ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

উত্তর ও মধ্যাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি

প্রকাশিত: ১০:২৯, ২৬ জুলাই ২০১৯

 উত্তর ও মধ্যাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দ্বিতীয় দফায় নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় দেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতির আশঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। একই সঙ্গে উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে এই সময়ের মধ্যে। তারা জানায়, উজানে ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে দ্বিতীয় দফায় দেশের বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বাড়তে শুরু করেছে। তারা জানিয়েছে, দ্বিতীয় দফায় পানি বাড়ার কারণে উত্তরের জেলা কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, জামালপুর, বগুড়া, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ এবং মানিকগঞ্জ জেলার বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হবে। এর বাইরে সিলেট সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির আরও উন্নতি হবে। তবে নীলফামারী ও লালমনিরহাট জেলার বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকতে পারে। তবে তারা জানান, নতুন করে পানি বাড়লেও বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে নতুন করে কোন আশঙ্কাজনক পরিস্থিতি সৃষ্টির সম্ভাবনা নেই। দু’একদিনের মধ্যে পানি নামতে শুরু করবে। এদিকে দ্বিতীয় দফায় পানি বাড়ার কারণে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়ে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষ। আগ থেকেই যারা পানিবন্দী রয়েছে তারাও মানবেতর জীবন যাপন করছে। গাইবান্ধা ॥ উজান থেকে নেমে আসা পানিতে নতুন নতুন এলাকায় পানি ঢুকে পড়েছে। এতে দ্বিতীয় দফার বন্যায় মানুষের দুর্ভোগ আরও বেড়ে গেছে। বন্যায় অনেক এলাকায় নানা ধরনের পানিবাহিত রোগ দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে চর্মরোগ, হাতে ও পায়ের আঙ্গুলে ঘা, এলার্জি, পানিতে চলাফেরা করার সময় পায়ে আঘাত, সাপে কামড়ানো। লালমনিরহাট ॥ কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে তিস্তা ও ধরলা নদীর পানি পুনরায় বাড়তে শুরু করেছে। ফলে এবার বড় ধরনের বন্যার আশঙ্কা করছেন তিস্তা ও ধরলা পাড়ের নদী তীরবর্তী হাজার হাজার মানুষ। পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে তিস্তা ব্যারেজের ৪৪টি গেট খুলে দেয়া হয়েছে। পানির তোড়ে ব্যারেজ থর থর করে কাঁপছে। তিস্তা ব্যারেজের ভাটিতে তিস্তা ব্যারেজ কর্তৃপক্ষ মাইকিং করে চরবাসীকে সতর্ক করে দিয়েছে। তাদের নিরাপদ স্থানে সরে যেতে বলেছে। নতুন করে উজানের পাহাড়ী ঢলের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে গত দুইদিনের ভারি বৃষ্টি। এতে লালমনিরহাটের ৫টি উপজেলার তিস্তা ও ধরলা অববাহিকার চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাাবিত হয়েছে। বগুড়া ॥ যমুনা ও বাঙালীর পানি বাড়ছে তবে গতি ধীর। যমুনা তীরের যে এলাকায় বন্যার পানি নেমে গেছে সেখানে লোকজন ফিরতে শুরু করেছে। তবে তাদের দেখতে হচ্ছে বিধ্বস্ত বসতভিটা। মানুষের খাবার মিললেও মিলছে না গবাদি পশুর খাদ্য। ৪ হাজারেরও বেশি চারণভূমি ডুবে যাওয়ায় পশুখাদ্যের অন্যতম ঘাসের জোগান বন্ধ হয়েছে। মিলছে না খড়। এখনও প্রায় সোয়া লাখ গরু ছাগল ভেড়া ও মহিষ পানিবন্দী রয়েছে। ময়মনসিংহ ॥ সদরের চর জেলখানা এলাকায় পুরনো ব্রহ্মপুত্রের বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে চর গোবিন্দপুর, চর ভবানীপুর ও দুর্গাপুরসহ আশপাশের ১০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এসব গ্রামের প্রায় পাঁচ হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। আরও ৫/৭টি গ্রাম প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। বন্যায় চর গোবিন্দপুর ও ভবানীপুর এলাকার অসংখ্য খামারের মাছ ভেসে গেছে। তলিয়ে গেছে আমন ধানের বীজতলা। শরীয়তপুর ॥ বন্যার পানিতে পদ্মা পাড়ে অবস্থিত নড়িয়া, জাজিরা ও ভেদরগঞ্জ উপজেলার প্রায় ২০টি গ্রামে পানি ঢুকেছে। পদ্মার পানি কমতে থাকলেও বন্যার্তদের দুর্ভোগ কমেনি। দেখা দিয়েছে পানিবাহিত রোগ, রাস্তা ডুবে থাকায় শিশুরা যেতে পারছে না বিদ্যালয়ে। জাজিরা উপজেলার বিলাশপুর, কাজিয়ার চর ও নড়িয়া উপজেলার মোক্তারের চর, কুলকাঠি, ঢালীকান্দি, নওপাড়া এবং ভেদরগঞ্জ উপজেলার দুলারচর, তারাবুনিয়া ও কাঁচিকাটায় নিচু এলাকা প্লাবিত হওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছে এখানকার মানুষ। পদ্মার পানি কমলেও এসব এলাকা এখনও পানির নিচে। রান্নাঘর ও টয়লেট পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় নড়িয়া উপজেলার ঢালীকান্দি ও কুলকাঠি গ্রামের দুই শতাধিক পরিবার দুর্ভোগে পড়েছে। শিশুরা যেতে পারছে না বিদ্যালয়ে। ছড়িয়ে পড়ছে পানিবাহিত রোগ। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সাহায্য-সহযোগিতা না পাওয়ার অভিযোগ অনেকের। কুড়িগ্রাম ॥ ব্রহ্মপুত্র, ধরলা ও তিস্তাসহ কুড়িগ্রামের সবকটি নদ-নদীর পানি বেড়ে আবারও সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। নতুন করে তিন শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দী হয়েছে প্রায় ৩ লাখ মানুষ। দুর্গত এলাকা পরিদর্শনে বৃহস্পতিবার দুপুরে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ডাঃ এনামুর রহমান এমপি ও সিনিয়র সচিব শাহ কামাল বিকেল ৪টা পর্যন্ত অবস্থান করেন। এ সময় তারা দুপুরে কুড়িগ্রাম সার্কিট হাউস কনফারেন্স কক্ষে জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় অংশ নেন। পরে চিলমারী উপজেলায় বন্যাকবলিত এলাকায় পরিদর্শন ও দুর্গত মানুষের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেন। নীলফামারী ॥ তিস্তায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ছয়টায় তিস্তা ব্যারেজ পয়েন্টে নদীর পানি বিপদসীমার ২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। এর আগে সকাল ছয়টায় বিপদসীমার ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়েছিল। ভারি বর্ষণ ও উজানের ঢলে বুধবার রাতে ওই পয়েন্টে নদীর পানি বিপদসীমার ৪৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছিল। সারাদেশে মৌসুমি বায়ু সক্রিয় ॥ সারাদেশের ওপর মৌসুমি বায়ু অধিক সক্রিয় হয়ে পড়ছে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে মৌসুমি বায়ুর আধিক্যের কারণে উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায় সঞ্চালনশীল মেঘমালা তৈরি হচ্ছে। এর প্রভাবে বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা, উত্তর বঙ্গোপসাগর এবং সমুদ্র বন্দরসমূহের ওপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।
×