ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

প্রশাসনে বেহাল অবস্থা

প্রকাশিত: ০৯:০৪, ২৭ জুলাই ২০১৯

 প্রশাসনে বেহাল অবস্থা

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে নির্ধারিত পদের চেয়ে কর্মকর্তার সংখ্যা এত বেশি যা অব্যবস্থাপনার শিকার বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। সরকারের অতিরিক্ত, যুগ্ম এবং উপ-সচিব পদে নিয়োগ কর্মকর্তারা একটি পদে দু’জন করে প্রশাসনিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। পদের চেয়ে কর্মকর্তার সংখ্যা বেশি হওয়ায় অভ্যন্তরীণ কাজকর্মেও হরেকরকম অনিয়মের খবর আসছে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, শূন্য পদ না থাকা সত্ত্বেও পদায়নের হিড়িকের কারণে এমন দুরবস্থায় প্রশাসনিক কার্যক্রমে অরাজকতা তৈরি হয়েছে। জনপ্রশাসনে এমন অপসংস্কৃতির শুরু ২০১২ সাল থেকে। সুপারনিউমারারি পদে এই বছরে ৮ ফেব্রুয়ারি একদিনেই ৬৪৯ কর্মকর্তাকে জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব থেকে উপ-সচিব এবং পর্যায়ক্রমে যুগ্ম সচিব এবং অতিরিক্ত সচিব পদে বসানো হয়। এরপর থেকে ধারাবাহিকভাবে এমন অন্যায় অনিয়ম চলতে থাকলে বর্তমানে তা এক অসহনীয় পর্যায়ে এসে ঠেকেছে। এমন অপকৌশলে নতুন কোন প্রয়োজনীয় পদ সৃষ্টির সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়ে সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কর্মকর্তা অভিমত ব্যক্ত করেন- পদায়নের গ্যাপ পূরণের জন্য অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাদের স্থলাভিষিক্ত হবেন নিয়মানুযায়ী পরবর্তী জন। ফলে নতুন কোন পদ সৃষ্টির অবকাশ আর থাকে না। পদায়ন সংক্রান্ত উদ্ভূত সমস্যা মিটে যেতে সময় লাগবে না। প্রশাসন বিশ্লেষকরা বলছেন অন্য কথা। প্রয়োজনীয় পদ যদি তৈরি করা না হয় কিংবা পদের চেয়ে বেশি কর্মকর্তার অবস্থান পরিস্থিতিকে সঙ্কটাপন্ন অবস্থায় নিয়ে যায় তাহলে বিপত্তি বাড়বে। শূন্য পদ না থাকায় নির্ধারিত পদের অনেক কর্মকর্তা নিচের পদে মন্ত্রণালয়ে দুঃসহ কর্মঘণ্টা পার করছেন। এছাড়া অনেক অতিরিক্ত ও যুগ্ম সচিব নিয়মানুসারে নিজেদের জন্য কোন কক্ষও নির্দিষ্ট করে পাননি। অন্যের সঙ্গে সংযুক্ত থেকে বসার স্থানটুকু নির্ধারণ করছেন। অকারণে, অপ্রয়োজনে দাফতরিক কাজের চরম বিশৃঙ্খলা তৈরি হচ্ছে মনোযোগের অভাবে। বিভিন্ন কারণ দর্শিয়ে বাইরে যাওয়া কিংবা কোন সেমিনার, নয়ত কর্মশালায় যুক্ত হয়ে তাদের প্রতিদিনের কাজকর্ম সেরে নিচ্ছেন; যা কিনা জনসেবায় নিযুক্ত সরকারী উর্ধতন কর্মচারীদের দায়িত্বহীনতার পরিচয় বহন করে। সঙ্গত কারণে মন্ত্রণালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ সরকারী প্রতিষ্ঠান তার মানসম্মত ও প্রয়োজনীয় সেবা প্রকল্পে এক অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলার মধ্যে পড়ে যাচ্ছে। ফলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কাজকর্মও প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। এসবের অবধারিত পরিণতি শুধু দায়িত্বে অবহেলাই নয়, বিভিন্ন পদের সচিবরা পারস্পরিক দোষারোপে নিজের কর্তব্যবোধকে পাশ কাটানোর চেষ্টা করছেন। তবে এমন নজিরও আছে কিছু গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ে জ্যেষ্ঠ কর্তাব্যক্তিরা পদের অভাবে নিচের অবস্থানে কর্মরত আছেন বিধায় ক্ষোভ ও মনোকষ্টে জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময়গুলো অতিবাহিত করছেন। পদ স্বল্পতার কারণে যথাযথ পদে আসীন হতে না পারা এমন অনেক সিনিয়র কর্মকর্তা বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে অসহনীয় পর্যায় পার করে যাচ্ছেন। স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব পদোন্নতি পাওয়া সত্ত্বেও তদবিরের অভাবে এখনও উপ-সচিবের মর্যাদায় কাজ করছেন। তবে জনপ্রশাসন ছাড়া স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পররাষ্ট্রসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে উচ্চপদের তুলনায় কর্মকর্তার সংখ্যা কম। এমন বৈষম্যেরও শিকার হচ্ছে কতিপয় মন্ত্রণালয়। ফলে প্রশাসনিক বিভিন্ন কর্মকর্তার মধ্যে বিরোধও ক্রমাগত ঘনীভূত হচ্ছে। স্বাস্থ্য ক্যাডারে ২২ হাজার পদের স্থলে কর্মকর্তা আছেন মাত্র ১৬ হাজার। নিয়ম-বিধির আওতায় এনে মন্ত্রণালয়ের পদায়নের ব্যাপারে সমন্বয় সাধন অত্যন্ত জরুরী। অবসরের মাধ্যমে তা পূরণ হবে এমন ধারণার চাইতেও যৌক্তিক ও নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতে পদায়নের মতো দক্ষতা আর পারদর্শিতার ব্যবস্থাপনাকে আরও শক্তিশালী এবং কর্মবান্ধব করতে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা একান্ত আবশ্যক। এর অন্যথায় অরাজক পরিস্থিতি সামলানো কঠিন হয়ে যাবে।
×