঘু ধর্মীয় সম্প্রদায়ের ওপর হুমকি বা হামলার কোনও ঘটনা ঘটেনি। অথচ অতীতে আমরা লক্ষ্য করেছি- বিশেষভাবে ২০০১ সালে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে জামায়াত-বিএনপির সন্ত্রাসীরা ধর্মীয় সংখ্যালঘু, নির্দিষ্টভাবে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর যে নৃশংস হামলা চালিয়েছিল তা ছিল কল্পনাতীত। তাদের নির্বাচনী প্রচারণায়ও আক্রমণের লক্ষ্য ছিল হিন্দু ধর্ম ও আচার। চলবে...
×