ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

গণপিটুনি দমনে সক্রিয়তা

প্রকাশিত: ০৯:০৪, ২৭ জুলাই ২০১৯

গণপিটুনি দমনে সক্রিয়তা

পরিকল্পিতভাবে গুজব রটিয়ে সমাজে অস্থিরতা তৈরির অপচেষ্টা যারাই করুক তাদের জন্য আইনানুগ পরিণতি অপেক্ষা করছে। আর সন্দেহবশত যারা নিরীহ মানুষকে গণপিটুনি দিয়ে মেরে ফেলছে তারাও রেহাই পাবে না। ইতোমধ্যে গণপিটুনির ঘটনায় ত্রিশটিরও বেশি মামলা হয়েছে, গ্রেফতার করা হয়েছে শতাধিক ব্যক্তিকে। বাড্ডার একটি স্কুলের সামনে গণপিটুনিতে নিহত তাসলিমা বেগম রেণুকে হত্যাকারী মূল হোতাসহ ধরা পড়েছে ১৩ জন। এ জাতীয় অপরাধ দমনে পুলিশের সক্রিয়তা বে স্বস্তি দিয়েছে, অপরদিকে তেমনি অপরাধী ও অপরাধের নেপথ্যের গডফাদারদের দুশ্চিন্তায় ফেলে দেবে। পুলিশের মহাপরিদর্শক বলেছেন, আপনি আইন হাতে তুলে নিলেন মানে অজান্তেই আপনি হত্যা মামলায় জড়িয়ে পড়লেন। পদ্মা সেতু হচ্ছে দেশের টাকায়, বিশ্বব্যাংকের অন্যায্য অভিড়েছে, তাদের সক্ষমতা দৃশ্যমান হচ্ছে জনসাধারণের কাছে। পুলিশের মহাপরির্দশকের স্পষ্ট বক্তব্য একদিকে যেমন দেশের মানুষকে আশ্বস্ত করেছে,যোগকে নাকচ করে দিয়ে আত্মমর্যাদাবোধের দারুণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের উন্নতি যাদের গায়ে জ্বালা ধরায় এটি তাদের কিভাবে সহ্য হবে? পদ্মা সেতু নির্মাণে মানুষের মাথা লাগবে- এমন ভয়ঙ্কর গুজব অনেকে বিশ্বাসও করে। কম্পিউটার-স্মার্ট ফোনের যুগে, চাঁদে মানুষ যাওয়ার অর্ধশতক পূর্তিকালেও বাংলাদেশের বহু মানুষ যে কুসংস্কারের অন্ধকারে রয়েছে- বিষয়টি আমাদের কষ্ট দিলেও এটি বাস্তবতা। কিন্তু গুজবে কান দেয়া আর আতঙ্কিত হয়ে সন্দেহের বশবর্তী হয়ে পিটিয়ে মানুষ খুন করা কি মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ? নিরীহ মা মারা গেছেন একদল উন্মত্ত মানবরূপী পশুর হাতে। সমাজের এমন ক্ষত সারানোর উপায় বের করতে হবে সমাজতাত্ত্বিক ও চিন্তাবিদদের। পুলিশ, রাষ্ট্র-সমাজ ও মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, গণপিটুনি ফৌজদারি অপরাধ। কাউকে ছেলেধরা সন্দেহ হলে পুলিশে দেয়ার আহ্বান জানিয়ে তারা বলেন, যারা এসব গুজব ছড়াচ্ছে তারা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। সমাজে ন্যায়বিচার ও সচেতনতা সৃষ্টির কোন বিকল্প নেই। মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) পরিসংখ্যান বলছে, এ বছরের প্রথম ছয় মাসে (জানুয়ারি থেকে জুন) সারাদেশে ৩৬ জন গণপিটুনিতে মারা গেছেন। গত রবিবার পর্যন্ত গণপিটুনিতে দেশজুড়ে ৪৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। ছেলেধরা গুজবের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিরও অবনতি ঘটছে সারাদেশে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। পল্টন ও খামারবাড়ী এলাকায় দুটি পুলিশ বক্সের কাছে বোমা পাওয়া যায় মঙ্গলবার মধ্যরাতে। সেগুলোতে নিয়ন্ত্রিত বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে পুলিশের বোমা নিষ্ক্রিয়করণ ইউনিট। কারা ওই দুই জায়গায় বোমা রেখেছিল তা জানতে পুলিশ কাজ শুরু করেছে। পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করার উদ্দেশ্যেই এটা করা হয়েছে। এর আগে চলতি বছরের এপ্রিল ও মে মাসে পুলিশকে লক্ষ্য করে দুটি বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। সব মিলিয়ে সমাজে অস্থিরতা তৈরির অপচেষ্টা চলছে, যা দমনে কঠোরতা জরুরী। প্রশাসন গুজব বন্ধে জোরালো উদ্যোগ নিয়েছে ইতোমধ্যেই। গণপিটুনিতে যারা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অংশ নেন তাদের যেন কোনক্রমেই ছাড় দেয়া না হয়-এমনটাই মানুষের প্রত্যাশা। অপরাধ দমন সংস্থা সততা ও দায়িত্বশীলতার সঙ্গে কাজ করে গেলে দুষ্টের দমন অসম্ভব নয়। আর একটিও গণপিটুনির ঘটনা ঘটতে দেয়া চলবে না। এমন উদ্যোগ কোন মহল নিলে স্থানীয় বাসিন্দাদের প্রতিরোধ করে দাঁড়াতে হবে। এছাড়া পুলিশের সহায়তা নেয়ার জন্য ৯৯৯ নম্বরে কল করার সুযোগ তো রয়েছেই। বাংলাদেশ যখন বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর প্রচেষ্টা চমৎকারভাবে অব্যাহত রেখেছে, সেই সময় কুচক্রীমহলের যে কোন ধরনের অপতৎপরতার বিরুদ্ধে সম্মিলতিভাবে রুখে দাঁড়াতেই হবে। সরকারের কঠোর অবস্থানের প্রতি দেশবাসীর সমর্থন রয়েছে।
×