ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

ভোগান্তির শেষ কবে!

প্রকাশিত: ০৯:২১, ২৫ জুলাই ২০১৯

 ভোগান্তির শেষ কবে!

বন্যার পানি আসার সময় এক ধরনের ভোগান্তি আবার নেমে যাওয়ার পর অন্যরকম ভোগান্তি হয়। বন্যার কারণে প্রাণহানির চেয়ে মানুষের ভোগান্তি হয় কয়েকগুণ বেশি। এই ভোগান্তি খাদ্যের, সুপেয় পানির, ওষুধের এবং পয়ঃনিষ্কাশনের। যে বা যারা এই ভোগান্তি সহ্য করেছেন কেবল তারাই জানেন এর দুর্দশা। এ বছর আষাঢ় মাসের শেষদিকে কয়েকটি জেলায় বন্যার খবর বিভিন্ন পত্রপত্রিকা মারফত জেনেছি। যতদূর চোখ যায় শুধু পানি আর পানি। ঘরে খাবার নেই, খাবার কেনার জন্য আশপাশে বাজারও নেই। সবারই তো জীবনের মায়া আছে। যাদের সামর্থ্য আছে তারা নিরাপদ আশ্রয়ে চলে গেছে। ফলে সরকারী বা বেসরকারী ত্রাণই এসব বানভাসি মানুষের ভরসা হয়ে দাঁড়ায়। ১৯৮৮ সালের বন্যা দেখিনি। কারণ তখন আমার জন্মই হয়নি। মা-বাবার মুখে গল্প শুনেছি। সেই সময়কার ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা তারা আজও বলেন। শুনেছি বাড়ির মধ্য দিয়ে নাকি স্রোত গেছে। চালের ওপর চুলা নিয়ে রান্নাবান্না করেছে আর নৌকার পাটাতনের ওপর জড়সড়ো হয়ে ঘুমিয়েছে। ১৯৯৮ সালেও বন্যা হয়েছিল। তখন আমি বুঝেছি, বন্যা কি? কতটা কষ্ট আর সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে সময় পার করতে হয়। দেশে এ বছরও বন্যা হয়েছে। পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, বহ্মপুত্রসহ উনিশটি নদ-নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। চারদিকে শুধু বানভাসি মানুষের হাহাকার। তাদের যুদ্ধ করে বেঁচে থাকার চিত্র। প্রকৃতির সঙ্গে যুদ্ধ। শুধু মানুষ নয়, গরু, ছাগল হাঁস, মুরগি সবকিছু নিয়ে এক তীব্র দুর্ভোগে দিনাতিপাত করছে বানভাসি মানুষ। আমাদের দেশের মানুষ অসীম সাহসী। জানি এ যুদ্ধ ভালভাবেই সামাল দেবে বানভাসি এসব মানুষ। এদের মনের জোর অপরিসীম। পানিতে বন্দী লাখ লাখ মানুষের জীবন। থমকে আছে তাদের জীবনযাত্রা। থমকে আছে বললে ভুল হবে। চলছে। জীবন কখনও থেমে থাকে না। কিন্তু এই দুঃসহ সময়টা যেন থমকে আছে। জানি যেসব মানুষ নদীর তীরবর্তী অঞ্চলে বসবাস করে তারা জলের বৃদ্ধি এবং কমার বিষয়টি লক্ষ্য করে। প্রতিদিন এমনকি প্রতি বেলায় পানি কতটুকু বাড়ল বা কমল সে খবরও এরা রাখে, রাখতে হয়। কারণ পানির সঙ্গেই তাদের জীবিকা, তাদের জীবন। অব্যাহত পানি বৃদ্ধিতে বন্যাদুর্গত মানুষ যে সীমাহীন দুর্ভোগে রয়েছে তা জাানি। ঘরের ভেতর পানি, উঠানে পানি সব জায়গায় পানি। শোবার জায়গা নেই, বিশুদ্ধ পানি নেই (যেহেতু টিউবওয়েলগুলো বন্যার পানির নিচে), খাবার রান্নার জায়গা নেই, বাজার নেই আবার থাকলেও সেখানে যাওয়ার মতো অবস্থা নেই, স্কুলগুলোতে আশ্রয়কেন্দ্র থাকায় ক্লাস বন্ধ, এ রকম নানাবিধ সমস্যা নিয়ে থাকতে হচ্ছে বানভাসিদের। এই পরিস্থিতিতে দুর্গতদের পাশে থাকা আমাদের জন্য একান্ত আবশ্যক। সরকারীভাবে ত্রাণ পৌঁছে দেয়া হচ্ছে বন্যাদুর্গতদের মাঝে। কিছু বেসরকারী সংস্থাও, সংগঠনও এগিয়ে এসেছে। তাহলে আমি আপনি কেন বসে থাকব? আমাদের দেশে নানা রকম দুর্যোগ রয়েছে। ভূমিকম্প, জলোচ্ছ্বাস এসব দুর্যোগের মতো বন্যাও প্রাকৃতিক দুর্যোগ। প্রতিটি প্রাকৃতিক দুর্যোগে আমরা মানুষের পাশে গিয়ে দাঁড়াই। প্রবল বন্যায় ইতোমধ্যেই মারাও গেছে বেশ কয়েকজন। এর মধ্যে বেশিরভাগই শিশু। কারণ এ পরিস্থিতিতে শিশুদের মুত্যুর সম্ভাবনাই থাকে বেশি। কারণ ঘরবাড়ি সব জায়গাতেই যেখানে জল সেখানে বাচ্চাদের দেখেশুনে রাখা একটু অসুবিধাই বটে। তারপরও শিশুদের দিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। ওরা সাঁতার জানে না। এ রকম দুঃসময়ে আমাদের প্রতিটি মানুষের উচিত এসব বানভাসি মানুষের পাশে দাঁড়ান। মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য। দুর্ভোগ আর নিদারুণ কষ্টে থাকা এসব মানুষকে একমুঠো খাবার, এক বোতল বিশুদ্ধ পানি বা অসুখ বিসুখ দেখা দিলে তার পাশে আমরা দাড়াতেই পারি। প্রতিদিন আমরা অনেক টাকাই অকারণে আামদের চিত্ত বিনোদনের জন্য খরচ করি। ধূমপান করি, চা কফি খাই। এসব যদি একবেলা না করি, একবেলা যদি বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডাবাজিতে টাকা না খরচ করে সাহায্যের জন্য রেখে দেই তাহলে অনেক কিছুই সম্ভব। একটি হাতের ক্ষমতা কম থাকলেও তার সঙ্গে যখন আরেকটি হাত যোগ হয় এভাবে অনেক অনেক হাতের সমন্বয়ে যোগ হয় বিশাল সংগ্রহ। সেসব নিয়ে তো আমরা তাদের পাশে গিয়ে দাঁড়াতে পারি। বুক ফুলিয়ে বলতে পারি আমরা এসেছি তোমাদের পাশে, চিন্তা কর না। শুধুমাত্র এখন এই পানি থাকা পরিস্থিতিই যে দুঃসময় তা কিন্তু নয়। বরং বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পরও নানা সমস্যার সৃষ্টি হয়। অনেক রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটে। এ সময়ও খাবারের সঙ্কট দেখা দেয়। বন্যা পরবর্তী সময় অবকাঠামোগত সমস্যা দেখা দেয়। কারণ যেসব এলাকায় বন্যার পানি ওঠে সেসব এলাকার রাস্তাঘাট পানির নিচে থাকে। ফলে পানি চলে যাওয়ার পর তা ব্যবহারের অনুপযুক্ত হয়ে পরে। ফলে দ্রুততম সময়ের মধ্যে তা সংস্কারের উদ্যোগ নিলে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটে, এছাড়া ব্রিজ, কালভার্ট সংস্কারের প্রয়োজন হয়। বাড়িঘর, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান সবকিছুর পূর্ণনির্মাণ করতে হয়। কিন্তু পুননির্মাণ করা মতো আর্থিক সামর্থ্য এদের থাকে না। কৃষি জমি বিনষ্ট হওয়ায় জমি চাষের জন্য প্রস্তুত করে ফসল উৎপাদন করতে সময় লেগে যায়। আবার যদি কেউ ব্যবসানির্ভর জীবনযাপন করে তাও কিন্তু ব্যবসা দাঁড় করাতে দীর্ঘ সময়ের ব্যাপার। অনেকেই বন্যার সময় তাদের মানে বন্যা পরবর্তী সময়ে জীবনযাত্র স্বাভাবিক হতে অনেক সময় লেগে যায়। এই সময় দল মত নির্বিশেষে এদের পাশে দাঁড়ানো উচিত। মানসিকভাবে বিপর্যস্ত থাকা এসব মানুষের পাশে সকল রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের দাঁড়ানো উচিত। আমাদের প্রমাণ করা উচিত যে তারা একা নয়। তাদের পাশে বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ আছে। তাদের কষ্টে আমরাও কষ্ট পাই। বাঙালী জাতি গৌরবের জাতি। এর সুদীর্ঘ ইতিহাস থেকে জানা যায় যুগে যুগে যত বিপদ সামনে এসে দাঁড়িয়েছে সবাই হাতে হাত রেখে তা মোকাবেলা করেছে। তাই এত সহজে এ জাতিকে কাবু করা যাবে না। পাবনা থেকে
×