ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বাংলাদেশের বোলিং-ফিল্ডিং ব্যর্থতায় কুশল ঝলক

প্রকাশিত: ১১:৩৬, ২৭ জুলাই ২০১৯

বাংলাদেশের বোলিং-ফিল্ডিং ব্যর্থতায় কুশল ঝলক

মিথুন আশরাফ ॥ বিশ্বকাপের রেশ যেন কাটেনি শ্রীলঙ্কার। কাটার কথাও না। বিশ্বকাপের পর যে ১৯ দিনের মাথায় প্রথম আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলতে নেমেছে লঙ্কানরা। তাইতো বিশ্বকাপের বিজ্ঞাপন হয়ে ওঠা ‘৩৫০’ রানের সঙ্গে এখনও মিশে আছে। শুক্রবার বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতেই যেমন ৮ উইকেট হারিয়ে ৫০ ওভারে ৩১৪ রান করে বসল লঙ্কানরা। শ্রীলঙ্কার এ মুহূর্তে সেরা ব্যাটসম্যান ধরা হয় কুশল পেরেরাকে। কিন্তু তিনি বিশ্বকাপে একটি সেঞ্চুরিও করতে পারেননি। সেই ক্ষুধাও যেন কুশল মিটিয়ে নিলেন। ৯৯ বলে ১৭ চার ও ১ ছক্কায় ১১১ রানের ইনিংস খেলে আসলে বাংলাদেশকেই যেন ডুবিয়ে দিলেন। বিশ্বকাপে যেভাবে বোলিং, ফিল্ডিং ব্যর্থতায় ডুবে ছিল বাংলাদেশ, বিশ্বকাপের ২০ দিন পর প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে নেমে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেও সেই একই গোলকধাঁধাতেই আটকে থাকল। বিশ্বকাপে বাংলাদেশ যে ম্যাচগুলো হেরেছিল, বেশিরভাগই বোলিং আর ফিল্ডিং ব্যর্থতায়। বিশেষ করে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাটসম্যানের ক্যাচ হাতছাড়া করাতেই খেলা ঘুরে যায়। ‘নতুন জীবন’ পাওয়া ডেভিড ওয়ার্নার, রোহিত শর্মারা তাই সেঞ্চুরি করেই মাঠ ছাড়েন। আর তাতে ফিল্ডিংয়েও এর প্রভাব পড়ে। শেষ পর্যন্ত বড় স্কোর গড়ে প্রতিপক্ষ দল। বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরা অনেক ভাল ব্যাটিং করার পরও জয় আর তুলে নেয়া যায়নি। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে কলম্বোর আর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে একই রকম চিত্র দেখা গেল। কুশল মেন্ডিসের ক্যাচটি হাতছাড়া করে ফেলেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। এমন সময় ক্যাচটি ধরতে পারেননি যখন শ্রীলঙ্কা অনেক বড় স্কোরের দিকে চলে যাচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত গেলও। প্রায় তিন বছর পর শফিউল ইসলাম ওয়ানডে দলে সুযোগ পেলেন। একাদশেও থাকলেন। শুরুতেই ওপেনার আভিশকা ফার্নান্দোকে (৭) দলের ১০ রানের সময় আউটও করে দিলেন শফিউল। এরপর শফিউল, মেহেদী হাসান মিরাজ, রুবেল হোসেন, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত, সৌম্য সরকার মিলে দ্বিতীয় উইকেট ফেলতে পারছিলেন না। দেখতে দেখতে শ্রীলঙ্কা শতরানেও চলে যায়। শুরুতে একটু ঝিমিয়ে খেললেও পরে দিমুথ করুনারৈত্নে ও কুশল পেরেরা মিলে রানের গতি বাড়িয়ে নেন। ৪ ওভারে যেখানে ১৩ রানে থাকে লঙ্কানরা, সেখানে ১০ ওভারে গিয়ে প্রথম পাওয়ার প্লেতে ৭৭ রান স্কোরবোর্ডে জমা করে ফেলে। করুনারত্নে ও কুশল মিলে যেভাবে খেলছিলেন তাতে সহজেই শতরানের জুটি গড়ার ইঙ্গিত দেন। শেষ পর্যন্ত তা করতে না পারলেও ৯৭ রানের জুটি ঠিকই গড়েন। এই জুটি দলকে ১০৭ রানেও নিয়ে যান। এমন সময় মিরাজ ‘ব্রেক থ্রু’ এনে দেন। করুনারত্নেকে (৩৬) আউট করে দেন। তাতে জুটি ভাঙ্গে। স্বস্তিও মিলে। সেই স্বস্তি অস্বস্তিতে পরিণত হতে বেশি সময় লাগেনি। তৃতীয় উইকেটটি তুলে নিতে যে আরও ১০০ রান অপেক্ষা করতে হয়েছে। দল যখন ১৭৮ রানে এমন সময় আবার কুশল মেন্ডিসের ক্যাচটি আবার ধরতে পারেননি মাহমুদুল্লাহ। তখন মেন্ডিস ২৮ রানে ছিলেন। সৌম্য সরকারের করা ২৭তম ওভারের তৃতীয় বলে লংঅনে ক্যাচ তুলে দেন মেন্ডিস। মাহমুদুল্লাহ দৌড়ে এসে হাতে বল জমানও। কিন্তু তা ফসকে যায়। এই জুটি শেষ পর্যন্ত দলকে ২০০ রানের নিয়ে যান। দুই কুশল (পেরেরা ও মেন্ডিস) মিলে দলকে ২০৭ রানেও নিয়ে যান। ১০০ রানের জুটিও গড়েন। পেরেরা ক্যারিয়ারের পঞ্চম ও বাংলাদেশের বিপক্ষে দ্বিতীয় সেঞ্চুরিও করে ফেলেন। ৩৩তম ওভারের চতুর্থ বলে গিয়ে সৌম্য সরকার আউট করে দেন কুশল পেরেরাকে। ১১১ রানের ইনিংস খেলে আউট হন কুশল পেরেরা। তাই বলে বড় স্কোর গড়ার আশা শেষ হয়ে যায়নি। কুশল পেরেরা আউটের পর আর বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি কুশল মেন্ডিসও (৪৩)। রুবেল হোসেন আউট করে দেন মেন্ডিসকে। তবে দলের ২১২ রানে যে মেন্ডিস আউট হন সেই আউটটি হয়েছে যে তা বুঝতে পারেননি উইকেটরক্ষক মুশফিকুর রহীম কিংবা পেসার রুবেল হোসেন। অফ স্টাম্পের বাইরে শর্ট অব লেংথ বল ছিল। মেন্ডিস কাট করতে চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু বল তার ব্যাটে স্পর্শ করে মুশফিকের হাতে যায়। শুরুতে বোঝাই যায়নি ব্যাটে লেগেছে বল। মুশফিক কিংবা রুবেল আবেদনই করেননি। কিন্তু সবাইকে অবাক করে কুশল মেন্ডিস ঠিকই উইকেট ছেড়ে সাজঘরের দিকে ফেরেন। টিভি রিপ্লেতে দেখা গেল, বল ব্যাটে ছোঁয়া লেগে গিয়েছে। আম্পায়ারও যেখানে বুঝতে পারেননি সেখানে মেন্ডিসের উইকেট ছেড়ে যাওয়া প্রশংসাই কুড়াচ্ছে। বিশ্বকাপের মতোই শুরুতে কিছু করতে না পারলেও শেষ মুহূর্তে এসে বাংলাদেশ পেসাররা নিজেদের মেলে ধরেন। তাতে প্রতিপক্ষ স্কোরবোর্ড একটু থমকে গেলেও শেষ পর্যন্ত বড় স্কোরই হয়। শুরুতেই যা করার করে নেয়। দুই শ’ সাত রান পর্যন্ত ২ উইকেট ছিল শ্রীলঙ্কার। এরপর থেকে ৩১৪ রান পর্যন্ত ১০৭ রানে আরও ৬ উইকেট গেল। তখন হাতে থাকা ১৮ ওভারে ব্যাটসম্যানরাও রান বাড়ানোর তাগিদে শট খেলতে থাকল, উইকেটও পড়তে থাকল। তাতে করে দুই কুশলের পর লাহিরু থিরিমান্নে (২৫), থিসারা পেরেরা (২), এ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস (৪৮), ধনঞ্জয়া ডি সিলভা (১৮) আউট হলেন। লাসিথ মালিঙ্গা ক্যারিয়ারের শেষ ওয়ানডে খেলতে নেমে অপরাজিত ৬ রান করলেন। শফিউল প্রত্যাবর্তনে ৩ উইকেট নিলেন। মুস্তাফিজুর রহমান নিলেন ২ উইকেট। সঙ্গে সৌম্য, মিরাজ, রুবেল ১টি করে উইকেট নিলেন। কিন্তু এক সৌম্য ছাড়া আর কোন বোলারই ওভার প্রতি ৬ রানের নিচে দিতে পারলেন না। স্বাভাবিকভাবেই স্কোর বড় হওয়ারই কথা। হলোও। তা যেমন হলো বোলারদের নখদন্তহীন বোলিংয়ে। তেমনি হলো মিস ফিল্ডিংয়ের মহড়ায়। আর কুশল পেরেরাতো একাই এক শ’ হয়ে ধরা দিলেন। লাসিথ মালিঙ্গার শেষ ওয়ানডে ম্যাচে নিজেকে মেলে ধরলেন কুশল পেরেরা। তাতে শ্রীলঙ্কাও বড় স্কোর গড়ল।
×