ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

নওগাঁয় ৩ হাজার হেক্টর জমির ফসল নষ্ট

প্রকাশিত: ০৮:২৮, ২৮ জুলাই ২০১৯

নওগাঁয় ৩ হাজার হেক্টর জমির ফসল নষ্ট

নিজস্ব সংবাদদাতা, নওগাঁ, ২৭ জুলাই ॥ আত্রাই ও ছোট যমুনা নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে কয়েক হাজার হেক্টর জমির আবাদ। পানিতে তলিয়ে গেছে কৃষকের স্বপ্ন। বন্যার পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে জেলার মান্দা, ধামইরহাট, আত্রাই ও রানীনগর উপজেলার ৩ হাজার ২৩০ হেক্টর জমির বিভিন্ন প্রকারের ফসল। এতে করে বর্তমানে জেলার কৃষকদের মাথায় হাত উঠেছে। কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সরকারীভাবে সহায়তার কোন বার্তা নেই। নওগাঁর ওপর দিয়ে বয়ে গেছে ৬টি নদী। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য আত্রাই ও ছোট যমুনা নদী। সম্প্রতি এই দুই নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে জেলার মান্দা, ধামইরহাট, আত্রাই ও রানীনগর উপজেলার কয়েক হাজার হেক্টর জমির ফসল বন্যার পানিতে তলিয়ে যায়। আউশ-আমন ধানের পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ধানের বীজতলা, মরিচ, পটোলসহ বিভিন্ন সবজির ক্ষেত ও অন্যান্য ফসলের মাঠ। এতে করে চরম ক্ষতির মধ্যে পড়েছে বন্যাকবলিত এলাকার কৃষকরা। বন্যার পানি ফসলের জমি থেকে নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মরে যাচ্ছে মরিচ, করলা, পটোল ও ঝিঙ্গেসহ অন্যান্য ফসলের গাছ। পাট ক্ষেতে বন্যার পানি জমে থাকার কারণে পচে যাচ্ছে পাট। এই আবাদগুলোই কৃষকদের একমাত্র সম্বল। এই ক্ষেতের আবাদের ওপরই চলত কৃষকদের সংসার। তাই বন্যার পানিতে এই সম্বল হারিয়ে দিশাহারা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা। অন্যদিকে কয়েকদিন আগে এই দুই নদীর পানি উল্লেখযোগ্য হারে কমলেও গত দুইদিনের ভারি বর্ষণের কারণে আবারও নতুন করে বাড়তে শুরু করেছে এই দুই নদীর পানি। নতুন করে বন্যাকবলিত এলাকার মাঠ-ঘাটে বন্যার পানি প্রবেশ করায় নতুন আতঙ্কে পড়েছেন বন্যাকবলিত এলাকার প্রায় লক্ষাধিক মানুষ। রানীনগরের মালঞ্চি গ্রামের কৃষক সাইদুর রহমান বলেন, কাঁচা মরিচ, পটল, ধানের বীজতলাসহ কয়েকটি ক্ষেত বন্যার পানিতে ভেসে গেছে। মাঠের পানি না কমায় নতুন করে বীজতলা তৈরি করতে পারছি না। আর মরিচের ক্ষেত থেকে পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে গাছগুলো মরে যাচ্ছে। এই ক্ষেতগুলোই ছিল আমার শেষ সম্বল। এই ফসল নষ্ট হওয়ায় আমি এখন দিশাহারা। মান্দার বিষ্ণুপুর গ্রামের কৃষক আব্দুর রহিম বলেন, চার বিঘা সবজি ক্ষেত এখন বন্যার পানির নিচে। বন্যার পানিতে সব ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। এখন কি করে চলবে সংসার, এই ভাবনা যেন পেয়ে বসেছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক মাহাবুবার রহমান বলেন, বন্যার পানিতে কয়েক হাজার হেক্টর জমির ফসল আংশিক নিমজ্জিত হয়েছে। তবে কিছু কিছু এলাকার ফসল সম্পন্ন নিমজ্জিত হওয়ায় সেসব এলাকায় ক্ষতির পরিমাণ একটু বেশি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সরকারের সহায়তা করার কোন সংবাদ এখন পর্যন্ত তার কাছে নেই বলে জানান তিনি। গাইবান্ধায় বিধ্বস্ত রেলপথ নিজস্ব সংবাদদাতা গাইবান্ধা থেকে জানান, গাইবান্ধার আপ স্টেশন ত্রিমোহিনী-বাদিয়াখালী-বোনারপাড়া পর্যন্ত প্রায় ১ হাজার ফুট রেলের মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়াও মাঝে মাঝে অসংখ্য গর্তে বন্যার পানি জমে রয়েছে। ফলে গত ১৬ জুলাই থেকে একটানা ১২ দিন যাবত লালমনিরহাট-সান্তাহার রুটে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে সরাসরি ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। ফলে উত্তরাঞ্চলের রেল যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এদিকে শনিবার বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মোঃ শামসুজ্জামান গাইবান্ধা থেকে বোনারপাড়া রেলওয়ে জংশন পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত রেললাইন পরিদর্শন করেন। পরিদর্শন শেষে গাইবান্ধা রেলওয়ে স্টেশনে সাংবাদিকদের বলেন, পুনরায় বন্যা বা বৃষ্টির প্রকোপ না বাড়লে আসন্ন ঈদ-উল-আজহার পূর্বেই উত্তরাঞ্চলের সঙ্গে লালমনিরহাট-সান্তাহার রুটে রেল যোগাযোগ পুনঃ স্থাপিত করা হবে। তিনি উল্লেখ করেন, ত্রিমোহিনী থেকে বোনারপাড়া জংশন পর্যন্ত ১ হাজার ফুট রেল লাইনের নিচের মাটি ও পাথর পানির তোড়ে ভেসে গেছে এবং এসব এলাকায় রেললাইন ঝুলন্ত অবস্থায় রয়েছে। তদুপরি বিভিন্ন জায়গায় বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে এবং তাতে বন্যার পানি জমে আছে। তিনি বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা দ্রুত মেরামত করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। যাতে রেল যাত্রীরা ঈদ-উল-আজহায় স্বাচ্ছন্দ্যে যাতায়াত করতে পারে। রেল লাইন মেরামত না পর্যন্ত বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে রংপুর থেকে গাইবান্ধা পর্যন্ত রংপুর এক্সপ্রেস এক্সটেনশন করে পার্বতীপুর হয়ে ঢাকা পর্যন্ত চলাচল করানো যায় কি না সে বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, বিষয়টি বিবেচনায় নেয়া হবে। উল্লেখ্য, ইতিপূর্বে গত ২২ জুলাই সোমবার ক্ষতিগ্রস্ত রেলপথ পরিদর্শনে আসেন পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের জেনারেল ম্যানেজার মোঃ শহিদুল ইসলামসহ রেলের উর্ধতন কর্মকর্তারা রেলপথ পরিদর্শন করেন। তবে বর্তমানে লোকাল এবং মেইল ট্রেন গাইবান্ধা থেকে বোনারপাড়া পর্যন্ত ট্রানজিট পদ্ধতিতে চলাচল করছে। লালমনিরহাট ও দিনাজপুর থেকে ডাউন ট্রেনগুলো গাইবান্ধা স্টেশন পর্যন্ত চলাচল করছে। অপরদিকে সান্তাহার জংশন থেকে বোনারপাড়া পর্যন্ত মেইল ও লোকাল ট্রেনগুলো চলাচল করছে। এছাড়া আন্তঃনগর লালমনি এক্সপ্রেস ও রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেন দুটি পার্বর্তীপুর-সান্তাহার হয়ে ঢাকায় যাতায়াত করছে।
×