ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বড় পুকুরিয়ার ১ লাখ ৪৩ হাজার মে. টন কয়লা আত্মসাত

সাবেক সাত এমডিসহ ২৩ জনের বিরুদ্ধে দুদকের চার্জশীট

প্রকাশিত: ০৯:৪২, ২৫ জুলাই ২০১৯

 সাবেক সাত এমডিসহ  ২৩ জনের বিরুদ্ধে  দুদকের চার্জশীট

স্টাফ রিপোর্টার, দিনাজপুর ॥ দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লা খনিতে এক লাখ ৪৩ হাজার সাত শ’ ২৭ দশমিক ৯৯ মেট্রিক টন কয়লা (যার আনুমানিক মূল্য ২৪৩ কোটি ২৮ লাখ টাকা) আত্মসাতের অভিযোগে বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানি লিমিটেডের সাবেক সাত ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ (এমডি) ২৩ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশীট দাখিল করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক। বুধবার দিনাজপুরের সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতের বিচারক আজিজ আহমেদ ভুইয়ার আদালতে তদন্তকারী কর্মকর্তা দুদকের উপ-পরিচালক মোঃ সামসুল আলমের পক্ষে দুদক দিনাজপুর সমন্বিত কার্যালয়ের উপ-পরিচালক আবু হেনা আশিকুর রহমান এই চার্জশীট দাখিল করেন। (দুদকের চার্জশীট নং-১, তাং-২২/০৭/২০১৯ ইং) খনি থেকে কয়লা উধাও হয়ে যাওয়ার ঘটনায় পার্বতীপুর মডেল থানায় মামলা দায়েরের ঠিক এক বছর পর বুধবার দুপুরে আদালতে এই চার্জশীট দাখিল করা হলো। বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি থেকে কয়লা উধাও হয়ে যাওয়ার ঘটনায় ২০১৮ সালের ২৪ জুলাই বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানির পক্ষে ম্যানেজার (প্রশাসন) মোহাম্মদ আনিছুর রহমান বাদী হয়ে ১৯ জনকে আসামি করে পার্বতীপুর মডেল থানায় মামলা করেছিলেন। পার্বতীপুর মডেল থানার মামলা নং-৩০, তাং-২৪/০৭/২০১৮ ইং। চার্জশীটে বলা হয়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ২০০৬ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৮ সালের ১৯ জুলাই পর্যন্ত (মেয়াদে) ঘাটতিকৃত এক লাখ ৪৩ হাজার ৭২৭.৯৯ মেট্রিক টন কয়লা আত্মসাতে জড়িত। যার বাজার মূল্য ২৪৩ কোটি ২৮ লাখ ৮২ হাজার ৫০১ টাকা। আসামিরা দন্ডবিধির ৪০৯/১০৯ এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন বলে তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে। চার্জশীটে যাদের নাম রয়েছে, তারা হলেন- বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানির সাবেক এমডি মোঃ মাহবুবুর রহমান, মোঃ আবদুল আজিজ খান, প্রকৌশলী খুরশীদুল হাসান, প্রকৌশলী কামরুজ্জামান, মোঃ আমিনুজ্জামান, প্রকৌশলী এসএম নুরুল আওরঙ্গজেব ও সাবেক এমডি প্রকৌশলী হাবিব উদ্দিন আহমেদ। এই সাত এমডির মধ্যে হাবিব উদ্দিন আহমেদ মামলার এজাহারভুক্ত আসামি ছিলেন। বাকি ছয়জনের সম্পৃক্ততা তদন্তে মিলেছে। তারা ২০০৫ থেকে ২০১৮ সালের জুলাই পর্যন্ত বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির এমডির দায়িত্বে ছিলেন। দুদকের তদন্তেও দেখা গেছে, কয়লা কেলেঙ্কারির ঘটনা ২০০৫ সাল থেকেই শুরু। সে কারণে পুরো ঘটনার দায় সাবেক এমডিদের ওপর বর্তায়। মামলায় অপর আসামিরা হলেন- কয়লা খনি কর্তৃপক্ষের সাবেক জিএম (প্রশাসন) মোঃ শরিফুল আলম, মোঃ আবুল কাসেম প্রধানীয়া, আবু তাহের মোঃ নুর-উজ-জামান চৌধুরী (মাইন অপারেশন বিভাগ), নিরাপত্তা বিভাগের ম্যানেজার মাসুদুর রহমান হাওলাদার, মোঃ আরিফুর রহমান (ম্যানেজার, মেইন্টেন্যান্স এ্যান্ড অপারেশন), নিরাপত্তা বিভাগের ম্যানেজার সৈয়দ ইমান হাসান, কোল হ্যান্ডলিং ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ডিজিএম মুহাম্মদ খলিলুর রহমান, মেইন্টেন্যান্স এ্যান্ড অপারেশন বিভাগের ডিজিএম মোঃ মোর্শেদুজ্জামান, প্রোডাকশন ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ডিজিএম মোঃ হাবিবুর রহমান, মাইন ডেভেলপমেন্ট বিভাগের ডিজিএম মোঃ জাহেদুর রহমান, ভেন্টিলেশন ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সহকারী ব্যবস্থাপক ডিজিএম সত্যেন্দ্র নাথ বর্মণ ও মোঃ মনিরুজ্জামান, কোল হ্যান্ডলিং ম্যানেজমেন্টের ম্যানেজার মোঃ শোয়েবুর রহমান, স্টোর ডিপার্টমেন্টের ডিজিএম একেএম খালেদুল ইসলাম, প্রোডাকশন ম্যানেজমেন্টের ম্যানেজার অশোক কুমার হালদার ও মাইন প্ল্যানিং এ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের ডিজিএম মোঃ জোবায়ের আলী। বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি থেকে কয়লা উধাও হয়ে যাওয়ার ঘটনায় ২০১৮ সালের ২৪ জুলাই বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানির পক্ষে ম্যানেজার (প্রশাসন) মোহাম্মদ আনিছুর রহমান বাদী হয়ে ১৯ জনকে আসামি করে পার্বতীপুর মডেল থানায় মামলা করেছিলেন। পার্বতীপুর মডেল থানার মামলা নং-৩০, তাং-২৪/০৭/২০১৮ ইং। মামলায় অভিযোগ করা হয়, ২০০৫ সালের ১০ সেপ্টেম্বর থেকে ২০১৮ সালের ১৯ জুলাই পর্যন্ত এক লাখ ৪৪ হাজার ৬৪৪ টন কয়লা উধাও হয়েছে। যার আনুমানিক মূল্য ২৩০ কোটি টাকা। ওই মামলার তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয় দুদককে। দুদকের উপ-পরিচালক মোঃ সামসুল আলম এই তদন্ত শেষে চার্জশীট তৈরি করেন। চার্জশীটে এজাহারভুক্ত ১৯ জনের মধ্যে ১৪ জনকে আসামি করা হয়। এছাড়া তদন্তে নতুন করে সাতজন সাবেক এমডিসহ নয়জনের নাম বেরিয়ে আসে।
×