স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) মৌলভীবাজার জেলা কার্যালয়ে রমরমা ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এবার সামনে এসেছে ওই কার্যালয়ে ঘুষের টাকা লেনদেনের একটি গোপন ভিডিও। যা ইতোমধ্যে ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।
ভিডিওটি ধারণ করেন স্থানীয় এক সাংবাদিক। ভিডিওতে দেখা যায়, ‘মতিউর রহমান মতি নামে এক গাড়ি ব্যবসায়ী বিআরটিএর সহকারী প্রকৌশলী হাফিজুর রহমানের সামনে অফিসের কর্মচারী নজরুল ইসলামকে ব্যাগ থেকে টাকা বের করে দিচ্ছেন। টাকা গুনে আরও টাকা দাবি করলে গাড়ি ব্যবসায়ী মতি পরে দেবেন বলে জানান।’
জানা যায়, গত ২৬ জুন ভিডিওটি ধারণ করা হয়। ঘুষ লেনদেন নিজের চোখে দেখার পর ওই সাংবাদিক কিছু সময় গোপনে ভিডিও করেন। ভিডিওটি ফেসবুকে প্রকাশ করার পর গাড়ি ব্যবসায়ী মতিউর রহমান মতি ওই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে সাইবার আইনে মামলার হুমকি দেন।
তবে এটাকে ঘুষ বলতে নারাজ গাড়ি ব্যবসায়ী মতিউর রহমান মতি। তিনি বলেন, ‘আমার গাড়ির কাগজের নাম পরিবর্তনের জন্য টাকা জমা দিয়েছি। সেদিন আমার একটু তাড়া ছিল তাই বিআরটিএ অফিসের একজনের মাধ্যমে টাকা দিয়েছি।
যিনি ভিডিও প্রকাশ করেছেন তিনি অন্যায় করছেন, আমাকে সমাজের সামনে ছোট করেছেন।’ সরকারী কাজের টাকা ব্যাংকে না দিয়ে বিআরটিএ অফিসের একজনের হাতে নগদ টাকা দিলেন কেন? জানতে চাইলে এর কোন সদুত্তর দিতে পারেননি মতি।
আরও জানা যায়, মৌলভীবাজার বিআরটিএ অফিসে প্রতিনিয়ত এরকম ঘটনা ঘটছে। জেলা সদরসহ বিভিন্ন উপজেলার গাড়ি ব্যবসায়ীরা অফিস প্রধানের সঙ্গে আঁতাত করে নির্ধারিত ফির চেয়ে অতিরিক্ত টাকার বিনিময়ে গ্রাহকদের লাইসেন্স করে দেন। বিশেষ করে যারা কিস্তি সুবিধায় শোরুম থেকে গাড়ি কিনেন তাদের পুঁজি করছেন শোরুম মালিকরা। গাড়ি কেনার সঙ্গে শোরুমের মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক করে দুই-তিন গুণ বেশি টাকা নিয়ে লাইসেন্স করিয়ে দিচ্ছেন। শোরুম মালিকদের এই বাড়তি টাকা আয়ের সুযোগ করে দেয়ার জন্য মাসিক মোটা অংকের টাকা পান বিআরটিএর অফিস প্রধান হাবিবুর রহমানসহ অন্যরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিআরটিএর এক কর্মচারী বলেন, সহকারী প্রকৌশলী হাফিজুর রহমানের সঙ্গে স্থানীয় দালালদের যোগসাজশ রয়েছে।
তাদের মধ্যে জনি নামের এক দালাল কর্মকর্তাদের সঙ্গে লিয়াজু করে অফিসে প্রভাব বিস্তার করে। বিভিন্ন সময়ে তাকে পুলিশ আটক করলে ও সেবাগৃহীতারা অভিযোগ জানালেও বিআরটিএ অফিসাররা তাকে প্রশ্রয় দিয়ে ঘুষ বাণিজ্য করে থাকেন।
সরেজমিনে মৌলভীবাজার বিআরটিএ অফিসে দেখা যায়, অফিস চলাকালীন বিআরটিএর উপ-পরিচালক হাবিবুর রহমান স্থানীয় গাড়ির শোরুম মালিকদের নিয়ে মিটিংয়ে ব্যস্ত। অন্যদিকে বাইরে দালালরা অফিসে ভিড় করে আছেন। এতে সাধারণ মানুষ সঠিক সেবা নেয়ার বিপরীতে দালালদের দ্বারা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
মৌলভীবাজার বিআরটিএর সহকারী পরিচালক হাবিবুর রহমান বলেন, মতিউর রহমান মতি অসুস্থ অবস্থায় লাইসেন্সের জন্য টাকা জমা দিতে এসেছিলেন। ব্যাংকে দীর্ঘ লাইন থাকায় তিনি অফিসে পূর্ব পরিচিত কর্মচারীর কাছে টাকা দিয়ে সেটা জমা দিতে বলেছিলেন। এটাকে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে রেকর্ড করে ফেসবুকে ছড়ানো হয়েছে।
গাড়ির শোরুম ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ঘুষ বাণিজ্যের ব্যাপারে তিনি বলেন, সরকার নীতিমালা করেছে গাড়ির শোরুম মালিকেরা লাইসেন্সের টাকা জমা নিয়ে অফিসে ফাইল জমা দেবেন। সে সুবাধে তারা আমার অফিসে আসা-যাওয়া করেন। তবে তিনি এ সংক্রান্ত কোনো নীতিমালার অনুলিপি দেখাতে পারেননি।