ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

টার্কি মুরগির গ্রাম বগুড়ার শাকদহ

প্রকাশিত: ০৯:২৪, ২৭ জুলাই ২০১৯

টার্কি মুরগির গ্রাম  বগুড়ার শাকদহ

আকাশে মেঘ দেখলেই ময়ূরীর মতো ছোট করে পেখম তুলতে পারে। না- ময়ূর নয়। এটি এক পাখি। আদি নিবাস তুরস্ক। এতকাল নাম ছিল টার্কি। বর্তমানে মুরগির বিকল্প হয়েছে। নাম হয়েছে টার্কি মুরগি। বড় আকৃতির এই পাখি গ্রামের মানুষের আর্থিক সচ্ছলতা এনে হাসি ফুটিয়েছে। টার্কি- সাধারণ মুরগি থেকে অনেকটা বড় আকৃতির। না রঙের। ন্যাড়া গলা। গলা উঁচু করে মিটিমিটি তাকায়। টার্কি মুরগি পালন করে বগুড়ার ধুনটের একটি গ্রামের অন্তত এক শ’ পরিবার স্বাবলম্বী হয়েছে। এক তরুণ মাস্টার্স পাস করে চাকরির পেছনে না ঘুরে এই টার্কি মুরগি পালন করছেন। ক’জন গৃহবধূ টার্কি মুরগির খামার গড়েছেন। গ্রামের একে অপরের দেখাদেখি আরেকজন পালন শুরু করেছে। এভাবে ধুনটের শাকদহ গ্রাম টার্কি মুরগির গ্রাম নামে পরিচিতি পেয়েছে। টার্কির বাংলাদেশে আগমন তুরস্কের পাখি হয়ে। এই পাখির মাংস বেশি। জবাই করে মাংস টুকরো করলে মনে হবে ছোট ছাগলের মাংস। প্রথমে মহানগরী ঢাকার অভিজাত এলাকায় গোশত বিক্রি হয়েছে। পরে বিচ্ছিন্ন ভাবে পালন শুরু করে কিছু মানুষ। তারপর দেশের বিভিন্ন স্থানে পৌঁছে যায়। এরপর অগ্রযাত্রা থেমে থাকেনি। পাখিটি বাংলাদেশের মানুষের মন জয় করেছে। সজীব করেছে অর্থনীতি। দারিদ্র্যের হার কমিয়ে দিতে পাশে দাঁড়িয়েছে। টার্কির ইতিহাস বেশ মজার। এই পাখি ছিল বনে। ইউরোপিয়ানরা প্রথম এই মুরগি দেখে। ভাবলো এক ধরনের বন্য গিনিয়া পাখি। পরে তারা তুরস্ক থেকে মধ্য ইউরোপে এই পাখিটি আনে। আমেরিকাতেও নিয়ে যায়। ১৫৫০ সালে ব্রিটিশ নাবিক উইলিয়াম স্ট্রিক তুরস্ক থেকে পাখিটি ইংল্যান্ডে আনেন। দেখা যায় পাখিটি হাস মুরগি গোত্রের। পালন করে বংশবৃদ্ধি ঘটাতে থাকেন। সেই থেকে পাখিটি তুরস্কের মুরগি বা টার্কি ফাউল হিসেবে পরিচিতি পায়। কোন প্রজাতির বুনো টার্কি উত্তর ও মধ্য আমেরিকার আছে। এদের আদিবাস ইউকাতন উপদ্বীপে। বর্তমানে সারা বিশ্বে এই টার্কি মুরগি গৃহপালিত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনে থ্যাঙ্কস গিভিং ডে ও ছুটির দিনে ডিলিশিয়াস ফুড হিসেবে টার্কি মুরগি ভোজন করা হয়। পুরুষ টার্কি স্ত্রী টার্কির চেয়ে বড় ও আকর্ষণীয়। পুরুষ টার্কির মাথা ন্যাড়া, উজ্জ্বল লাল। কখনও সাদা ও উজ্জ্বল নীলাভ হয়। লম্বার ১শ’৩০ সেন্টিমিটার। ওজন ৭ থেকে ৮ কেজি। স্ত্রী টার্কি পুরুষের তুলনায় ওজনে কম। প্রতিটি স্ত্রী টার্কি ছোট্ট দাগের ৮ থেকে ১৫টি বাদামী রঙের ডিম দেয়। চার সপ্তাহ অন্তর ডিম ফুটে ছানা জন্মায়। সাধারণত বনভূমিতে পানির কাছাকাছি থাকতে পছন্দ করে। ফসলের পোকামাকড় ও মাঝেমধ্যে ব্যাঙ খায়। স্বল্প দূরত্বে উড়তেও পারে। বগুড়ার ধুনটের শাকদহ গ্রামের রেজাউল করিম বছর দুয়েক আগে নরসিংদী থেকে এক জোড়া টার্কি মুরগি কিনে আনেন ৮ হাজার টাকায়। গ্রামে এনে পালন করার ছয় মাস পর ডিম দেয়। প্রতিটি ডিম বিক্রি করেন ৫শ’ টাকায়। ডিম থেকে বাচ্চা ফুটিয়ে প্রতিটি বাচ্চা বিক্রি করেন এক হাজার টাকায়। এভাবে ব্রিডিং হতে থাকে। গ্রামের গেরস্ত বধূ চম্পা কয়েকটি টার্কি মুরগির ছানা নিয়ে পালন করেন। ছানা বড় হলে ৭০টি টার্কি মুরগি বিক্রি করেন ৩ লাখ টাকায়। গ্রামের স্কুলের দফতরি আজিজুর রহমান সঞ্চিত অর্থে কয়েকটি টার্কি মুরগি পালন করছেন। তাকে আর দফতরির কাজ করতে হয় না। বগুড়া সরকারী আজিজুল হক কলেজ থেকে মাস্টার্স করার পর হাসানুজ্জামান চাকরির জন্য হন্যে হয়ে ঘুরে যখন ক্লান্ত তখন গ্রামের টার্কি মুরগি দেখে পালন করেন। -সমুদ্র হক, বগুড়া থেকে
×