ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বরগুনা জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের স্ত্রীর জন্যই রিফাত খুন হয়

প্রকাশিত: ০৯:৩৮, ২৫ জুলাই ২০১৯

বরগুনা জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের স্ত্রীর জন্যই রিফাত খুন হয়

নিজস্ব সংবাদদাতা, বরগুনা, ২৪ জুলাই ॥ বরগুনা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সাবেক এমপি মোঃ দেলোয়ার হোসেনের স্ত্রী শামসুন্নাহার খুকীর কারণে রিফাত হত্যাকা- সংঘটিত হয়েছে বলে দাবি করে সংবাদ সম্মেলন করেছেন সাক্ষী থেকে আসামি হওয়া আয়শা সিদ্দিকা মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর। হত্যাকান্ডের ২৮ দিন পর বুধবার দুপুর ১২টায় বরগুনা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে আয়শা সিদ্দিকা মিন্নির পরিবার। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকার বরাত দিয়ে বলেন, বরগুনা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের বাসার গেটের পাশে থাকা মাটিয়াল ক্যাফে রেস্টুরেন্টে রিফাত শরীফ ও তার স্ত্রী মিন্নি নাশতা করতে গেলে রিফাত শরীফ তার মোটরসাইকেলটি চেয়ারম্যানের বাসার সামনের গেটে রাখতে গেলে চেয়ারম্যানের স্ত্রী বাধা দেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে রিফাত শরীফ তাকে গালাগাল দেয়। একপর্যায়ে চেয়ারম্যানের স্ত্রী রিফাত শরীফকে দেখিয়ে দেয়ার হুমকি দেন। চেয়ারম্যানের স্ত্রী শামসুন্নাহার খুকী তার বোনের ছেলে রিফাত ফরাজী ও রিশান ফরাজীর কাছে এ বিষয়ে নালিশ করলে রিফাত হত্যার ঘটনায় রিফাত-রিশান ফরাজীকে অগ্রভাগে দেখা যায়। এ তর্কের ঘটনা জামাই রিফাত ও মেয়ে বাবা কিশোরকে জানিয়েছিলেন। যেদিন হত্যাকান্ডটি ঘটেছিল সেদিন হত্যাকারীরা বলেছিল, ‘তুই আমার মাকে গালাগাল করেছিস। আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বল।’ রিফাত ও রিশান ফরাজী জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেনের স্ত্রী শামসুন্নাহার খুকীকে ‘মা’ বলে সম্বোধন করে। পুলিশ সঠিকভাবে তদন্ত করলে এ বিষয়ে সব তথ্য বেরিয়ে আসবে।’ মোজাম্মেল হোসেন কিশোর বলেন, ‘১৯ জুলাই নিহত রিফাত শরীফের বাবা দুলাল শরীফ সংবাদ সম্মেলন করে আমি ও আমার স্ত্রীকে গ্রেফতারের দাবি করেছেন। আমি এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই।’ তিনি আরও বলেন, ‘দুলাল শরীফ একটি প্রভাবশালী মহলের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে আমার মেয়ে মিন্নিকে গ্রেফতারের দাবি তুলেছিল। যার প্রেক্ষিতে মিন্নি ১নং সাক্ষী থেকে আসামি হয়েছে।’ তিনি দাবি করেন, ‘রিফাত শরীফ হত্যা আড়াল করতে মিন্নিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এখন যদি আমাকে ও আমার স্ত্রীকে গ্রেফতার করা হয় তবে রিফাত হত্যার মূল পরিকল্পনাকারীকে আড়াল করা সম্ভব হবে।’ সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে মোজাম্মেল হোসেন কিশোর বলেন, ‘২৬ জুন প্রকাশ্য দিবালোকে আমার জামাই শাহনেওয়াজ রিফাতকে কুপিয়ে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। সে সময়ে উপস্থিত শত শত লোক কেউ এগিয়ে না এলেও আমার মেয়ে আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অস্ত্রের মুখে দাঁড়িয়ে স্বামী রিফাতকে একা বাঁচানোর চেষ্টা করে। এ ঘটনায় যে ভিডিও ফুটেজ ভাইরাল হয় তার মাধ্যমে মিন্নি দেশবাসীর কাছে সাহসী নারী হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। মামলায় তাকে ১ নম্বর সাক্ষী রাখা হয়। প্রভাবশালী মহলের চাপে মিন্নিকে গ্রেফতারের দাবি করে সংবাদ সম্মেলন ও মানববন্ধন করেন দুলাল শরীফ।’ তিনি আরও বলেন, ‘১৬ জুলাই আসামি শনাক্ত করার কথা বলে পুলিশ মিন্নিকে পুলিশ লাইনে নিয়ে আসে। সোয়া ১১ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ শেষে রাত ৯টায় গ্রেফতার দেখানো হয়।’ কিশোর আরও বলেন, ‘রিমান্ডে নিয়ে মিন্নির ওপর মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দিতে বাধ্য করে।’ মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর বলেন, ‘আমার মেয়ে অসুস্থ। কিছুদিন আগেও তাকে ঢাকা নিয়ে চিকিৎসা করাতে হয়েছে। পুলিশি নির্যাতনে আমার মেয়ে এখন ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছে। তার সুচিকিৎসা প্রয়োজন। পুলিশ এই হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত প্রভাবশালী মহলকে আড়াল করতে আমার মেয়েকে ফাঁসাচ্ছে।’ পুলিশের তদন্তে আস্থা হারিয়ে মোজাম্মেল হোসেন কিশোর বলেন, ‘হত্যাকান্ডের শিকার রিফাত শরীফের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী। মামলার প্রধান সাক্ষী। আসামি হিসেবে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। নেয়া হয়েছে রিমান্ডে। দিয়েছেন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী। পাঠানো হয় কারাগারে। পুরো এই প্রক্রিয়ার আমি তীব্র প্রতিবাদ জানাই।’ তিনি বলেন, ‘পুলিশ শুরু থেকে একটি প্রভাবশালী মহলকে বাঁচাতে আমার মেয়েকে ফাঁসাচ্ছে। বরগুনার পুলিশের হাতে তদন্তের দায়িত্ব থাকলে আমার মেয়েকে ফাঁসিয়ে ওরা খুনীদের আড়াল করবে।’
×