ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পল্টন ও খামারবাড়ি পুলিশ বক্সের কাছে বোমা পুঁতে রাখার ঘটনা

ফের আইএসের নামে দায় স্বীকার, নানা প্রশ্ন তদন্তকারীদের

প্রকাশিত: ১০:২৯, ২৬ জুলাই ২০১৯

 ফের আইএসের নামে  দায় স্বীকার, নানা প্রশ্ন তদন্তকারীদের

শংকর কুমার দে ॥ রাজধানীর পল্টন ও খামারবাড়ি পুলিশ বক্সের কাছে বোমা পুঁতে রাখার দায় স্বীকার করেছে আন্তর্জাতিক জঙ্গী সংগঠন ইসলামিক স্টেটস ‘আইএস’। এর আগে গুলিস্তান ও মালিবাগে কর্তব্যরত পুলিশকে টার্গেট করে বোমা হামলায় ছয় পুলিশ আহত হওয়ার ঘটনায় দায় স্বীকার করে আইএস জঙ্গী সংগঠনটি। আইএস নামের জঙ্গী সংগঠনটির বার বার দায় স্বীকারের ঘটনায় তদন্তের সামনে এসেছে নানা প্রশ্ন। আইএস এর নাম ব্যবহার করে দায় স্বীকার করে দেশে আতঙ্ক, উদ্বেগ, উৎকণ্ঠার সৃষ্টি করছে কারা? দেশীয় জঙ্গী গোষ্ঠীর সদস্যদের শনাক্ত করা যাচ্ছে না কেন? দেশে নাকি বিদেশে বসে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমটি ব্যবহার করছে চিহ্নিত করার বাধা কোথায়? বার বার আইএসের দায় স্বীকারের কারণে এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন পুলিশের তদন্তকারীরা। তদন্তকারী সূত্রে জানা গেছে, বার বার কারা জঙ্গী হামলা কিংবা হামলার চেষ্টা করে আন্তর্জাতিক জঙ্গী সংগঠন ইসলামিক স্টেটস আইএস এর নাম ব্যবহার করছে তা নিয়ে তদন্ত করছে তদন্তকারী সংস্থা। কোথা থেকে কারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আইএসের নামে দায় স্বীকার করে তা নিয়ে অনেক প্রশ্নেরই উত্তর মেলে না। সন্ত্রাসের হুমকি থেকে কোন দেশই মুক্ত নয়। কিন্তু বাংলাদেশে এ পর্যন্ত যেসব হামলা হয়েছে তাতে হোম গ্রোন জঙ্গী বা দেশীয় জঙ্গীরাই ছিল জড়িত। আইএস জঙ্গীর কোন অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে হামলাগুলো হয়েছে তা যে আইএস করেনি, তা নিশ্চিত তদন্তকারী কর্তৃপক্ষ। তবে কেন বার বার হামলায় আইএসের দায় স্বীকারের তথ্য প্রকাশিত হচ্ছে তাই হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। গত মঙ্গলবার গভীর রাতে রাজধানী ঢাকার খামারবাড়ি ও পল্টনে পুলিশ চেকপোস্টের সামনে বোমা পুঁতে রাখার ঘটনা ঘটে। এরপর বোমা দুইটি বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ধ্বংস করে পুলিশের বোম ডিসপোজেল ইউনিট। এরপর দায় স্বীকার করেছে আন্তর্জাতিক জঙ্গী সংগঠন ইসলামিক স্টেটস (আইএস)। বৃহস্পতিবার জিহাদি কার্যক্রম পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা সাইট ইন্টেলিজেন্সের মাধ্যমে তারা এ দায় স্বীকার করে। সাইট ইন্টেলিজেন্স জানায়, ঢাকার দুই পুলিশ চেকপয়েন্টে হামলার উদ্দেশ্যে বোমা দুটি স্থাপন করেছিল আইএস। পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল (আইজিপি) ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বুধবার বলেছেন, ‘আমাদের স্থানীয় জঙ্গীগোষ্ঠী, যারা ইতোপূর্বে এখানে কাজ করেছে, তারা হয়ত সক্রিয় থাকলেও থাকতে পারে। তবে আমরা তদন্ত করছি। বিষয়টি পুরোপুরি দেখে যখন বলার মতো হবে, তখন অবশ্যই আমরা বিস্তারিত বলব।’ পুলিশ সদর দফতরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) সোহেল রানা বলেন, ‘বাংলাদেশে আইএসের কোন অস্তিত্ব নেই। অনেক সময় স্থানীয় গোষ্ঠী আইএসের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য এ ধরনের ঘটনা ঘটায়। বোমা উদ্ধারের ঘটনার তদন্ত চলছে। প্রাথমিকভাবে আমাদের ধারণা, স্থানীয় কোন গোষ্ঠী জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টির জন্য এমনটি করতে পারে। তদন্ত প্রাথমিক পর্যায়ে। তদন্ত শেষে কে বা কারা কী উদ্দেশ্যে বোমা রেখেছে তা বলা যাবে। গত এপ্রিল মাসে গুলিস্তানে ও মে মাসে মালিবাগের বোমা হামলার ঘটনায় সাইট ইন্টেলিজেন্সের এক টুইট বার্তায় বলা হয়, আইএস দাবি করেছে যে বাংলাদেশে পুলিশের গাড়িতে বোমা হামলা চালিয়েছে। এর সঙ্গে আরবি ভাষায় আইএসের দায় স্বীকারমূলক বক্তব্যের ছবি সংযুক্ত করা হয়েছে। টুইটারে কথিত আত-তামকিন মিডিয়ার নামে বাংলা ভাষায় একটি বার্তা ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে আইএসের কথিত প্রচারমাধ্যম আমাক এজেন্সির বরাত দিয়ে বলা হয়, ‘ঢাকা শহরের মালিবাগ মোড়ের কাছে একটি গোপন ইউনিট বাঙালী পুলিশের একটি গাড়িতে একটি আইইডি বিস্ফোরিত করে। এতে গাড়িটি অকেজো হয়ে যায় আর তাতে থাকা তিন সদস্য আহত হয়। মালিবাগে বিস্ফোরণের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই যুক্তরাজ্যভিত্তিক নিরাপত্তা নজরদারি প্রতিষ্ঠান ইন্টেলিজেন্স ফিউশনের দক্ষিণ এশিয়া শাখা এক টুইট বার্তায় আইএসের দায় স্বীকারের তথ্য প্রচার করে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক আরেক নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান রিস্কম্যাপও মালিবাগ হামলায় আইএসের দায় স্বীকারের তথ্য জানিয়ে টুইট বার্তা প্রকাশ করে। এর আগে এপ্রিল মাসে ঢাকার গুলিস্তানে পুলিশের ওপর হামলা আইএস চালিয়েছিল বলে প্রচার করা হয়েছিল। এখন বলা হচ্ছে, শ্রীলঙ্কায় সম্প্রতি সন্ত্রাসী হামলার পর আইএস বাংলাদেশে দুই দফায় হামলা চালিয়েছে। দুটি হামলার ক্ষেত্রেই আইএসের ওই দাবি নিয়ে বিভিন্ন মহলে সন্দেহ ও সংশয় সৃষ্টি হয়েছে।
×