ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মরুর খেজুর পললভূমিতে

প্রকাশিত: ০৯:২২, ২৭ জুলাই ২০১৯

মরুর খেজুর পললভূমিতে

সৌদি খেজুরের চাষ করে কোটিপতি ময়মনসিংহের ভালুকার পাড়াগাঁঁও গ্রামের সৌদি ফেরত যুবক আঃ মোতালেব। আঃ মোতালেব তার বাড়ি সংলগ্ন মাত্র ৭০ শতাংশ জমিতে ২০০১ সালে বীজ বপনের মাধ্যমে সৌদি খেজুর চাষ করে কয়েক বছরের ব্যবধানে আজ তিনি কোটি টাকার সম্পদের মালিক হয়েছেন। তবে এ জন্য তাকে রাত-দিন হাড়ভাঙ্গা খাটুনি খাটতে হয়েছে। সরেজমিন পাড়াগাঁও গ্রামে মোতালেবের গড়ে তোলা মোফাজ্জল-মিজান সৌদিয়া খেজুর বাগানে গেলে মোতালেব তার বাগানের বিভিন্ন জাতের খেজুরের সঙ্গে পরিচয় করান। বাগানে একটি গাছে লাল রং ধারণ করে রয়েছে বড় লম্বা আকৃতির খেজুর নাম আজুয়া। ছোট-বড় অনেক গাছে এ জাতের খেজুর ধরেছে। আরেকটি গাছে তার চেয়েও বড় আকৃতির খেজুর নাম আমবাগ। ছোট আকারের আরেকটি গাছে সুকারী জাতের খেজুর কাঁধিগুলো পলিথিনে ঢেকে রাখা হয়েছে। বয়স্ক উঁচু গাছে ওঠার জন্য লোহার এ্যাঙ্গেল দিয়ে মাচা করে তাতে সিঁড়ি করেছেন সহজে গাছ থেকে খেজুর পাড়ার জন্য। প্রতিটি মাচা তৈরি করতে খরচ হয়েছে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকার মতো। আঃ মোতালেব জানান, তিন বছর সৌদি আরবে থাকাকালে সেখানকার একটি খেজুর বাগানে চাকরি করে খেজুর চাষে অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। ২০০০ সালে দেশে ফেরার সময় সৌদি আরব থেকে বিভিন্ন জাতের খেজুরের বীজ নিয়ে আসেন। ২০০১ সালে বাড়ি সংলগ্ন ৭০ শতাংশ জমিতে বীজ বপনের মাধ্যমে শুরু হয় সৌদি খেজুরের আবাদ। ২শ’ ৭৫টি গাছের মধ্যে তিন বছরের মাথায় দুটি গাছে প্রথম খেজুর আসে। এলাকার মানুষ আগ্রহভরে তার বাগানের ছোট গাছে সৌদি খেজুর দেখতে ভিড় জমায়। বাগানের পরিচর্যা, পানির ব্যবস্থা ও নিরাপত্তা প্রাচীর তৈরি করতে তার কয়েক লাখ টাকা ব্যয় হয়ে যায়। চারদিকে খবর ছড়িয়ে পড়লে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আগ্রহী লোকেরা চারা কিনতে আসেন। চারা বিক্রির টাকায় তিনি বাগানের উন্নয়নসহ সংসারের নানা চাহিদা পূরণে সমর্থ হন। তিনি জানান, ছোট আকৃতির প্রতিটি চারা ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা, ফলধারক একটি গাছ ১ লাখ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করে থাকেন। তার বাগানে বর্তমানে ১২শ’ ছোট-বড় গাছ রয়েছে। এর মধ্যে ৭০-৮০টি গাছে এ বছর খেজুর ধরেছে। প্রতিটি পূর্ণ বয়স্ক গাছে ১২ থেকে ১৩টি কাঁধি হয়। প্রতিটি কাঁধিতে ১০ থেকে ১২ কেজি খেজুর পাওয়া যায়। আজুয়া জাতের খেজুর প্রতি কেজি ২ হাজার টাকা, আমবাগ প্রতি কেজি ২ হাজার টাকা, সুকারি ১ হাজার ৫শ’ টাকা, বরকি ১ হাজার ৫শ’ টাকা কেজি বিক্রি হয়। তিনি এক সময় স্ত্রী-সন্তান নিয়ে মাটির ঘরে বসবাস করতেন। খেজুর বাগান হতে আয়কৃত টাকায় তিনি দ্বিতল বিল্ডিং বাড়ি করেছেন, ৬ বিঘা জমি ক্রয় করেছেন যার মূল্য বর্তমানে কোটি টাকার ওপরে। তার সাফল্যের জন্য স্ত্রী মজিদা আক্তার সমান অংশীদার। সব সময় পাশে থেকে রাত-দিন তাকে সাহায্য করেছেন। বড় ছেলে মোফাজ্জল এইচএসসি পাস করেছে, ছোট ছেলে মিজান নবম শ্রেণীতে লেখাপড়া করছে। মেয়ে মর্জিনাকে বিয়ে দিয়েছেন। সংসারে এখন সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যে ভরপুর। তিনি জানান, এ পর্যন্ত কৃষি বিভাগের কোন পরামর্শ কিংবা সহযোগিতা পাননি। ময়মনসিংহ জেলার ভালুকা, ত্রিশাল, গফরগাঁও, ফুলবাড়িয়া, হালুয়াঘাট, গাজীপুর জেলার শ্রীপুর, টাঙ্গাইলের সখীপুর, মধুপুর এলাকায় সৌদি খেজুর চাষের জন্য উপযুক্ত টেক টিলা চালা ও সমতল ভূমি রয়েছে। এসব এলাকার চাষীদের সৌদি খেজুর চাষে উদ্বুদ্ধ করতে পারলে কৃষিতে সৌদি খেজুর চাষে বিপ্লব ঘটানো সম্ভব। আঃ মোতালেব একজন সফল সৌদি খেজুর চাষী হিসেবে মনে করেন সরকারের কৃষি বিভাগ আন্তরিক হয়ে সৌদি খেজুর আবাদ সম্পর্কিত প্রযুক্তিগত তথ্যাদি দিয়ে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করলে এক সময় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অন্যান্য অর্থকরী ফসলের সঙ্গে এটিও সমৃদ্ধ কৃষিপণ্য হিসেবে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রফতানি সম্ভব হবে। মৌসুমী ফলের মধ্যে যেমন আম, কাঁঠাল, লিচু, আনারস, মালটা, কমলা, লটকন, বারোমাসি কলা, পেঁপে ইত্যাদি সকলের পছন্দের খাদ্য তালিকায় থাকলেও এসব ফল ফ্রিজিং বা হিমাগার ছাড়া সংরক্ষণ সম্ভব নয়। খেজুর অত্যন্ত স্বাস্থ্যোপযোগী ফল। এ সবের মধ্যে অন্যতম যা হিমাগার ছাড়াই সারা বছরের জন্য সংরক্ষণ করে রাখা সম্ভব। -মোঃ কামরুল এহসান চন্দন, ভালুকা, ময়মনসিংহ থেকে
×