ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ইতিহাস গড়ে অভিষেকেই চ্যাম্পিয়ন বসুন্ধরা কিংস

প্রকাশিত: ১১:৩১, ২৬ জুলাই ২০১৯

 ইতিহাস গড়ে অভিষেকেই চ্যাম্পিয়ন বসুন্ধরা কিংস

তাহমিন হক ববী, নীলফামারী থেকে ॥ বাংলাদেশের ঘরোয়া ফুটবলের সবচেয়ে মর্যাদার ও বড় আসর বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগে নিজেদের অভিষেক আসরেই ইতিহাস গড়েছে নবাগত বসুন্ধরা কিংস। বৃহস্পতিবার ঐতিহ্যবাহী ঢাকা মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের সঙ্গে ১-১ গোলে ড্র করে দুই ম্যাচ হাতে রেখেই শিরোপা নিশ্চিত করেছে কিংসরা। বাংলাদেশের পেশাদার ফুটবলের ইতিহাসে এর আগে কোন ক্লাবই নিজেদের অভিষেক আসরে দুই শিরোপা জয়ের স্বাদ পায়নি। কিন্তু এবার বিপিএলের নবাগত বসুন্ধরা কিংস সেটি করে দেখাল। এর আগে ২০১৮ সালের ২৬ ডিসেম্বর স্বাধীনতা কাপ জয় করে বসুন্ধরা। নিজেদের হোম ভেন্যু নীলফামারীর শেখ কামাল স্টেডিয়ামে ম্যাচটি হওয়ায় আনন্দের মাত্রাটা আরও বেশি হয়েছে বসুন্ধরার। আগেরদিন বৃষ্টি ও বজ্রপাতের কারণে দুই দলের মধ্যে লীগের দ্বিতীয়পর্বের ম্যাচ শুরু হওয়ার কিছুক্ষণ পরই স্থগিত হয়ে যায়। ম্যাচের বাকি অংশ হয় গতকাল। ফের মাঠে নামার আগে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য আরও সহজ সমীকরণ আসে বসুন্ধরার সামনে। কেননা আগেরদিন চট্টগ্রাম আবাহনীর সঙ্গে ঢাকা আবাহনী ড্র করে। এতে করে বসুন্ধরার শিরোপা জিততে দরকার হয় মাত্র ১ পয়েন্ট। মোহামেডানের বিরুদ্ধে শুরুতে পিছিয়ে পড়লেও পরে ঘুরে দাঁড়িয়ে প্রয়োজনীয় পয়েন্ট তুলে নিয়ে ঐতিহাসিক শিরোপা জিতেছে বসুন্ধরা। লীগের প্রথমপর্বে মোহামেডানকে ৪-১ গোলে উড়িয়ে দিয়েছিল নতুন চ্যাম্পিয়নরা। ম্যাচের শেষ বাঁশি বেজে উঠতেই চ্যাম্পিয়ন হওয়ার উৎসবে ভেসে ওঠেন কিংস সমর্থকরা। গ্যালারি ছেড়ে মাঠের চারিদিকে উল্লাস। ফাটছে বাজি। স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত বসুন্ধরা-বসুন্ধরা। ম্যাচটি ছিল নিজ ভেন্যুর মাঠে কিংসের অস্তিত্বের লড়াই। ম্যাচের শুরু থেকেই মাঠে টানটান উত্তেজনা। মাঠে খেলছে বসুন্ধরা কিংস ও ১০ বারের চ্যাম্পিয়ান ঐতিহ্যে লালিত মোহামেডান। আর গ্যালারিতে উৎসবের আমেজ। কিংসের হোম ভেন্যুর গ্যালারিতে লাল জার্সিতে মুখর। হঠাৎ জ্বলে ওঠা মোহামেডান ১৬ জুলাই ঢাকার মাঠে গত মৌসুমের চ্যাম্পিয়ন ঢাকা আবাহনীকে ৪-০ গোলে উড়িয়ে দিয়ে পরের ম্যাচে নোফেলকে হারিয়ে দেয় ৩-১ গোল। কিন্তু এই লীগে প্রথম টানা দ্বিতীয় জয় পাওয়া সাদা-কালোরা নীলফামারীতে চমক দেখাতে পারেনি। মোহামেডান ঐতিহ্যে লালিত আর ঘরোয়া ফুটবলে নবশক্তি বসুন্ধরা কিংস। বসুন্ধরা কিংস কোচ অস্কার ব্রুজোন বলেছিলেন মোহামেডানকে ঠেকিয়ে বিপিএলের চ্যাম্পিয়ন কাপটি আগাম নিশ্চিত করারই ছিল আমাদের লক্ষ্য। সেই লক্ষ্য আমরা পূরণ করেছি। বৃষ্টি কাঁদা মাঠে সেরা খেলাটি হয়তো দেয়া সম্ভব হয়নি। এক মৌসুমেই জোড়া শিরোপা বসুন্ধরার। নিজেদের হোমভেন্যু নীলফামারীর আগেই গত ২০ জুলাই সিলেটের মাঠেই হতো বিপিএলের চ্যাম্পিয়নের হাতছানি ছিল। কিন্তু ওই খেলায় শেখ রাসেলের কাছে ১-০ গোলে কিংসরা হেরে মাঠ ছাড়ে। এটি ছিল কিংসের প্রথম হার। হয়তো এই লেগের চ্যাম্পিয়নের হাতছানিটি নিজেদের হোম ভেন্যু নীলফামারীতেই উৎসবের জন্যই রেখেছিল। কিংসের ২২ খেলায় ১৯টিতে জয়, দুইটিতে ড্র ও একটিতে হেরে পয়েন্ট টেবিলে ৫৯ পয়েন্ট নিয়ে লীগপর্ব শেষ করার আগেই তারা বিপিএলের চ্যাম্পিয়নশিপটা নিশ্চিত করেছে। বাকি দুই ম্যাচে কিংস মুখোমুখি হবে চিটাগং আবাহনী ও সাইফ স্পোর্টিং ক্লাবের সঙ্গে। শিরোপা জয়ের ম্যাচে কিংসের পক্ষে গোল করে ব্রাজিলের মার্কস ও মোহামেডানের পক্ষে মালির খেলোয়াড় সোলেমান ডায়াবেট। তবে খেলা শুরুর আগে মোহামেডানের টিম ম্যানেজার আমিরুল ইসলাম বাবু বড়ই আশা করে বলেছিলেন আমরা এর আগে আবাহনীকে ৪ ও নোফেরকে ৩-১ গোলে হারিয়েছি। আমাদের খেলোয়াড়রা এখন ফুরফুরে মেজাজে রয়েছে। আশাকরি কিংসকে হারিয়ে জয় ঘরে তুলতে পারব। খেলা শেষে বাবু আরও বলেন, আমরা ভাল খেলেছি। আগামীতে মোহামেডান আগের ফর্মে ফিরে আসবে। শ্রাবণের বৃষ্টি ভেজা মাঠ, আকাশে মেঘের ঘনঘটা। কি হবে আজ এমন ভাবনায় বর্ষার কাদা পানির মধ্যেই খেলা শুরু হয়। ম্যাচের ১০ মিনিটে কিংস গোলের সুযোগ পেলেও হাতছাড়া হয়ে যায়। তবে ১৬ মিনিটে মোহামেডান আক্রমণ আর লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়নি। মালির খেলোয়াড় সোলেমান ডায়াবেট একটি দর্শনীয় গোল করেন। কিংসের গোলরক্ষক জিকো প্রথম শর্টের বল ঘুষি মেরে সামনে ঠেলে দিলেও সেই বল পুনরায় পেয়ে কিংসের জালে জড়িয়ে দেয় সোলেমান । এরপর একের পর এক আক্রমণে কিংসের গোল পেতে সময় নিতে হয় ৩৭ মিনিট পর্যন্ত। এই সময় কর্নার পেয়ে যায় কিংস। কর্নার নেয় ডেনিয়েল। বল সোজা চলে আসে ব্রাজিলের মার্কসের কাছে। এই সুযোগ আর হাতছাড়া হয়নি। সরাসরি হেডে মোহামেডানের জালে বল জড়িয়ে দেন মার্কস। ১-১ গোলে খেলা ড্র হলে খেলায় উত্তেজনা চলে আসে আরও বেশি। আক্রমণ পাল্টা আক্রমণ আর টানটান উত্তেজনায় ভরে ওঠে খেলা। তবে বাকি সময় কোন দলই আর লক্ষ্যভেদ করতে পারেনি। তাতে কোন সমস্যা হয়নি কিংসের। প্রয়োজনীয় এক পয়েন্ট পেয়ে শিরোপা জয়ের উৎসবে ভাসে দলটি।
×