ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কলম্বোয় বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা প্রথম ওয়ানডে আজ

প্রকাশিত: ১১:২৯, ২৬ জুলাই ২০১৯

কলম্বোয় বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা প্রথম ওয়ানডে আজ

মিথুন আশরাফ ॥ এক এক করে বাংলাদেশের ওয়ানডে ক্রিকেটে ১৩ ক্রিকেটার নেতৃত্ব দিয়েছেন। এর মধ্যে শুধু দুইজন নেতৃত্বে প্রথম ম্যাচেই জয় পেয়েছেন। একজন হাবিবুল বাশার সুমন। আরেকজন সাকিব আল হাসান। তামিম ইকবাল কী হাবিবুল বা সাকিবের মতো হতে পারবেন? দেশের ১৪তম অধিনায়ক হিসেবে আজ বাংলাদেশ দলকে নেতৃত্ব দিতে নামবেন বাংলাদেশ ওপেনার। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে কলম্বোর আর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে প্রথম ওয়ানডে দিয়ে তিন ম্যাচের সিরিজের মিশন শুরু করবে বাংলাদেশ। তামিমের নেতৃত্বেই এবার এ মিশন শুরু হচ্ছে। তামিম কী শুরুতেই বাজিমাত করতে পারবেন? বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার মধ্যকার প্রথম ওয়ানডে বেলা ৩টায় শুরু হবে। আধঘণ্টা আগে হবে টস। যখন টস করতে নামবেন তামিম বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক তালিকায় ঢুকে যাবেন। ম্যাচটিতে জয় তুলে নিতে পারলেতো কথাই নেই। সেই ১৯৮৬ সালের ৩১ মার্চ থেকে ৩৩ বছর ধরে আন্তর্জাতিক ওয়ানডে ক্রিকেট খেলছে বাংলাদেশ। ৩৭০ ওয়ানডেতে ১২৫ জয় এসেছে। গাজী আশরাফ হোসেন লিপু, মিনহাজুল আবেদীন নান্নু, আকরাম খান, আমিনুল ইসলাম বুলবুল, নাঈমুর রহমান দুর্জয়, খালেদ মাসুদ পাইলট, খালেদ মাহমুদ সুজন, হাবিবুল বাশার, রাজিন সালেহ, মোহাম্মদ আশরাফুল, সাকিব আল হাসান, মাশরাফি বিন মর্তুজা, মুশফিকুর রহীম ওয়ানডেতে বাংলাদেশ দলের নেতৃত্ব দেন। তবে হাবিবুল বাশার ও সাকিবই শুধুই নেতৃত্বে প্রথম ম্যাচেই জয় তুলে নিতে পারেন। ২০০৪ সালে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে হাবিবুল ও ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সাকিব অধিনায়কত্ব ক্যারিয়ার শুরু হতেই জয়ের হাসি দিতে পারেন। আর কেউই তা পারেননি। ২০০০ সালে টেস্ট আঙ্গিনায় পা রাখার পরতো ওয়ানডেতে কোন ম্যাচই জিততে পারছিল না বাংলাদেশ। শুধু হারই হচ্ছিল। টানা ৩৯টি ওয়ানডে ম্যাচ হারে বাংলাদেশ। জয়ের দেখা কোনভাবেই মিলছিল না। এমন মুহূর্তে এসে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে হারারেতে অধরা জয়টি ধরা দেয়। স্বস্তি মিলে। সেই স্বস্তি আসে হাবিবুলের নেতৃত্বেই। সেই থেকে বাংলাদেশ দল হার-জিতের মধ্য দিয়েই পথ চলতে থাকে। ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে গিয়ে নেতৃত্বে থাকা মাশরাফি টেস্ট সিরিজের প্রথম টেস্টেই ইনজুরিতে পড়েন। ওয়ানডেতে সাকিব অধিনায়কত্ব পান। পেয়েই বাজিমাত করেন। শুধু ওয়েস্ট ইন্ডিজকে একটি ওয়ানডেই হারানো নয়, তিনটি ম্যাচেই ওয়েস্ট ইন্ডিজকে প্রথমবারের মতো হারিয়েছে বাংলাদেশ। সাকিবের নেতৃত্বে প্রথমবার ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজে জেতার সঙ্গে হোয়াইটওয়াশও করেছে। এবার তামিমের পালা। বাংলাদেশের ওয়ানডে ক্রিকেট ইতিহাস যেমন ১৯৮৬ সাল থেকে শুরু, তেমনি শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেও একই সময়ে ম্যাচ খেলা শুরু করে বাংলাদেশ। তবে লঙ্কানদের বিপক্ষে প্রথম জয়টি পেতে ২০ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে। অবশেষে ২০০৬ সালে বগুড়ায় হাবিবুল বাশারের নেতৃত্বে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অধরা জয়টি মিলেছে। এরপর আরও ৬টি ওয়ানডে জেতা হয়েছে। কিন্তু কখনই সিরিজ জয় হয়নি। ২০০২ সাল থেকে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দ্বিপক্ষীয় সিরিজ খেলা শুরু করে বাংলাদেশ। সাতটি দ্বিপক্ষীয় সিরিজ খেলা হয়েছে। একটিতেও বাংলাদেশ জিততে পারেনি। তবে ২০০৭ সাল পর্যন্ততো টানা সিরিজ হারের গোলকধাঁধাতেই আটকে ছিল বাংলাদেশ। এরপর থেকেই দৃশ্যপট পাল্টে যায়। ২০০৭ সালের পর ছয় বছর দুই দলের মধ্যকার কোন দ্বিপক্ষীয় সিরিজ হয়নি। ২০১৩ সালে গিয়ে আবার সিরিজ খেলা শুরু হয়। এই সিরিজ থেকে বাংলাদেশ একতরফা হারের গোলকধাঁধা থেকেও বের হতে থাকে। ২০১৩ সালে শ্রীলঙ্কায় হওয়া সিরিজে ১-১ ব্যবধানে ড্র করে বাংলাদেশ। এরপর পরের বছর দেশের মাটিতে আবার সিরিজে হারে। দুই দলের মধ্যকার ২০১৭ সালের শেষ সিরিজটিতে আবার ড্র করে বাংলাদেশ। এখন ওয়ানডেতে বাংলাদেশ দল যে কোন সময়ের চেয়ে অনেক উন্নত। শ্রীলঙ্কাকেও হারায়। দুই দলের মধ্যকার সর্বশেষ এশিয়া কাপেই যেমন লঙ্কানদের হারিয়েছে বাংলাদেশ। বিশ্বকাপেও হারানোর আশা ছিল। কিন্তু বৃষ্টিতে ম্যাচটি পরিত্যক্ত হয়ে যায়। ম্যাচটি যদি হতো, প্রত্যাশা অনুযায়ী বাংলাদেশ জিতত তাহলে বিশ্বকাপের পয়েন্ট তালিকায় আট নম্বরে থেকে নয়, ছয় নম্বরে থেকে বিশ্বকাপ শেষ করত বাংলাদেশ। কিন্তু শ্রীলঙ্কার সঙ্গে বৃষ্টির জন্য পয়েন্ট ভাগাভাগি হওয়াতে সরাসরি বিশ্বকাপ খেলা আট দলের মধ্যে সবচেয়ে নিচেই অবস্থান হয় বাংলাদেশের। তিন ম্যাচ জিতে বিশ্বকাপ শেষ করে। বিশ্বকাপে যে শ্রীলঙ্কাই হারাত বাংলাদেশকে এর প্রমাণ এবার দেয়ার পালা এসেছে। বিশ্বকাপের ম্যাচটিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশই জিতত, এমনই ধারণা। সেই ধারণা যে পুরোপুরি সত্য তা বুঝিয়ে দিতে হবে তামিমবাহিনীকে। আজ সেই বুঝিয়ে দেয়ার ম্যাচও। তামিমরা কী পারবেন আজ জিতে সিরিজে শুভ সূচনা করতে? সিরিজে এগিয়ে যেতে? তামিমের আশা জয় দিয়ে শুরু করার। তিনি বলেছেন, ‘অবশ্যই আমাদের মূল লক্ষ্য থাকবে (আজকের) ম্যাচটি জেতার। আমরা একধাপ করে এগোতে চাই। আমরা অনেক দূর যেতে চাই।’ শুধু ম্যাচই নয়, তামিম সিরিজও জেতার আশা করছেন। বলেছেন, ‘আমি নিশ্চিত যে আমাকে যদি জিজ্ঞেস করেন কিংবা ওদের অধিনায়ককেও জিজ্ঞেস করেন তাহলে সেও বলবে যে সিরিজটি জিততে চায়। আমিও চাই সিরিজ জিততে। আপনাকে সব ছোট ছোট বিষয় সঠিকভাবে পালন করতে হবে। আর এটি শুরু হবে ম্যাচের প্রথম বল থেকেই। সেটি আমরা বোলিং কিংবা ব্যাটিং যেটাই করি।’ বাংলাদেশ কী পারবে শ্রীলঙ্কাকে তাদের মাটিতে আজকের ম্যাচ এবং শেষ পর্যন্ত সিরিজে হারাতে? প্রশ্নটি উঠছে। কারণ দলে যে নেই নিয়মিত অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। ইনজুরিতে পড়ে শেষ মুহূর্তে সিরিজ থেকে ছিটকে পড়েছেন মাশরাফি। নেই বিশ্বসেরা ওয়ানডে অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানও। বিশ্বকাপে অসাধারণ অলরাউন্ড নৈপুণ্য দেখানোর পর ছুটি নিয়েছেন সাকিব। তাই নেই। দলে নেই পেস অলরাউন্ডার মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনও। আবার বিয়ের জন্য ছুটিতে আছেন লিটন কুমার দাসও। চার ক্রিকেটার নেই। যারা একাদশে নিশ্চিত ছিলেন। তাদের ওপর দলের ভরসাও থাকে। তামিম প্রথমবারের মতো ওয়ানডেতে নেতৃত্ব দেবেন। এমন সিরিজে গুরুত্বপূর্ণ চার ক্রিকেটার একাদশে না থাকা মানেতো সিরিজ শুরুর আগেই দুর্বল হয়ে পড়ছে দল। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে কখনই সিরিজ জেতা যায়নি। এমনকি দুই দলের মধ্যকার সর্বশেষ ২০১৭ সালের তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজটিতে যে বাংলাদেশ প্রথম ওয়ানডেতেই জিতেছিল, এর আগে কোন সিরিজেই লঙ্কানদের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতেই জেতা যায়নি। ২০১৭ সালে সেই ম্যাচটি আবার জয় মিলেছিল তামিম ইকবালের অনবদ্য ১২৭ রানের ইনিংসে। সেই তামিমই এবার শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজে নেতৃত্ব দেবেন। তাকে এবার সামনে থেকেই নেতৃত্ব দিতে হবে। এটা খুব ভাল করেই সব দলেরই বোঝা আছে শুরুটা যদি ভাল করা না যায় তাহলে সবকিছুই শেষ পর্যন্ত বৃথা হয়ে যেতে পারে। ম্যাচ জিততে হলে ব্যাটিংয়ে তাই শুরুতে তামিমকেই আবারও হাল ধরতে হবে। তামিম তা ভাল করেই জানেন। তাইতো বলেছেনও, ‘আমি সবসময় বলি যে স্টার্টিং লাইনের আগে যদি ফিনিশিং লাইন দেখা শুরু করি তাহলে সেটি একটি সমস্যা। আমাদের একটি ভাল শুরু করতে হবে আগামীকাল (আজ)। সেটি বোলিং কিংবা ব্যাটিং যেটাই করি না কেন।’ শুরুটা এখন ভাল হলেই হলো। হাবিবুল বাশার সুমন ও সাকিব আল হাসানের মতো নেতৃত্ব জয় দিয়ে তামিমও শুরু করতে পারলেই হলো। তাহলে বাংলাদেশ দলও সিরিজে এগিয়ে যেতে পারবে। তামিমের নেতৃত্বে শ্রীলঙ্কা মিশনে বাংলাদেশের শুভ সূচনাও হয়ে যাবে।
×